দেশের মাটিতে বিজেপির সরকার আর রাজ্যের মাটিতে তৃণমূল সরকার আর এর মাঝেই শ্রমিক তার অর্জিত অধিকার থেকে হচ্ছে ছারখার। প্রায় এক দশক ধরে দেশে RSS পরিচালিত বিজেপি সরকার মানুষকে কর্মে নয় ধর্মে বিভাজন করে চলেছে আর অন্য দিকে রাজ্যে তৃণমূল সরকার প্রায় এক দশক ধরেই শ্রমিকের অধিকার কে লুট করে চলেছে। শ্রমিক যখন তার অধিকার নিয়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলছে তখনই শ্রমিকের মধ্যে জাতি ধর্মের বিভাজন করে আন্দোলনের শক্তি কে দুর্বল করে দেয়ার কৌশল নেয়া হচ্ছে, আসলে মানুষের মগজে এমন ভাবে হেমারিং করে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে যে প্রথমে সে হিন্দু কিংবা মুসলিম তার পর সে একজন শ্রমিক। যখনই মানুষ তার শ্রমিক অধিকারের কথা তুলে ধরতে চায় তখনই তার কাছে জাতি ধর্মের তত্ত্ব তুলে ধরা হচ্ছে ফলে মানুষটি তার জ্বালা যন্ত্রণার কথা গুলো ভুলে ধর্মের মায়া জালে পড়ে ধর্মের জয়গান করতে থাকছে। দেশ চালাতে গিয়ে যারা ধর্ম বাঁচানোর  ঠেকা নিয়েছেন তারা ভালো ভাবেই জানেন মানুষের মধ্যে চেতনার বিকাশ ঘটলে মানুষই তাদের ক্ষমতা ছাড়া করবে তাই তো তারা জাতি ধর্মের বন্ধনে আবদ্ধ রেখে অধিকারের লড়াইকে দুর্বল করে দমন পীড়ন শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে ধর্মের মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।

মানুষ বুঝে উঠার আগেই তাকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে এটা তোমার কর্মের ফল, আগের জন্ম, পরের জন্ম বুঝিয়ে, বিভিন্ন রকম দোষ গুণ দেখিয়ে তাকে আধ্যাত্মিক, পুজো, অর্চনা উপবাস ইত্যাদির মধ্যে জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, আর মানুষ ভাবতে লেগেছে এটাই আমার আসল কাজ এখান থেকেই আমার কষ্টের মুক্তি হবে। আজকের দিনে এই শ্রমজীবী মানুষের অধিকারে লড়াই কেবল শ্রেণী দৃষ্টি ভঙ্গিতে লড়াই করলে তা সফল হওয়া খুব কঠিন, এই লড়াইতে জয় পেতে হলে শ্রেণী দৃষ্টি ভঙ্গির সাথে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে লড়াইয়ের প্রয়োজন আছে।

  বর্তমানে সাধারণ মানুষ শ্রেণী সংগ্রাম থেকে বিরত থেকে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সংগ্রাম করতে বেশি আগ্রহী প্রকাশ করছে, লক্ষ করা যাচ্ছে কাজের দাবিতে আমরা জনগণ কে যতটা একত্রিত করতে পারছি বিজেপি RSS সামাজিক, জাতিসম্প্রদায়, সংস্কৃতির কথা বলে তারা কয়েক গুণ বেশি জনগণকে একত্রিত করতে পারছে এবং শেষে ভোটের রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণ করাতে সক্ষম হচ্ছে এখানেই লাল ঝান্ডা পিছিয়ে। লাল ঝান্ডা আসলে ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রেখে শ্রেণী সংগ্রাম সংগঠিত করে কিন্তু বিজেপি তা নয় তাদের কাছে ধর্ম চরিত্র টাই প্রধান তাই তো তারা স্লোগানের শুরুতেই জয় শ্রী রাম দিয়ে শুরু করে  আর আমরা লাল ঝান্ডার স্লোগান সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক, দুনিয়ার মজদুর এক হও দিয়ে শুরু, পার্থক্যটা এখানেই। ভারতবর্ষ একটা বহু জাতি, বাহু ভাষা,বহু ধর্মের দেশ এখানকার মানুষের ভাবাবেক কে আঘাত দিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করা খুব কঠিন তাই সমস্ত জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষের সামাজিক চাহিদা কি কি রয়েছে সেই বিষয় গুলো কেউ প্রাধান্য দিয়ে  তাদের একত্রিত করে তাদের চেতনার মান কে বিকশিত করতে হবে সাথে সাথে শ্রেণী চেতনার জাগাতে হবে। মোদ্দাকথা তাদের বোঝাতে হবে ধর্মের জন্য আমাদের লড়াই নয় আমাদের লড়াইটা কর্মের জন্য, আর আজকের দিনে এই কথা টাই বোঝাতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে চা শ্রমিক নেতৃত্বরা, তাইতো আজ চা শ্রমিকরা দলমত, জাতিভেদ নির্বিশেষে নিজেদের দাবিতে টা বুঝতে পারছে যে তাদের minimum wage দিতে হবে, চা শ্রমিকদের PF এর বকেয়া টাকা চা বাগান মালিককে জমা করতে হবে,  দিতে হবে তাদের বসবাস স্থানের জমির পাট্টা।এক সময় শ্রমিকরাই জঙ্গল কেটে চা বাগান বানিয়েছে অথচ আজ সেই শ্রমিকরাই তাদের বসবাস জমির পাট্টা টুকু পায় নি কিন্তু চা বাগান একের পর এক মালিকের হাত বদল হয়েই চলেছে শুধু বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে শ্রমিক।

এই সমস্যার বিষয় গুলো আজ তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছে তাই তো আজকের দিনে চা বাগানের ফ্যাক্টরির সামনে গেট মিটিংয়ে ভিড় বাড়ছে লাল ঝান্ডা তারা হাতে তুলে নিচ্ছে এবং দিকে দিকে তাদের দাবি আদায়ের জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলছে তাই তারা আজ শপথ নিচ্ছে শাসক যতই জাতি ধর্মে বিভাজন করুক না কেন আমার শ্রমিক আমাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে এই বিভাজন রুখে দেব।