২০১১ সালে বামফ্রন্ট জমানার অবসান হয়েছিল অন্তরঙ্গ এবং বহিরঙ্গ অনেকগুলি কারণের গুণফল থেকে। অন্তরঙ্গ কারণগুলির মধ্যে পড়ে কমিউনিস্টদের নিজেদের নানাবিধ সাংগঠনিক এবং মতাদর্শগত দুর্বলতা যা নিয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে, তেমনই সারাবিশ্বের এবং দেশের পরিস্থিতি যে আগের প্রায় দুই দশক ধরে ক্রমেই বামপন্থার প্রতিকূলে যাচ্ছিল তা আমাদের দৃষ্টিকোণে থাকলেও সেই বহিরঙ্গগত কারণসমূহের গুরুত্ব পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে কতোটা তা হয়তো আমরা নিজেরাও সেভাবে বুঝতে পারিনি। এর বিশদ ব্যাখ্যায় এখানে যাব না, কিন্তু আমাদের পরিপার্শ্বগত এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে নিশ্চয়ই উল্লেখ করতে হবে সোভিয়েত ব্লকের বিনাশ, নয়া উদারবাদের রণসজ্জায় লগ্নিপুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদের দুনিয়াজোড়া আবির্ভাব এবং বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী সময়ে ভারতে শাসকশক্তি হিসাবে বিজেপি-র উত্থান ও বাজপেয়ীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ক্ষমতার আসনে তার প্রথম আগমনের মতো ঘটনাগুলির। বাজপেয়ীর পরে ইউ পি এ জোট করে কংগ্রেসের এক দশকের জন্য কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন থেকে যাঁরা সিদ্ধান্ত করেছিলেন বিজেপি আর ফিরতে পারবে না তাঁরা ততোটাই ভুল করেছিলেন যতোটা ভুল করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সেইসব মানুষ যাঁরা ২০১১ তে নিজেদের এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন যে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কতোদিনই বা ক্ষমতায় টিঁকবে?

২০০৬ সালেও হাওয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বামফ্রন্টের আসন্ন পরাজয়ের বার্তা এবং তার পরেও আমরা জিতেছিলাম একথা মনে করিয়ে দিয়ে তাঁরা ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে বলেছিলেন, তাতে কি? লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচন তো পঞ্চায়েত নির্বাচন নয়, সেখানে ‘হবে জয়, হবে জয়’। কিন্তু কার্যত দেখা গেল তাঁদের আবহবার্তা সম্পূর্ণই ভুল ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল এই অশনিসংকেতই দিয়েছিল যে রাজ্যে আমাদের সংগঠনের তলার দিকে কোপ পড়েছে, সেখানে তৃণমূলের দখলদারি প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে, উচ্চতর স্তরে নির্বাচনী পরাজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। এতবড়ো পরিবর্তন কি লড়াই ছাড়াই হয়েছিল? মোটেই নয়। যাঁরা মাঠেজঙ্গলে জান কবুল করছিলেন সংগঠনকে বাঁচানোর জন্য তাঁদের অনেকে তৃণমূল-মাওবাদীদের হাতে খুন হয়েছিলেন, এলাকাছাড়া হয়েছিলেন বা মিথ্যা ফৌজদারি মামলার মোকাবিলা করছিলেন। দুঃখের বিষয় তাঁদের আত্মবলিদান বামফ্রন্ট সরকারকে বাঁচাতে পারেনি; তবু মানুষের মধ্যে বামপন্থীদের সাংগঠনিক উপস্থিতি এখনো পশ্চিমবঙ্গে যতোখানি রয়েছে তা যে এইসব লড়াইয়েরই নাছোড় শিকড়বাকড় তাতে সন্দেহ নেই।

এইসব পরিবর্তনের শীর্ষসময়েই মমতার সর্বাধিনায়কত্বে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূলের জন্ম, এন ডি এ-তে যোগ দিয়ে বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রিসভায় তাঁর প্রবেশ, পরবর্তী সময়ে আবার কংগ্রেসের কাছাকাছি আসা, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর-লালগড় পর্বে প্রধান বামফ্রন্ট-বিরোধী শক্তিহিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর দ্বিতীয় ইউ পি এ-তে তাঁর রেলমন্ত্রী হওয়া ইত্যাদি ঘটে গিয়েছিল। আমাদের মধ্যে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে তৃণমূল থাকলে আমরা কেন আছি তাঁদের মনে করিয়ে দিই ২০০৮-৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ক্ষমতায় না থেকেও আমাদের সর্বতোভাবে ক্ষতি করছিল, তখন কিন্তু আমরা ইউ পি এ-তে মমতা বহালতবিয়তে বিরাজমান হওয়াসত্ত্বেও জোটের সমর্থন থেকে বিরত থাকিনি। সেদিন জোটে থাকার শর্তগুলি অন্য ছিল, দেশের পক্ষে তার কিছু তাৎক্ষণিক ভালো ফলও হয়েছিল। তাহলে আজও বামশক্তির সর্বনাশে ব্রতী তৃণমূল ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে রয়েছে বলেই আমরা তা বর্জন করব এমন সরলীকৃত সিদ্ধান্তে আসা যায় না।

বরং খতিয়ে দেখা দরকার পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের চাইতে তৃণমূল বামপন্থীদের মোকাবিলায় অনেক বেশি সক্ষম এই ধারণাটির উত্থান কোন্‌ সময়ে কীভাবে। যেভাবে কেন্দ্রে কংগ্রেসকে হঠাতে বাজপেয়ী বা আদবানির জায়গায় ২০০২এর গুজরাট গণহত্যার অংশীদার মোদিকে তুলে আনা হচ্ছিল, ঠিক সেইভাবেই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস যা পেরে উঠছিল না, বিজেপি-রও এরাজ্যে সরাসরি যা করার সাধ্য ছিল না, সেই কাজটি করার জন্য নৃশংস নীতিহীনতার ‘রাজধর্মে’ মমতার দীক্ষালাভ ঘটল এই বছরগুলির মধ্য দিয়ে। ‘দীক্ষালাভ’ কথাটি ষড়যন্ত্রের কোনো চটজলদি তত্ত্বে আস্থা না রেখেও ব্যবহার করছি; কারণ এই সময়ের ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে মোদির মতো মমতারও নির্মাণ ঘটেছে। সেনির্মাণের কারিগরদের চোখে দেখা না গেলেও দেশিবিদেশি শোষকশ্রেণির হয়েই তারা কাজ করে থাকে। মোদির বৈশিষ্ট্য ছিল সামাজিক পশ্চাৎপদ অবস্থান থেকে তার উত্থান, তার স্বল্পশিক্ষা, ধর্মভাব, সংসারবিমুখতার খ্যাতি, সাধারণ মানুষের চেনা মোটাদাগের ভাষায় কথা বলে গরিবের ‘মসিহা’ বনবার ক্ষমতা; ২০১৪ সালের আগে এইসব ‘গুণ’গুলির প্রচার করে এক নতুন জননেতার প্রতিমা তৈরি করতে অবশ্যই আর এস এস জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে একটি বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল।

মমতাকে তারও আগের দশকে প্রকৃত বামপন্থী, খেটে –খাওয়া মানুষের রুক্ষ ভাষায় কথা-বলা এক ‘সাধারণ’ মেয়ে, কৃষকের অধিকাররক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গী ‘মা-মাটি-মানুষে’র নেত্রী হিসাবে তুলে ধরায় হয়তো আর এস এস-এর প্রাথমিক কোনো অবদান ছিল না। সেকাজে অগ্রণী ভূমিকা নেয় প্রবল বামবিরোধী কর্পোরেট মিডিয়া। কিন্তু কোনো একটি পর্বে আর এস এস-ও পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার বিনাশে মমতা ও তৃণমূলের ব্যবহার্যতাকে স্বীকৃতি দেয়। বিজেপি-র সঙ্গে মমতার ইঁটপাটকেলের আদানপ্রদান হতে থাকলেও এবং থেকে থেকে নীচের তলায় একদলের কর্মীর হাতে আরেকদলের কর্মীর হত্যাকাণ্ড ঘটলেও আর এস এস-এর সঙ্গে তৃণমূলের সর্বাধিনায়িকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আজ আর কোনো গোপন ব্যাপার নয়। এরাজ্যে তৃণমূল আমলে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অবাধ প্রসার ঘটেছে তাই শুধু নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থাৎ সরকারি পরিসরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানকে স্থান না দেবার সাংগঠনিক দায়বদ্ধতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে ব্যবহার করাও এরাজ্যে শাসকদলের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে আর এস এস বেনামে যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চালায় তাদের সঙ্গে বর্তমান শাসকদল প্রকাশ্যেই যুক্ত। ধর্মনিরপেক্ষ বলে তাদের শাসনে সংখ্যালঘুর অধিকার সুরক্ষিত, এই গল্পটি বজায় রাখার ক্ষেত্রেও তাদের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে মনে হয়। একইভাবে কর্পোরেট স্বার্থে খাদ্যসুরক্ষা, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির আমূল বিনাশে বিজেপি-র চাইতে তৃণমূলের উৎসাহ একটুও কম নয়। তাই আজ পর্যন্ত আর এস এস-বিজেপির তৃণমূলকে পশ্চিমবঙ্গে ততখানিই দরকার, যতোটা তৃণমূলের দরকার আর এস এস-বিজেপিকে সর্বভারতীয় স্তরে টিঁকে থাকার জন্য। কেন্দ্রীয় প্রতিক্রিয়ার শক্তি যদি অন্য কোনো মমতাকে পেয়ে যায় বা এজাতীয় সহকারী ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গকে সরাসরি কবজা করতে পারে তাহলে তাদেরই তোল্লাই-দেওয়া ‘দুর্গাকে’ ছুঁড়ে ফেলতে তারা একমুহূর্তও দেরি করবেনা। তৃণমূল কাল লোপ পেয়ে গেলেও কিন্তু বিজেপি-আর এস এস লুপ্ত হবে না।     

তৃণমূল ও বিজেপির ক্ষমতার মধ্যে এই অসমতা থাকলেও তাদের এমুহূর্তের পারস্পরিক নির্ভরতা অনস্বীকার্য। এই বাস্তবকে উল্টোবাগে বসিয়েই কর্পোরেট মিডিয়া তৈরি করেছে পশ্চিমবঙ্গে তাদের ‘বাইনারি’র গল্প। তারা যদি ক্ষমতার দ্বন্দ্বে একে অন্যের মূল প্রতিপক্ষ হয় তাহলে সেই কল্পিত জমিতে কমিউনিস্টদের আর জায়গা দেবার দরকার হয় না। আর নির্বাচনী রাজনীতিতে আমাদের বেহাল অবস্থার কারণে সেই ‘বাইনারি’র তত্ত্বকে আমরা কমিউনিস্টরাও যদি মেনে নিই তাহলে লড়াই করে যে পরিসরটা আমাদের এরাজ্যের জনসাধারণের জন্য আদায় করার কথা তার প্রাথমিক পদক্ষেপগুলিও নেওয়া যাবে না। ‘ইন্ডিয়া’ নামক মঞ্চটিতে আমাদের ভূমিকা কী তা নিয়েও এই ’বাইনারি’-তত্ত্ব বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মঞ্চে সবার সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে গলা ফাটাতে হয় তো হোক, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ‘প্রধান’ শত্রু বলে বিবেচনা করব তৃণমূলকেই—এই বিভ্রান্তি এই তত্ত্বের সঙ্গেই জড়িত। এমন তাত্ত্বিক দ্বিচারিতা কমিউনিস্টদের গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ তৈরি হবার আগেও আমরা দেখেছি এই বিভ্রান্তি নির্বাচনের মরসুমে এমন জায়গায় গেছে যেখানে ‘আগে রাম পরে বাম’ এমন স্লোগানও উঠেছে। সাধারণ মানুষ, যাঁর বাম রাজনীতির সঙ্গে অন্তরের কোনো যোগ নেই তৃণমূলের অত্যাচারে কোনো বিশেষ এলাকায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে বিজেপি-র মাস্তানদের আশ্রয় নিতে বাধ্য হতেই পারেন, কিন্তু এটা কখনো বামপন্থীদের রণকৌশল হতে পারে না। বরং এরাজ্যে বামপন্থীদের মধ্যেও যে কিছু ‘হিন্দুত্ববাদী’ দুর্বলতা রয়েছে সেগুলোই প্রকট হয়েছে এই ভ্রান্তির দৌলতে।

এই ‘রণকৌশলে’ তৃণমূলের সর্বব্যাপী দাপট কোনোভাবেই কমানো যায়নি; বরং তথাকথিত ‘বামপন্থী’ ‘নো ভোট্টুরা’ প্রচার শুরু করেছেন যে বিজেপিকে হটানোর স্বার্থেই কমিউনিস্টদের উচিত তৃণমূলকে মদৎ দেওয়া। অথচ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা এটাও দেখেছি, এলাকা থেকে কমিউনিস্টরা (তথা বামফ্রন্ট) সমর্থন বাড়িয়ে বিজেপির ভোট যেখানে লক্ষণীয়ভাবে কমাতে পেরেছেন সেখানে সঙ্গে সঙ্গে শংকিত তৃণমূল বাহুবল বা অর্থবল খাটিয়ে এলাকার দখল নিতে ছুটে এসেছে। তারা ভালোই জানে তাদের আসল শত্রু কারা। আরো এক ধন্দের জায়গা এইখানে যে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোটসত্ত্বেও কংগ্রেসের ভোটাররা যেখানে কংগ্রেসকে ভোট দিতে পারছেন না সেখানে বামফ্রন্টকে বিকল্প মনে করছেন খুব কম। তার জন্য কংগ্রেসি নেতাদের দায়ী করাই যায়, কিন্তু আসল কথা তৃণমূল-বিজেপির প্রচলিত ‘বাইনারি’র তত্ত্ব আমরা ভাঙতে পারলে তবেই অন্যদের ভোট দিতে অভ্যস্ত জনসাধারণ নির্বাচনী মানসিকতা পাল্টাবেন, বামফ্রন্টের বিকল্প তাঁদের চিন্তায় আসবে। কংগ্রেস নেতারা বললেই মানুষ বামফ্রন্টের প্রার্থীকে ভোট দেবেন এখনকার রাজনীতি আর এতটা সরল নেই।  

অর্থাৎ কোনো মঞ্চ বা জোটে আমরা কতোটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছি তার ওপরেই নির্ভর করবে মিডিয়াপ্রচারিত ‘বাইনারি’কে আমরা কতোটা  ভাঙতে পারলাম। এটা কখনোই শুধু নেতাদের ব্যাপার নয়, আমরা যারা নিজেদের কমিউনিস্ট বলি, বা নিদেনপক্ষে বামপন্থী বলি, নির্বাচনের কাজে সরাসরি যুক্ত থাকি বা না থাকি, তাদের প্রতিদিনের কথা ও কাজের মধ্য দিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি উভয়ের সঙ্গে আমাদের চরম বৈপরীত্যের জায়গাটি যতো দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সঙ্গে তুলে আনতে পারব ততোই তৃণমূল-বিজেপির মধ্যেকার মৌলিক অ-বিরোধ জনগণের চোখে ফাঁস হতে থাকবে। অবশ্যই নির্বাচন যতোই কাছে আসবে ততোই তাদের সমঝোতায় নানা ওঠাপড়া দেখা যাবে। কারণ ইডি-সিবি আই ইত্যাদি তো তাদের মধ্যেও পরোক্ষ দরকষাকষির অন্যতম উপায়। কিন্তু আমাদেরই দায়িত্ব একথা প্রতিমুহূর্তে প্রমাণ করা যে পশ্চিমবঙ্গে আসল বিরোধীপক্ষ বিজেপিও নয়, তৃণমূলও নয়, এই দুইয়েরই নৈতিক বিরোধিতায় যারা অঙ্গীকারবদ্ধ একমাত্র তারাই। তৃণমূল বা বিজেপির আশ্রয়ে টিঁকে থাকার সবরকম চেষ্টা থেকে যারা নিজেদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে একমাত্র তারাই। মানুষের পাশে থেকে,  ক্ষমতার দুর্গে বারংবার আঘাত হেনে শাসককে যেখানে কিছুটাও পিছে হটতে বাধ্য করা যাবে, একশো দিনের কাজের মজুরি আদায়ের প্রশ্নে, কৃষকের ধান ন্যায্যদামে খরিদ করার প্রশ্নে বা ছাত্র না মেলার অজুহাতে সরকার-পরিচালিত স্কুল বন্ধ করে দেবার প্রশ্নে, আমাদের বিকল্প সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হবে। 

‘বাইনারি’ কথাটা বোঝায় তৃণমূল না থাকলেই বিজেপি আসবে, আর বিজেপি না থাকলে তৃণমূলই রাজ্যটা চালাবে। এ সরকারে থাকলে ও হবে বিরোধী; ও ক্ষমতায় এলে এ-ই হবে বিরোধীপক্ষ, আর কেউ নয়। আমরা কিন্তু এই দুটি যথেচ্ছাচারী ক্ষমতালোভী শক্তিরই বিনাশ চাই। সেটা সোজা কথা নয়। ‘বিকল্পে’র কথা আমরা অনেকদিন থেকেই বলছি; কিন্তু আমাদের ‘বিকল্প’ অর্থ এই নয় যে ওদের ব্যবস্থাটা চলতেই থাকবে, আমরা দৃশ্যপটের কোনায় আবদ্ধ থেকে বিকল্পতরুর ফল ধরানোর চেষ্টা করে যাবমাত্র। ওদের ব্যবস্থাকে উৎখাত করে জনসাধারণের ক্ষমতাকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের বিকল্পের লক্ষ্য। আজকের পরিস্থিতিতে তা কোনো একটি নির্বাচনের মাধ্যমে এসে যাবে তা আমরা আশা করি না। কিন্তু সেই লক্ষ্য এবং রাজনৈতিক সংকল্পকে এই সংকটের মুহূর্তে আমরা যেন ভুলে না যাই, সেই আসলে যেন জল না মেশাই।