২০১১সালে নির্বাচনের ফলে তথাকথিত পরিবর্তনের (বাংলার সর্বনাশের শুরু)পর পরই পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল কমরেড লেনিনের মূর্তি আবার ত্রিপুরাতে বিজেপি ক্ষমতায় আসবার পরের দিনেই বিলোওনিয়ায় তালিবানি কায়দায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয় লেনিন মূর্তি। খাস কলকাতার যাদবপুর ৮বিতেও লেনিন মূর্তি ভাঙ্গার হুমকি বারবার দিয়ে চলেছে আর এস এস ,বিজেপি ।লেনিন মূর্তি ভাঙ্গার পিছনে অদ্ভুত যুক্তি খাড়া করছে এই ফ্যাসিস্ট শক্তি ,ওরা বলছে লেনিন বিদেশি ভারতীয়দের জন্য ওর কোনো অবদান নেই কাজেই এই নব্য জাতীয়তাবাদের যুগে লেনিনের কোনো স্থান ভারতবর্ষে নেই।

 লেনিন সংক্রান্ত এই যে প্রচার আর এস এস এবং তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি করে তা কী সত্য? দেখা যাক এ প্রসঙ্গে  ইতিহাস কী বলে? রাশিয়ার নভেম্বর বিপ্লবের এক দশক আগে ভারতীয় জাতীয়বাদী নেতা বাল গঙ্গাধর তিলক তাঁর “কেশরী” পত্রিকায় কিছু প্রবন্ধ লেখেন ব্রিটিশ সরকার এই প্রবন্ধগুলিকে ব্রিটিশ রাজের বিরোধী চিহ্নিত করে তাঁকে দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে নির্বাসনের শাস্তি দেয়।এর প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বোম্বাইয়ের(এখন মুম্বাই) শ্রমিক শ্রেণী ,লক্ষাধিক শ্রমিক প্রায় এক সপ্তাহ ধর্মঘট করে।এই ধর্মঘট ভাঙ্গতে ব্রিটিশ মিলিটারি ব্যবহার করে শহীদ হন বহু শ্রমিক। সেদিন তিলকের মুক্তির দাবিতে শ্রমিক শ্রেণীর এই আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কোনো ভারতীয় নেতা বা রাজনৈতিক সংগঠন কিন্তু সুদূর সুইজারল্যান্ড থেকে সেদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর এই লড়াইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কমরেড লেনিন।

 ১৯০৮ সালের ২৩শে জুলাই প্রলেতারি পত্রিকায় লেনিনের এক নিবন্ধ ছাপা হয়(যা ইনফ্লেমেবেল মেটিরিয়াল ইন ওয়াল্ড পলিটিক্স নামক প্রবন্ধের নির্বাচিত অংশ)লেনিন লেখেন “ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থার নামে চলতে থাকা হিংস্রতা ও লুণ্ঠনের কোন সীমা পরিসীমা নেই। পৃথিবীতে আর কোথাও অবশ্যই রাশিয়া ব্যতিক্রম জনসাধারণের মধ্যে এত দারিদ্র্য এত উপবাস নেই। জন মার্লের মত ব্রিটেনের সবচেয়ে উদারনৈতিক ও প্রগতিশীল ব্যক্তিরা (বাস্তবে পুঁজির দালাল)তারা ভারতের শাসন ক্ষমতায় নিযুক্ত হয়ে চেঙ্গিস খাঁ হয়ে উঠেছেন এবং নিজের অধীনস্থ জাতিকে শান্ত করবার জন্য চাবুক পর্যন্ত মারছে। ব্রিটিশ শৃগালেরা ভারতীয় গণতন্ত্রী তিলক সম্পর্কে কুখ্যাত রায় ঘোষণা করে তাকে দীর্ঘমেয়াদি নির্বাসন দন্ড দিয়েছে।ব্রিটিশ হাইস অফ কমন্স জানায় যে ভারতীয় জুরিরা তিলককে নির্দোষ ঘোষণা করলেও ব্রিটিশ জুরিদের ভোটে এই শাস্তি বিধান করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে একজন গণতন্ত্রীর বিরুদ্ধে টাকার মালিকদের তাঁবেদারদের বিরুদ্ধে এই প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে বোম্বাইয়ের রাস্তায় গণবিক্ষোভ আছরে পড়েছে, ধর্মঘটে শহর অচল হয়ে গেছে।যেহেতু ভারতের শ্রমিক শ্রেণীও ইতিমধ্যে শ্রেণীসচেতন ও রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু করবার জন্য যথেষ্ট পরিপক্ব হয়ে উঠেছে ফলে ভারতে রুশীয় পদ্ধতি নির্ভর ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র আর চলবে না”।

এরকম বহু নির্দশন আছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের যখনই ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জনসাধারণের উপর দমনপীড়ন চালিয়েছে তখনই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন কমরেড লেনিন। ব্রিটিশ বন্দুকের জোরে তার শাসনব্যবস্থা ভারতের বুকে কায়েম রাখতে ১৯১৯এর ১৩ই এপ্রিল জালিওয়নাবাগে পরিকল্পিত ভাবে সংগঠিত করেছিল গণহত্যা।এই নারকীয় ঘটনা সম্পর্কে কমরেড লেনিন জানতে পারেন অমৃতবাজার পত্রিকা মারফত। তাঁর নির্দেশে কমরেড এম.আলোবাসিয়েভ (বলশেভিক ব্যুরোর প্রধান) অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদকের কাছে এক চিঠি লেখেন ,

কিন্তু যারা লেনিনের মূর্তি ভেঙ্গে কমিউনিস্টদের দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে নিজেদের দেশপ্রেমিক বলে জাহির সেই কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি কী ভূমিকা নিয়েছিল এই গণহত্যার সময় তা একটু দেখা যাক,সর্বভারতীয় স্তরে হিন্দু মহাসভা যে সংগঠন কে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল সেই “পাঞ্জাব হিন্দু সভা”রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে যে সত্যাগ্রহ হয়েছিল সেই সত্যাগ্রহের বিরোধীতা করে ব্রিটিশের প্রতি গভীর আনুগত্যর শপথ নিয়েছিলেন। (কে এল তুতেজার -দ্য পাঞ্জাব হিন্দু মহাসভা এন্ড কমিউনাল পলিটিক্স ১৯০৬-২৩পড়ে দেখতে পারেন)।

#long live comrade lenin.

#long live revolution.