“হে আমার সতীর্থগণ, সেনাদল, তোমাদেরও রণধ্বনি হোক—দিল্লী চলো, দিল্লী চলো! স্বাধীনতা-সংগ্রামের মধ্যে আমরা কে কতদিন বেঁচে থাকব জানি না; তবে একথা আমি নিশ্চয় জানি, চরম জয়লাভ আমরা করবই, এবং প্রাচীন দিল্লীর লাল-কেল্লায় বিজয়োৎসব সম্পন্ন না করা পর্য্যন্ত আমাদের কর্ত্তব্য শেষ হবে না।”     (সুভাষ চন্দ্র বসু)  নেতাজীর এই দিল্লি চলো ডাক সেদিন  পরাধীন ভারতবাসীর ভিতর এক উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল।অতিসম্প্রতি আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ও দিল্লি চলোর ডাক দিয়েছেন।২১শে  জুলাই ধর্মতলার সভামঞ্চ  থেকে তিনি হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্র টাকা না দিলে বাংলার যুবক যুবতীদের ট্রেনে করে নিয়ে গিয়ে দিল্লি ঘেরাও করা হবে।”কেন্দ্র রাজ্যের ১০০দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন?শোনা যাচ্ছে একশো দিনের কাজে নাকি বাংলায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে।সে কারনেই নাকি কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে।কিন্ত দুর্নীতি তো করেছে সরকার যারা এই এই প্রকল্পের আওতা ভুক্ত সেই হাজার হাজার বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ তো দুর্নীতি করে নি ।তাহলে আপনার সরকারের দুর্নীতির দায়ে কেন ভুগতে হবে খেটে খাওয়া মানুষ গুলোকে।   

রাজ্যের মানুষ দেখছে যে সীমাহীন দুর্নীতি চলছে এই সরকারের সময় ।সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী চাকরি চুরি করে জেলে।আরেক বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য টাকা নিয়ে চাকরি বেঁচার অভিযোগে গ্রেপ্তার। তদন্ত যত এগোচ্ছে দেখা যাচ্ছে মানিক বাবুর বিরুদ্ধে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও নাকি গেছিল বহুদিন আগে ,কিন্ত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি নিজেকে সততার প্রতীক বলে দাবি করা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে।   

 মাননীয়া আপনার রাজত্বকাল বাংলার ইতিহাসে এক’মাৎস্যন্যায়’পর্ব হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে।বাংলাকে ধ্বংস করবার সব আয়োজন করছেন আপনি আপনার এই এগারো বছরের রাজত্ব কালে।   ভেঙ্গে ফেলেছেন রাজ্যের অর্থনীতির ভিত।স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে[৬৪বছরে]যার মধ্যে বামফ্রন্টের ৩৪বছরের শাসন কালও রয়েছে এই সময় বাংলার মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১লাখ ৯৪হাজার কোটি টাকা (১৯৪৭-২০১১পর্যন্ত)।আর তৃণমূলের শাসন কালে মাত্র ১১বছরে এই ঋণের পরিমাণ ৫ লক্ষ ১০হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।কেন এতো বিপুল পরিমাণ দেনা করতে হচ্ছে সরকার কে।এই বিপুল ঋণের বোঝা কমাতে কেন শক্ত হাতে রাশ ধরা হচ্ছে না খরচে।    না এই আর্থিক দেউলিয়া পরিস্থিতিতে ও সরকারী অনুষ্ঠানে অহেতুক খরচ কমানোর কোনও উদ্যোগ নেই। কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গা পুজোর কার্নিভাল করবার পর শোনা যাচ্ছে ১৬কোটি ব্যয়ে নাকি সিনেমা উৎসব হবে।   

সরকারী অনুষ্ঠান মানেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বড় বড় কাট আউট দিয়ে শহর মুড়ে ফেলা।সরকারী টাকা ব্যয় করে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মপ্রচার,কাজেই যত বেশি সরকারি অনুষ্ঠান তত বেশি আত্মপ্রচারের সুযোগ তাতে রাজ্যে রসাতলে গেলে যাক ।   এই তো কিছুদিন আগে[১৪ই সেপ্টম্বর]মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এমনই এক প্রচার কার্য চালিয়ে ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দীঘা থেকে শংকরপুরের মেরিন ড্রাইভ মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন, এক মাসের মধ্যেই তার এমন বেহাল দশা যে রাস্তাটি আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল। আরও কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আবার সারানো হবে রাস্তা।   

এই যে রাজ্যবাসীর ১২৭কোটি টাকা বরবাদ হলো এই দায় কার।রাজ্যের  অর্থনীতির এই বেহাল দশার মধ্যেও এইরকম লুঠ।মাননীয়া আপনি তো এই সেদিনও দিল্লি গেছিলেন,প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সরকারি বৈঠক করলেন। সেখানে কী রাজ্যের পাওনা গন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল?     আসলে আপনি দিল্লি যান আপনার কুর্সি বাঁচাতে।আপনি যখন ই প্যাঁচে পড়েন ছুটে যান দিল্লি নিজেকে বাঁচাতে।আপনার দিল্লি যাত্রার ফলে উপকৃত হয়না এ রাজ্যের জনগণ।লাভ হয় আপনার।