পর্শিয়া ভট্টাচার্য্য:- হ্যাঁ আমরা মার্কসবাদী। কেনো জানেন কারণ পৃথিবীর কঠিন বাস্তবকে ব্যাখ্যা করে। ক্ষমতার বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াইয়ের এই অদম্য জেদ যুদ্ধের সবচেয়ে বড়ো অস্ত্র। সেই দিন যারা বাস্তিল ভেঙেছিল, আজ তারাই সিজিও কমপ্লেক্স ঘিরেছে, এরাই তো তারা, যারা সেদিন লেনিনের সাথে মস্কোতে ঢুকেছিল, এরাই ছিল বলিভিয়ার জঙ্গলে ‘চে’-র কমরেড হয়ে, আবার স্বাধীনতা সংগ্রামে এরাই ছিলো, এরাই ছিলো সেদিনের জালালাবাদের মুক্তিযুদ্ধে ‘মাস্টার দা’-র ছায়াসঙ্গী হয়ে। লুম্পেনরা যতই ভুলে যাওয়ার ভান করুক কিন্তু ওরা জানে না ইতিহাসের ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই সময়ের দাবী মেনে সংকীর্ণতাকে সরিয়ে মানুষের জন্য মানুষের স্বার্থে গড়ে ওঠে সত্যের ঐক্য। কারণ ইতিহাস কারুর ইচ্ছেমতো তার চরিত্র বদলায় না।

   তখন দুপুর ২ টো তীব্র দাবদাহ। দূর থেকে স্লোগান ভেসে আসছে “চোর ধরো, জেল ভরো”। একের পর এক বাস লাল পতাকা উড়িয়ে এসে দাঁড়ালো হাডকো মোরে। সরকারের হুমকি ধমকিতে টেবিলের তলায় লুকানো পুলিশরা বেশ ততপর। কারণ বিক্ষোভ ছিলো লুটে খাওয়া সরকারের বিরুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষের। তাই মেলেনি পুলিশের অনুমতি। কিন্তু এই অনুমতির তোয়াক্কা না করেই, শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হওয়া কর্মপ্রার্থীদের চাকুরী – দুর্নীতির তদন্ত ত্বরান্বিত করা দাবিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি ও খাদ্যদ্রব্য, ওষুধে জিএসটি লাগু হওয়ার প্রতিবাদে বামফ্রন্টের ডাকে শুরু হয় বিধাননগরে সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান দুপুর আড়াইটে। সাভারকরকে আরএসএস যেমন বীর বলে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যখন গরু চোর ‘কেষ্টকে বীরের তকমা এঁটে জেল থেকে ছাড়ালেন ঠিক তখনই মানুষ কর্মহীন রোজগারহীন হয়ে দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে, আর তার মধ্যে শাসকদলের লুটের টাকার পাহাড় বের হচ্ছে এর বিরুদ্ধে সল্টলেক, হাডকো মোড় এবং লেকটাউন ও বৈশাখি ফুটব্রিজ থেকে দুপুর আড়াইটে  নাগাদ সংগঠিত  হয় CPI(M)-এর বিশাল মিছিল। রাজপথ ছিলোলালে লাল , সাথে কালো মাথার জন সমুদ্র। 

 ইন্দিরা ভবনের কাছে মঞ্চ বেঁধে সভা হয়। না মঞ্চে কোনো এয়ার কুলার ছিলো না, ছিলো না বাড়তি আড়াম্বর তাতেও পুলিশমন্ত্রীর প্ররোচনায় চেষ্টা হয়েছিল সভা বাঞ্চালের। ওই যে কথায় আছে সে গুড়ে বালি… উপস্থিত ছিলেন আমাদের অভিভাবকরা। না না এসি গাড়িতে সভায় উপস্থিত হয় নি মিছিলের সাথে হেঁটে পৌঁছেছেন সভাস্থলে। কারণ আমাদের নেতারা মানুষ, আর কমিউনিস্টদের মানুষের স্বার্থছাড়া ব্যক্তি স্বার্থ বলে কিছু থাকে না। উপস্থিত ছিলেন কমরেড বিমান বসু, কমরেড মহম্মদ সেলিম, কমরেড সুজন চক্রবর্তী, কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্ররাসহ বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দরাও। এই মুহূর্তে প্রায় প্রতিদিনই কখনও ছাত্র-যুবদের মিছিল, কখনও CPI(M)-এর, কখনও বামফ্রন্ট এই রকমই বিভিন্ন ভাবে দুর্নীতির প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তাঁরা। কখনও আইন অমান্য, কখনও পঞ্চায়েত দুর্নীতির প্রতিবাদে বামেদের রাস্তায় নামতে দেখা গিয়েছে।

সমাবেশস্থল থেকে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান কমরেড বিমান বসু বলেন, গণতন্ত্রকে হত্যা করতে আমরা দেবনা।  মানুষের বাঁচার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, চাকরির অধিকারকে আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। কমরেড সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “কজন জেলে যাবে কজন বাইরে থাকবে বলতে পারছি না। তবে কালিঘাট বাদ দিয়ে হবে না। “আমাদের দাবি, লুঠের টাকা উদ্ধার করতে হবে। লড়াইটা লড়তে হবে। 

কমরেড সুজন চক্রবর্তী বলেন ,অপরাধীদের আসল জায়গা জেল। মমতা ব্যানার্জী নিজের সুবিধার্থে অনুব্রত মন্ডলকে তোষামোদ করছেন, না হলে তো ধরা পড়বেন। এবং কমরেড সুজন চক্রবর্তী এটাও বলেন বামপন্থীরাই রাস্তায়। গত দশ-বারো বছর ধরে বামপন্থীরা ছাড়া কারা রয়েছেন রাস্তায়? তৃণমূল আর বিজেপি সরকার একমাত্র বামপন্থীদের ভয় পায়। এখনও ওদের জানা নেই কমিউনিস্টরা অন্য ধাতুতে গড়া।

শেষ বক্তা আমাদের রাজ্য সম্পাদক কমরেড মহম্মদ সেলিম, তিনি বরাবরই loud an clear তাই তার নিজেস্ব ভঙ্গিমায় সুস্পষ্ট উচ্চারণে বলেন “মিডিয়ার থেকে মিছিলে হেঁটে আসা মানুষ অনেক বেশি IMPORTANT । তাই মিডিয়াকে বলছি মঞ্চের সামনে টা ছেড়ে দেবেন।” এরপরেই তিনি বলেন, “বাংলার পুলিশ উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে। দুজন ছাত্র অপহরণ হল। তখন সি এম ছিলেন কোথায়? তার এম এল-এ রাই বা কি করছিলেন? খুন হওয়ার পর ঢং করছেন। এতগুলো বছর ধরে তৃণমূলের চোর-জোচ্চররা সব জায়গায় দূর্নীতি করে এসেছে। তৃণমূল বিজেপির চাইতে কম নয়। আমরা একচোখা নই আমরা একরোখা। পুলিশের অনুমতির তোয়াক্কা আমরা করি না আমরা বলেছিলাম আসব। আমরা অভিযান করবো। চাকরির প্রার্থীদের ওপর দালাল পুলিশ লাঠি চালিয়েছে। আমরাও বলেছি দেখবো পুলিশের কত জলকামান, কত লাঠি আছে। তাই এসেছি এবং পুলিশকে বলেছি “চোর ধরো, জেল ভরো”… আসলে ওনার কথা এখন আর কেউ শুনছে না, পুলিশ ডাহা ফেল। এই এজেন্সি বিজেপি নয় ২০১৪ সালে আদালতের নির্দেশে এই রাজ্যের নানা দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা শুধু বলেছি গতি বাড়াতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।