—-মোদীর আচ্ছে দিনে চাকচিক্যে ভরা বিলাসবহুল নবনির্মিত সংসদ ভবনে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে “মহিলা সংরক্ষণ বিল” পেশ করে মোদি নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে বলেছেন,” মহিলাদের অধিকার প্রদানের এই পবিত্র কাজের জন্য ঈশ্বর আমাকেই বেছে নিয়েছে। নারী শক্তি বন্দনা অধিনিয়ম দ্বারা আমাদের দেশের নারীশক্তি  এক নতুন ক্ষমতালাভ করবে, যা দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে সুনিশ্চিত করবে। “তবে যেটা তাঁর ঢক্কানিনাদে বলেননি, তা হল, এটা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। বরং ২০২৯ এর লোকসভা ভোটে তা কার্যকর হতেও পারে। তাও আবার অনেক কিন্তু– যদির সিঁড়ি পেরিয়ে। তার আগে জনগণনা, ডিলিমিটেশন–এর নানা ধাপের নামে বিরোধীদের বিরুদ্ধে নানা অস্ত্র প্রয়োগ করার ঘৃণ্য খেলা চলবে। বিরোধীরা তাই সঠিকভাবেই এর ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “এটা একটা নির্বাচনী জুমলা”

সিপিআই(এম)এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, “আমরা দীর্ঘ ২৫ বছর অপেক্ষা করেছি। ২০১৪ সালে মোদি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে মহিলা বিল গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন এই বিলে বলা হয়েছে প্রথমে জনগণনা, তারপর আসন পুনর্বিন্যাস, তারপর বিল রুপায়ন। তার মানে প্রায় ২০৩৪ পর্যন্ত অনিশ্চিত। এটা মোদির আর এক  ধাপ্পাবাজি।” এই ধাপ্পাবাজি দিয়েই দেশ চলছে। আর সেটা দিনের পর দিন অবলীলায় বিরোধীদের কোন রকম পাত্তা না দিয়ে সংখ্যাধিক্যের জেরে চালিয়ে যাচ্ছেন জুমলাবাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নাহলে মণিপুরের মহিলাদের ওপর বর্বরোচিত আক্রমণের পরেও নীরব থাকেন তিনি। লজ্জা — শরম নেই প্রধানমন্ত্রীর। লজ্জা- শরম নেই বলেই তো জনগণের করের টাকায় নিত্য নতুন সাজপোশাক পরে, মেকআপ করে নিয়মিত আত্মপ্রচার করে চলেছেন। আর দেশ চলছে হল্লারাজার  দেশের নিজস্ব সংবিধান মোতাবেক।

মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে হোক। কিন্তু এখন দেশের মহিলাদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে ,  ধর্ষণ হচ্ছে, নারী পাচার হচ্ছে তা কি আদৌ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বন্ধ করে, “নারী শক্তির ক্ষমতালাভের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে পারবেন!!” ফলেন পরিচিয়তে। মহিলাদের অধিকার হরণ, মহিলা নির্যাতনের– পাশাপাশি মহিলাদের আত্মহত্যার সংখ্যা দেখলে শিউড়ে উঠতে হয়। এ আমরা কোন দেশে বাস করছি !! ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ও জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্য অনুসারে জানা যায়, ২০২১ সালে ভারতে ৪৫ হাজারেরও বেশি মহিলা আত্মহত্যা করেছেন। এঁদের অর্ধেকের বেশি গৃহবধূ (৫১.৫ শতাংশ)। এটাই কি মোদির আচ্ছে দিন !!

আরএসএসের রাজনৈতিক দল বি জে পি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের আচ্ছেদিনে দেশবাসী কেমন আছে দেখা যাক–বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান ১০৭ তম। বেকারীর শীর্ষে ভারত। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২৮.৩ শতাংশ বেকার। শহরে থাকা ২৩ শতাংশ যুবক-যুবতীর চাকরি নেই। ২০২১ সালের নভেম্বরে কাজ হারিয়েছেন ৬৮ লক্ষ ভারতবাসী। শিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ কমেছে। যে শিক্ষা নীতি চালু হয়েছে, তাতে সরকারি ভাবে পড়াশোনার সুযোগ থাকবে না বললেই চলে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও তাই। সাড়ে তিন কোটি শিশু আর্থিক অনটনের প্রত্যক্ষ শিকার ।পরোক্ষভাবে সংখ্যাটা আরো কয়েকগুণ। স্কুলে ভর্তি হবার পর ৬২.৯% ছাত্রছাত্রী কলেজে পৌঁছায় না। উচ্চশিক্ষায় মাত্র ১৪.৭% দলিত, ৫.৬ শতাংশ আদিবাসী। লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি থেকে বেড়ে সাড়ে ১৩ কোটিতে পৌছে গেছে। পাঁচ বছরের নিচে ৪৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। ভারতে প্রতি ৩০ মিনিটে আত্মহত্যা করেন একজন অন্নদাতা কৃষক। দেশের ২০ কোটি মানুষ আধপেটা খেয়ে কোনরকমে বেঁচে থাকে। দরিদ্রতম অংশের ৯০ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্য বীমা নেই। ৭২ শতাংশ শিশু, ৫২ শতাংশ বিবাহিত মহিলা ভোগেন রক্তাল্পতায়। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুবই করুন অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে। দারিদ্র্যবহুল দেশ হিসাবে শীঘ্রই তকমা পেতে চলেছে আমাদের দেশ নরেন্দ্র মোদীর “বিশ্বগুরু” “ভারত”।

কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত নীতির জন্যই পেটেন্ট আইন পরিবর্তনের ফলে বিদেশী ও দেশী বীজের সংযোগে উচ্চ ফলনশীল বীজ ও উন্নত প্রাণীসম্পদ আমরা নিজেরা তৈরি করতে পারব না, বরং তার জন্য বিদেশি কর্পোরেট সংস্থার উপর আমাদের নির্ভর করতে হবে। এটাই নাকি মোদির “আত্মনির্ভর ভারত”।

আরো একটি সর্বনাশ সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপাতে শুরু করেছেন। মেক -ইন- ইন্ডিয়ার নায়ক মোদীজি, নতুন বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী স্মার্ট মিটার লাগু করেছেন। চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। যে সময়টাতে সাধারণ মানুষের বিদ্যুতের প্রয়োজন, ঠিক তখনই তার দাম চড়া, আর কর্পোরেটদের ব্যবহারকালীন সময়ের বিদ্যুৎ মিলবে তুলনামূলক অনেক সস্তায়। তার উপর আবার প্রিপেইড মিটারের সৌজন্যে টাকা ফুরোলেই নেমে আসবে অন্ধকার, তীব্র গরমে সাধারণ মানুষ ছটফট করবে। টাকা দিয়ে রিচার্জ করলে তবেই আবার জ্বলবে আলো, ঘুরবে পাখা — চলবে জীবনের চাকা। নচেৎ ফিরে যেতে হবে পুরোনো দিনের  হ্যারিকেন- লন্ঠনের আধো আলো – আধো অন্ধকার দশায়। সেখানেও আমাদের মহানুভব প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে রেখেছেন অকৃপনভাবে, ওখানেও তার বিষাক্ত ছোবল। কারণ, কেরোসিন তেলের এখন রেশনের দাম মাত্র ৮১ টাকা প্রতি লিটার। আবার গ্যাঁটের টাকা খরচ করে কিনতে হবে স্মার্ট মিটার।মোদির এখন ধ্যান – জ্ঞান হিন্দু রাষ্ট্র। তার জন্যই বিশেষ অধিবেশনে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ” ধর্মনিরপেক্ষ “ও “সমাজতন্ত্র “শব্দ দুটি সুকৌশলে বাদ দিয়ে তা নবনির্মিত সংসদ কক্ষে সাংসদদের হাতে তুলে দিলেন দেশের গরীব প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। রাম মন্দির উদ্বোধনের প্রস্তুতিপর্বে, ধর্মীয় উন্মাদনার বাতাবরণে সাধারণ গরীব মানুষের অসচেতনতা ও ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে সুকৌশলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বি জে পি। আসল সমস্যা যথাপূর্বং, সেই তিমিরেই থেকে যাবে। দেশের সার্বভৌমত্ব আমাদের দেশের মূল মন্ত্র। সেই আদি-অকৃত্রিম মন্ত্রকেই আরএসএস পরিচালিত বিজেপি নামক দলটা আমাদের ভুলিয়ে দিতে চাইছে। সংবিধান সমেত আমাদের দেশের নামটাকেই  তারা বদলে দিচ্ছে। এর থেকে জঘন্য মনোবৃত্তি আর কি হতে পারে !যে দলটা “ভারত” আর “ইন্ডিয়া”কে আলাদা করতে চায়, তাদের কাছে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, আবেগ ও মর্যাদাবোধের কোনো মূল্য নাই। তারা শুধু বোঝে বিভাজনের জিগির তুলে, ভোটের বাক্সে ফায়দা তুলে  দেশকে শাসনও শোষণ করতে চায়। আর মুখে “আচ্ছে দিন”মন-কি-বাত” বুলি আউড়ে ধাপ্পাবাজির খেলায় মেতেছেন মোদীজি। মানুষ মোদীজির ধাপ্পাবাজি ধরে ফেলেছে। জোটবদ্ধ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। জোটবদ্ধ হয়েই লড়াই হোক বিজেপির সম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে,তাদের আচ্ছে দিনের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে। আসুন আমরা সকলে মিলে বিজিপির এই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়াই করে আমাদের দেশকে রক্ষা করি।

[তথ্য সংগৃহীত]২৪।০৯।২৩