
দুর্নীতি ও জীবন জীবিকার সংকট থেকে নজর ঘোরানোর সহজতম উপায় হল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে দেওয়া। ভারতে তো বটেই পশ্চিমবঙ্গের মাটিতেও ইদানীং সেই প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। কারণ এই রাজ্যে শাসকদলের মন্ত্রী নেতারা একে একে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি ও গরুপাচার কয়লা পাচার চক্রে যেভাবে জড়িয়ে পড়ছেন তাতে মুখ বাঁচাতে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের তাস ফেলা অন্য সহজ উপায় নেই।
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ এখন আতঙ্কে আছেন কখন তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টি তাঁদের মধ্যে অশান্তির ইন্ধন দিয়ে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা করেন। বামপন্থীদের মতোই তাঁরা অধিকাংশই সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করেন প্ররোচনায় পা না দেওয়ার জন্য। গত রবিবার ৯ ই অক্টোবর কলকাতার মোমিনপুর তেমনই একটি ঘটনার সাক্ষী রইল। শারোদৎসবের পরেই বন্দর এলাকায় ময়ূরভঞ্জ রোডে ধর্মীয় পতাকা ছেঁড়া নিয়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তি শুরু হওয়ার পরে পুলিশি তৎপরতার অভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ নবী দিবসের শোভাযাত্রা স্থগিত করার কথা আলোচনা শুরু করেন কিন্তু স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে শোভাযাত্রা নির্বিঘ্নে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দেন। শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় শোভাযাত্রা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে। সাধারণভাবে ই বন্দর এলাকায় প্রমোটিং ব্যবসা থেকে তৃণমূলী রাজনীতি ধর্মীয় প্রচারকে ব্যবহার করা হয় অবাধে। পুলিশ দেখেও দেখেনা শুনেও শোনে না। সাধারণ মানুষ ছাপ্পাভোট রুখে শাসকদলের জয় ঠেকিয়ে দিতে না পারলেও কান পাতলেই বাতাসে ভেসে আসে তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই এলাকার মানুষ কেমন ভাষায় সমালোচনা করেন ।
৯ই অক্টোবর অর্থাৎ অশান্তির সূচনার পরদিন রাত সাড়ে এগারোটায় বন্দর এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে মেল করে জানান যে এক বৃহৎ ব্যবসায়ী,স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলরের জামাই এবং এক তৃণমূল নেতা সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে স্পষ্ট ইন্ধন যোগাচ্ছেন। অভিযোগটির স্ক্রিন শট সোশ্যাল মিডিয়াতে সহজলভ্য। শনিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পতাকাকে পাকিস্তানের পতাকা বলে ছিঁড়ে দিয়ে দলবল নিয়ে এলাকার পরিবেশ অশান্ত করল যে সেই বাবলু সিং কে সাম্প্রদায়িক প্ররোচনায় ব্যবহার করেছেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও কলকাতা বন্দর এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, যিনি কলকাতা পুরসভার মেয়রও বটেন। স্থানীয় মানুষের ক্ষোভে বাবলুকে গ্রেফতার করা হলেও রবিবার ভোররাতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় মন্ত্রী মশাইয়ের ফোনে। তার আগে বাবলুর হয়ে সাফাই গাইতে থানায় এসে ক্ষুব্ধ জনতার হাতে নিগৃহীত হন ৭৫নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর নিজামুদ্দিন শামস। আসলে বাবলু সিংয়ের নেতৃত্বেই তো ৭৪,৭৫, ৭৮ নং ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের জয় নিশ্চিত হয়েছিল। অথচ পুলিশি তৎপরতা দেখা গেল একদিন পরে যখন সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে উস্কানি দেওয়ার জন্য বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৈরি হচ্ছেন তখন এবং লালবাজারে তাঁকে আটক করার পরে যখন শুভেন্দু অধিকারী তাঁর প্রিয় সংবাদমাধ্যম মারফত ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের প্ররোচনা দেওয়া শুরু করলেন। সোমবার অর্থাৎ ১০ ই অক্টোবর ঐ এলাকায় তিনদিনের জন্য ১৪৪ধারা জারি করা হয় ততক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত দাঙ্গার প্ররোচনা দেওয়া হয়ে গেছে। এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে শান্তি বজায় রেখেছেন সাধারণ মানুষই।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী তবুও রাজ্যে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আগুন জ্বালাতে মরীয়া অন্য কারণে। সঠিকভাবে তদন্ত হলে শুধু নারদা ঘুষ কাণ্ড নয় এই সময়ে ঝড় তোলা তৃণমূল নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ তাতে তাঁর নামও যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি চিট ফাণ্ড মামলাতেও। বামপন্থীদের তোলা ” চোর ধরো জেল ভরো “শ্লোগানের পিছনে ব্যাপক জনসমর্থন মুখ্যমন্ত্রীর মত তাঁর কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বইকি। বিজেপির অন্য নেতারা একটু হতাশ হয়েছেন মোমিনপুর নিয়ে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অশান্তির প্ররোচনা দেওয়া গেল না বলে। পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হয়ে মিডিয়ার সংবাদ শিরোনামে চলে এলেন।