গত কয়েক টা দিন বাংলার মিডিয়া খুব উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদকের এক টুইটকে কেন্দ্র করে।যে টুইটকে কেন্দ্র করে জি টিভি নিয়ন্ত্রিত বাংলা চ্যানেলের সাংবাদিক কমরেড সেলিমের বিরুদ্ধে খাপ বসিয়েছেন সেটির পুরোটার মানে এই দাঁড়ায় যে কয়লা থেকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির টাকা এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ১৫জন বিদেশী যৌন কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাচার করেছে।কিন্ত নন্দী ম্যাডাম তার মালিকের নীতি অনুসরণ করে ১৫টি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা পাচারের অভিযোগটিকে সুকৌশলে পিছনে ঠেলে দিয়ে সামনে নিয়ে এসেছেন শুধুমাত্র যৌন কর্মী শব্দটি। এই শব্দটি ব্যবহার করে নাকি কমরেড সেলিম ভয়ংকর অন্যায় করেছে মার্কসবাদী পার্টির রাজ্য সম্পাদকের মুখে এই যে মন্তব্য মানায় না।

কিন্ত কমরেড সেলিম যে বিষয়টি সামনে এনেছেন ১৫জন বিদেশিনীর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা পাচারের সে নিয়ে কোনও বক্তব্য তেনাদের নেই।
অভিষেকের বিরুদ্ধে তোলা মূল অভিযোগ এবং দিল্লীর বিজেপির সহায়তায় ভাইপোর ইডি কে ঘোল খাইয়ে বিদেশ যাত্রা প্রসঙ্গে কিন্ত নন্দী ম্যাডাম চুপ। ম্যাডামের এই যে হঠাত কমরেড সেলিমের মন্তব্য নিয়ে সিপিআই এম কে কাঠগোড়ায় তোলা তার পিছনে আসল রহস্য টা কী কেন এতো আক্রমণ শূন্য পাওয়া দলটিকে একটু দেখা যাক।
এবারের(২০২৩) পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআই(এম),এবং তাদের জোট সঙ্গীদের সাফল্য অনেক রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে,ভেঙ্গে দিয়েছে বিজেপি -তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া হাউস গুলির তৃন -বিজেপির বাইনারি।মনোনয়ন পর্ব থেকে ভোটের রায় পর্যন্ত সমস্ত রকমের প্রশাসনিক ক্ষমতাএবং নিজস্ব লুম্পেন বাহিনী ব্যবহার করেও বাম কংগ্রেস আই এস এফ জোট কে আটকানো যায়নি ।মরণপণ লড়াই প্রতিরোধ হয়েছে প্রাপ্ত আসন সংখ্যার বিচারে তা খুবই ভালো সেরকম না হলেও এই প্রশাসন এবং তৃণমূলের লুম্পেনদের বিরুদ্ধে গ্রাম বাংলার মানুষের প্রতিরোধ এতেই ঘুম উড়েছে বিজেপি তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলির।

ওরা জানে যে এই তীব্র সন্ত্রাস উপেক্ষা করেও বামেরা ১৩.২ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫.২ শতাংশ পঞ্চায়েত আসন ও ২ শতাংশ সমিতির আসন পেয়েছে। কংগ্রেস ৬.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পঞ্চায়েতের ৪.২ শতাংশ ও সমিতির ৩ শতাংশ আসন জিতেছে। আই এস এফ ও জিতেছে বেশ কিছু আসন।
বামফ্রন্ট পঞ্চায়েতের ৫৬ শতাংশ, সমিতির ৬৯.৪ শতাংশ ও জেলা পরিষদের ৮০.৫ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যেসব জায়গাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যায়নি, সেখানে যে বামেদের অস্তিত্ব নেই এটাও জোর দিয়ে বলা ঠিক নয়।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গায়ের জোরে এবার ও জেতা আসনের ভোট লোকসভা নির্বাচনে কোনদিকে যাবে, বলা মুশকিল। ২০১৯-এর ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সমস্ত আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল তার অনেক আসনেই লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ এ মুখ থুবড়ে পড়েছিল তৃণমূল।
কর্পোরেট পোষিত বিজেপি তৃণমূল এর মিডিয়ার কাছে এই তথ্য ভালোভাবেই আছে।ওরা জানে অত্যাচারিত মানুষ একবার সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেই ক্রমশ সেই প্রতিরোধ আরও আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

একথা আমাদের মনে আছে রক্তস্নাত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের পর ম্যাডাম নন্দী এই নির্বাচনে সন্ত্রাসের জন্য কমরেড সেলিমের দিকে আঙুল তুলেছিলেন যদিও নন্দীর প্রশ্নের যথার্থ উত্তর দিয়ে ওই চ্যানেলটি যে বিশেষ রাজনৈতিক দল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত তার মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন কমরেড সেলিম।

একদিকে কয়লা গরু বালি থেকে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে শাসক তৃণমূলের জড়িয়ে পড়া এবং সেই দুর্নীতির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেকের যুক্ত থাকার অভিযোগ অন্য দিকে তৃণমূল বিজেপির বাইনারি ভেঙে বাম কংগ্রেস জোটের চমকপ্রদ উত্থান দেখে প্রমাদ প্রমাদ গুনছে আর এস এসের দুই রাজনৈতিক দল জোড়া ফুল আর পদ্মফুল। আর সে কারনেই মিডিয়ার সাহায্য নিয়ে ওরা চাইছে বামেদের তথা সিপিআই(এম)কে আক্রমণ করতে তাদের সম্পর্কে কুৎসা রটাতে।কিন্ত ম্যাডাম নন্দীরা যতই তাদের মালিকের নির্দেশে সিপিআই (এম)-র রাজ্য সম্পাদকের সম্পর্কে কুৎসা রটানোর মধ্য দিয়ে তৃণমূল কে রক্ষা করার চেষ্টা করুক বাংলার মানুষ কিন্ত তৃণমূল এবং তাদের সঙ্গী বিজেপির বিরুদ্ধে সব ফ্রন্টে লড়তে প্রস্তুত।