চিটফান্ড তথা সারদার তদন্ত আবার চাগাড় দিতে শুরু করেছে ।বলা ভালো, শীতঘূম ত্যাগ করে আবার আড়মোড়া ভাঙছে ।আর মোক্ষম সময়ে মাননীয়া বলছেন আর এস এস ভালো ।আরও একবার প্রমাণিত হল মাননীয়ার সাথে, আর এস এস এর সম্পর্ক কত গভীরে ।আর এস এস কে এই ভালোর সার্টিফিকেট দিয়ে চিটফান্ড ও সারদা – নারদার তদন্ত যদি ধামাচাপা দেওয়া দেওয়া যায় ।কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি? ? চিটফান্ডের ব্যবসা চালিয়ে আসা তৃণমূল নেতা গত ২ রা সেপ্টেম্বর ২২ হালিশহরের পুরপ্রধান রাজু সাহানীর ফ্ল্যাট থেকে ৫০ লক্ষ নগদ টাকা সমেত একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েকটি ব্যাঙ্ক একাউন্টের নথি উদ্ধার করেছে তারা ।সেটিংএর খেলা যদি বন্ধ হয়ে যায়, ঐরকম রাজু সাহানী অনেক ধরা পড়বে । বেচারা সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী এখন জেলে বসে প্রহর গুনছে ।”যাদের জন্য চুরি করি তারাই বলে চোর “কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি, এম এল এ কয়েক বছর জেল খেটে বেরিয়ে এখন নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন ।এই সব হচ্ছে ওনার অনুপ্রেরণায় ।তৃণমূল কংগ্রেসের আশীর্বাদ ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে চিটফান্ডের রমরমা ব্যবসা শুরু হয় মূলত ২০০৭ সাল থেকে ।ব্যবসা বাড়তে বাড়তে ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত রমরমা ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ল গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে ।গ্রামের মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে চিটফান্ডের ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি কোটি কোটি টাকা তুলতে শুরু করে ।লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেলেই ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেত আর তাদের খুঁজে পাওয়া যেত না ।এইভাবেই ঐ ভুঁইফোড় সংস্থাগুলি টাকা তুলেছে ।২০১০ –২০১১ সালে ৫৩ ,০০০ কোটি টাকা ,২০১১–১২ সালে ৬০,৭০০ টাকা কোটি টাকা, ২০১২–২০১৩ সালে ১,০৬,১২৬ কোটি টাকা ।চিটফান্ডের এই সংস্থাগুলি যখন এইভাবে গ্রাম শহরে টাকা তুলছে, ঠিক তখন ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয়ের প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ল। ২০০৯–২০১০ সালে রাজ্যে এই প্রকল্পে জমা পড়ল ৩০,১৭০ কোটি টাকা ।২০১০–১১ তে সংগ্রহ হয়েছিলো ৩৩,২৫০  কোটি টাকা ।

বামফ্রন্ট সরকারের শেষ দু’বছরে কোষাগারে ঐ টাকা জমা পড়েছিল ।ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে মানুষের বেশী টাকা জমা পড়লে জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত হয় ।উন্নয়নের খাতে ঐ প্রকল্পের একটা অংশ বরাদ্দ হয় ।২০১১ তে আর এস এস এর স্নেহধন্য, দুর্গা মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হলেন।মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায  ও সততার স্ফুলিঙ্গে  প্রথম বছরেই মা-মাটি-মানুষের পকেট কেটে হড়কা টানে  (বানে ) স্বল্প সঞ্চয়ে ধ্বস  নামল ।পরিণতি হল ,২০১২- ১৩ তে ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে ডাকঘরে জমা পড়ল মাত্র ২২,২১০ কোটি টাকা ।বামফ্রন্ট সরকারের শেষ বছরের তুলনায় (২০১০–১১ বর্ষে ) সততার প্রতীক মমতা ব্যানার্জির সরকারের প্রথম বছরে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে ডাকঘরে জমা কম পড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি ।সারদার বেড়েছে (+) আর ডাকঘরে কমেছে(_ ) ।মুখ্যমন্ত্রী হয়েউনি এ সব জানতেন না? সব জানতেন ।কারন ঐ কটা বছরে “সততার প্রতীক” হাসি হাসি মুখে  ( ক্রুঢ় হাসি ) ওনার ছবি দিয়ে লক্ষ লক্ষ হোর্ডিং, ফ্লেক্স দিয়ে রাজ্যটাকে মুড়ে  ফেলা হয়েছিল ।আর কাকতালীয়ভাবে ঐ সময়েই তাঁর হাতে আঁকা “অমর সৃষ্টি “ছবি কয়েক কোটি টাকা দাম দিয়ে কেনেন সারদা কর্তা ।সুতরাং দুয়ে দুয়ে চার –হিসাবটা সহজ সরল। ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত চিটফান্ডের মিডিয়ারাজ কায়েম হয়েছিল সারা রাজ্যে ।সারদার মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল –চ্যানেল টেন ,ইংরাজী সংবাদপত্র বেঙ্গল পোষ্ট, বাংলা সংবাদপত্র “সকালবেলা “, সাময়িক পত্রিকা ” পরমা”,রোজভ্যালির তিনটি টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র পাঁচটি, বিনোদন চ্যানেল একটি তখন রমরমিয়ে চলেছে। ঘটনা পরম্পরায় জানা যাচ্ছে, সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের নেপথ্যে আছে বাম সরকার হঠানোর ছদ্মবেশী কান্ডকারখানা ।চিটফান্ডের মিডিয়ারাজের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বলেই ২০১১ সালের মে মাসে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করল ।

মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হয়েই সারদা গোষ্ঠী পরিচালিত সংবাদমাধ্যমগুলিকে একচেটিয়া সরকারি বিজ্ঞাপন দিলেন।২০১২ সালের ২০ শে মে সবচেয়ে বেশি টাকার রঙিন বিজ্ঞাপন হয়েছিল দু’পাতা জুড়ে ।বশংবদ সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে স্তাবক সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে “মিডিয়া সাম্রাজ্য “গড়ে তোলার মধ্যমণি সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী অবশেষে ধরা পডলেন।কি নিষ্ঠুর পরিহাস! নির্লজ্জের মতো অবলীলাক্রমে মুখ্যমন্ত্রী বলে দিলেন, “যা গেছে তা গেছে, শান্ত থাকুন, আমি আপনাদের পাহারাদার ।”খুব সচেতনভাবেই মুখ্যমন্ত্রী এই কথা বলে গ্রামের মানুষের কষ্টার্জিত টাকা আর উদ্ধার করা যাবে না বলে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন ।বাস্তবে হলও তাই ।এখনও কোনও আমানতকারী তাঁদের গচ্ছিত টাকা ফেরত পান নি ।ঢং করে নামকা ওয়াস্তে একটা “শ্যামল সেন কমিশন “করে বসে রইলেন ।তথ্যই বলে দিচ্ছে উনি নির্জলা অসত্য কথা বলেন ।সুদীপ্ত সেন আজ জেলে ,তিনি মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন ঠিকই ।কিন্তু কার অনুপ্রেরণায় ও স্নেহধন্য হয়ে এইসব কাজ করলেন তা ক্রমশঃ প্রকাশমান ।মানুষের সাথে প্রতারণা তে মুখ্যমন্ত্রী সহ তাঁর মন্ত্রীপরিষদ ,তাঁর দল,আমলারা সুদীপ্ত সেনের থেকে কম কি ??তাঁদের মুখে নীতি -নৈতিকতার লেকচার মানায় না ।মানুষ সব জানছে, বোঝার চেষ্টা করছে ।যাঁরা সাফাই গাইছে, তাদের উদ্দেশ্যে জবাব  চাইছি ১) আমানতকারীদের টাকা কবে ফেরত দেওয়া হবে? ২) শ্যামল সেন কমিশনের বর্তমান ভূমিকা কি এবং কয়েক কোটি টাকার “রিলিফ ফান্ড ” কোথায় গেল? ?ঐ টাকার হিসাব তো দিতে হবে ।মাননীয়া বলছেন, “সরকার এসব জানত না ।

২০১৩ সালের ২৫ শে এপ্রিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রে একটি খবর প্রকাশিত হয়, তাতে বলা হয়, সেবির এক প্রবক্তা বলেছেন, সেবি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে পাঁচটি সংস্থা সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে ।তারা বলেছেন, These Companies are in danger, So are the investors. আরও বলা হয়েছে –it is a pressure cooker bomb situation in Bengal now with Scores of dulions financial institutions mushrooming and duping millions of investors with the lure of quick financial returns.One (Saradha )has gone bust, Sezeeral other disasters are waiting to happen. সেবির সতর্কবার্তা পাবার পর মা-মাটি-মানুষের সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? সব জেনে বুঝে তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো অ্যালকেমিস্টের মালিক কে ডি সিংকে সাংসদ করলেন ।তাও আবার ঝাড়খণ্ড থেকে নির্বাচিত করা হল ।ঐ কে ডি সিংই আবার “তহেলকা ডট কম “এর মেজরিটি শেয়ারের মালিক —২০১৩ সালের ১১ ই ডিসেম্বর বিধানসভায় নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা ও উচ্ছৃঙ্খলতার ঘটনা স্মরণ করুন ।বিরোধী নেতার কথায় –চিটফান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজ্য সরকারের কায়েমী স্বার্থ ।তাই সরকার চিটফান্ডের কার্য্যকলাপকে আড়াল করতে চায় ।বিরোধী দলনেতার এই কথায় সরকার পক্ষের বিধায়কেরা ক্ষিপ্ত ও মারমুখী হয়ে রে রে করে ওঠেন।তাঁদের বেপরোয়া আক্রমণে গুরুতর আহত হন বিরোধীপক্ষের বিধায়কেরা ।কেন এই ঘটনা ঘটল? মুখ্যমন্ত্রী কোন নিন্দাজনক বিবৃতি দিয়েছিলেন? পাঠকরা মনে করে দেখুন ।সারদা নারদার তদন্ত আবার চাগাড় দিয়েছে, চাকরি কেনাবেচার তদন্ত হাইকোর্টের ঘেরাটোপে আগাচ্ছে । ইতিমধ্যে সিঙ্গল বেঞ্চের রায় ডিভিশন বেঞ্চ বহাল রেখেছে ।

গরুচোর কেষ্টর নেটওয়ার্কের মাথারা ধরা পড়েছে ও পড়ছে । বিপুল সম্পত্তির হদিস মিলেছে। চোর ধর জেলে ভর –শ্লোগানে মুখরিত সারা রাজ্য ।ঠিক এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী আবার আগের মেজাজে আত্মরক্ষার তাগিদে আক্রমণের পথ বেছে (Offence is the best defence )নিয়েছেন ।মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “জিভ ছিঁড়ে নেব “।কেউ বলছেন, “পিঠের চামড়া তুলে নেবে, আবার কেউ কেউ বলছেন পিঠে তাল পড়বে, সাবধান “।তদন্ত তদন্ত খেলা না হয়ে যদি সত্যিই সঠিক তদন্ত হয় আদালতের কঠোর কঠিন পর্যবেক্ষণে তাহলেই বোঝা যাবে গুনধর ভাইয়ের দলের মধ্যে কতজন চোর আর কতজন চোর নয়।তখনই বেরিয়ে আসবে সকালবেলার সফেদ সূর্যের আলোর মতোই ।তখন দেখা যাবে কে কার জিভ ছিঁড়তে পারে কিংবা কে কার পিঠের চামড়া তুলে নিতে পারে, আর কার পিঠে কটা তাল পড়ে! সারদা নারদার মত আরও যে সব স্ক্যান্ডাল আছে -সেগুলোরও সঠিক ও দ্রুত তদন্ত এবং তার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকবে  রাজ্যবাসীর আপামর খেটে খাওয়া গরীব বঞ্চিত মানুষগুলো। আর অতন্দ্র প্রহরী হয়ে জেগে থাকবে সকল স্তরের একনিষ্ঠ বামপন্থীরা, যারা এর শেষ দেখতে চায়।

[ _তথ্য সংগৃহীত_ ]  _০৬/০৯ /২০২২_