
চাঁচাছোলা ভাষায় বলেছিলেন শোলে ছবির গব্বর সিং চরিত্রের অভিনেতা প্রয়াত আমজাদ খান। “একমাত্র সুনীল দত্ত ছাড়া আমাদের ইণ্ডাষ্ট্রির আর কেউ রাজনীতি সিরিয়াসলি করেন নি।” ইঙ্গিত ছিল স্পষ্টতই শোলে ছবিতে তাঁর সহ অভিনেতা স্বনামধন্য অমিতাভ বচ্চনের দিকে। কারণ ঠিক সেই সময় , ইন্দিরা গান্ধীর দুর্ভাগ্যজনক হত্যাকাণ্ডের পরে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে সুনীল দত্ত ও অমিতাভ বচ্চন দুই জনপ্রিয় অভিনেতাই কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন। বোফর্স কামান কেনা নিয়ে বিতর্কের পরে ১৯৮৭ সালে ইলাহাবাদের সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। কিন্তু মুম্বাই উত্তর পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের পর পর পাঁচ বারের নির্বাচিত সাংসদ সুনীল দত্ত রাজনীতি ছাড়েন নি। পুত্র সঞ্জয় দত্তের কুকীর্তির কারণে কিছুদিনের জন্য বিব্রত হলেও তিনি ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন। ২০০৪ সালে মনমোহন সিং মন্ত্রীসভায় যুবকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে ২০০৫ সালের ২৫শে মে তাঁর মৃত্যুর দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসার বিরুদ্ধে সুনীল দত্ত তাঁর কন্যা প্রিয়া দত্তকে নিয়ে মুম্বাই থেকে অমৃতসর পর্যন্ত ২০০০ কিলোমিটার শান্তি পদযাত্রায় হেঁটে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন। কাজেই ১৯৯২ সালে অকালপ্রয়াত আমজাদ খান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ভুল কিছু বলেন নি। শারীরিক অনুপস্থিতির কারণেই তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না, যে, সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ভারতের শিল্প ও সংস্কৃতি জগৎ বিশেষত চলচ্চিত্র শিল্পী ও পরিচালকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের নামে রাজনৈতিক হিন্দুত্বকে সমর্থনের প্রশ্নে আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে যায়। একদিকে যেমন প্রয়াত কাইফি আজমী এ কে হাঙ্গল,গিরিশ কানরাডদের মতো ব্যক্তিত্বদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাভেদ আখতার, শাবানা আজমি থেকে রাজ বব্বর, আশুতোষ রাণা, অনুরাগ কাশ্যপ থেকে স্বরা ভাস্বরেরা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চারে আওয়াজ তুলেছেন তেমনি অনুপম খের, পরেশ রাওয়াল কিরণ খের, অক্ষয় কুমার থেকে বিবেক অগ্নিহোত্রী পীযূষ মিশ্রেরা হিন্দুত্বের প্রতি আনুগত্য গোপন করেন নি শুধু তাই নয়, আর এস এস বিজেপির মিথ্যা প্রচার ও ইতিহাস বিকৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এই সংঘাত দিনে দিনে তীব্রতর হচ্ছে।
সত্তরের দশকের শেষভাগে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি পুরোনো ছবি এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরে, সদ্যগঠিত বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে আলোচনা করছেন সত্যজিৎ রায় উত্তমকুমার এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যতদূর জানা যায় বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় করার জন্যই এই বৈঠক। কিন্তু পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের বিশিষ্টজনেরা এমনভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হাসিমুখে কথাবার্তা বলছেন, সরকারের সদরদপ্তরে – গত পনেরো বছরে এমন দৃশ্য দেখা যায় নি। যদিও তার আগে অর্থাৎ বামফ্রন্ট সরকারের চৌত্রিশ বছরের শাসনকালে নন্দীগ্রাম সিঙ্গুরপর্বের আগে সাহিত্যিক,শিল্পী নাট্যকার,চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে সামান্য কয়েকজনের রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ্যে এসেছিল। উৎপল দত্ত, অরুণ মুখোপাধ্যায়, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়রা যেমন বামফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে পথনাটক নিয়ে অংশগ্রহণ করতেন তেমনি নিয়মিত না হলেও ধনঞ্জয় বৈরাগী (তরুণ রায়), দেবরাজ রায়, সবিতাব্রত দত্তের মত আদর্শগতভাবে বামবিরোধী বিশিষ্টজন নির্বাচনের সময় বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নিতেন। সুখীপুরের অসুখ নামে একটি নির্বাচনী নাটকও আশির দশকের মাঝামাঝি দেবরাজ রায়ের উদ্যোগে কয়েক জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছিল। নয়ের দশকের প্রথম দিকে জাতীয় রাজনীতিতে রাজনীতিতে মমতা ব্যানার্জীর উত্থানের পরে তখনকার জনপ্রিয় অভিনেতা তাপস পাল নিজের ফেলে আসা ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক টানে তাঁর কাছাকাছি এসেছিলেন। কিন্তু অনিল চ্যাটার্জী,বিপ্লব চ্যাটার্জী এবং অনুপ কুমার ছাড়া কোন চলচ্চিত্র বা থিয়েটারের অভিনেতা বামফ্রন্ট আমলে শাসকদলের হয়ে ভোটে দাঁড়ান নি, বিজেপির হয়ে একবারই লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জী। অনিল চ্যাটার্জীই কেবল ১৯৯৩ সালে চৌরঙ্গী বিধানসভা আসন থেকে সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে ভোটে জিতেছিলেন। এরপরে ১৯৯৮ সালে গণসঙ্গীত গায়ক অজিত পাণ্ডে কলকাতার বৌবাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতিতে চলচ্চিত্রতারকাদের প্রাধান্য দেওয়া শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানের পরে ২০০১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তাপস পাল ও নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় – এই দু জন চলচ্চিত্র তারকা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটে জিতে রাজনৈতিক জগতে স্থায়ীভাবে পা রাখেন। বামপন্থী অনিল চ্যাটার্জী ও অজিত পাণ্ডের মত শিল্পী হিসাবে খ্যাতি পাওয়ার পরেও গণ আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করার অভিজ্ঞতা তাপস পাল বা নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়দের ছিল না। প্রধানত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার ভরসাতেই তাঁদের নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া। ভোটে জেতার পরেও জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁদের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করা হত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই। সেই ট্র্যাডিশন শতাব্দী রায়, দেব,নুসরত, মিমি চক্রবর্তীদের বেলাতেও চলেছে।
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম পর্বেই বামফ্রন্ট বিরোধী চক্রান্তের শরিক হয়ে যান বামমনস্ক হিসাবে পরিচিত বেশ কিছু খ্যাতনামা শিল্পী সাহিত্যিক। বিশেষত সিপিআই(এম) এর শিল্পায়ন নীতির বিরুদ্ধে “চাষীর জমি কেড়ে নেওয়া”র জিগির তুলে পাল্টা অপপ্রচার শুরু করেন মহাশ্বেতা দেবী, কবীর সুমন নবারুণ ভট্টাচার্য শুভাপ্রসন্ন,নচিকেতা চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন,জয় গোস্বামী, ব্রাত্য বসু, বিভাস চক্রবর্তী,কৌশিক সেন,পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়,অর্পিতা ঘোষ,দেবেশ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। সেই সময়েই তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু হয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,শুভেন্দু মাইতির মত শীর্ষস্থানীয় আদর্শবাদী সাহিত্যিক ও শিল্পীদের। শোভা সেন, চিত্রা সেন, চন্দন সেন (নাট্যকার ও অভিনেতা পরিচালক – দুজনেই), দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়,সীমা মুখোপাধ্যায়রা সাধ্যমত চেষ্টা করছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কুৎসার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য। অনিন্দিতা সর্বাধিকারী নন্দীগ্রামের প্রকৃত তথ্য তুলে এনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরিবর্তনপন্থী চিটফাণ্ড পরিচালিত মিডিয়ায় তাঁদের নাম দেওয়া হয় ” বুদ্ধজীবি” অর্থাৎ তৃণমূলপন্থীদের বিবেচনা অনুযায়ী, যাঁরা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অনুগত। চিটফাণ্ডের টাকায় পরিপুষ্ট টিভি চ্যানেল ও খবরের কাগজ কোমর বেঁধে নেমে পড়ে সঙ্গতে। মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনাকেও লঘু করে দেখানো হয়, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ওপর মাওবাদীদের হামলা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করা হয়না। সিঙ্গুরের তরুণী তাপসী মালিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর দায় যেভাবে সিপিআই(এম) এর ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছিল ঠিক তেমনই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে মাওবাদীদের ভয়াবহ নাশকতামূলক হামলার পিছনেও সিপিআই(এম) কে দেখানোর চেষ্টা শুরু করা হল। সুনন্দ সান্যাল, তরুণ সান্যালের মত বিদগ্ধ ব্যক্তিরা জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের “রাজনৈতিক লাভ” সিপিআই(এম) এর দিকে ঠেলে দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টিকে “ষড়যন্ত্রী ” সাজাতে চাইলেন। যে চারজন সাংবাদিক প্রত্যক্ষভাবে এই অপপ্রচারকে গোয়েবলসীয় কায়দায় সংগঠিত ও বিস্তৃত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে দু জন সুমন চট্টোপাধ্যায় ও কুনাল ঘোষ মমতার জমানায় চিটফাণ্ড কাণ্ডে কারাবাস করলেও প্রবীর ঘোষাল তৃণমূল কংগ্রেসের এম এল এ হয়েছিলেন ও পূষণ গুপ্ত স্বমহিমায় ৩৬৫ দিন তাঁর দৈনিক পত্রিকায় এখনো “সেকু মাকু”দের গাল পাড়েন।
পশ্চিমবঙ্গের প্রার্থিত পরিবর্তন অর্থাৎ ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট পরাজিত হওয়ার পরে শিবির বদলে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করলেন আবুল বাশার, ইন্দ্রনীল সেন, অরিন্দম শীল এবং সুবোধ সরকার। পরিবর্তিত পশ্চিমবঙ্গে শুরু হল শিল্পীদের নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। ২০১১ সালে একুশে জুলাই এর শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের সঞ্চলনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কুনাল ঘোষ। সে বছর থেকেই দেখা যায় টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ার পরিচালক ও শিল্পীরা মুখ্যমন্ত্রীর আশেপাশে। বামফ্রন্ট আমলে ব্রিগেড সমাবেশে এমন দৃশ্য দেখা যেত না। প্রয়াত দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়,সুপ্রিয়া দেবীর মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পীদের এই স্তাবকদের ভিড়ে দেখলে সংবেদনশীল মানুষ বেদনাহত হতেন। সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন রা তো লোকসভা নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ছাড়াই তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিট পেয়ে এম পি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে শিল্পী বুদ্ধিজীবীদের মর্যাদা প্রদর্শনের অজুহাতে এই চলচ্চিত্র শিল্পীদের পাশাপাশি অর্পিতা ঘোষ ডেরেক ও ব্রায়ানদের রাজ্যসভার এম পি হিসাবে পাঠিয়ে শিল্প ও সংস্কৃতিজগতে অনুগৃহীত একটি বাহিনী তৈরি করতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অনুগ্রহপ্রার্থী বাহিনীর হাতেই এখন কলকাতা ও জেলা শহরে গানমেলা থেকে নাট্যমেলায় সুযোগ পাওয়ার ছাড়পত্রের ঠিকাদারি। কোন কোন দল সরকারি প্রেক্ষাগৃহে থিয়েটারের শো করতে পারবে না সেই সিদ্ধান্তও নির্ভর করে এই অনুগ্রহভাজন বাহিনীর ওপরে। টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়ায় ক্যামেরার পিছনে বা সামনে দাঁড়ানোর জন্য তৃণমূল সরকারের বিশ্বাসী ব্যক্তি ছাড়া অসম্ভব। চন্দন সেন বাদশা মৈত্র সব্যসাচী চক্রবর্তীদের মতো যাঁরা প্রশ্নাতীতভাবে নিজেদের যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই “নিষেধাজ্ঞা” নেই বটে কিন্তু লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে আনুগত্যের প্রতিযোগিতার কারণে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদী রাজনৈতিক ছায়াছবি নির্মাণ গত বারো বছর ধরে বন্ধ। ২০১০ পর্যন্ত বাংলা ছবির খুনি অশিক্ষিত ভিলেনের মুখের সংলাপে অনায়াসে মার্কস এঙ্গেলস লেনিনের নাম যুক্ত করে দেওয়া হতো – এখন তো সেসব বন্ধ।
চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে প্রয়াত তাপস পালের নাম যুক্ত হয়ে যাওয়ার পরে আরও একটি কথা সাংবাদিকদের একাংশের মধ্যে চর্চা হতো,তা হলো বিধায়ক ও সাংসদদের জন্য বরাদ্দ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকার ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আনার জন্যই তাঁদের টিকিট দিয়ে ভোটে দাঁড় করিয়ে জিতিয়ে আনা। ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৯ থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একই পথে হাঁটছে। রূপা গাঙ্গুলি লকেট চট্টোপাধ্যায়,অগ্নিমিত্রা পাল, হিরণ চ্যাটার্জী,কল্যাণ চৌবে অশোক দিন্দা রা এখন শুভেন্দু সুকান্ত দিলীপ শমীকের পরেই বঙ্গ বিজেপির মুখ। রূপা গাঙ্গুলি নিজেকে মমতা ব্যানার্জীর বিকল্প হিসাবে তুলে ধরতে গিয়ে ক্ষান্ত হয়েছেন,আপাতত এই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন অগ্নিমিত্রা পাল এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে হাওয়া বুঝে পদ্মফুল থেকে ঘাসফুলে গিয়ে গায়ক বাবুল সুপ্রিয় এবং প্রবীণ চলচ্চিত্র অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা এখন ঘাসফুলে। বাবুল সুপ্রিয় তো এখন মন্ত্রীসভার সদস্য। আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা র সঙ্গে তাঁর মিল একটাই, দুজনের ব্যর্থতা নিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং বন্ধু সমর্থকরাও সন্দেহপ্রকাশ করেন না।
লেখা শেষ করার আগে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন । ২০১১ সালের পর থেকে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রদর্শিত ছবির মান এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর সবজান্তা মনোভাবের কারণে সন্দেহ নেই। তৃণমূল বিরোধী অবস্থানের পরিচালক অভিনেতারা এই সময়ের চলচ্চিত্র উৎসবে যথাযোগ্য সম্মান পাবেন না এটাই স্বাভাবিক অনীক দত্তের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবির প্রদর্শনের প্রেক্ষাগৃহ এবং সময় কোনটাই সঠিকভাবে বাছাই হবে না সেটাই প্রত্যাশিত কিন্তু বারাসত কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের অনুগত বিধায়ক অভিনেতা পরিচালক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী কোন যুক্তিতে আমন্ত্রণ পান না তা এখনো ধোঁয়াশাময়। দ্বিতীয় কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন বারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক জনপ্রিয় পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। সুন্দরবন এলাকায় নারীপাচারচক্র নিয়ে ওয়েব সিরিজ” আবার প্রলয় ” সিরিজে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের দুর্নীতিগ্রস্ত অংশটির বিশ্বাসযোগ্য ছবি দেখিয়েছেন এবং গ্রামের মেলায় তাঁবুতে লাস্যময়ী নর্তকীর নাচের সঙ্গে খেলা হবে গান শুনিয়েছেন ,তার পরেও রাজ চক্রবর্তী বহাল তবিয়তে নিজের আসনে রয়েছেন তার প্রধান কারণ বোধহয় সাংসদ অর্জুনা সিংয়ের রাজনৈতিক দোদুল্যমানতা এবং সরাসরি এই জাতীয় ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তির যোগাযোগ ও মদতের কথা ইশারা ইঙ্গিতেও না বলা। এখনো আনুগত্যে চিড় ধরেনি রাজ চক্রবর্তীর এটুকু তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝেছেন। নয়ত হাসির খোরাক দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ ইনস্পেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করা মন্ত্রী মশাই পার্থ ভৌমিকও রেহাই পেতেন না।