মমতা ব‍্যানার্জী খোঁজ নিন, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বহড়ুর এক বিডিওর বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক দপ্তরের সর্বোচ্চ কর্তা আদালত অবমাননার মামলা করেছেন, কারণ,পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে হবে আদালতের এই নির্দেশ অগ্রাহ‍্য করে তিনি শাসকদলের দুষ্কৃতীদের অবাধে বূথ দখল করতে দিয়েছেন,যখন হিংসার মাত্রা এতোটাই বেশি যে, সমস্ত ভোটকর্মীরা ভয়ে পালিয়ে গেছেন বুথ ছেড়ে,কেবল পালাতে না পেরে শাসকদলের দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন, প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা সেই অভিযোগকারী সরকারি কর্তার দপ্তরের কর্মী যাঁকে নিয়মিত স্নায়ূরোগের ওষুধ খেতে হয়। জেলাশাসকের গাড়িতে আধা সামরিকবাহিনীর প্রহরায় কলকাতায় ফিরেছেন সেই মধ‍্যবয়স্ক সরকারি কর্মী। সাধারণ ভোটারের নিরাপত্তার কথা ছেড়ে দিন, ভোটকর্মীর দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশন বা রাজ‍্য সরকার – কারুরই ছিল না।

কে কাকে কিভাবে কখন গুলি করবে তা তো বোঝা সম্ভব নয় – এই ভাষাতেই এক দিনে নির্বাচন চলাকালীন আঠারো জনের প্রাণহানির ঘটনার দায় রাজ‍্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা অগ্রাহ‍্য করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ হেন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব‍্যক্তির পরিচালনাধীন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দূরে থাক পর্যাপ্ত রাজ‍্য পুলিশও যে ভোটার ভোটকর্মী এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন‍্য মোতায়েন থাকবে না,তা বোঝা গিয়েছিল। ফলে প্রশাসনিক ব‍্যর্থতার সুযোগ নিয়ে জন সমর্থন হারাতে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা গায়ের জোরে ছাপ্পা ভোট দিয়ে জিততে চাইবেন না পারলে ব‍্যালট বাক্স পুকুরে ফেলে দেবেন ,এবং বিরোধী পক্ষের কোন কোন সমর্থক ব‍্যালট বাক্স নিয়ে দৌড়ে পালাবেন এই দৃশ্য খুব অস্বাভাবিক নয়। “নির্বাচন কমিশনার নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনের” বলে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও প্রশাসন যে তাঁর দপ্তরের মতোই শাসকদের বশংবদের ভূমিকায় সফল তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন যথেচ্ছ গুলি বোমা চলা এবং রক্তাক্ত মৃতদেহের মিছিল সাক্ষ‍্য দিচ্ছে। এই মিছিলে সিপিআই(এম),আই এস এফ,কংগ্রেস তৃণমূল,কংগ্রেস, বিজেপি এমনকি সাধারণ ভোটারের নিষ্পন্দ শরীরও। ভোট শুরুর তিন ঘন্টা পরে নিজের দপ্তরে পৌঁছেছেন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা। তখন পর্যন্ত ছ জনের মৃত্যু সংবাদ পৌছে গেছে কন্ট্রোল রুমে। আড়াইটে নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব প্রাপ্ত আধিকারিক চিঠি লিখে অভিযোগ করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের জন‍্য থাকার জন‍্য জায়গা বা গাড়ির ব‍্যবস্থা নেই, ডিউটি কোথায় করবেন তাঁরা সে বিষয়েও কোন প্রশাসনিক নির্দেশ নেই। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, প্রশাসনের কাছ থেকে মাত্র তিনজনের মৃত্যু সংবাদ তাঁরা পেয়েছেন বাকি কারুর মৃত্যু নির্বাচনী সন্ত্রাসের কারণে নয়।

১৯৯৩ সালে সংঘ পরিবারের নির্দেশে কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতা ব‍্যানার্জী নিজের রাজনৈতিক অনুগামীদের নি গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়ার মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে পারস্পরিক বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করেন। চাষের ফসলের ভাগ থেকে শুরু করে গ্রামের এলাকা উন্নয়নের বিষয়ে উদ্দেশ‍্য প্রণোদিত বিরোধিতা শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিজেপির হাত শক্তিশালী করার জন‍্য সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়। যা নন্দীগ্রামের কেমিক্যাল হাবের জমি অধিগ্রহণের খবরে মুসলিমদের ধর্মস্থানের জমি কেড়ে নেওয়ার গুজব মিশিয়ে দেওয়া হয়। জাত পাতের বিভাজন শুরু হয় ভোটারদের মধ‍্যে। গত বারো বছরে এই বিভাজন রাজনৈতিক সংকীর্ণতার আবহাওয়া তৈরি করেছে গ্রাম বাংলায়। প্রবল অর্থনৈতিক সংকট,কর্মসংস্থানের সমস‍্যা ও দ্রব‍্যমূল‍্যবৃদ্ধির কারণে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বামপন্থীদের আনা জীবন জীবিকার নিরাপত্তার দাবি সামনে চলে আসায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির জাতপাত ও ধর্মের রাজনীতি কিছুটা পিছু হটে। নিয়োগ দুর্নীতি, আবাস যোজনার দুর্নীতি, এন রেগার জব কার্ডের দুর্নীতি তৃণমূল কংগ্রেস জনসমর্থনের ভিত নড়িয়ে দিয়েছে বলেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে একতরফা জিততে চেয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি কারণ ২০২৩ কোনভাবেই ২০১৮ নয়। প্রতিরোধ বিহীন সন্ত্রাস হয়নি গ্রামবাংলায়।

গায়ের জোরে ভিত আলগা হয়ে যাওয়া ইমারতের ভাঙন ঠেকানো যায় না, বরং গোটা ইমারতটাই গায়ের ওপর পড়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তৃণমূল কংগ্রেসের তেমন পরিণতি নিশ্চিত হওয়ার ইঙ্গিত যেদিন পাওয়া গেল সেই তারিখ কেবল পশ্চিমবঙ্গের ১৫ তম পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন নয় ফ‍্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ভারতে তথা পশ্চিমবঙ্গের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার অতন্দ্রপ্রহরী কমরেড জ‍্যোতি বসুর ১১০ তম জন্মদিন।