এক্সিট পোলের ফলাফল বেরিয়ে গেছে, এবং বেশ স্পষ্ট ভাবেই তা বেরিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এক্সিট পোলের ফলাফল বত্রিশ, এর মধ্যে নির্বাচনের দিনের পরিসংখ্যান চৌদ্দ। রাষ্ট্রযন্ত্রের দয়ায় ২০০% হারে আজ আমার রাজ্যের সহনাগরিকের পরিচয়ে বদল হয়েছে। পরিসংখ্যান হিসাবে আজ তাদের পরিচর “ডেড ভোটার।” আর খুনি কেউ নির্দিষ্ট এক জন নন।এই এক্সিট পোল আসলে রাষ্ট্র নির্মিত নির্দেশিত একটি অর্গ্যানাইজ ক্রাইমের ফলাফল।

যদিও ২০১৮ পরবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচন এই এক্সিট পোলের ফলাফলের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে না, হ্যাঁ অবশ্যই সহনাগরিক খুন হয়ে যাওয়ায় সমব্যাথী অবশ্যই হবে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ থেকে নীচুতলা অব্ধি অবশ্যই এই রাষ্ট্রীয় মদতে হওয়া খুন কে কড়া ভাষায় নিন্দা করবেন, প্রতিবাদে পথে নামবেন। কিন্তু এই নির্বাচন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে প্রতিরোধের জন্য। প্রতিবাদ একটি স্বর হলে প্রতিরোধ তো একটি সামগ্রিক স্পষ্ট অবস্থান।  

সরকারী কর্মচারীদের নির্বাচনে মেশিনারি হিসাবে বাধ্যতামুলক ভাবে ব্যাবহার করা হয়, আর আজ সেই সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে প্রায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হল এক গুচ্ছ সরকারী কর্মীকে। নিরাপত্তা পাওয়ার মত অতি প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয় টা শুধুমাত্র বই-এর পাতায় তোলা থাকল। হাইকোর্ট এর রায় কে কাঁচকলা দেখিয়ে সিভিক সেন্স হীন সিভিক বীরপুঙ্গব-এর দল কখনও জলপাই রং এর জার্সি কখনও আবার পুলিশের জার্সি ইত্যাদি পড়ে ওপরতলার নির্দেশে সারাদিন যে খেলা ধূলোটা করে বেড়ালেন গোল ভালোই হতে পারত, কিন্তু প্রতিরোধের ডিফেন্স লাইন খেলাটাকে গটাপেটার পর্যায়ে নামতে দিল না।

আজ বাংলার বিভিন্ন বুথে বুথে অপদার্থ নির্বাচন কমিশনের অপদার্থতার প্রমাণ হিসাবে  লুঠ(সে লুঠ আবার কখনও করেছে সেক্টর অফিসার নিজে), ছাপ্পা, সকেট, নাড়ু, ভোট শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ব্যালট বাক্সে তালা পড়ে গিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ইত্যাদি ঘটনা যেমন জীবন্ত দলিল হয়ে থাকল, ঠিক সেভাবেই গ্রামের মেয়ে বৌ দের কাটারি হাতে জোরালো প্রতিরোধ, কিংবা ছাপ্পা হয়ে যাওয়া ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়া, কিংবা ছাপ্পা হয়ে যাওয়া ব্যালটে জল ঢেলে দেওয়া কিংবা লাইনে দাঁড়িয়ে সোচ্চারে বলা- “আমরা যতক্ষণ না ভোট দিচ্ছি যাব না” গণতন্ত্র নামক প্রতিষ্ঠানটিকে পুরোপুরি শেষ হতে দেয়নি। বলা যায় প্রতিরোধ বাঁচিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রকে। প্রতিবাদের স্বর অক্সিজেন পেয়েছে এই প্রতিরোধ নামক স্পষ্ট অবস্থান থেকে। রায়না, কাঁকসা, মেমারি, তিহাড়ের খাঁচায় বন্দী সরকারি ভাবে উপাধিপ্রাপ্ত বীরের বীরভূমে প্রতিরোধ হয়েছে। 

মথুরাপুর, দেবীপুর, বাসন্তী, রাণীগঞ্জ সহ বহু জায়গায় মানুষ প্রতিরোধ এর ভাষা বলেছে। বিভিন্ন জায়গায় দলীয় পোলিং এজেন্টরা আহত হয়েও মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে উন্নয়নের ফুটবল মাঠে জমাট ডিফেন্স লাইন বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবাদের ভাষা আর প্রতিরোধের স্পষ্ট অবস্থান কীভাবে গণতন্ত্রের হাত শক্ত করে সেটাই আবারও দেখালো ২০২৩ এর নির্বাচন।