২০২৩ এর পঞ্চায়েতের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রের নিধনযজ্ঞের  খেলায় মেতেছেন মমতা ব্যানার্জি ও তার সাগরেদ রাজীব সিনহা। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ও মাননীয় নির্বাচন কমিশনার আপনারা কি শুনতে পাচ্ছেন মা-বোনেদের কান্না, স্বামীহারা স্ত্রীর আর্তচিৎকার, বোমা বারুদের ধাক্কায় শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবার ছবি দেখতে পাচ্ছেন!! পিস্তল নাচিয়ে নাচিয়ে যারা বুথে ঢুকে ভোটারকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধ্য করালেন তাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন? আপনারা কি কালা, কানা, বধির হয়ে গেছেন! খুব তো গণতন্ত্রের বড়াই করেন– গণতন্ত্রের নাম করে আর কত প্রহসন করবেন, কত জীবন নেবেন ! এই মৃত্যুর জন্য আপনারা কি দায়িত্ব এড়াতে পাড়েন ? না। 

আপনাদেরকেই তো এর দায়িত্ব নিতে হবে।  কয়লা চুরি ,গরু চুরি ,চাকরী চুরি, সারদা–নারদার টাকা চুরি করে এরপর ভোট চুরির নেশায় মেতে উঠে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চান ।এখনো সময় আছে ভাবুন ।ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না। আপনি রোমের সম্রাট নিরো কেও ছাপিয়ে গেলেন। সারা রাজ্য যখন  অশান্তির আগুনে জ্বলছে তখন আপনি কোথায়?  যাদের জীবন গেল তাদের বাড়িতে যান। তাঁদের পরিবারে কোটি খানেক করে টাকা দিয়ে আসুন। তাঁদের পরিবারে চাকরির ব্যবস্থা করুন। ক্ষমতার লোভে ও দম্ভে দিশেহারা হয়ে গেলেন নাকি ! আপনাদের কোন মানবিকতা ,বিবেক পর্যন্ত নাই!! ছিঃ। অথচ আপনি ২০১১ এর আগে গণতন্ত্রের জন্য গলা ফাটিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছিলেন। অভিনয় করেছেন মানুষকে অসত্য কথা বলে। গরিবের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আপনি ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন।আজকে রাজ্যে কি হচ্ছে মানুষ বুঝেছে। আপনি সহ আপনার চেলা চামুণ্ডারা, টাকা ইনকাম করা ও ক্ষমতার নেশায় মেতে উঠে ক্ষমতাকে ধরে রাখতে চাইছেন যেনতেন প্রকারে। মানুষও তৈরি হচ্ছে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জন্য। যার জন্যই প্রতিরোধ হচ্ছে গ্রামে গ্রামে। এই প্রতিরোধ আরো বাড়বে। ফলাফল ঘোষণার পর আপনার ভাইয়েরা কি থামবে? যদি না থামে তাহলে মানুষ ঘরে ঘরে প্রস্তুত হচ্ছে নিজেকে ও মানুষকে বাঁচাতে।এত উন্নয়ন করেও মানুষকে বিশ্বাস করতে পারলেন না! তার জন্য ভোট চুরি করে মারদাঙ্গা করে জিততে হবে ! ছিঃছিঃ। মহিলা প্রার্থীদের উপর নিগ্রহ, অত্যাচার হচ্ছে আপনি এগুলো দেখতে পাচ্ছেন না। ভাইদেরকে বলতে পারছেন না  বন্ধ করার জন্য। একজন মহিলা প্রার্থীর ইজ্জত যাবে, আর আপনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এটা মেনে নেবেন? নাকি চোখে ঠুলি পড়ে বসে আছেন। মানুষ যে নীতি কে ভালবাসবে, যাকে পছন্দ করবে তাকেই সে ভোট দেবে। তার ভোটাধিকার সে স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করবে এটাইতো গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। মানুষ যাকে ভালো বুঝবেন তাঁকেই নির্বাচিত  করবেন। সেক্ষেত্রে এত বাধা কেন, এত ছাপ্পা কেন, এত বুথ দখল কেন, এত মারধর কেন ? কে জবাব দেবে ? আপনাকেই তো জবাব দিতে হবে। আপনি কি রাজ্যে গৃহযুদ্ধ বাধাতে  চাইছেন ।বিরত থাকুন। না হলে আপনাকেই পরে আফসোস করতে হবে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ভোটের অভিজ্ঞতা হিসাবে আমাদের রাজ্যের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে দুটি ঘটনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গোঘাটের সুশীলা মুদি নমিনেশন পত্র দাখিল করার পর থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত তার ওপর এত নির্যাতন কেন? একটা ২৯ বছরের মেয়েকে আপনার দলের এত ভয় !! আসলে ভয় পাচ্ছে লাল ঝান্ডাকে। সেই মুদিপাড়ায় ঘর ভাঙচুর হল,  সুশীলা মুদির বুথ আএজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হলো না, প্রার্থীর মুখে কাপড় বেঁধে নিয়ে যাওয়া হলো বনের দিকে। গ্রামের মানুষ বেরিয়ে উদ্ধার করে বুথে পুনরায় বসিয়ে দিয়ে এল। ভোট প্রক্রিয়ায় আধা সেনা বা পুলিশ সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে প্রয়োজন ঠিকই কিন্তু তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে এই দুর্বৃত্তের শক্তিকে পরাস্ত করা যায় না। চাই নিজেদের কোমড়ের বল। আর সেই বলেই বলীয়ান হয়ে শত্রুপক্ষের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তার দিকেই তাক করতে হবে। তবেই এই শক্তি পর্যুদস্ত হবে। সুশীলা মুদিকে যখন পাওয়া যাচ্ছিল না তখনই গ্রামের মানুষ বেরিয়ে পড়ে তাকে উদ্ধার করে আনতে। এবং বুথে ঢুকেও দিল। কিন্তু সুশীলা বেশীক্ষন বুথে থাকতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেসের মস্তান বাহিনীর দাপটে। সুশীলার জয় নিশ্চিত জেনেই বীরপুঙ্গবের দল ভোট চুরি করল। অপরদিকে গোঘাটের আর একটা বুথে মহিলারা কলার ধরে ভোট লুঠেরা দের বের করে দিয়ে গেট বন্ধ করে দিল। মেয়েরাই গেটে পাহাড়ায় থাকেল।পুলিশকেও ঢুকতে দিল না। ঝাঁটা পেটা করল পুলিশকে। বিডিও গিয়ে ছাপ্পা হবে না জানালে তারপর পুলিশ বুথে ঢোকার ছাড়পত্র পায় মহিলাদের কাছ থেকে। প্রশাসনের প্রতি কতটা অনাস্থা হলে এই কান্ড ঘটে। আরও একটি বুথের অভিজ্ঞতা হল স্বামী স্ত্রী কঠিন লড়াই করে ছাপ্পা হুলিগানদের বুথ থেকে বের করে দেয়। এমনকি একটি পুলিশ ছিল, তাকেও সি পি আই (এম) প্রার্থী মোমেনা বিবি বলে,” আপনি কি করতে আছেন, থানায় চলে যান।”মোমেনা বিবি সেই পুলিশ কে বুথ থেকে বের করে দেয়।কি সাহস , মনোবল মজবুত হলে এই ঘটনা ঘটতে পারে। স্বামী আব্দুস সাত্তার পোলিং এজেন্ট,তার স্ত্রী মোমেনা বিবি সিপিআই (এম )প্রার্থী। সারা রাজ্যের সাথে আমাদের এই এলাকাতেও ভোটারদের ভোট দিতে যখন বাধা দেওয়া হচ্ছে, ব্যালট পেপার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, তখন ভোটাররা ঐক্যবদ্ধভাবে রাগে, ক্ষোভে, ঘৃণায় ছাপ্পাকারিদের হাত থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে, উড়িয়ে দিচ্ছে, ছিঁড়ে দিচ্ছে, ব্যালট বক্স না ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, জলে ফেলে দিচ্ছে, পুড়িয়ে দিচ্ছে। সেই বুথে আবার পুনর্নির্বাচন হচ্ছে। এগুলো কি ছোটখাটো ঘটনা ! নির্লজ্জ। সারাদিন নির্বাচনের কাজ সেরে রাতে পুরনো কাগজ ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎ ৩০-১১-১২ তারিখের আনন্দবাজারের পাতায় বিচারপতি কাটজু, মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠির কিয়দংশ পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে দিলাম। চিঠিতে মাননীয় কাটজু লিখেছেন,”সি এন এন — আই বি এন চ্যানেলের শো -এ আপনি তানিয়া ভরদ্বাজকে অপমান করেছিলেন। তাঁর কাছেও আপনার ক্ষমা চাওয়া উচিত । তারপর লিখছেন,” আমি কলকাতায় যাতায়াত করে জেনেছি, রাজ্যের মন্ত্রী আমলারা আপনার সামনে নির্ভয়ে কথা বলতে পারেন না। আপনার অনিশ্চিত এবং খামখেয়ালী আচরণে তটস্থ থাকেন। খুব কম করে বললেও রাজ্য প্রশাসনের ক্ষেত্রে এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থা। নিজেকে না বদলালে, সহনশীল না হলে আপনি এইভাবে বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। “বিচারপতি কাটজু প্রায় বার বছর আগে যা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন তা অচিরেই রাজ্যের মানুষ দেখতে পাবেন। এখন উনি আরও ভয়ঙ্করী হয়েছেন।সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী কেবলমাত্র ব্যক্তি স্বাধীনতারই অধিকার দেয় না, সেই সঙ্গে জীবনেরও অধিকার দেয়।( রাইট টু লাইফ )গণতন্ত্রের অপরিহার্য পূর্ব শর্ত হলো পরমত সহিষ্ণুতা।আপনারা এত অসহিষ্ণু কেন ।মানুষের জীবন নিয়ে আর কত খেলা করবেন, এখনই তো ঘর ভাঙচুর শুরু হয়ে গেছে। বাইক বাহিনী পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করছে।তারপর তো আছে পুলিশি সন্ত্রাস। মিথ্যা মামলা শুরু হয়েছে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে।আমাদের এলাকার একটি বুথে ব্যালট বক্স যারা জলে ফেলে দিল, তাদের পুলিশ অ্যারেস্ট করল না। অ্যারেস্ট করল সিপিআইএমের দুইজন নিরীহ কর্মী যারা বাড়িতে ছিল। এটা তো এক প্রকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও নিপীড়ন। রাজ্যে যখন এই অরাজকতা চলছে তখন রাজ্যের তৎকালীন বুদ্ধিজীবীরা  কোথায় গেলেন। ওই সব বুদ্ধিজীবীরা তখন গণতন্ত্র গেল, গণতন্ত্র গেল বলে তারস্বরে চিৎকার করতেন। তাঁরা এখন কোথায়!! মমতা ব্যানার্জিকে ক্ষমতায় বসানোর পিছনে তৎকালীন সময়ে সংবাদ মাধ্যমেরও একটা ভূমিকা ছিল। আজকে সেইসব সংবাদপত্রের মধ্যে দু -চারটি সংবাদপত্র এখন মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধাচরণ করছেন কেবলমাত্র আই ওয়াশ করার জন্য। না হলে তো বিক্রি কমে যাবে। লজ্জার মাথা খেয়ে আজ 

১০।৭।২৩ তারিখে  আনন্দবাজার পত্রিকা তার সম্পাদকীয়র  শেষ দিকে লিখেছে,” মুখ্য প্রশ্ন একটাই: ভোট মানেই হিংসার উন্মত্ত অনুশীলন—- গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই এই বাস্তব কেন এমন ভাবে কায়েম হল? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় রাজ্যের শাসকদের , কারণ দীর্ঘ ১২ বছর তাঁরাই ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত। তাঁদের উদ্দেশ্যে রাজ্যের নাগরিকদের একটাই দাবি : ছেঁদো কথা রাখুন,পশ্চিমবঙ্গে শেষ হোক দূঃশাসনের পালা। এই কুৎসিত তান্ডব নাগরিক সমাজের মাত্রা অতিক্রম করে গিয়েছে। “আনন্দবাজার পত্রিকার মাথায় ফুল চন্দন পরুক। দুঃশাসনের পালা   শেষ করবে বাম – ধর্মনিরপেক্ষ– গণতান্ত্রিক শক্তিই। এই নির্বাচনে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে প্রতিবাদ প্রতিরোধে। মানুষের জয় অনিবার্য। আগামীকাল ভোট গণনা। গণনাতেও কারচুপি, চুরির পরিকল্পনা চলছে। এটাও রুখতে হবে। এত চুরি, বুথ দখল,ছাপ্পা সত্ত্বেও, বামপন্থীদের শক্তি আগামীদিনে বাড়তে চলেছে এটা নিশ্চিত। 

১০।০৭।২৩[ তথ্য সংগৃহীত]