২০২৩ সালের পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনরুদ্ধারে জনগণের সংগ্রামের এক নতুন অধ‍্যায় রচনা করল। স্পষ্টতই এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন বামপন্থীরা। কংগ্রেস এবং আই এস এফ তাঁদের শক্তি অনুযায়ী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। দুর্নীতি ও লুটের রাজনীতির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হয়ে লড়াই করলে আগামীদিন তৃণমূল ও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ হালে পানি পাবে না,পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল সেদিকেই ইঙ্গিত দিল।  খাতায় কলমে তৃণমূল কংগ্রেস জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিতে  একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখলেও গ্রাম পঞ্চায়েতে সাফল‍্যের নিরিখে যৌথভাবে তৃণমূল ও বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে এবং বিজেপি কে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছে। 

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ৮ ই জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভোট নিয়ে যে সীমাহীন সন্ত্রাস দেখেছিলেন,১০ই জুলাই ৬৯৬টি বুথে পুর্ননির্বাচনের দিনে সেই ছবি বদলায়নি। নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিলের দিন থেকে পুর্ননির্বাচন পর্যন্ত মোট চল্লিশজন প্রাণ হারিয়েছেন যাঁদের মধ‍্যে একজন সাধারণ ভোটারও রয়েছেন। এবং বামফ্রন্ট,কংগ্রেস এবং আই এস এফ সহ তৃণমূল বিজেপি বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি পঞ্চায়েত নির্বাচনে চোখে চোখ রেখে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রশ্রয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে  অনেক আসনেই   জয় ছিনিয়ে এনেছেন। লক্ষণীয়,বিজেপির বিভ্রান্তি ছড়ানোর রাজনীতির ফাঁদে মানুষ পা দেন নি এবং শাসকদলের ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিকেও অনেক মানুষ উপেক্ষা করেছেন। 

১১ ই জুলাই বেলা দেড়টা পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়ের হিসাবটা অনেকটা এরকম –

*তৃণমূল* জয়ী ৫৭৫৪ এগিয়ে ৩১৬৮*বিজেপি*  জয়ী ১১৫৫ এগিয়ে ৭৭৬ *সিপিআই* জয়ী ০৭

এগিয়ে ০২ *সিপিআই(এম*) জয়ী ৩৮৭

এগিয়ে ৬০৫ কংগ্রেস* জয়ী ২১২ এগিয়ে ২৪৭ *ফঃবঃ* জয়ী ০৮এগিয়ে ২২*আর‌এসপি*

জয়ী – ১২ এগিয়ে – ২৮ *অন্যান্য* জয়ী ১৮৩

এগিয়ে ৭৮ *নির্দল*জয়ী ৩২২ এগিয়ে ২২৩।

বামপন্থীদের অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে আনার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মুর্শিদাবাদের ডোমকল ব্লকে ধুলাউড়ি, রাইপুর জুড়ানপুর ভগীরথপুর, গরীব পুর গ্রামপঞ্চায়েত এ বামেদের জয় জয়কার।বহরমপুর ব্লকের মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮ র মধ্যে ১১ টিতে বামফ্রন্ট জয়ী হুগলির রিষড়ায় ৩টে আসন, পুরুলিয়ায় ৯টা গ্রাম পঞ্চায়েত জিতলো আইএসএফ। রিষড়ায় ২টি আসনে জয়ী সিপিআইএম। মালদহের কালিয়াচক-১ এর সীলামপুর২ অঞ্চলে জয়ী সিপিআইএম। পূর্ব বর্ধমানের শ্যামসুন্দর গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিআইএমের দখলে  সিপিআইএম -১২ বিজেপি -২ তৃণমূল -০। নদীয়া জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল  জিতেছে ৫২টি আসনে বিজেপি জিতেছে ১১ টি আসনে সিপিআই(এম ) জিতেছে ১৭টি আসনে কংগ্রেস জিতেছে ১৩টি আসনে।;অদ্ভুতভাবে আজ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অকেজো ছিল অনেক ক্ষণ। কে জানে কেন নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে  বিদ‍্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছিল বেশ কিছুক্ষণের জন‍্য। 

কিন্তু গণনাকেন্দ্রেও তৃণমূল কংগ্রেসের সন্ত্রাস অব‍্যহত ছিল। ডায়মণ্ডহারবারে  গননা কেন্দ্রের ভেতরে শাসক দলের যারা ব্যালট বাক্স পাল্টাচ্ছে তাদের না বার করে বিরোধী দের টেনে হিঁচড়ে গননা কেন্দ্র থেকে বার করে দিচ্ছে দল দাস পুলিশ।আর যারা এর প্রতি বাদ করছে তাদের করা হচ্ছে গ্রেফতার।আজ পুলিশের ভুমিকা অতি সক্রিয়। এস এফ আই এর রাজ্য সভাপতি  প্রতিকূর রহমান কে আটক করা হয়েছে শাসকদল ও পুলিশের যৌথ গুণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন‍্য। সন্ত্রাসের জন‍্য হাওড়া জেলার সমস্ত গণনা কেন্দ্র থেকে কাউন্টিং এজেন্ট তুলে নিলো সি পি আই ( এম)।  ব্যারাকপুর-১ব্লকের কাউগাছি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০নং গ্রামসভায় বামফ্রন্টের সমর্থনে সি পি আই প্রার্থী সীমা মাইতি জয়ী হয়ে শংসাপত্র পেয়েছিলেন, কিন্ত তৃণমূলের বাহিনী শংসাপত্র কেড়ে নিয়েছে। গণনাকেন্দ্রের ভেতরে তান্ডব চলেছে। নবগ্রাম পঞ্চায়েত

৯নং গ্রাম সংসদ বুথ নাম্বার ৩৯। ৭ ভোটে পরাজিত সিপিআইএম প্রার্থী রুমা পাইন।১৬টা ব্যালট পেপারের আঙ্গুলের ছাপ ব্যালট বাতিল। 

জয়নগর-১ এরিয়া কমিটির ঢোষা চন্দনেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েত ২৫৫ নং বুথের প্রার্থী জয়ী ঘোষনার পর শ্যামনগর গ্রামে কমরেডদের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করছে গননা কেন্দ্র থেকে বাড়ি যাবার পথে কমরেডদের উপর আক্রমন করে ।

সিপিআই(এম) এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ‍্য সম্পাদক তথা পার্টির পলিটব্যুরোর সদস‍্য মহম্মদ সেলিম মানুষের এই প্রতিরোধের লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়ে বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের এই ফলাফল মানুষের রায়ের যথাযথ প্রতিফলন নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের ইচ্ছা অনুযায়ী সন্ত্রাস থেকে পুনরনির্বাচন সবটাই ঘটেছে। তবে ব‍্যপক দুর্নীতি ধরা পড়ার কারণে এখন এই সন্ত্রাস মিডিয়ার কল‍্যাণে জনগণের সামনে এসে গেছে। বেআইনি টাকার লেনদেনে বিজেপি তৃণমূল দু পক্ষই যুক্ত। মানুষ বুঝতে পারছে তৃণমূল বিজেপি একই মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ। নিউটাউনে কেন আজও পঞ্চায়েত এলাকা তা একমাত্র তৃণমূলই জানে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহিরাগতদের দিয়ে  ঘিরে রেখে ভোট করতেই দেয়নি তৃণমূল। হাওড়ায় আনিস খানের পরিবারকে ঘরবন্দী করে রেখেছে তৃণমূল। গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করতে ব‍্যর্থ প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন।