“অবারিত মাঠ, গগন-ললাট চুমে তব পদ-ধূলি,

ছায়া-সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি”।

                  কবিগুরু

শস্য-শ্যামলা আমাদের বাংলার গাঁয়ের মানুষগুলি স্বভাবগত ভাবেই অত্যন্ত শান্ত।বারবার গ্রাম বাংলার মানুষের এই শান্ত শিষ্ট স্বভাবের কথা ও উঠে এসেছে বিখ্যাত কবি সাহিত্যিকদের লেখায়। সেই শান্ত গ্রামগুলিই আজ এত অশান্ত হয়ে উঠছে কেন ? গ্রামের কোনও বাড়িতে বিয়ে মানে গোটা গ্রামের নিমন্ত্রণ, কোথাও পরিবারে মৃত্যু মানে সমস্ত গ্রামের লোক শ্মশানে বা গোরস্থানে হাজির এমনই দৃঢ়বন্ধনে আবদ্ধ গ্রাম বাংলার মানুষ, সেই বাংলার মানুষ ই আজ একে অপরের রক্তপিপাসু হয়ে উঠছে কেন?উত্তরের চোপরা থেকে দক্ষিণের ভাঙ্গর গ্রামের মানুষের রক্তে রাঙ্গা হয়ে উঠছে।

গ্রামের বাংলার মানুষের আভ্যন্তরীণ ঐক্য ভেঙ্গে তাদের মুখোমুখি লড়াইতে নামিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে।গ্রামের মানুষের প্রাপ্য আবাস যোজনার টাকা থেকে আমফানের সময় আসা ত্রানের ত্রিপল পর্যন্ত চুরি করেছে তৃণমূলের মাতব্বরেরা। তৃণমূলের উপর মহলের নেতারা যখন চাকরি,কয়লা ,গরু চুরি করছে তখন গ্রামের নেতারা আবাস যোজনার টাকা,নদীর বালি, ত্রাণের টাকা ভুয়ো জব কার্ড তৈরি করে একশো দিনের টাকা চুরি করে গেছে। বছর কয়েক আগেও তৃণমূলের যে নেতা খালি পায়ে ঘুরে বেড়াত আজ পঞ্চায়েতের প্রধান হয়ে পেল্লাই বাড়ি হাঁকিয়ে দামি কোম্পানির মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

তৃণমূলের চুরির সংস্কৃতির সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম বাংলায়।আর এই চুরি চালানোর জন্য প্রয়োজন পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় থাকা।তাতে যদি খুনের বন্যা বইয়ে দিতে হয় তবে তাই হবে।

 ১৯৭৮ র বামফ্রন্ট সরকার প্রথম গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনের স্বার্থে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংগঠিত করেছিল। পঞ্চায়েত মানে গ্রামের সরকার বাংলার গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল ত্রিস্তর বিশিষ্ট পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা।ভূমিসংস্কারের সুবিধা বাংলার গ্রামের একেবারে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল পঞ্চায়েত গুলি।

 আজীবন বেগার খাটা বাংলার কৃষক যেমন পেয়েছিল জমির অধিকার তেমনই আজীবন যে জমিদারদের কাছারির সামনে দিয়ে তাকে মাথা নিচু করে যেতে হতো সেই জমিদার বাবুদের বদলে তারাই হয়ে উঠেছিল গ্রামের সরকারের প্রধান। 

বামফ্রন্ট সরকারের অন্যতম সাফল্য ছিল গ্রামের মানুষের জীবন যাত্রার মান বদলে দেওয়া পঞ্চায়েতের মাধ্যমে।

আজ সেই পঞ্চায়েত ই পরিনত হয়েছে ঘুঘুর বাসায়। দীর্ঘ দিন ধরে মানুষ এই চুরি সহ্য করেছে।আজ জেগে উঠেছে বাংলার গ্রাম।যে বাংলার গ্রাম তেভাগার দাবিতে জোট বেঁধেছিল জমিদারের লেঠেল আর সরকারের পুলিশের বিরুদ্ধে।আজ তারাই আবার জানকবুল লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন মুর্শিদাবাদ থেকে ভাঙ্গর পর্যন্ত। 

আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তৃণমূল দল তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে চাইছে গ্রাম বাংলার মানুষের নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার এই লড়াই কে দমন করে যেনতেনপ্রকারনে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয় লাভ করতে। কিন্ত মানুষ যে এবার হকের দাবিতে নাছোড়বান্দা।তৃণমূলের খুনে বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা গড়ে তুলছে সম্মিলিত প্রতিরোধ। ভয়ংকর আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে গুলি বোমার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে জীবন্ত সাথীদের লাশ হয়ে যেতে দেখও তারা পিছু হটেনি। মনোনয়ন তুলেছে জমা দিয়েছে।

মনোনয়নের পর্ব মেটবার পর সন্ত্রাসের মাত্রা আরও বাড়ছে তবে ইতিহাসের শিক্ষা এটাই শাসকের সন্ত্রাস যত বাড়ে সংঘবদ্ধ মানুষের প্রত্যাঘাত তত প্রবল হয়।তেভাগার লড়াইএর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বাংলার গ্রামের মানুষ প্রস্তত প্রত্যাঘাতের জন্য। আর তাদের এই প্রতিরোধের লড়াইয়ে সামনের সারিতে আছে লাল ঝান্ডা।

চোর লুঠেরা মুক্ত পঞ্চায়েত গড়তে বাংলার মানুষের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধের রূপ দেখার জন্য প্রস্তুত থাকুন লুম্পেন তৃণমূল।