শিলিগুড়ি পৌর নিগমের ৪৭ টা ওয়ার্ড জুড়ে যদি কোনো উন্নয়নের কাজ হয়ে থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র বামপন্থীরাই করেছে, বামফ্রন্ট করেছে । শিলিগুড়ি পৌরসভার দীর্ঘ ইতিহাসে বামপন্থীদের ওপর মানুষ অধিকাংশ সময় আস্থা রেখেছে এবং মানুষের আস্থাকে সম্মান জানিয়ে বামেরাই এই শহরকে সাজিয়ে তুলেছে, শহরকে এক নতুন রূপ দিয়েছে। মাঝে ২০০৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আর কংগ্রেস যৌথভাবে ক্ষমতায় আসে এবং প্রথম দিন থেকেই বোর্ড চালনা করা নিয়ে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং একটা দীর্ঘ সময় শিলিগুড়ির মানুষ চরম হেনস্থার সম্মুখীন হয় । ২০১৫ সালে শিলিগুড়ির মানুষ বামপন্থীদের দু’হাত তুলে আশির্বাদ করে এবং পৌর বোর্ডের ক্ষমতায় নিয়ে আসে। কমরেড অশোক ভট্টাচার্য মেয়র নির্বাচিত হন। রাজ্যের ২০ বছরের মন্ত্রী, এতবারের বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য যখন তার নেতৃত্বে বামপন্থীরা শিলিগুড়ি শহরজুড়ে উন্নয়নের কাজ করেছে; ঠিক তেমন ভাবে কলকাতা শহরে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসেবে যারা মেয়রের চেয়ারে বসেছে, মেয়রের চেয়ারে বসে তাদের প্রত্যেকের নামে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাদের বিরুদ্ধে স্ট্রিং অপারেশন হয়েছে, টাকা খাওয়ার ভিডিও সবাই দেখেছেন।মেয়রের পদটাকে কলঙ্কিত করছেন এদের মতো ব্যক্তিরা। বামপন্থী নেতারা জনসেবা, মানুষের জন্য কাজ করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনা। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা জনগনের টাকা আত্মস্বাদ করে নিজেদের এবং আত্মীয়স্বজনের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে। দুর্নীতি, কাটমানি খাওয়া ছাড়া তৃণমূল নেতারা কোনো কিছু বোঝে না।

একটা ভোটে মানুষ আমাদের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে ভোটদান করতেই পারে। ৩৪ বছর বাংলার মানুষ বামেদের পক্ষে ভোটদান করেছে, ২০১১ সালে রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ বামেদের সমর্থন করেনি, তৃণমূল-কংগ্রেস কে সমর্থন করেছে। এবারের বিধানসভা ভোটেও অধিকাংশ মানুষই ভোটবাক্সে বামেদের পক্ষে ভোটদান করেন নি , তাই বলে এই না যে, একটা দল বেশি ভোট পেয়েছে বলে সেই দলের অসৎ লোক সৎ হয়ে যাবে;; এর কোনো মানে নেই। সারা বাংলার মানুষ, সারা ভারতের মানুষ জানে বামপন্থীরা কতটা সৎ.. সততার সাথে রাজনীতি করে, জনসেবা করে। শিলিগুড়ির মানুষ জানে অশোক ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে বামপন্থীরা কিভাবে শিলিগুড়ির উন্নয়নের কাজ করেছে। প্রত্যেক টা রাস্তাঘাট বামেদের আমলে তৈরি করা। শিলিগুড়ি শহরে এতো গুলো মহানন্দা ব্রিজ অশোক ভট্টাচার্যের সময় বামপন্থীরা তৈরি করেছে। শিলিগুড়িতে ইন্ডোর স্টেডিয়াম হয়েছে, ফ্লাইওভার হয়েছে এসবই বামপন্থীরা তৈরি করেছে.. তৃণমূল-কংগ্রেস বলেছিল এই ফ্লাইওভার অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি হয়েছে, ফ্লাইওভার ভেঙ্গে দেওয়া হবে। ওরা বলেছিল, এই ফ্লাইওভার ভেঙ্গে নতুন ফ্লাইওভার গড়বে আর বাস্তবে একটা নতুন ফ্লাইওভারও এরা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে করতে পারেনি ..আসলে তৃণমূল কংগ্রেস কিছুই করতে পারেনি। নানান ভাঁওতা দিয়ে শিলিগুড়ি মানুষ কে বঞ্চিত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই বারবার শিলিগুড়ি শহরের মানুষ মমতা ব্যানার্জীর হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। তৃণমূল শিলিগুড়ি শহরের মানুষের রায় কে মর্যাদা দেয়নি। এতো অসহযোগিতার সত্ত্বেও অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বাম পৌর বোর্ড উন্নয়নের জন্য কোথা থেকে অর্থ নিয়ে আসা যায়, কিভাবে কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি করা যায়। কিভাবে বেকারদের চাকরি দেওয়া যায় সব কাজই অশোক ভট্টাচার্য নেতৃত্বাধীন বাম পৌর বোর্ড করেছে । নিজেদের সামর্থ্যের ওপরেও অনেক উন্নয়ন মূলক কাজ মানুষের জন্য কাজ এই বাম পৌর বোর্ড করেছে ।

এই যে মহানন্দা নদীর ঘাট গুলো আছে, এই ঘাটগুলোর সৌন্দর্য্যায়নের জন্য কোটি কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। শিলিগুড়ি শহরে পৌর নিগমের পক্ষ থেকে নিজস্ব উদ্যোগে প্রায় ২৫ কোটি টাকা মেস্টিক রোড তৈরি করতে খরচ করা হয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলার মাঠ তৈরি , হাউসিং ফর অল প্রকল্প কে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তৃণমূল যেমন বিমাতৃসুলভ আচরন দেখিয়েছে শিলিগুড়ির সাথে, কিন্তু বামপন্থী পৌরবোর্ড কিন্তু কখনও বিরোধী কাউন্সিলারদের সাথে বিমাতৃসুলভ আচরণ করেনি। উল্টো বিরোধী ওয়ার্ডের জন্য বেশি অর্থ বরাদ্দ হয়েছে পৌরনিগমের তরফে । শিলিগুড়ি শহরে প্রায় প্রত্যেকদিন ৩০০ টনের বেশি বর্জ্য পদার্থ বের হয়, সেই পদার্থ থেকে আধুনিক যন্ত্র দ্বারা সার তৈরি করা হয়েছে কর্পোরেশনের উদ্যোগে। শিলিগুড়ি শহরে পৌর কর্পোরেশনের উদ্যোগে একটা শ্মশান ঘাট চলে, যেহুতু শিলিগুড়ি শহরের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে দিন প্রতিদিন শহরে একটা শ্মশান ঘাট, সেটার ওপর চাপ পড়ে যাচ্ছে। ওই শ্মশান ঘাটে যাতে আরও চুল্লি বসানো যায় তার জন্য বামবোর্ড অর্থ বরাদ্দ করেছে এবং কাজ চলছে । শিলিগুড়ি শহরের উন্নতির জন্য যত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল সবটাই বাম পৌর বোর্ড। প্রচুর পার্ক তৈরি করা হয়েছে শিলিগুড়ি শহরে, বস্তির উন্নয়ন এবং বস্তির বাসিন্দাদের জন্য কর্পোরেশনের উদ্যোগে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা করা হয়েছে। শহরের মানুষকে সারাটা বছর ধরে বিভিন্ন ভাতা প্রদান করা হয়েছে । করোনার সময় প্রথম, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় রাস্তা নেমে অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বাম কাউন্সিলররা মানুষের জন্য কাজ করেছে। প্রায় বহু বাম কাউন্সিলররা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, অশোক ভট্টাচার্য নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবে শিলিগুড়ির মানুষের দেখেছে একদল তৃণমূল কাউন্সিলারদের যারা তোলাবাজির সাথে যুক্ত, জনগনের অর্থ ভোগ করেছেন গায়ের জোরে একজন পরাজিত ব্যক্তি যাকে প্রশাসককে করে এখানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার সাথে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের কোনো যোগাযোগ নেই দূরদূরান্তে; তাকে নিয়ে এসে এখানে পৌর প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে মানুষ কোনো দিন পৌর কর্পোরেশন চালায়নি, কোনোদিন কাউন্সিলর হয়নি তাদের কে দিয়ে নিয়ে একটা প্রশাসনিক বডি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে অগণতান্ত্রিক ভাবে। শিলিগুড়ি শহরের মানুষের /যেসমস্ত বেসিক সমস্যা গুলো আছে, যেহেতু সাধারণ মানুষের পৌর পরিষেবা দেওয়ার জন্য পৌরনিগম সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই কর্পোরেশনে সাধারন শহরের মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিলো । বাম পরিচালিত পৌর বোর্ডে মেয়রের চেম্বার সবসময় খোলা থাকত। আজকে কর্পোরেশনের গেটের সামনে লাইনে দাঁড়াতে হয়। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মানুষকে চেক করা হচ্ছে। তারপরে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান যিনি ছিলেন সেই গৌতম দেবের চেম্বারে ঢুকতে হলে তিনদিন আগে থেকে appointment নিতে হয়।

এখানে যারা তৃণমূল কাউন্সিলর তারা নানান দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। তৃণমূল কংগ্রেসের আগা থেকে গোড়া সব দুর্নীতিবাজ। মানুষ মারা গেলে তার শেষকৃত্য করার জন্য সরকার থেকে কিছু টাকা দেয়, সেই টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে শিলিগুড়ি শহরের তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। আবর্জনা তোলার নামেও কাটমানি খেয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলর।


আমাদের বামবোর্ডের উদ্যোগে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সেতু তৈরি করা হয়েছে, ১ এবং ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের যোগাযোগের জন্য সেতু তৈরি হয়েছে আরো ব্রিজ তৈরী হয়েছে বাম জমানায় যে পানীয়জলের প্রকল্প করা হয়েছিল তার উপর নির্ভর করে শিলিগুড়ির মানুষ পানীয় জল পাচ্ছে। প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত সুব্রত মুখার্জীর কাছে বারবার যাওয়া হয়েছে শিলিগুড়ি শহরের জন্য আরেকটি নতুন জল প্রকল্পের প্রস্তাব নিয়ে, কিন্তু সেই প্রকল্প কে অনুমোদন না দিয়ে শিলিগুড়ি শহরের মানুষ যাতে জল না পায় তার ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল সরকার। কেন্দ্র সরকার অর্থ না দিলে রাজ্য সরকার চলতে পারবে না ,আর রাজ্য যদি কর্পোরেশন গুলিকে সাহায্য না করে তাহলে কর্পোরেশন গুলি চলতে পারেনা। স্বাভাবিক ভাবে শিলিগুড়ি শহরের মানুষ যখন বামেদের ওপর আস্থা রেখেছেন, তখন মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল সরকার শিলিগুড়ি মানুষের রায় কে অবমাননা করে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন কে দখল করার নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক বিপ্লবের নাম করে বাম পৌর বোর্ড ভেঙ্গে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছিল তৃণমূল, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা গৌতম দেব বলেছিলেন এখানে আগস্ট বিপ্লব করবে, দুর্গা পূজার ভাসানের দিন বাম পৌর বোর্ডকে ভাসান দেওয়া হবে। কিন্তু কোনোটাই করতে পারেননি, অশোক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শিলিগুড়ির বাম পৌর বোর্ড সাফল্যের সাথে ৫ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করেছে। আগামী দিনেও শিলিগুড়ির মানুষের বামপন্থীদের পক্ষে রায় দেবে। যা আভাস আমরা পাচ্ছি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবার শিলিগুড়ি পৌর বোর্ডের শাসনভার সামলাবেন বামপন্থীরা।

কলকাতা শহরের বুকে পৌর নির্বাচনে এতো ভোট লুঠ হয়েছে , সন্ত্রাস হয়েছে ,ক্যামেরায় কাগজ লাগিয়ে ভোটে ছাপ্পা করানো হয়েছে। পুলিশও এটার সাথে যুক্ত, পুলিশ সাধারণ মানুষকে বলেছে আপনারা ভোট দিতে যাবেন না;; তৃণমূলের দাদারা দাঁড়িয়ে আছে। তা সত্বেও যেখানে যেখানে মানুষ ভোট দান করতে পেরেছে: সেখানে বামপন্থী ভালো ফলাফল করেছে। বামেদের ভোট শতাংশ বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবে শিলিগুড়িতেও বামপন্থীদের ভোট শতাংশ আগের বারের তুলনায় বাড়বে, আরও আসন সংখ্যা বাড়বে।২০১০ সালে তৃণমূল নেতাদের যে সম্পত্তি ছিল আজকে ২০২১-২২ সালে দেখুন কত কত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিক সবটাই বোঝা যায় কে মানুষের কাজ করে! আর কে মানুষের টাকা মেরে খায়। শিলিগুড়ির মানু‌ষ সৎ এবং কাজের মানুষ কে জন প্রতিনিধি হিসেবে চাইবেন। তাই শিলিগুড়িতে আগামী দিনে বামপন্থীরা সৎ, সচল, মানুষের পৌর বোর্ড গঠন করবে এই আশা রাখছি।