প্রায় তিনশো মানুষের শোচনীয় মৃত্যু,হাজার দেড়েক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার মধ‍্যেও প্রধানমন্ত্রীর স্তুতি করা যায়, রেলমন্ত্রীর অপদার্থতা চাপা দিতে তাঁর আই আইটির ডিগ্রির কথা মনে করিয়ে দিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত লাইন জোড়াতালি দিয়ে মেরামতি করানোর পর  দশ কিলোমিটার গতিতে বন্দে ভারত চালিয়ে “ভারতমাতা কি জয়” এর ভিডিও প্রচার করা যায়, বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিল। নেহাত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালকের নাম পাল্টিয়ে ধর্মীয় সংখ‍্যালঘু পরিচয়ের  জালিয়াতি ও ইসকনের মন্দিরকে মসজিদ হিসাবে সাজানোর মিথ‍্যাপ্রচার অল্পসময়েই ধরা পড়ে যাওয়ার কারণে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বের আড়ালে ধর্মীয়  সাম্প্রদায়িকতার নোংরামি এগিয়ে নেওয়া যায় নি। কিন্তু ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব দাঁড় করাতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। দুর্জনে বলছে,প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুর্ঘটনাস্থলে ঝটিকা সফর শেষে যখন বিবৃতিতে বললেন,” দোষীদের কাউকে ছাড়া হবেনা “- তখনই অনুমান করা গিয়েছিল,দোষ চাপানোর জন‍্য কোন ঘাড় খোঁজা হবে,রেলমন্ত্রক কোনভাবেই নিজেদের লাইন মেরামতিতে কম কর্মীর সংখ‍্যা,যাত্রী সুরক্ষায় বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ না করা -ইত‍্যাদি খামতির দিকে আঙুল তুলতে দেবে না। পরের দিনই অবশ‍্য মিডিয়ার সামনেই ধরা পড়ে গিয়েছিল  রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ে বোর্ডের সদস্যদের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রাখার কারণে। রেলমন্ত্রী বলেছিলেন ইন্টারলকিং সিস্টেমের ত্রুটির কথা অথচ রেলওয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক অনুমানে জানানো হয়েছিল সিগন্যালিং সিস্টেমের গলদের সম্ভাবনা র কথা। পরস্পরবিরোধী বিবৃতির সমস‍্যাকে ধামাচাপা দিতেই রেলমন্ত্রী রেলওয়ে নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির অনুসন্ধানের রিপোর্ট আসবার আগেই  তড়িঘড়ি সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন কিনা তা অনুমানসাপেক্ষ হলেও যাত্রীনিরাপত্তার জন‍্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবকে আজও কেন্দ্রীয় সরকার গুরুত্ব দিতে নারাজ।

  পুলওয়ামার জওয়ানদের হত‍্যার ঘটনা অবধি যা জানতাম গত ২রা জুন রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস,যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ির একত্রে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক 

কালে আমাদের দেশের ভয়াবহতম দুর্ঘটনার পর জানলাম ভারতীয় জনতা পার্টি ট্রেন দুর্ঘটনা ও তাতে মৃত ব‍্যক্তিদের নিয়েও রাজনৈতিক বিপণন করতে পারেন। এই জন‍্যই বোধহয় এই শতকের গোড়ায় এন ডি এ তথা ভাজপার প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ  আদবানি বলতেন “পার্টি উইথ দ‍্য ডিফারেন্স! ” বটেই তো! নয়ত গুজরাটের সাম্প্রদায়িক  দাঙ্গায় প্রত‍্যক্ষ যুক্ত থাকা দুই নেতা এক দশকের ব‍্যবধানে প্রচারমাধ‍্যমের বৃহত্তম  অংশ এবং আঞ্চলিক দলগুলির সুবিধাবাদী চরিত্রকে কাজে লাগিয়ে বিপুল শক্তি নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এলেন কেমন করে? অমিত শাহ তবুও জেল খেটেছেন একমাসের জন‍্য। কিন্তু নিখুঁতভাবে সাক্ষ‍্য প্রমাণ লোপাট করে নরেন্দ্র মোদি এখন নিজে ক্লিনচিট পেয়ে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের আইনের ফাঁক গলিয়ে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন,নারোদা পাটিয়ার  গণহত‍্যার অভিযুক্তদের কার্যত বুক ফুলিয়ে ঘোরার আইনি ছাড়পত্র আদায় করেছেন রাষ্ট্রযন্ত্রে রাজনৈতিক হিন্দুত্ব যুক্ত করে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপণন আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে কতটা কার্যকর হবে কর্ণাটকের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল দেখে সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিলেও প্রায় বেপরোয়া মেজাজে রেলওয়ের মত একটি লাভজনক সংস্থাকে পর্যাপ্ত সংখ‍্যক  দক্ষ কর্মীর অভাবে সমস‍্যাসঙ্কুল রুগ্ন সংস্থায় পরিণত করে বেসরকারিকরণের দিকে হাঁটছেন তাঁরা। রেল লাইনের বেহাল দশার বাস্তবতা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে কেমন করে অস্বীকার করবেন, তাঁর বহুবিজ্ঞাপিত বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নির্ধারিত একশো আশি কিলোমিটার গতিবেগের বদলে মাত্র আশি কিলোমিটার বেগে চলতে পারে শুধুমাত্র খারাপ রেলওয়ে ট্র‍্যাকের কারণে। কোন বেসরকারি সংস্থা মুনাফার হিসাব না কষে এই বেহাল রেলওয়ে ট্র‍্যাকের দায়িত্ব নিয়ে জনস্বার্থে উন্নততর পরিষেবা নিশ্চিত করবেন  জানতে ইচ্ছা করে। ও হ‍্যাঁ,শেষে মনে করিয়ে দিই, বামপন্থীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও  কম্পিউটারের সাহায্যে  স্বয়ংক্রিয় সিগন‍্যালিং ব‍্যবস্থা তথা ব্লক প্রুভিং বাই অ‍্যাক্সেল কাউন্টার প্রক্রিয়ার অনেকটাই এখন বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের ধার করে নিয়ে চালানো হয়।