“মুহুর্তে তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে ,
যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার,তখনি সে,
পথকুক্কুরের মতো সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে”।
ঘটনার ঘনঘটায় অনেকেই ভুলে গেছে সেই ছবি যেখানে জঙ্গলমহলের কোনও এক প্রত্যন্ত গ্রামে একটি ছোট মেয়ে আলতা দিয়ে পোস্টার লিখছে আমার বাবা আর সিপিআই(এম)করবে না।সেই সময় তৃণমূল মাওবাদী আর মিডিয়ার প্রচারে যেন সিপিআই এম কর্মী মানেই রক্তলোলুপ দৈত্য। জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কিষেনজি ,ছত্রধর আর তৃণমূলের যৌথ বাহিনী একে 47হাতে নৈরাজ্য চালাচ্ছে।প্রতিদিন সংবাদপত্রে মাও তৃণমূলের যৌথ বাহিনীর হাতে খুন হওয়া আমাদের কমরেডদের ছবি বের হতো।আমাদের কমরেডদের হত্যার সঙ্গে সেদিন এই ছত্রধর ,শশধর,কিষেনজিরা জোর করে আদায় করতো জরিমানা।সিপিআই (এম) করবার অপরাধে জরিমানা।গোটা জঙ্গলমহলে সেদিন এই জরিমানা আদায় করেছিল মাও মূলীরা।তারপরে ২০১১সালে বাম শাসনের অবসান হলে রাতারাতি দল পাল্টে ওই মাওয়েরাই হয়ে যায় জঙ্গলমহলে তৃণমূলের মূল শক্তি।আর ও বাড়তে থাকে আমাদের কমরেডদের উপর অত্যাচার আর জরিমানার নামে যেটুকু যা আছে সব লুঠে নেওয়ার কাজ।
কিন্ত প্রতিদিন কী সবার একই রকম যায় দিন বদলের সূচনাও তো হয়।এমনই দিন বদলের সৃচনা র ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলের ডেবরা ব্লকের ৭ নং মলিহাটী অঞ্চলের নরহরিপুর গ্রাম। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর নরহরিপুর গ্রামের ১৬৫ জন সিপিআই (এম) কর্মীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছিল তৃণমূল। গ্রামে থাকতে গেলে কাউকে কাউকে দিয়ে দিতে হয়েছিল বউয়ের গয়নাও।

কিন্তু ১১বছর পরেও হলেও হিম্মতের উপর ভর করে লালঝান্ডার পার্টির লোকেরা শুরু করেছে তৃণমূলের ওই ভৈরব বাহিনীর থেকে টাকা ফেরতের কাজ। গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে সিপিআই এমরের নেতৃত্বে তৃণমূলীদের বাধ্য করা হচ্ছে তাদের থেকে নেওয়ার জরিমানার টাকা ফেরত দিতে।

লাল ঝান্ডার তলায় আবার গ্রামবাসীদের এক হতে দেখে ভয় পায় এই তৃণমূলের তথাকথিত মাতব্বরা।
চকমাধু ও নরহরিপুরের সিপিআই (এম) কর্মী সমর্থকদের ১১ বছর আগে নেওয়া জরিমানার টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সিপিআই (এম) কর্মী সমর্থক টাকা পেয়েও গেছে। সিপিআই (এম) কর্মী মাধব সামই ৫ হাজার টাকা, কিংকর মান্না ৩০ হাজার টাকা, মদন জানা ১৫ হাজার টাকা, মানস পাল ৯৮ হাজার টাকা ফেরত পেয়েছেন কয়েক দিনে। ধাপে ধাপে ১৬৫ জনকেই ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জরিমানা আদায়কারী তৃণমূল কর্মীরা।

এই প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের পার্টির জেলা সম্পাদক কমরেড সুশান্ত ঘোষ মন্তব্য করেছেন “টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হয়েছে তবে তৃণমূল যে পরিমাণ টাকা জরিমানার আদায় করেছিল তার এক আনাও এখন ও হয়নি।মানুষের টাকার হিসাব মানুষ বুঝে নেবে ধৈর্য্য ধরুন”।
এই চোর তৃণমূলীদের বিরুদ্ধে সঠিক পথ অবলম্বন করেছেন নরহরিপুর গ্রামের কমরেডরা লাল সেলাম আপনাদের। মনে রাখবেন একটি ছোট স্ফুলিঙ্গ থেকেও দাবানলের সৃষ্টি হয়।
নরহরিপুরের কমরেডরা যেমন প্রত্যাঘাত করছেন তেমনই ধীরে গোটা রাজ্যে জুড়েই তৃণমূলের যে লুঠের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে জনগণ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।তৃণমূলের মহাসচিব রাজ্যে মন্ত্রীসভার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া এবং তার অতি ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার ঘটনা,বাংলার মানুষের মনে এই তৃণমূল সরকারের সম্পর্কে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার ই সৃষ্টি করেছে।পার্থ বাবুকে জোকা ই এস আই হসপিটালে শুভ্রা ঘড়ুইয়ের জুতো ছুড়ে মারার ঘটনা এই সরকারের প্রতি মানুষের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলা চলে।জুতো ছুড়ে মারার পর শুভ্রা দেবীর মন্তব্য “ওনাকে গলায় দড়ি দিয়ে টেনে আনা হোক” চোর তোলাবাজ তৃণমূলীদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণারই প্রতিফলন ।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার যুবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছিল তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা।লাখো টাকা দিয়ে চাকরি পায়নি ওই বেকারেরা অবশেষে তারা টাকা ফেরত চাইতে হাজির হয় তৃণমূল নেতার বাড়িতে ।পলাতক তৃণমূল নেতাকে না পেয়ে তার পরিবার কে গাছে বেঁধে পেটায় প্রতারিত চাকরিপ্রার্থীরা।ভেবে দেখুন পূর্ব মেদিনীপুরের মতো তৃণমূলের শক্তিশালী গড়ে তৃণমূলের এক নেতাকে জনগণ গাছে বেঁধে পেটাচ্ছে একথা কেউ ভাবতে পারতো ।
সিবিআইয়ের হাজিরা এড়িয়ে তৃণমূলের বীরভূম জেলার দোদর্ন্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মন্ডল এসেছে পিজি হসপিটালে তাকে দেখে হসপিটালে আসা মানুষদের মধ্য থেকে আওয়াজ উঠছে”চোর চোর”।সংবাদ মাধ্যম যখন জানতে চাইছে ওনাকে চোর বলছেন কেন?তখন চোর চোর আওয়াজ তোলা জনৈক ভদ্রলোক স্পষ্ট ভাষায় জানাচ্ছেন “গ্রামে কোনও গরু চোর ধরা পড়লে পঞ্চায়েত প্রধান বা সদস্যরা যেভাবে বিচার করে তাকে ধরে গাছের গোড়ায় বাঁধে অথবা লাঠি দিয়ে মারে।ওনাকে সেরকম করা উচিত। তাহলেই বুঝতে পারবে আমি কতটা গরুচোর কীভাবে গরু চুরি করেছি।”
যেই অনুব্রতর ভয়ে এসপি থেকে প্রশাসনের বড়বড় কর্তারা থরহরিকম্পমান সেই অনুব্রত কে সামনে দাঁড়িয়ে একজন ছাপোষা মানুষ চোর বলার হিম্মত দেখাচ্ছে এই হিম্মত আসছেই তৃণমূলের জনগণ কে লুঠে খাওয়ার যে রাজনীতি তার বিরুদ্ধে ঘৃণার থেকে।
তৃণমূলের আরেক প্রভাবশালী নেতা মুর্শিদাবাদের ভগবান গোলার বিধায়ক ইদ্রিশ আলির বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে তারই দলের লোকজন অভিযোগ নিজের দলের পদ দেওয়ার নাম করে তৃণমূল কর্মীদের কাছ থেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে উনি।যে তৃণমূল নেতা ইদ্রিশ আলি হুমকি দিয়েছিলেন কমরেড গৌতম দেবের জিভ ছিঁড়ে নেওয়ার আজ তার ই বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে।


এ রাজ্যের এক ঐতিহ্যবাহী কলেজ প্রেসিডেন্সি। শত চেষ্টা করেও এই কলেজে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন দখল করতে পারেনি।কদিন ধরে নামজাদা দুষ্কৃতী বাহিনী নিয়ে কলেজ দখল করতে আসলে তৃণমূল বাহিনী এস এফ আইয়ের এমন প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে যে কোনও ভাবে পালিয়ে বেঁচেছে তৃণমূলী বাহুবলীরা।


চোর ধরো জেলে ভরো শ্লোগান এখন এ রাজ্যের মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় শ্লোগানে পরিনত হয়েছে।মানুষ চাইছে এই চোর ডাকাতদের হাত থেকে নিষ্কৃতি। এটাই সময় প্রত্যাঘাতের এটাই সেরা সময়।
রাজ্যের সর্বত্র যে ছোট ছোট স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হচ্ছে তাকে দাবানলে পরিনত করা।