“বার্লিনের প্রাচীর ভেঙে যাওয়ার পরেও, সোভিয়েত টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পরেও,এমনকি বিধানসভায় শূণ্য হয়ে যাওয়ার পরেও, কি আশ্চর্য! কিছু মানুষ আজও কমিউনিস্ট! এখনও লাল ঝান্ডা হাতে ধরেছে উপায়হীন কমিউনিস্ট!”

বুদ্ধিজীবী মহাশয়, আপনার জ্ঞানগর্ভ বিশ্লেষণ, তীব্র শ্লেষ, ফল্গু ঘৃণা, ভয়ানক ক্রোধ বেশ বোঝা গেল।

কিন্তু কি আশ্চর্য! স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী মহাশয়, আপনাকে আক্ষেপ করতে হলো নিরুচ্চারে কমিউনিস্টরা শেষ হচ্ছে না কেন!

আজ আপনার স্ত্রী বাড়ির জানলা দিয়েই সবজি, মাছ কিনেছেন কাজ হারানো এক বিক্রেতার কাছে। উচ্ছল সন্ধ্যার সিটি সেন্টারে আপনার মেয়েকে গতকাল এক র‍্যাপিডো ড্রাইভার নিয়ে গেছে। দোলের রাতে আপনার হোল ফ্যামিলির ডিনার বয়ে আনে অনার্স পাস ডেলিভারি বয়, জমিয়ে খেয়েছেন পিটার ক্যাটের খাবার। কিন্তু কখনও ভেবেছেন, স্রেফ পেটের টানে যৎসামান্য আয়ের জন্য বিপদসংকুল জীবনযাপনে মৃত্যু হচ্ছে যৌবনের সব আশা, স্বপ্ন।

বাঁচার আকুতি নিয়ে হাজার হাজার মাইল হাঁটা পরিযায়ী শ্রমিক দুর্ঘটনা, খিদে, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততা আর পরিশেষে মৃত্যু মিছিল আপনি কি দেখেননি? দোলের নেড়াপোড়ার মতো চিতা, আর নদীতে ভাসা অগণিত লাশ কি দেখেছেন?কাজ নামক বস্তু যে উধাও, তা আপনি কি জানেন? ডিজিটাল ডিভাইডে হারিয়েছে শৈশব, কৈশোর স্কুল, বই, বানান, নামতা এমন কি অক্ষর – এ সংবাদ আপনার গোচরে এসেছে কি? দারিদ্র‍্য আর খিদের খাদে মানুষ যে তলিয়ে যাচ্ছে বুঝছেন কি একটুও?

বুদ্ধিজীবী মহাশয় বহুদিন আগেই আপনি বিক্রি হয়ে গেছেন আপনার বোধ, বুদ্ধি, মগজ, হৃদয় নিতান্তই সস্তা। মাসিক অর্থ, নানান কমিটি, দু-একটা পুরস্কার আপনাদের জিব থেকে লালা ঝরায় ঠুলি পরা চোখে, বিগলিত ল্যাজ নাড়তে নাড়তে নির্মম সমাজের গভীর গভীরতর ক্ষতগুলো লুকিয়ে তাদের দালালি করতে একটুও অসুবিধে হয় না, মিস্টার দালাল।

হ্যাঁ! আপনি, আপনারা কুৎসিত পূঁজিবাদের দালালি করতেই পারেন কারণ, আপনি একজন উপায়হীন দালাল। প্রভু ও দালালদের সংখ্যা কিন্তু সামান্যই দরিদ্র, বেকার, অভাবী, ক্ষুধার্ত মানুষের সমুদ্রে তাই লাল ঝান্ডা উড়বেই কমিউনিস্টরা থাকবেই।