ভিলাই থেকে কাজ খুইয়ে চলে আসা নীটু পার্টি অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আকণ্ঠ মদ খেয়ে রোজ রাতে বলত,”দেখিস, একদিন লালকেল্লায় লাল নিশান উড়বেই।” আরও অনেকের মতো পার্টির কাছে চাকরি চায়নি সে। দুহাত বাড়িয়ে পার্টির কাছে কৃষ্ণচূড়াগন্ধ চেয়েছিল। নীটু যেদিন মরে গেল আমরা ওর কুঁকড়ে যাওয়া শরীরটায় একটা লাল পতাকাও দিতে পারিনি। নীটু রোজ রাতে মদ খেত যে!
   

 বিশালদেহী সুরজিৎ সিং, মেথরপট্টির প্রতিটি বাড়ির প্রিয় সর্দারজী। শুভ্রশ্মশ্রু বৃষস্কন্ধ বৃদ্ধ দক্ষিণপন্থী-অধ্যুষিত এলাকায় আমাদের সামনে থেকে সাহস দিতেন। অনেক উপরোধের পরে একদিন নিজের দাওয়াতে বসে কুর্তা খুলে তাঁর পিঠে সত্তরে অ‌র্জিত দীর্ঘ তরোয়ালের ক্ষত দেখিয়ে বলেছিলেন, “ইসকে বাবজুদ ভি ম্যায় জিন্দা হুঁ, তুমলোগ ডরতে কিঁউ হো?”


      অরুণদা, দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে পদবিটা মনে নেই। হিন্দিভাষী। ভাড়া করা টাইপরাইটার নিয়ে চিঠি টাইপ করতেন। তখনই করতেন যখন পার্টির কোনো কর্মসূচি থাকত না। যে‌দিন কর‌তেন না , সে‌দিন কী খে‌তেন ? খোঁজ নিই নি তো । কেমন আছ অরুণদা এখন?
        রামজী দুবে। নিষ্ঠাবান উত্তরভারতীয় সাড়ে চারফুটের পক্ককেশ ব্রাহ্মণ। শাস্ত্র পড়ে মার্ক্সবাদী হলে আর যাই হোক সামসুদ্দিন জোহার সঙ্গে কথায় কথায় ঝগড়া করতেন না। যে কোনো কর্মসূচিতে আমাদের সবার আগে হাজির হয়ে যেতেন। অবশ্যই সঙ্গে জোহাস্যারকে নিয়ে।
      মালভূমির বৈশাখের দুপুর, জানলায় করাঘাত। রাজুদা, উজ্জ্বল চক্রবর্তী। ইলেকট্রিক লাইনের কাজ করাতে হবে। সাহস করে বলেছিলাম,”সন্ধেয় কাজটা করালে হয় না? সবাই দেখতে পাবে।” রেগে গেলে ওঁরা কেন জানিনা ‘আপনি’ বলতেন , “আপনি মানুষের জন্য কাজ করতে চান, মানুষকে দেখিয়ে! ছিঃ। “

   ধর্ম তো জনতার  আফিমই। পড়েছি, জেনেছি। মাইকেল ব্যাপটিস্ট পড়েছিলেন কিনা জানিনা। রবিবারের ‘মাস’টা মিস করতেন না সচরাচর। অন্য সময় কোনো প্রোগ্রাম যদি আমরা মিস করে ফেলতাম, বকতেন। কিন্তু খুব মিষ্টি করে। কোনোদিন রাগ হয়নি।


     আজ তোমাদের সবার উপরে খুব রাগ হচ্ছে , খুব। কেন স্বপ্ন দেখিয়েছিলে বসন্তকালের ! কেন বুঝিয়েছিলে পৃথিবীর প্রিয়তম সম্ভাষণ হলো,”কমরেড” ;  মরে যাওয়ার আগেও শেষ স্বপ্নটার রঙ লাল  !