একদল ছাত্র আন্দোলন করছেন তাঁদের দাবি “পাশ করিয়ে দাও”। গণমাধ্যম এর মত গুলিয়ে দেওয়া মাধ্যম জুড়ে অনেক কথা। অনেকে বলছেন ” আম্ব্রেলা” বানান না জানাতে ছাত্রদের দোষ কোথায়?? অনেকে বলছেন শিক্ষকদের কি দায় নেই??  অনেকে আবার বলছেন “বাংলায় মেসেজ পাঠানো ছাত্ররা ইংরাজিতে পাশ করলে, আমার মেয়ে কেন করল না”।  অনেকেই বলছেন ” ফেল করা ছাত্রকে নিয়ে ব্যাংগ না করতে, তাতে ওদের মানসিক স্বাস্থ্যে কুপ্রভাব পড়বে। ”’ অনেকে আবার বলেছেন ” আমি অমূক আমলের বাংলা মিডিয়াম, আমিও ওই ক্লাসে আমব্রেলা বানান জানতাম না” মোটামোটি “যত মত তত পথ” কথাটা আবারও ফিরে এসেছে। কিন্তু মূল সমস্যা যা তা রয়ে গেছে, শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থা তে আজ আমূল পরিবর্তন  এসেছে। প্রশ্নপত্রের ধরণে পরিবর্তন এসেছে। বদল এসেছে নাম্বার দেওয়া ও পড়ানো পদ্ধতিতেও।  আজকের দ্রুতগামী সময়ে, উচ্চতর শিক্ষাকেন্দ্র গুলো তাদের প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে ৮০%-৯০% কাট অফ রাখছে। মানে বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এক জন ছাত্রর এগিয়ে চলার মানদন্ড ওই ৮০%-৯০%,  ফলে একটা ব্যাপক অংশের ছাত্র এলিমিনেট হয়ে যাচ্ছে আগে থেকেই। ফলতঃ হতাশ বা নিরাশ হওয়ার জায়গাটা থেকেই যায়। অনেকেই জানেন না প্রতিটি পরীক্ষায় (মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজেও) পরীক্ষকদের সোজাসুজি নির্দেশ দেওয়া থাকে নাম্বার কীভাবে দিতে হবে। মেধাসম্পন্ন ছাত্রর জন্য এই পাইয়ে দেওয়া নাম্বার কোনো কাজে না লাগলেও এতে উপকৃত হয় মধ্যমেধা ও নিম্ন মধ্যমেধার ছাত্ররা, গোদা বাংলায় বললে বলা যায় প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মধ্য মেধা ও নিম্ন মধ্য মেধার ছাত্রদের নাম্বার দেওয়ার মাধ্যমে সাবসিডি দেয়। যাতে তারা আটকে না থেকে এগিয়ে চলতে পারে।

  কিন্তু এই সাবসিডি কেন?? এই সাবসিডি কারণ আমার দেশে শিক্ষাখাতে বাজেটের যত শতাংশ খরচ করার দরকার ছিল। তা করা হয় না। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষাখাতে খরচ হয়েছিল বাজেটের ২.১ শতাংশ। আর ২০২০-২১ ও ২০২১-২০২২ এ খরচ মাত্র ৩.১ শতাংশ ( ২০২০-২১ রিভাইসড এস্টিমেটের নিরিখে, ২০২১-২০২২ বাজেটের এস্টিমেটের নিরিখে)। পরিকাঠামো খারাপ হলে মান ও খারাপ হয়। আর খরচ না হলে পরিকাঠামোর উন্নতি ও হয়না। ভাবতে অবাক লাগলেও বাস্তব শাসনতান্ত্রিক স্বাধীনতা পাওয়ার এত বছর পরও আমার দেশের অনেক বাচ্চা শুধু মিড ডে মিল পাওয়ার জন্যই স্কুলে যায়। আজ নতুন শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা বিধির দৌলতে স্কুল ছুটদের সংখ্যাও বেশ অবাক করার মত।আর পড়তে গেলে দামি মোবাইল লাগে, একটা ইন্টারনেট কানেকশন লাগে, সাথে লাগে প্রতিটা সাবজেক্ট পিছু একটা করে খাতা। পিঠের বোঝা ভারী হতে হতে শিক্ষার সূর্য অস্তাচলে। ফলে শিক্ষা জনগণের মৌলিক অধিকার হওয়ার বদলে হয়ে ওঠে কিছু নির্দিষ্ট উচ্চবিত্ত শ্রেণীর জন্মগত অধিকার। পয়সা ওয়ালা মানুষের জন্য মডেল স্কুল,ইন্টারন্যাশনাল কনসেপ্ট থাকলেও দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের ভরসা সেই সরকারি বিদ্যালয়, সরকারি গ্রন্থাগার । আর সেই খানে খরচ করা হয় সব থেকে কম। সরকারি গ্রন্থাগারের অবস্থাও তথৈবচ। বহু গ্রন্থাগার শুধু গ্রন্থগারিক নেই বলে চলে না। বর্তমান সরকার ও উদাসীন। কারণ তাহলে খেলা মেলা র খরচ উঠবে না। বিভাজনের মশলা জোগাড় হবে না। একজন নাগরিক যিনি পেশায় ধরুন রিক্সাচালক। তার বাড়ির সন্তানটিকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাওয়াটা কি অন্যায় দাবি!!! না, কিন্তু তিনি কি করবেন, আজ তো সরকার নাগরিকদের স্বার্থ দেখে না। সরকার স্বার্থ দেখে লুঠেরাদের। ভাবতে অবাক লাগলেও বাস্তব সরকারি চাকরি নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির ফলে চাকরি প্রার্থীদের কি দুর্দশা হচ্ছে। আর সাথে উলংগ হচ্ছে সরকার। অবশ্য ভিত ঠিক না হলে বাড়ি ভাংবেই। একটা সরকার দেখিয়ে দিতে পেরেছিল অবৈতনিক স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষাকে আমজনতার নাগালে আনতে।

মাতৃভাষায় শিক্ষা,সহজ ভাবে সহজ পাঠ।নাঃ সেই সরকার কোনোকালেও ইংরাজি তুলে দিতে চায়নি।একবারের জন্যও বলেনি মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে ইংরাজি জানা যাবে না। কোঠারী কমিশনের সুপারিশ ছিল সে সময়ে যা আর্থসামাজিক অবস্থান তার উপর ভিত্তি করে মাতৃভাষায় পঠন পাঠন চললে তা আখেরে খেটে খাওয়া মানুষের লাভ। মাতৃভাষায় পঠন পাঠন হলে বাচ্চারা বুঝতে পারবে। সেই আমলের অনেকেই বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনো করেও ইংরাজিতে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন কারণ সেই আমলে শিক্ষার অধিকার ছিল। আর আজ এই আমলে উন্নয়নের বন্যায় অধিকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে পাশ করাটা মূখ্য বিষয় হয়ে দাড়িছে। তবে আশার আলো আজও জাগায় একদল ছাত্র, যারা বলে নাকি “শিক্ষা হোক সকলের না ধর্মের না বাজারের” শিক্ষার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিৎ। নাগরিক শিক্ষিত না হলে ভেংগে পড়ে প্রজন্ম। শুধু প্রশ্ন থাকে ইতিহাসের পাতায় – কেন করলে এইরকম বলো?