২০-দশকের সূচনাকাল ভারতবর্ষের রাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।এই সময় যেমন রুশদেশের মহান নভেম্বর বিপ্লবের (১৯১৭)বিপ্লবের প্রভাবে তাসখন্দে গড়ে উঠেছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(১৯২০)।তেমনই ১৯২৫সালে নাগপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আর.এস.এস)।সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুই ধরনের চিন্তাধারার উদ্ভব সেই সময় থেকে ভারতের রাজনীতিতে পরিলক্ষিত হতে থাকে।     

একদিকে কমিউনিস্টরা বারবার জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব রাখছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শ্রমিক-কৃষক সম্প্রদায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ধর্মঘটের পথে হাঁটছে ।অন্যদিকে আর.আর.এস তার প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই তাদের সংগঠনকে গড়ে তুলেছে এক হিংস্রাশ্রয়ী দাঙ্গাবাজ উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিসেবে।শ্রমিক-কৃষক -দেশের আমজনতার স্বার্থবাহী কোনও আন্দোলন আর.এস.এস গড়ে তোলেনি,এমনকি এ দেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম থেকে আমজনতার স্বার্থবাহী কোনও তারা অংশগ্রহণ করেনি।উগ্রহিন্দুত্ববাদী হিংসাত্মক সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে হাতিয়ার করে আর.এস.এস আজ ভারতের রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে  একাধিপত্য স্থাপন করেছে।তাদের একজন স্বয়ংসেবক নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর.এস.এসের হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডাগুলি একের পর এক পূরন করে চলেছে।         

সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কাশ্মীরে ৩৭০ধারা বাতিল করা ,তিন তালাক তুলে দেওয়ার কাজ যেমন সম্পন্ন করেছে তেমনই সুপ্রিম কোর্টের সুপ্রিম রায়ে আর.এস.এসের রামমন্দির এজেন্ডারাই জয় হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ‘ভূমিপুজার’মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে অযোধ্যায়  রামমন্দির গড়ে তোলার কাজ। বাকি রয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ,দেশ জুড়ে এন আর সি চালু করা  এবং হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার কাজ।খুব শীঘ্রই   এই সমস্ত এজেন্ডা আর.এস.এস তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপির মাধ্যমে সম্পন্ন করবার দিকে এগোচ্ছে।জন্মলগ্ন থেকে দেশের মানুষের জন্য কোনও আন্দোলন সংগ্রাম না করা আর.এস.এস যখন ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে ক্রমশ এক ফ্যাসিস্ট হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পথে হাঁটছে সেই সময় তাদের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র গঠনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ দেশের কমিউনিস্টরা।     কমিউনিস্টরা তাদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ভারতের জনগণের স্বার্থে একের পর এক লড়াই সংগ্রাম, আন্দোলন করে এসেছে।বর্তমান সময়ে এ দেশের সংসদীয় রাজনীতিতে প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি।সংসদে প্রাপ্ত আসনের নিরিখে দুর্বল হলেও তেভাগা,তেলেঙ্গানা,পুন্নাপ্রা ভায়লার,নৌবিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী কমিউনিস্ট পার্টি তার অতীতের সংসদ বহির্ভূত আন্দোলনের ঐতিহ্য বজায় রেখে বিজেপি তথা আর.এস.এসের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেছে।         

ভবিষ্যতে কমিউনিস্টরা যে তাদের ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পথে অন্তরায় হতে পারে সে কথা ভেবেই আর.এস.এসের গুরুজি এম.এস গোলওয়ালকর খ্রিস্টান মুসলমানদের সঙ্গে কমিউনিস্টদেরও তাদের শত্রু বলে চিহ্নিত করেছিল। আর.এস.এস এবং কমিউনিস্টদের মধ্যে মতাদর্শগত এই দ্বন্দ্বের কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে অবশ্যই প্রয়োজন কোন প্রেক্ষাপটে এই দুটি ভিন্ন ধারার সংগঠন গড়ে উঠেছিল তা জানা।