০৩৭- False Causality

বাড়িতে কেতাবের সংগ্রহ রাখলে সন্তান মানুষ হয়। প্রকাশকরা এমন টোটকা প্রচার করেন। আসলে যে বাড়িতে বই পড়ার আগ্রহ বেশী, সেই পরিবেশে সন্তানরা শিক্ষার আবহ ভাল পায়। বইয়ের সম্ভারের সাথে যোগসূত্র False Causality। অনেকে অপেক্ষাকৃত বেশী অসুখে ভোগেন। দেখবেন, বর্ষার ছাতা ও শীতের কাঁথার ব্যাপারে যত্নশীল না হওয়ায় False Causality। অমূকে বারবার প্রেমে পড়েন। বিপরীত লিঙ্গের হাতছানি ও সংযমের অভাবে ভাগ্যচক্রকে দোষ দেওয়া হয়। সেটাও একদম False Causality।

কয়লা, গরু পাচারে অনেক IPS অফিসারকে CBI, ED তলব করায় অনেকে হায় হায় করে উঠেছেন। প্রশাসনিক উচ্চপদস্হ শিক্ষিত কর্তা সৎ হবেন তেমন নিউটনের সূত্র নেই। আবহমান কালের চলচ্চিত্র দেখলে বুঝবেন, অসৎ পুলিশ চিরকাল ঘুষ খেত। স্বাধীনতার আগেও, নবাবী আমলেও। তৃণমূল কেবল তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে দলীয় কর্মসূচীর সাথে সরলরেখায় এনেছে। বাম যুগের অনেক IAS, IPS বিকল্প আমদানীর খোঁজে দক্ষিণপন্হী রাজনীতিতে ভিড়েছেন। গোপনেও তাই ছিলেন, False Causality।

এঁরা কেউ দেশসেবা করতে আসেননি। যখন মুখোশ আলকাতরায় ভরে যায়, কেউ কেউ সহ্য করতে না পেরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। বিজেপি বলে হিন্দু বিপদগ্রস্ত। এটাও False Causality, কারণ বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে হিন্দুরা এত বিদপসঙ্কুল অবস্হায় ছিল না। স্কটল্যান্ডের উত্তরের দ্বীপগুলিতে নাকি মাথায় উঁকুন না থাকলে জ্বর হয়। জ্বর হলে ওরা উঁকুনের আমদানী করে। এটা False Causality, কারণ জ্বরে উত্তপ্ত মাথায় উঁকুনের বসবাসের প্রতিকুল অবস্হা সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক হলে ফিরে আসে।

তৃণমূল রাজত্ব আসতেই সবাই চোর হয়ে গেল? আদপেই নয়। সুযোগ বুঝে অন্যের প্রাপ্য হাতিয়ে নেবার প্রবণতা বহুলাংশ মানুষের ভিতর ছিল। তৃণমূল বা জনগন এখানে False Causality, মূল কারণ তৃণমূলের নেতৃত্বের চুরির প্রবণতা। যে মোসাহেবরা ধামা ধরে আছে, তাদেরও অতৃপ্ত ক্ষুধা অগ্নিতে ঘৃতাহুতি দিচ্ছে। যতক্ষণ আপনি শিকড়ে না যাবেন, ততক্ষণ রোগ আপনার পিছু ছাড়বে না। সমাজ, জনগন, ৩৪বছর, বাঙালীর স্বভাব এসব False Causalityতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা ছাড়া কিছু হবে না।

০৩৮- Halo Effect

সেলিব্রিটির ছবি বা শ্লোগানে বিশেষ ভাবমূর্তি তুলে ধরে অশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত জনগনকে প্রভাবিত করার কৌশল Halo Effect। যে সেলিব্রিটিকে ব্যবহার করা হয়, আদপেই ব্যক্তি জীবনে তিনি তা নন, বা হতেও চান না। বিজ্ঞাপনে মধ্যবিত্তের আদলে শস্তার ছাপা শাড়ির বিজ্ঞাপন করছেন কোন বিখ্যাত অভিনেত্রী। সেই শাড়ির বিক্রী বাড়ল, কিন্তু সেই অভিনেত্রী সেই শাড়ি পরেন না। নীতিহীন দক্ষিণপন্হী রাজনৈতিক দলগুলি আকছার টুথপেষ্ট বা কনডোম কোম্পানির মত সেলিব্রিটি কিনে চমক দিতে চায়।

ঘিলুর চেয়ে সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ জীবজগতের সাধারণ নিয়ম। বাংলা সিরিয়ালে দেখবেন, বাবুদের ছোট ছেলে কাজ করতে আসা যে আদিবাসী মেয়েটির প্রেমে পড়ল সে সবচেয়ে শহুরে সুন্দরী। দর্শকরা সৌন্দর্যে এতটাই মশগুল যে বাস্তবতা নিয়ে বিচার করে না। উপভোক্তারা জানে না, কীভাবে বিজেপির সীমা পাত্ররা আদিবাসী দরিদ্র মহিলাদের মধ্যযুগীয় অত্যাচার করে। প্রযোজক সিরিয়াল বানায় বিপুল সংখ্যার মূর্খ জীবদের জন্য। Halo Effectর জন্য সেলিব্রিটির আগমনে আদেখলেরা পদপিষ্ট হয়েও মরে।

তৃণমূলের এক মন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন, জুন মালিয়া, সন্ধ্যা রায়, মুনমুন সেন, মিমি, নুসরতরা রাজনীতিতে এসেছেন লুটপাট করতে। চারিত্রিক দুর্বলতায় কেবল মহিলাদের নামই করেছেন। অনেক পুরুষও বিক্রী হয়েছেন Halo Effectএ। কে কবে দাবী করেছে যে দেশের সেবা করতে চাই? সেলিব্রিটি জানে বিমানে বসে কামদেবের কাছে নির্বাচনের টিকিট মিলে যেতে পারে। তখন তিনি দেশসেবা নামক স্টার্টআপ ব্যবসার কথা ভাবতে শুরু করলেন। শ্রীকান্ত মাহাতোরা জানেন না, শ্রীকান্ত মেহেতা জানেন।

দেশসেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া সেলিব্রিটি হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট পার্টিতে চলে গেলেন। বিহারীবাবুরাও জেনে গেলেন, মধ্যযুগের বাংলায় Halo Effect কাজ করছে। পরিবর্তন চাইয়ের হোর্ডিংএ কাটামুন্ডুগুলো কথা বলেছিল। এখন নোট গুণছে। যৌন আবেদন ও সুড়সুড়ি বাস্তব বোধ রহিত পশুত্বে পরিণত করে। প্রখর ধান্দাবাজ লম্পট নেতৃত্ব কর্পোরেট হাউসের বিজ্ঞাপন বিভাগের মত যেন তেন প্রকারেণ গরীব ও মূর্খ মানুষের আকাঙ্খিত অবদমিত যৌনতাকে নিরাপদে নিখুঁত ব্যবসায়ীর মত ব্যবহার করে নেয়। 

০৩৯- Alternative Path

চাঁদের পাহাড়ের শঙ্করের কথা মনে করুন। সে কি ভিলেন, নাকি হিরো? হীরের খোঁজে এক তরুণ উদ্যমী আফ্রিকার জঙ্গলে। একটি সামান্য ভুলে জীবনহানীর সম্ভাবনা। মধ্যযুগে কতিপয় মানুষ সেই Alternative Pathএ বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাঁর স্হান হয়েছে রাজকীয় শক্তির পাশে। তাঁকে যেমন মৃত্যুপথে হাঁটতে হয়েছে, তেমনই প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিকেশও করতে হয়েছে। Alternative Path কিছু মানুষের সাফল্যের চাবিকাঠি। তবে অনুব্রত বা পার্থকে আমরা ভিলেনের তকমা দিই কেন?

ভোগ সুখ ও কালীঘাটের সনদ পাবার জন্য এলাকায় এলাকায় নতুন দুর্বৃত্তদের নিরন্তর সংগ্রাম চলছে। কত লুম্পেন নীরবে লাশ হয়ে যাচ্ছে, দেহ লোপাট হয়ে যায়। ক’জন শেষ পর্যন্ত অনুব্রত বা পার্থ হতে পারে, তারচেয়ে ঢের লোভীর অতৃপ্ত আত্মা আজও গল্পকথা হয়ে গেছে। Alternative Pathকে আমরা আজ কিছু লোক সম্মান দিতে নারাজ, কারণ তা ছিল মধ্যযুগীয় বর্বরতা। ঠিক যে ভাবে পর্তুগীজ, মগ জলদস্যুরা নারী-শিশু লুন্ঠন করত, সে ভাবেই বাংলার বালি, কয়লা, গরু পাচার হয়ে যাচ্ছে নির্বিকারে।

Alternative Path সেই সফল মানুষদের কৃতী ব্যক্তিদের পাশের চেয়ারে বসার সুযোগ দিচ্ছে। কিংবা সুশীলরা অনুব্রত বা পার্থর কৃপাদৃষ্টিতে বর্তে যান। সেটা তথাকথিত সুশীলদেরও Alternative Path। একজন শিক্ষিত সংযমী মিতব্যয়ী মানুষ সারা জীবনে হয়ত দু-আড়াই কোটি রোজগার করতে পারেন, কিন্তু Alternative Pathএর পথিক এক বছরে সেই সাফল্য হাতিয়ে নেয়। অনুব্রত বা পার্থরা আগামী প্রজন্মের রোলমডেল হয়ে গেলে Alternative Pathএ ভিড় বাড়ে। চরিত্র বদলে বাড়বে ধর্ষণ, খুন।

কোন সরকার কোন দেশে Alternative Path সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, কারণ দুর্বৃত্ত শূণ্য সমাজ ইউটোপিয়া। যখন সরকারের সুপ্রিমো Alternative Pathএর নাবিক হয়ে যান, তখন ভরাডুবি অমোঘ সত্য, আজ না হয় কাল। তিনি নেচে গেয়ে, সুশীলদের ঘুঙুর পরিয়ে নাচিয়ে গাইয়ে প্রলয় রোধ করতে পারবেন না। পরিবারতন্ত্র, রাজতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারিতা Alternative Pathএর আঁতুড় ঘর। চাটুকাররা ধাইমা। বহু নিরীহ ভীতু সাধারণ মানুষও Alternative Pathএর কাল্পনিক সাফল্যে ভেসে রসাতল বানিয়ে দেয়।