০৪০- Forecast Illusion

প্রতিদিন কত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ভবিষ্যদ্বাণী শোনেন? মনে না রাখার ঐশ্বরিক শক্তি আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। নইলে চারপাশে প্রতারক দেখতে দেখতে পাগল হয়ে যেতেন। কাকতালীয় ভাবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেলে স্মরণে রাখেন। শতকরার হিসাবে তা নগণ্য। Forecast Illusionএ অভিরূপ সরকার থেকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতারণাকে সুবোধ সরকারের চেয়ার মোছার মত সামান্য ব্যাপার মনে হয়। বহু ভবিদ্বাণী বাস্তবের ধারে কাছে না আসলেও শাস্তির কোন বালাই নেই।

কুড়ি, পঁচিশ বছর আগের নেতা, অর্থনীতিবিদদের বক্তব্যগুলো খুঁজে বার করুন। আজ আপনার স্বর্গের আগের স্টেশনে থাকার কথা ছিল। Forecast Illusionএ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা আধুনিক উন্নয়ন আর সবকা বিকাশের বন্যায় ভেসে গেলেন। সে সব ভুলে আজ আলোচনা করছেন, অমূক নেতা বলেছেন তমূক চোরের বাড়িতে তদন্তকারীরা যাবে কিংবা তমূক চোর শীঘ্রই গ্রেপ্তার হবে। আপনি ভাবলেন, দামী মদের বোতলটা সেদিন খুলে সেলিব্রেট করবেন, কিন্তু সেই দিন আর এল না। অমূক নেতা নীরব।

Forecast করার জন্য যত factor analysis করা দরকার, বা robust processor থেকে ঘিলু প্রয়োজন তা এই পোদ্দারদের নেই। আলটপকা কথার কোন শাস্তিও নেই। ফলে যে একদিন দলের সুপ্রিমোকে চিটফান্ডের সবচেয়ে বড় beneficiary বলেছিলেন, তিনি সর্বজ্ঞ চটিচাটা। বিজেপি নেতাকে লাথি মেরে কচুবনে ফেললে তৃণমূল নেতা হয়ে উঠে দাঁড়াবেন। Forecast Illusion জনগনকে ভুল পথে পরিচালিত করে। নিস্তরঙ্গ জীবনে মানুষ কালোসিয়ামে দানবের মৃত্যুকালীন যন্ত্রণা দেখতে চায়, তা নিয়েও ব্যবসা।

কেউ চুরি করেছে বলে জেলে যাবে, আর আপনি প্রতিবাদ করলে মিথ্যা গাঁজা কেসে জেলে যাবেন না, তেমন ভরসা কেউ দিতে পারে না। এই অসম্ভবকে সম্ভব করতেই Forecast Illusionএর ব্যবসা করে জালিয়াতরা। মানুষের বিশ্বাস যত হারাচ্ছে ধর্মের মত Forecast Illusionএর নিগড়ে তত আবদ্ধ হচ্ছে। ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না, তাই মোদী-মমতা নীরবে গোপনে সেটিং করে নেন। জনতার জন্য রইল বারো হাত কাঁকুরের তেরো হাত Forecast Illusion। রুটির সাথে আচার।

০৪১- Conjunction Fallacy

রামের জন্মের পূর্বেই রামায়ণ রচনা, আকাশের তারা দেখে বেথেলহেমে সাধুদের আগমন কিংবা বুদ্ধের জন্মকালে মায়ার স্বপ্নে শ্বেত হস্তী দর্শন এসব আপনার বিশ্বাস সুদৃঢ় করে। মনে করুন বিমানে ঘোষণা হল, (ক) বিমান কলকাতায় অবতরণ করবে না, (খ) খারাপ আবহাওয়ার জন্য বিমান কলকাতায় অবতরণ করবে না। এখানে “খারাপ আবহাওয়া” Conjunction Fallacy যা স্রেফ ঘোষণা, কাল্পনিক ভীতির প্রশ্রয় বা নির্দেশের চেয়ে বেশী যুক্তিগ্রাহ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরাপদ ঘোষণা বলে পরিগণিত হবে।

নুন ও ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ অমূক টুথপেস্ট। উপাদান দুটি সবার বিশ্বাসের Conjunction Fallacy। মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই দেবার ক্ষমতা মমতার আছে, কারণ উনি ৩৪বছরের বাম শাসন খতম করেছেন। ৩৪ বছরের গল্পটা Conjunction Fallacy, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে ও ভুল করে। আসলে বহু Hindsight

Bias, Story Bias ও Outcome Biasকে একটা Conjunction Fallacyতে ঢেকে দেবার চেষ্টা করে। তৃণমূল দল জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী কারণ তাদের নেত্রী উন্নয়নমূখী, দরদী, শিল্পী, সততার প্রতীক।

এগারো বছর ধরে দেদার লুন্ঠন চালাবার পরেও Conjunction Fallacyতে দল প্রমাণ করার চেষ্টা করে সেই দলের সবাই চোর নয়। সবাই চোর নয়, দাবীটা চৌর্যযুগে অকাট্য প্রমাণ। বিশাখদত্তের মূদ্রারাক্ষস মৌর্যযুগে রচিত। তখন সবাই কৌটিল্যের মত জ্ঞানী ছিলেন নাকি? চৌর্যযুগে মূদ্রার রাক্ষসদের রাজ শুরু হয়েছে। কৌটিল্যের বুদ্ধিতে চন্দ্রগুপ্ত ধননন্দকে পরাস্ত করা স্বাভাবিক ঘটনা নয়, কৌটিল্যের বুদ্ধি Conjunction Fallacy যুক্ত করেছে। হিন্দুত্বের প্রতীক মোদী-রাজ বললে ‘হিন্দু’ Conjunction Fallacy।

Conjunction Fallacy সেটের ভিতর একটি সাবসেট যা সম্পূর্ণ সেটকে অর্থবহ ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। কাল আমার কোন কাজ নেই, অন্য কোন কাজ না এসে পড়লে তোমার সাথে দেখা করব। এখানে ‘কাল আমার কোন কাজ নেই’ যেমন Conjunction Fallacy, তেমনই ‘অন্য কোন কাজ এসে না পড়লে’ও আরেকটি Conjunction Fallacy। দুটি Conjunction Fallacy যুক্ত করলে দেখা করাটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। বক্তব্যকে অনুধাবন করতে Conjunction Fallacy সম্পর্কে পুরো ধারণা দরকার।

০৪২-Framing

কালো বেড়াল পথ কাটলে ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়। আমি অফিস যাচ্ছিলাম, কোথা থেকে একটা কালো বেড়াল পথ কেটে চলে গেল। পেছন দিকে ছেয়ে রঙের SUV দ্রুত গতিতে আসছিল, উল্টো দিক দিয়ে মহিন্দ্রার ছোট লরি, যাকে ছোট হাতি বলি। রাস্তার পাশে রাধাচূড়ার ডাল কেটে রেখেছে কেউ। সে দিকে সরে দাঁড়ালাম। গাড়ি দুটো গতি কমিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আবার হাঁটতে শুরু করলাম। গল্প শুরুর আগেই আপনি মনে Framing করে নিয়েছিলেন। সেই ফ্রেমের বাইরে চলে যেতেই স্বাদটা নষ্ট।

Framing খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। সততার প্রতীক, টালির বাড়ি, চায়ের কেটলি থেকে নব্য হিন্দুত্ব এসব Framing। Framing জনমানসে ছবি আঁকে। “জল দাও”, বা “দয়া করে এক গেলাস জল দেবেন?” দুটি উচ্চারণে বক্তার চরিত্রের Framing হয়ে যায়। কেউ পোষাক, সজ্জা সম্পর্কে খুব সচেতন, কিন্তু মানুষের সমালোচনা গায়ে মাখেন না দাবী করেন। আসলে তিনি কিছুই Framingর বাইরে রাখেন না। Framingর সাথে যুক্ত আছে Glossing। কিছু Glossing স্বাভাবিক, কিছু আরোপিত।

কারো চাকরি চলে গেল। সে বলল, কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জীবন নতুন সুযোগ দিল। চাকরির ব্যর্থতা অন্য ভাবে আরোপিত হয়ে গেল। কিংবা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কোন সৈনিক ফিরল স্বাভাবিক ভাবে। হয়ত কোন সহকর্মী নিজের অদক্ষতায় বা সামান্য ভুলে ফিরতে না পেরে শহীদ হয়ে গেল। সেটাও স্বাভাবিক Glossing। পার্থ ও অনুব্রতর মধ্যে দল অনুব্রতকে Glossing করছে ভবিষ্যতে Framing ঠিক রাখতে। চোর তৃণমূলের ভিতর থেকে নতুন তৃণমূল ডিম ফুটে বের হবে। এটাও Framingএর জন্য Glossing।

আমরা চারপাশের জগতকে পূর্ব-নির্ধারিত Framingএর চশমায় দেখি। ফলতঃ গল্পের আগে আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। বিজেপি আদৌ হিন্দুদের আর্থিক, সামাজিক ও নৈতিক উন্নয়ন করেছে কিনা বা করতে পারবে কিনা না ভেবেই হিন্দু খতরে মে হ্যায়, শুনে তৃণমূলের চোরদের বিকল্প সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ খুলে দিই। সুপ্রিমোর কোন সম্প্রদায়ের মসিহা হয়ে ওঠাও আসলে Framing। শেয়ার বাজার থেকে অর্থলগ্নির জটিল অঙ্কে Framing অন্ধের যষ্ঠির কাজ করে। বিচার করুন, চোখ খুলে।