০৪৩-Action Bias

চুরি করেছে কেষ্ট-পার্থ। সৌগত-মদনের মুখ দিয়ে নর্দমার পাঁক বেরিয়ে আসছে কেন? একটু খেয়াল করলে দেখবেন, সাইড লাইনের ধারে বসে থাকা অকর্মণ্যরা বেশী হাঁকপাঁক করছে নজর কাড়তে। একে বলে Action Bias। হাঁকডাক না করলে এরকম মাল রাজনীতিতে আছে জনতা বা নেতৃত্ব ভুলে যাবে। মমতাকে দেখবেন মোদীর সাথে আলোচনা করে এসেই বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়ে পাওয়ার, কেজরিওয়ালকে চিঠি দিয়ে বসে। স্হির হয়ে বসা যদি মনন শিল্প হয়, অস্হিরতা শিল্পঘাতী আত্মহত্যা।

পেনাল্টি শটের সময়ে এক-তৃতীয়াংশ শট গোলকিপারের ডান দিকে, এক-তৃতীয়াংশ বাঁ দিকে এবং বাকি এক-তৃতীয়াংশ সোজা শট মারে। কিন্তু গোলকিপার হয় ডান দিকে নয়ত বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একে বলে Action Bias। গোলকিপার কখনও দেখাতে চায় না, সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল খেয়েছে। নিশ্চিত রোগ নির্ণয়ের আগে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লেখেন, সেটাও Action Bias। বিরোধীরা ভাবে, এই মাসে পথসভা বা মিছিল কম হয়েছে, পথে নামতে হবে। ইস্যু খুঁজে পাওয়া যাবে। এটাও Action Bias।

পথে ঘাটে বহু মানুষের চলাচল দেখবেন, যাদের বহুলাংশ Action Biasএর ফল। বাড়িতে বসে কী করব, তাই গড়িয়াহাট বা শ্যামবাজারে ঘুরে এলাম। যে মানুষ রুজির লড়াই করে ফিরছে, মাশুল দিতে হয় তাদের। অনেক দিন জাতির উদ্দেশ্যে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেওয়া হয়নি, একটা প্রকল্প চালু করে ফিতে কাটতে চলে এলেন নরেন মোদী। কিন্তু ভুলেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন না। থরে থরে ব্যস্ততা সাজিয়ে রেখে মূল সমস্যা থেকে বহু দূরে থাকেন। Action Bias বসতে দেয় না, অহেতুক ছোটায়।

নাইট ক্লাবে আনন্দে মাতোয়ারা মদ্যপ ব্যক্তিদের ভিতর গোষ্ঠী সঙ্ঘর্ষ। পুলিশ খেয়াল করছে। যদি বরিষ্ঠ অফিসার থাকেন, তাহলে যতক্ষণ না কেউ আহত হচ্ছে, হস্তক্ষেপ করে না। তারপর পরিস্হিতি সামলে নেয়। কিন্তু অপরিণত অফিসার Action Biasএ প্রথমেই হস্তক্ষেপ করে দু পক্ষের শত্রু হয়ে যায়। তারা আনন্দে বাধার অপবাদ নেয়। সহসা অচেনা পরিস্হিতি সাধারণতঃ Action Biasএর ফলে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। কাজ নেই তাই খই ভেজে ফেললাম, এমন Action Biasএর উদাহরণ ভুরিভুরি।

০৪৪-Omission Bias

তুমি যদি সমস্যা সমাধান না করতে পার, তাহলে তুমি সমস্যা। ১৯৬০এ ইউরোপে ছাত্র আন্দোলনের পাঞ্চ লাইন। তৃণমূল দল কি ঘোষণা করতে পারবে, কোন মন্ত্রী, বিধায়কের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ থাকলে তাঁকে বরখাস্ত করা হবে? তখন ইতিহাসের পাতা ওল্টাবে। কবে ভ্যাপম হয়েছিল, বোফর্স ছিল। চিরকুটে লিখে চাকরি হত, এসব আজিগুবি গল্প। Action Bias যেমন নজরে পরার তাগিদে অবাঞ্ছিত কাজ, তেমনই Omission Bias নীরব থেকে নজর এড়িয়ে যাবার প্রয়াস। সমাধান না থাকাটা সমস্যা।

মনে করুন করোনার টিকায় খুব ক্ষুদ্র অংশের মানুষের সমস্যা বেড়েছিল। সেক্ষেত্রে টিকাকরণ জরুরী কী? আরেকটু জটিল ভাবনা। ধরুন, জীবনদায়ী কোন ওষুধে ২০% ক্ষেত্রে জীবনহানীর আশঙ্কা থাকে। বাকিরা দ্রুত সুস্হ হয়। সরকার কি এই ওষুধ অনুমোদন করবে? প্রতি ৫জনের ১জন মারা যাবে এবং মনে করুন, প্রথম রোগী মারা গেলেন। সেক্ষেত্রে সমস্ত দায় বর্তাবে স্বাস্হ্য দপ্তরের অনুমোদনের উপর। কেউ ৮০% মানুষের উপকারের সম্ভাবনা ভাববে না। তখন সরকার চুপ করে থাকে, Omission Bias।

বামপন্হীরা সমাজের দরিদ্রতম মানুষদের উন্নয়নের কথা বলে। কিন্তু সেই সমাজের বিপুল অংশ লক্ষ্মী ভান্ডারের মত ক্ষণস্হায়ী বুদবুদে আক্রান্ত। অপরদিকে আধুনিক শিক্ষায় বলীয়ান মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তের একাংশও বামপন্হাকে আদর্শ মনে করেন এবং সমর্থনের বড় অংশের যোগানদার। সেক্ষেত্রে কেবল দরিদ্রতম মানুষের কথা বললে কি মাঝের স্তর খুশী হবে? সেখানেও Omission Bias নীরবতার সৃষ্টি করবে। তৃণমূল বা বিজেপির সাপোর্ট বেসে তেমন কোন সমস্যা নেই, কারণ সব নীতি দলিল বিহীন।

Action Bias যেমন কিছু করার জন্য সিদ্ধান্তহীনতা, তেমনই Omission Bias না করার জন্য সিদ্ধান্তে বিলম্ব। Omission Bias অনেক সময়ে পরিস্হিতির গতি প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে। Action Biasএর হুজুগ কিছু সদস্যের Omission Bias দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে। আবার তৃণমূল কর্মীদের চিটফান্ড, নারদ, গরু, কয়লা, বালি, কাঠ পাচারের প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে Omission Bias স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। তখন ইতিহাস, ভূগোল থেকে নৃতত্বের গভীর বিষয়ে আত্মগোপন করে ফেলবে।

০৪৫-Self-Serving Bias

শিক্ষামন্ত্রী হবার পর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ধারণা হতেই পারে তিনি যখন শিক্ষা ক্ষেত্রে সবাইকে মায়না দেন, বিনিময়ে পিএইচডি ডিগ্রী নেবেন না কেন? কারণ তিনি নিজেকে বিদ্বান মনে করেন। বিভিন্ন ভাষায় ১২৫টি পুস্তকের প্রণেতা যুবতীকালে জ্ঞানের বিস্ফোরণ হৃদয়ে অনুভব করেছেন বলে পিএইচডি নিয়ে নিয়েছেন। প্রাচীণকাল থেকে রাজাদের উপাধি গ্রহণের প্রচলন ছিল। কারণ তাঁরা নিজেদের যোগ্য মনে করতেন। একে বলে Self-Serving Bias। মোদীর কোন সহপাঠী নেই, কিন্তু ডিগ্রীর অভাবও নেই।

কোন পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীকে পরিবারের সুখ শান্তির জন্য নিজের অবদানকে ১০০র মধ্যে কত দেবেন, প্রশ্ন করলে দেখবেন, যোগফল প্রায় সবক্ষেত্রে ১০০র বেশী। মেসে ৫ জন ছাত্র থাকে। ঘর পরিষ্কারের ক্ষেত্রে তোমাদের ভূমিকা ১০০তে কত? পরীক্ষায় দেখা গেছে ৫জনের যোগফল ৩২০%। Self-Serving Bias মানুষের জন্মগত অভ্যাস। কোন কোম্পানী ভাল ফল করলে CEOর ক্যারিশমা যত বড় করে দেখায়, খারাপ ফল করলে করোনা, মূল্যবৃদ্ধি, বাজার হ্রাসের বিষয়গুলি সামনে টেনে আনা স্বাভাবিক।

সামাজিক প্রকল্প ঘোষণা করার সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও সরকারের সিদ্ধান্তের কথা বলেন না, তিনি করে দিলেন। তিনি মসিহা হয়ে ওঠেন। কিন্তু দূর্নীতিতে যখন দল জেরবার, তখন বললেন, তিনি সাধারণ মানুষ। ভগবানও ১০০% কন্ট্রোল করতে পারেন না। তাহলে তিনি গুন্ডা কন্ট্রোলের স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন কেন? Self-Serving Bias জানে কখন নিজেকে তুলে ধরতে হয়, কখন গুটিয়ে যেতে হয়। মায়েরা সন্তানের খারাপ ফলে বলে, বর্তমানের শিক্ষকরা আগের মত মূল্যায়ণ করতে পারেন না।

চাটুকাররা এই Self-Serving Biasকে ব্যবহার করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। ওরা বোঝে, কাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশী। দেখবেন তৃণমূলের কোন কাউন্সিলার সুলভ শৌচালয় উদ্বোধন করলেও অনুপ্রেরণা ও ইদানিং সেনাপতিত্বের সুড়সুড়ি দেখতে পান। তথাকথিত সুশীলরা এই পথের প্রধান আবিষ্কারক। নেতৃত্বের চরিত্র ও দুর্বলতা তারা বিলক্ষণ বোঝে, ব্যবহারও জানে। ওরা কাঁসর বাজালে ক্যাক্যাছিছি করে মঞ্চে ঘুঙুর পরে নাচতে পারে। Self-Serving Biasএর বিপরীত আত্মসমীক্ষা।