০৪৯-Beginner’s Luck

নামী দল গোল করতে পারছে না। কোচ উঠতি খেলোয়াড়কে শেষ মুহূর্তে নামিয়ে গোল পেয়ে গেলেন। দ্বিতীয় খেলাতেও পুনরাবৃত্তি। একই চালে সফল কোচ। সবাই বলাবলি শুরু করল Beginner’s Luck বলে অব্যর্থ ধারণা আছে। পরের ম্যাচ ডার্বি। কোচ তুরূপের তাসে ভরসা করে ডুবে গেলেন। ধারে ভারে ডার্বি আগের দুটি ম্যাচ থেকে স্বাদে গন্ধে আলাদা ও ওজনদার। Law of averageএ হয়ত পরের কোন ডার্বিতে সে সফল হবে। শেয়ার বা ফাটকা বাজারে Beginner’s Luck সংক্রান্ত ভরাডুবি বহুল প্রচলিত।

প্রথমে লোকে ছোট থেকে মাঝারি বিনিয়োগে থাকে এবং সেখানে সফল হবার সম্ভাবনা বেশী। শতকরা হারে সাফল্যের উত্তেজিত হয়ে ব্লু-চিপের জুতোয় পা গলাতেই ঘটি-বাটি হারায়। পাড়ার একটি ছেলে যে তরুণীকে প্রস্তাব দেয়, সেই প্রণয়ের ফাঁদে ধরা পড়ে। বড়রা বলত, Beginner’s Luck। কিন্তু বিয়ের সময়ে উপযুক্ত নারীর সামনে দাঁড়াল, সটান প্রত্যাখ্যাত হয়ে গেল। রাজনীতিতে Beginner’s Luck খুব পরিচিত শব্দ। ১৯৮৪তে মমতা ব্যানার্জীও যাদবপুর কেন্দ্রে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছিলেন।

আজ বহু নেতা মন্ত্রী দূর্নীতি ও চুরির দায়ে অভিযুক্ত। তারা কোন দিন ছোট লাভদায়ক দেনাপাওনায় হাত পাকিয়েছিল। সবাই সফল হয়নি, যারা পেরেছিল তারা নেতৃত্বের নেকনজরে পড়েছে Beginner’s Luckএর জন্য। সাপ-লুডোর ছকে উঠে নেমে তারাই আজ কেউ নেতা মন্ত্রী। আজ শরীরে বয়সের শিকড়, কেউ গারদে, কেউ আশঙ্কায় রাতে ঘুমোতে পারে না। কেউ বিদেশে পাড়ি দেবে রেখেছে দেশের গানস্যালুট ফেলে। ময়লতঃ Beginner’s Luck ভাগ্যের ছক্কায় ফাটকা ব্যবসায় হিঁচড়ে টেনে নামানো।

যারা চাকরি বা সাধারণ ব্যবসা করে, তাদের ক্ষেত্রে Beginner’s Luck শব্দটার তেমন প্রচলন নেই, কারণ রোজগার মোটের উপর সুনির্দিষ্ট। কোন সৎ ছোট নেতা সংগ্রাম সঙ্ঘর্ষে বড় নেতা হন, সেখানেও Beginner’s Luck নেই। কিন্তু যে সব দল মারি তো গন্ডার, লুঠি তো ভান্ডার নীতিতে বিশ্বাসী সেখানে Beginner’s Luck প্রাথমিক নির্বাচন করে দেয়। সে চোর একদিন ডাকাত হয়, সেই ডাকাত একদিন বীরের শিরোপা পায়, কিন্তু গারদে। গানস্যালুটও ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেবার বাসনাকে ঢাকতে পারে না।

০৫০-Cognitive Dissonance

জ্ঞানগর্ভ অসঙ্গতি বা Cognitive Dissonance। মানুষের চরিত্র পুরাকালে গ্রীক কবি ঈশপও জানতেন। তাই শেয়াল ও টক আঙুরের গল্প লিখেছেন। হরেক কিসিমের অজুহাতে ব্যর্থতা আড়ালের প্রয়াসগুলো যুগান্তকারী। বাসে এক তরুণী তার বান্ধবীকে প্রেমিক সম্পর্কে বলছে, “আমার মনের মত নয়। ভীষণ বাস্তববাদী, যুক্তির পর যুক্তি সাজায়। আমি ওসব নিয়ে কী করব? ভালো গাড়ি, দামী রেস্তোরাঁ হলেই আমি খুশী।” প্রথমে ভেবেছিলাম তরুণী বাস্তববাদী নয়, রোমান্টিক। পরে বুঝলাম বড্ড বেশী পার্থিব।

যা আমার নাগালের বাইরে, সব খারাপ। বড়লোকরা বিদেশে বেড়াতে যায় কেন? দেশেই সব সৌন্দর্য আছে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, কর্মসংস্হান মানে কেবল সরকারী চাকরি নয়। চা, চপ, কাশ, কচুরিপানাও বৃহৎ শিল্প। চায়ের দোকানী চারতলা বাড়ি হাঁকিয়েছে। কারণ, তিনি জানেন, সরকারী চাকরি সাধারণের জন্য নয়, নগদে বিক্রীর এজেন্ট ঘুরছে। সরকারী চাকরি যে আঙুর ফল তিনি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। টেলিভিসানের তর্ক-আসরে দূর্নীতির সমর্থকদের মধ্যে Cognitive Dissonanceর পূর্ণ নিদর্শন পাবেন।

এক ভদ্রলোক পছন্দ করে একটা গাড়ি কিনলেন। পরে দেখেন ইঞ্জিনের শব্দ জেট প্লেনের চেয়ে বেশী, আর ড্রাইভিং সিটটাও আরামদায়ক নয়। তিনি গাড়ি ফেরৎ দিলেন না কিংবা সমালোচনা করলেন না। বন্ধুদের বললেন, শব্দ আর সিট তাঁকে চালাতে চালাতে ঢুলুনির হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়। টেলি-টকের তৃণমূলী বক্তা কেন বাগুইআটি আর বারাসত থানা সময়োচিত ব্যবস্হা নিল না, সে প্রশ্ন করলে বলে, মাননীয়ার নির্দেশে খুনী গ্রেপ্তার হয়েছে। খুনী গ্রেপ্তার হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। সেটাও নাকি ঘটনা!

Cognitive Dissonanceর ফলে অনেক অসফল পরীক্ষার্থী কেবল পরীক্ষাটা কেমন হয় বুঝতে পরীক্ষা দেয়। “আমি জানতাম পারব না, তবু বসে অভিজ্ঞতা হল।” কিংবা প্রমোশন নিয়ে ঝঞ্ঝাট ডাকার চেয়ে এই বেশ ভালো আছি। মোদী আছে তাই ভারতের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। ওদিকে জ্বালানীর দাম বেড়ে গেল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রী হয়ে গেল। Cognitive Dissonance রোজ শুনি, মমতা নিজে সৎ হলে কী হবে? বাকি সবাই চোর তো! সেই চোরটাই পরে সততার প্রতীকের বীর হয়ে যায়।

০৫১-Hyperbolic Discounting

“Live each day as if it were your last.” প্রতিদিন জীবনের শেষ দিনের মত আনন্দ করে নাও। আগামীকাল কে দেখেছে? বেশীর ভাগ মানুষের মনস্তত্বে এই ভাবনা আছে। ভাবতে পারেন, চিটফান্ডের বিপুল রাহাজানির পরেও কী করে আবার সনমার্গ চিটফান্ডের কীর্তি ফাঁস হল? দ্রুত লাভের হাতছানি মানুষকে বিহ্বল করে দেয়। বাড়ি, গাড়ি, ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে তাই সহজ কিস্তির গাজর ঝোলানো থাকে। ক্রেডিট কার্ডের রমরমা। আগে ভোগ করো, পরে ভাবা যাবে। এটা Hyperbolic Discounting।

মানুষও গঠনগত ভাবে পশু। অভোযোজনের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আধুনিক মানব হয়েছে তবু জিনগত সাদৃশ্য আছেই। একজন মানুষকে তিন দিনের খাবার এক সাথে দিলে বেশীর ভাগ মানুষ তিন দিন খাবে, কিন্তু বাঁদর বা কুকুর খেতে পারলে এক দিনেই খেয়ে বাকি দু দিন অনাহারে থাকবে। কারণ সব পশুকে জীবনযুদ্ধে মুহূর্তে বাঁচতে হয়। ভবিষ্যতের বিমূর্ত ভাবনার অবকাশ কম। এমনকি যারা সচেতন, তাদেরও জ্ঞান হয় পারিবারিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতায়। Hyperbolic Discounting গুরুত্বপূর্ণ।

Hyperbolic Discounting থেকে বিরত করতে পারে আত্মসংযম। নিজের আবেগ ও তাৎক্ষণিক লোভ নিয়ন্ত্রণ। যারা মদ খায় তারা ভাবে আরেক পেগ মদ খেয়ে নিই, কিছু হবে না। হয়ত কিছু হল না, কিন্তু মদের চাহিদা সময়ের সাথে বেড়ে গেল। Hyperbolic Discountingএর উদাহরণ দূর্নীতিগ্রস্ত নেতারা। সাময়িক ভোগসুখে বিভোর হয়ে, তারা ভাবতেই পারে না ভবিষ্যতে কোন সমস্যার মুখে পড়তে পারে। Hyperbolic Discounting সর্বদা ধারণা দেয় ভবিষ্যৎকে তারা যেন তেন প্রকারেণ নিয়ন্ত্রণ করে নেবে।

নরেন্দ্র মোদী আজ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্হাগুলোকে প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করছেন, ভবিষ্যতে বুমেরাং হবে, সে বোধ সিংহাসনে থাকাকালীন হবে না। রাজ্য সরকারের মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে দিতে পুলিশকে ব্যবহারের মাশুল তাদের নেতা কর্মীদের দিতে হবে। Hyperbolic Discounting ভবিষ্যতকে অন্ধকারে রেখে আজকের পার্থিব আনন্দে মাতোয়ারা করে দেয় বিশেষতঃ পরিবেশ ও প্রবণতায়। আত্ম-সংবরণ ও সুদূরপ্রসারী যুক্তিগ্রাহ্য লাভক্ষতির হিসাব করাটা এক অভ্যাস। সরকার নিজেই পরিবেশ কলুষ করছে।