০৫২-Because Justification

আমি এটা করে দিলাম। এটা ঔদ্ধত্য। সরকারী পয়সা কারো বাপের নয়, করে দেবার ব্যক্তিগত ক্ষমতা সংবিধান দেয়নি। চাটুকাররা খোল করতাল বাজিয়ে নাচতে শুরু করলেন, মাননীয়া করুণাময়ী, তিনি করে দিলেন। জনগনের মধ্যে প্রতিধ্বনিত হতে শুরু করল, করে দিলেন। বামফ্রন্ট বেকার ভাতা দিয়ে বলেছিল, ভাতার মাধ্যমে কর্মসংস্হানের অধিকার স্বীকৃত হল। বেকার ভাতা দেবার কারণ কর্মহীনদের সাংবিধানিক অধিকারের স্বীকৃতি। এই “কারণ”টা হল, Because Justification যা সদিচ্ছা প্রমাণ করে।

দুটি বক্তব্য পাশাপাশি রাখলে বুঝবেন, একটি ঔদ্ধত্য, দ্বিতীয়টি আনুগত্য। প্রতি দপ্তরে দায়িত্ববান মন্ত্রী ছিলেন, এখনকার মত পদলেহী চাটুকার নয়। ঔদ্ধত্য দিয়ে বেশী দিন মানুষকে ভয় দেখিয়ে রাখা যায় না। সেই ঔদ্ধত্য দলের সর্বস্তরে ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়বে। মূর্খের ঔদ্ধত্য বেশী হলে বীরকেষ্টর মত মাগুর বিক্রেতাও কবি শঙ্খ ঘোষের সমালোচনা করবে। জয়পরাজয়ের মত বদজাত সুবোধ কবিরা সেই কেষ্টর পদলেহন করে “কারণ” মাসোহারা, বাৎসরিক পুরষ্কার। তাই আলোচ্য Because Justification।

সকাল বেলা, হাওড়া স্টেশনে প্রতিটি কাউন্টারে বিরাট লাইন। অনেক কাউন্টার বন্ধ। আপনি বললেন, দাদা, আমায় প্রথমে টিকিট কাটতে দেবেন? লাইনের পেছেন থেকে প্রতিবাদের ভর্ৎসনা শুরু হবে। যদি বলেন নটা বিয়াল্লিশের দিকশূণ্যপুর লোকাল বেরিয়ে যাবে। প্লিজ একটু সাহায্য করবেন? নটা বিয়াল্লিশ সেখানে Because Justification। আপনি টিকিটটা পেয়ে গেলেন। ভিখারীদের মধ্যেও দুটি ভাগ। অলস ভিখারী সোজাসাপটা, কিন্তু Because Justification ব্যবহারকারী ভিখারী তুলনামূলক আয় বেশী করে।

মুখ্যমন্ত্রী করে দিলেন, কারণ তিনি মমতাময়ী। এই Because Justification আপনি গ্রহণ করার ফলে মন্ত্রীসভার অকর্মণ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তুললেন না। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। অকারণ Because Justification আপনাকে বুঝিয়ে দিল, প্রশ্ন করলেন না, তাহলে বেকারত্বের হার বাড়ছে কেন? বামপন্হী দলগুলো সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মিছিল করে, কিন্তু Because Justification প্রতিষ্ঠিত হয় না বলে মানুষ রুটিন কর্মসূচী ধরে নেয়। শ্রোতার কানে গ্রহণযোগ্য হোক বা না হোক Because Justification জরুরী।

০৫৩-Decision Fatigue

রামবাবু অফিস থেকে ফিরেই ছেলেকে পেটাতে শুরু করেন। উঠতি বয়সের বাচ্চারা গড় দুষ্টুমি করেই থাকে। সমস্যাটা হচ্ছে স্ত্রী রামবাবু ফিরতেই নালিশ করে করেন। পরিণতি লঘু পাপে গুরু দন্ড। হয়ত সাধারণ সময়ে রামবাবু ছেলেকে বুঝিয়ে বলতেন। অফিস থেকে ফিরে রামবাবু ক্লান্তি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। একে বলে Decision Fatigue। কেনাকাটা করার সময়ে বহু মহিলা কয়েক শ’ কাপড় নামিয়ে Decision Fatigueএ ভোগেন। বাড়ি ফিরে ভাল ভাবে দেখে অর্ধেক পরের দিন বদলাতে যান।

মানুষ প্রথমে রসিয়ে চিটফান্ড কান্ড দেখত। হরেক নামে চিটফান্ড এল, সারদা, রোজভ্যালি, আইকোর, এমপিএস। টেলিভিসানের তর্ক দেখে কোনটায় কে দোষী ভাবতে ভাবতে Decision Fatigue। নারদ উঠে এল, ১৩জনের কীর্তি। ঘুষ খাবার বিচিত্র ভঙ্গিমা। কোনটা ভাল লাগে? আবার Decision Fatigue। মোদীর সেটিংএ চুপচাপ। নিয়োগ দূর্নীতি। পার্থ, অর্পিতা, মাণিক, এসপি সিনহা আবার কত নাম। কে বেশী দোষী? Decision Fatigue। ভাবতে ভাবতে মানুষের মাথা হ্যাং হয়ে আসছে। তখন গরু-কয়লা-

গরুতে কেষ্ট, এনামুল, কয়লায় অনুপ, বিনয় মিশ্র, ভাইপো, শ্যালিকা। মাঝমাঠে খেলছে IAS, APSরা। ডিফেন্সে BSF, কাস্টমস, পুলিশ। গোলকিপার মাইক হাতে স্টেজের এপাশ থেকে ওপাশ দৌড়ে সেটিং সামলাচ্ছেন। মানুষ এত নাম, কার কত দোষ ভেবে পাচ্ছে না। Decision Fatigue এসে যাচ্ছে। তার মধ্যে কোথা থেকে অনলাইন গেম অ্যাপে প্রায় সাড়ে সতেরো কোটি। মাছওয়ালার কাছেও কোটি। কে চাইছে এত খবর? বিরোধীরা পথে শ্লোগান দেয়, চোর ধরো, জেল ভরো। লোকে বাঁচতে সিরিয়াল দেখে।

এসব খবর! নাকি নিম্নচাপের সময় DVCর ছাড়া জল। এত কিছু মনে রাখতে হলে বা বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে একটা সময়ে মস্তিষ্ক অচল হয়ে যায়। মানুষ যত বিভ্রান্ত হবে, ততই ভুল সিদ্ধান্তের সুবিধা পাবে সরকার। বিরোধীরা চেঁচালে সরকারী চোররাও পাল্টা জবাব দেয়, অভিযুক্তদের বিচার পর্ব শেষ হয়নি। যত দিনে বিচার শেষ হবে, তত দিনে উষ্ণায়ণে একফুট জলস্তর বেড়ে যাবে। অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হলে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন, সমস্যাগুলো সাজিয়ে ফেলুন, তাহলে Decision Fatigue কম হবে।

০৫৪-Contagion Bias

হাওয়াইয়ের শুকতলা ক্ষয়ে গেলেই তৃণমূল অফিসে মার্ক্স-লেনিনের ছবি ঝুলবে। সে দিন খুব দেরী নয়। সবাই জন্ম-পরিচয় চায়। জারজ তো সামাজিক শব্দ, জৈবিক নয়। ক্ষমতায় এসে মোদী সর্দার প্যাটেল বা গান্ধীর মত কংগ্রেসীদের সামনে এনেছিলেন। তখনও সাভারকরের বুলবুলির গল্প তৈরী হয়নি। RSS স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিল না। তৃণমূল যতই স্বৈরাচারী ব্যক্তিকেন্দ্রীক হোক, হিটলার, মুসোলিনির ছবি টাঙাতে পারবে না। শ্লোগান, গান, নাটকের মত বামপন্হী ঐশ্বর্যের দিকেই চোররা হাত গলাতে বাধ্য।

Contagion Bias হচ্ছে কোন ঘটনা বা বস্তুর সাথে অবিচ্ছেদ্য একাত্মতা। ঘর ঘর তেরঙ্গা মানে আপনার দেশাত্মবোধকে আপনার Contagion Bias দিয়ে মোদীর দখলদারী। তেমনই জয় বাংলা, কিংবা বাংলা নিজের মেয়েকেই চায় আসলে আপনার বাংলার প্রতি Contagion Bias মমতার বেওসা করে নেওয়া। ঠিক যেমন সুকান্ত বা সলিল চৌধুরী অথবা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বামপন্হীদের Contagion Bias। পাগলু শুনলে তৃণমূলীরা Contagion Biasএ ততটা উত্তেজিত হয়। মিমি-নুসরতের ছবিতে দেশপ্রেমের ঢেকুর।

আপনাকে যদি বলে আপনার কোন প্রিয় মানুষের ছবিকে অশ্রদ্ধা করতে, যেখানে মূল মানুষের কোন ক্ষতি হবে না, তাও আপনি পারবেন না। এটা Contagion Bias। Contagion Biasএর জন্য বিশ্বে বহু যুদ্ধ, আত্মত্যাগ, মৃত্যু হয়েছে। এটা একটা মানবিক গুণ। পশুদের মধ্যেও এই গুণ পরিলক্ষিত হয়। অনেক দলবদলু অনায়াসে রাতারাতি জার্সি বদল করে নেয়। তারমানে লোকটা অবস্হার পরিপ্রেক্ষিতে খারাপ হয়ে গেছে তা নয়, লোকটা জিনগত ভাবেই দুষ্কৃতি। Contagion Biasএর মত গুণ অকেজো।

তৃণমূল বা বিজেপির গোষ্ঠী সংঘর্ষে দেখবেন, ওরা নেতা-নেত্রীর ছবিকেও রেয়াত করে না। ঐতিহ্যহীন বেজন্মাদের স্বভাব। আবার মমতা যখন হাজার হাজার বাম পার্টিঅফিসে মনিষীদের ছবি ভেঙেছে তখন যন্ত্রণায় বামপন্হীরা Contagion Biasএ ঋদ্ধ হয়েছে, সংগঠিত হয়েছে। তার সুফল আগামী দিন পাবেন। তৃণমূল বা বিজেপির উথ্থান সাময়িক, পতন অবশ্যম্ভাবী। দিনের শেষে যার মনে পড়ে, আপনার পিতা বলেছিলেন, মানুষের মত মানুষ হতে হবে, তারা মানুষ হয়। বাকিদের জন্য থাকুক গভীর সমবেদনা।