০৫৫-The Problem with Average

যে অনেক প্রেম বা সম্পর্কে ছিল, তার সাথে নতুন প্রেম করার সবচেয়ে বড় সমস্যা The Problem with Average। বিপরীত লিঙ্গের ভালবাসা বা উদ্দেশ্যের গড় সম্পর্কে সিদ্ধান্তের bias আগে থেকেই মজবুত। এবার যদি কেউ প্রকৃতই ভালবাসে, তাকে পূর্বের গড়ের bias ভাঙ্গতে হবে। বিষয়টি সাধারণ মনে হলেও বাস্তবে দুরূহ। একজন মার্কিনীর গড় আয় ভারতীয় গড়ের ৩০ গুণ বেশী। দু দেশের ধন কুবেরদের বাদ দিলে প্রকৃত চিত্রটা আরো ভয়ঙ্কর। আদানি, আম্বানিদের বাদ দিলে সবাই শঙ্কর মুদি।

আভিজ্ঞতা প্রায় সব বিষয়ে আমাদের গড় ধারণা দিয়ে থাকে। রূঢ় বাস্তব গড়ের নিগড়ে আবদ্ধ নয়। একটা লোকের কত টাকা থাকতে পারে? পার্থ-আর্পিতার টাকার স্তূপ ভাবতে না পারাটা The Problem with Average। অনুব্রতর সম্পত্তি! কিংবা আমির খানের শাহী আস্তাবলের খাজানা! যত বিচিত্র চিত্র সামনে আসছে, ততই মানুষের চোরদের গড় সম্পত্তি সম্পর্কে গড়ের পারদ বাড়ছে। সবাই চূনোপুঁটি, আসল চোর হাওয়াই চটি। The Problem with Average কিন্তু জনমানসে এক বিশাল ধারণা দিচ্ছে।

মনে করুন, গ্রামের ৯৯টি পরিবারের গড় সম্পদ ছিল ১ লাখ। পঞ্চায়েত প্রধান চুরি করে ১ কোটির সম্পত্তি বানিয়ে ফেলল। সরকার ঘোষণা করল যে গ্রামে গড়ে সম্পদ দেড় লাখের কম তারা আবাস যোজনায় গৃহ পাবে। কেবল মাত্র পঞ্চায়েত প্রধানের চুরির জন্য গ্রামের গড় সম্পদ ১ লক্ষ থেকে বেড়ে ২ লক্ষ হয়ে গেছে। এটা The Problem with Average। গ্রামের প্রত্যন্ত দরিদ্র মানুষের প্রকৃত দুরবস্হা প্রতিফলিত হয় না কারণ The Problem with Average। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে দেখা দরকার।

গড় ৪ফুট গভীরতার কোন নদী পার হতে যাবেন না। ধারে গভীরতা হয়ত গোড়ালি ডোবা, মাঝে ২০ ফুট। যেখানে আপনি টুপ করে ডুবে যেতে পারেন যদি The Problem with Average না জানেন। আবার ডাক্তার আপনাকে গড়ে ১পেগ মদ খেতে বলেছেন। আপনি সারা বছর না খেয়ে ৩১শে ডিসেম্বর ৩৬৫ পেগ খেয়ে বসলেন গড় ঠিক রাখতে। আবার The Problem with Average। গড়কে ধ্রুব না ধরে সঠিক ব্যবহার না জানলে সমস্যা বাড়ে। অনেক ঘটনা বা পরিসংখ্যান গড়কে উল্টেপাল্টে দিতে পারে।

০৫৬-Motivation Crowding

অনুদানের অঙ্ক কখনও সন্তুষ্ট করতে পারে না। সিঙ্গুরে টাটার শিল্প হবে, কর্মসংস্হান, নগরায়ন, ব্যাঙ্ক, বাণিজ্য হবে- এই অবধি সিঙ্গুরবাসীকে উৎসাহিত করেছিল। কিন্তু জমির অধিগ্রহণ মূল্যে বাধ সাধল। এটা Motivation Crowding। বিরোধী দলগুলি প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিল, ফলে কিছু অনিচ্ছুকের জন্ম হল। টাটার বিরোধী শিল্পগোষ্ঠী Motivation Crowdingএর তত্ত্ব প্রয়োগ করল। যুক্ত হল মমতার ধ্বংসাত্মক রাজনীতি। ফলে ৮০% সম্পূর্ণ হবার পরে বুলডোজারের আঘাত। Motivation Crowding বুঝতে হবে।

সুইজারল্যান্ডে একটি গ্রামে তেজস্ক্রিয় বর্জ্র পদার্থ পুঁতে ফেলা হবে। গ্রামবাসীর অধিকাংশের সায় আছে। কারণ, দেশের কাজ হবে, অনেক লোক নতুন ধরনের কাজ পাবে, দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাও কর্তব্য। কিন্তু যেই সরকার ৫০০০ ফ্রাঁ জন প্রতি অনুদান ঘোষণা করল, সমর্থন অর্ধেক হয়ে গেল। কেন? কারণ, Motivation Crowding। এত গ্রহণযোগ্য বিষয়ের পরে অনুদানের অঙ্ক যথেষ্ট মনে হয়নি। গৃহকর্তা সংসার খরচ কত দেন? উত্তর হবে, মাগ্গিন্ডার বাজারে সামান্য। পরিমাণ যাই হোক না কেন।

আরেকটি ঘটনা বলি, মার্কিন দেশে এক ক্রেশে অভিভাবকরা দেরী করে বাচ্চা নিতে আসেন। কর্মীদের অতিরিক্ত সময় থাকতে। ক্রেশ কত্তৃপক্ষ ঘন্টা প্রতি মোটা ফাইন ধার্য করল। আভিভাবকদের নিতে আসতে আরো দেরী হয়, কারণ অতিরিক্ত খরচ করে বাচ্চা রাখছে। এটাও Motivation Crowding। আপনি বাচ্চার হাত খরচ যাই দেন না কেন, সেটা অমূকের বাবা বা তমূকের মায়ের চেয়ে কম হবে। কোন বিশেষ কাজের জন্য বাচ্চাকে আলাদা অনুদান দেবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা।

দক্ষিণপন্হী দলগুলি সরকারে থাকলে Motivation Crowdingএর সুযোগ বেশী দেয় না। বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ করে। ডেউচা পঁচামিতেও তৃণমূল সরকারের নীতি তাই। কয়লা পাচারকারী মাফিয়ারা প্রথমে এলাকা ঘিরে ফেলেছে, যাতে অসহায় দরিদ্র আদিবাসী তাঁদের দাবী সভ্য সমাজের কাছে পৌঁছে দিতে না পারে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে তৎকালীন সরকার বিরোধীদের বক্তব্যের অনেক সুযোগ দিয়েছিল। তৃণমূল ভয়ঙ্কর জন-বিরোধী দল। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শিক্ষা নিয়ে Motivation Crowdingএর সুযোগ রাখবে না।

০৫৭-Twaddle Tendency

Mark Twain বলেছেন, “If you have nothing to say, say nothing.” আজকের ফর্মূলা, “If you are confused, confuse others.” প্রতারকদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, Twaddle Tendency। মমতা বলেছিলেন ক্ষমতায় আসার ছয় মাসের মধ্যে শিল্প আনবেন কিংবা মোদীর ঘোষণা বছরে দু কোটি কর্মসংস্হান হবে। কীভাবে শিল্প আসে এবং কর্মসংস্হান হয়, এই দুই রাজনৈতিক ব্যবসায়ীর কোন ধারণাই সেদিন ছিল না। কচুরিপানা আর কাশফুলে যদি শিল্প আসত তাহলে পাল রাজত্বেই আসত।

Twaddle Tendency সমাজের নিম্নতম স্তর থেকে প্রায় উচ্চতম স্তরে থরে থরে সাজানো। আপনার দেশের নাম কী? অনেকে বলেন, বাংলা, মুর্শিদাবাদ, ভগবানগোলা- আমি গরীব মানুষ। দারিদ্র একটা অজুহাত। উচ্চবিত্ত নারী যখন বিষাদগ্রস্ত, তখন প্রশ্ন করি, Happy Indexএ ভারতের স্হান কোথায়? উত্তর ১০০তম হবে। হোপলেস। তিনি যখন বন্ধুদের সাথে মদ্যপানে ব্যস্ত, তখন উত্তর ১০এর উপরে নয়। উন্নতি করতে হবে। ভারতের স্হান ১৩৬তম। মহিলার দুটি উত্তরই ভুল, Twaddle Tendency।

মোদী বা মমতার অনুদানের বিনিময় ভোট প্রকল্প কি আদৌ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে? তৃণমূলী মুর্খের জবাব বাদ দিন, অর্থনীতিবিদ তখন Twaddle Tendency ব্যবহার করতে গিয়ে ৩৪ বছরের সফরে বেরিয়ে পড়বেন। কিংবা ৫০ বছরের কেন্দ্রে পরিবারতন্ত্র। অনুদানে কাউকে স্বনির্ভর করা যায় কিনা, তেমন ধারণা স্বচ্ছ্ব নয়। ফলে গোল গোল কথা। এমনকি নিজের ব্যাপারেও মানুষ কি চায়, কী কর্তব্য স্পষ্ট ধারণা না থাকায় দিগভ্রান্তের মত ছোটাছুটি করে। নিজের প্রতিও Twaddle Tendency।

বামপন্হীদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট ও গভীর রাখা জরুরী। সেই নীতিবোধের সাথে বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতির প্রবাহ, রাজনৈতিক বাতাবরণ সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞানী না হলে Twaddle Tendency এসে যাবে। দক্ষিণপন্হীদের সে দায় নেই। ওরা নেতার লেজ ধরে এক দল থেকে সাঁকো পেরিয়ে আরেক দলে ভিড়ে যাবে। কাল যাকে বাপ বলেছিল, আজ শূয়োরের বাচ্চা বলবে কারণ তাদের Twaddle Tendency সবাই জানে। নীরবতা অজ্ঞানতা প্রমাণ করে না, কিন্তু অহেতুক উত্তর অজ্ঞানতা উলঙ্গ করে দেয়।