০০৪- Social Proof

বামপন্হীরা সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মানেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। দক্ষিণপন্হীদের দলীয় মালিকের একক সিদ্ধান্ত মানেই ভুল নয়। দশ জন শিক্ষিত মানুষকে এক সাথে বসিয়ে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত লেখা সম্ভব নয়, সেটা রবীন্দ্রনাথই পারতেন। বামপন্হীরা ভুল সিদ্ধান্ত স্বীকার করে। অন্যরা নয়। পঞ্চায়েত, পৌরভোট লুঠ করার সিদ্ধান্ত অন্যায় ছিল, এই মন্তব্যে ভাববেন না মমতা কৃতকার্যের অনুশোচনা করছেন। এটা রাজনৈতিক গিমিক। লুঠ ছাড়া তৃণমূল জিতত না। লুঠ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।

তাপস পাল যখন মহিলাদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেবার কথা বলেন, তখন সোৎসাহে জনসমর্থন পান। সেই সমর্থন জলতরঙ্গের মত বিপুল বিস্তৃতি পায়। এটা social proof; মানুষ ভয়ে বিশ্বাস করতে থাকে তৃণমূলের বিরোধিতার শাস্তি মহিলাদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়া। ক্রমশঃ তাপস পাল আর ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়া সমর্থক হয়ে গেছে। রোজভ্যালি তদন্তে বিপন্ন সেই তাপস পালের মৃত্যুতে সরকার গান স্যালুট দিয়ে সেই social proofকে মান্যতা দিল। হ্যাঁ, এটাই তৃণমূল, আপনি দ্বিতীয়বার ভেবে দেখুন।

৩৭০ধারা বিলোপের পর অনেক ধার্মিক হিন্দু কাশ্মীরে জমি কিনে কাশ্মীরি তনয়াকে বিয়ে করার স্বপ্নে বিভোর ছিল। কিংবা মনে করুন, নোটবন্দীতে টাকায় চিপ বা সন্ত্রাসবাদ ও জাল নোটের কারবার বন্ধ হয়ে যাওয়া। অথবা তালি থালি বাজিয়ে করোনাকে দূর করা- এসব বহু মানুষ একত্রে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল। এই social proofকে কোন যুক্তি দ্বারা খন্ডন সম্ভব নয়। যেমন কন্যাশ্রী নাকি মমতার মস্তিষ্ক প্রসূত! অথচ আগেও সাইকেল দেওয়া হত, সরকারের তখন social proof প্রয়োজন হয়নি।

মমতার টালির বাড়ি, মোদীর চায়ের কেটলি, বামপন্হী মানেই তাঁর দারিদ্র প্রদর্শন করতে হবে- এসবই social proofএর উদাহরণ। মানুষ জিনগত কারণে মনে করে সমাজে যা চলতি তাই বিধাতা নির্দিষ্ট ও পূর্বপুরুষ দ্বারা মান্য। মানুষ গড্ডালিকা প্রবাহে গড়িয়ে যেতে চায়। অবশ্যই গ্যালিলিওরা নন, নইলে বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হত না। পুরাতন social proof প্রগতির গতিরোধ করেছে। রাস্তায় কিছু খুঁজতে থাকলে, অনেকেই খুঁজবে। আপনি চলে যান। খানিক বাদে ফিরে এসে দেখবেন খোঁজার লোক বেড়েছে।

০০৫-Sunk Cost Fallacy

বন্ধু সখের থিয়েটারে প্রথম সারির মহার্ঘ টিকিট ধরিয়ে দিয়েছে। আধ ঘন্টায় বুঝে গেছেন আরো দেড় ঘন্টা অত্যাচার সইতে হবে। আপনি টিকিটের দামের কথা ভাববেন, নাকি বাকি দেড় ঘন্টা নিষ্কৃতি চাইবেন? অনেক চেষ্টাতেও প্রেমিকার মন পাচ্ছেন না। দামী রেস্তোরাঁয় আরেকবার বোঝাবেন, নাকি নিজে কফি হাউসের আড্ডায় যাবেন? গলির ভিতরের ফুডস্টলে বিক্রী জমছে না। দামী শেফ নিয়োগ করবেন, নাকি বড় রাস্তায় ছোট্ট ফুডস্টল খুঁজবেন? মানুষ সর্বদা Sunk Cost Fallacyতে ভুগে থাকে।

অনেক খরচ হয়ে গেছে, তাই আরেকটু খরচ করে দেখি! বৃদ্ধ ভদ্রলোক তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। কার‍ণ শুনে চক্ষু চড়কগাছ! দুই ছেলে সরকারী ইস্কুলে পড়েছে। সেখানে না আছে পরিকাঠামো, না আছে শিক্ষক। ক্লাবে সিন্ডিকেটের পাল্লায় পড়ে বখাটে হয়ে গেছে। ওদের পক্ষে প্রতিযোগিতায় চাকরি পাওয়া না-মুমকিন। তবু এখনও ঘুষ দিয়ে চাকরি হয়। এই সরকারটা গেলে সেই সুযোগটাও হাত ছাড়া হবে। Sunk Cost Fallacyর কবলে পড়া ভদ্রলোকের বহু ক্ষতি হয়ে গেছে, পালাতে পারছে না।

যে লোকটা PSUতে চাকরি করেন। বুঝতে পারছেন বেসরকারীকরণে মালিকের বুটের তলায় রক্তবমি করতে হবে। সে তো জ্বালানী মূল্য থেকে রান্নার গ্যাসে জ্বলছেই। বছরে দু-কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি কিংবা ১৫লাখের গল্প জুমলা ছিল। আয়কর দিতে দিতে জেরবার। আচ্ছে দিনের নামে বহু কিছু নীরব বা ললিত মোদীরা হাতিয়ে নিয়েছে। এবার যদি সরব মোদী যদি হিন্দু রাষ্ট্র বানিয়ে দেন, মরণকালে শান্তি পাব। এখন জুমলাবাজকে ভোট না দিলে এত কিছু দিয়েও শেষ পর্যন্ত হাতে থাকবে পেনসিল।

Sunk Cost Fallacy সর্বদা আপনাকে গ্রাস করছে। আপনি অনেকটা ভুল পথে হেঁটে ভাবছেন, ফিরবেন কোথায়? তারচেয়ে এই পথের শেষ দেখি। ফলে বাকি সর্বনাশটাও আপনি নিশ্চিত করে ফেলছেন। শেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হলেই মানুষ বেশী করে কিনে চালাকি দেখাতে চায়, সে জানে না এই পতনের শেষ কোথায়। নয়ত তৃণমূলের মানসিকতা। আজ হাওয়াই চাটছি, কাল স্নিকার চাটব। আগামীকাল হাডসন বেবি বুটি চাটবে। সঠিক পথ, Sunk Cost Fallacyর ঘূর্ণিপাক থেকে নিজেকে উদ্ধার করুন।

০০৬-Reciprocity

ভবেশবাবু নাতিকে নিয়ে হারান-মুদির দোকানে হাজির। ফর্দ দেবার আগেই হারান নাতির হাতে একটা এক্লেয়ার্স ধরিয়ে দিল। বৌদি শাড়ির দোকানে ঢুকেই প্রশ্ন করল, “পুষ্পা, হিলেগা নেহি” শাড়ি আছে? দোকানদার এক গাল হেসে স্টিলের টুল এগিয়ে বলল, শাড়ি না হিললে পরে কী লাভ? অ্যাই কে আছিস, বৌদিকে চা দে? দুধ, চিনি সব থাকবে তো? কপটেশ্বর মোদী সোনার দোকানে পা রাখতেই সেল্সম্যান কোল্ড ড্রিংসের অর্ডার দিয়ে বলল, আরে কপটবাবু, দেখবেন পরে, আগে একটু ঠান্ডা খান।

Reciprocity. তালপাটালি কিনবেন পরে, আগে একটু চেখে দেখুন। তোলামূলী বোম পটলা কড়া নেড়ে বলল, বৌদির লক্ষ্মী-ভান্ডার সময়ে ঢুকছে তো? মামনির কন্যাশ্রীর সাইকেলের টায়ারে হাওয়া আছে? দাদা ঘাম মুছতে মুছতে বাজার করে ফিরছে, পটলা, আলু যে চল্লিশ টাকা বলে! বোম পটলা মাথা চুলকে বলল, বাম আমলে চারশ টাকা ছিল। দাদার ভিরমি খাবার যোগাড়, তোমার বয়স কত? বাম আমল আমরা দেখিনি? পটলার সাগরেদ শুধরে দেয়, চারশ টাকা কুইন্টাল। পরিষেবা পাচ্ছেন তো?

দুয়ারে পরিষেবা পৌঁছে গেছে, আপনি কিছু বলতে পারছেন না। পটলাকে লাখ দশেক দিলে গোবর গণেশের মাস্টারির চাকরি হয়ে যাবে। ব্যবসার এই কায়দাটাকে বলে Reciprocity। প্রথমেই আপনাকে ঋণী করে দিল। শ্রীলঙ্কা লাটে উঠে গেছে। লেক মার্কেটে বিজেপি মিটিং করে বলছে, প্রধানমন্ত্রী অমূক যোজনা, তমূক যোজনা… রাসবিহারীতে বামপন্হী মহিলা বলছেন, গ্যাসের দাম, পেট্রলের দাম, সম্পদ বিক্রীর ষড়যন্ত্র… এবার আপনি বিজেপিকে বলুন, কোন যোজনা লাগবে না, দামগুলো কমিয়ে দিন।

Reciprocityর ব্যবসার গণেশ উল্টে যাবে। নামাবলী ভক্ত যখন আপনার হাতে লজেঞ্চুস ধরিয়ে দিচ্ছে, ঠগামোদী তখন আপনার প্যান্ট খুলে ফেলেছে। চটিপিসি বা ঠগামোদী হারান-মুদি, দোকানদার বা সেল্সম্যানের মত বাপের পকেট থেকে দিচ্ছে না কিছু। আপনার থেকে বাড়তি নগদ গুণে নিচ্ছে। আপনি চটিপিসির ভিতর ভগিনী নিবেদিতা দেখবেন না মা সারদা সিদ্ধান্ত বোম পটলার। ঠগামোদীর জুমলায় কান দিয়েছেন তো ললিত মোদী সুস্মিতা সেনকে নিয়ে পগাড় পাড়। আপনি আঙুল চুষুন।