০৫৮-Will Rogers Phenomenon

Will Rogers ছিলেন ওকলাহামার মার্কিণ বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকাভিনেতা। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যেতে সেখানকার দর্শকরাও ধীরে তাঁকে উপভোগ করতে থাকে। ফলতঃ উভয় স্হানে দর্শকের গড় IQ বাড়ে। একে বলে Stage Migration. Will Rogers Phenomenon ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। ক্যান্সারে ৪টি স্টেজ আছে। প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে তা আরোগ্য সম্ভব। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে সূক্ষ্ম রোগ নির্ণয় দ্রুত সম্ভব হল। মানুষের গড় আয়ু যেমন বাড়ল, তেমন প্রথম স্টেজের রোগীর সংখ্যাও বাড়ল।

মোদ্দা কথা মানুষের বাঁচার সম্ভাবনার সাথে অসুস্হ মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গেল, কারণ আগে নির্ণয় হত না, তা হতে থাকল। এটাই Will Rogers Phenomenon। মনে করুন, এক সুন্দরী মহিলার প্রতি বহু পুরুষের আসক্তি আছে। স্বাভাবিক কারণে প্রায় সব পুরুষ তৃপ্ত নন। তারা অন্য নারীতে আসক্ত হল। মহিলার প্রেমের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও মোট প্রেমের সংখ্যা বাড়ল। একটা কোম্পানির দুটি দোকানে তিনজন করে সেল্সম্যান আছে। প্রথম জন ১টি, দ্বিতীয় ২টি, তৃতীয় ৩টি গাড়ি বিক্রী করে।

অন্য দোকানে এইভাবে সংখ্যাটা ৪,৫,৬। প্রথম দোকানে গড় বিক্রী ২টি গাড়ি। দ্বিতীয় দোকানে ৫টি। এবার আপনি দ্বিতীয় দোকান থেকে ৪টি গাড়ি বিক্রীর সেল্সম্যানকে প্রথম দোকানে পাঠালেন। প্রথম দোকানের গড় হল ২.৫ এবং দ্বিতীয় দোকানে ৫.৫। অর্থাৎ Will Rogers Phenomenon অনুযায়ী দুটি দোকানের গড় বিক্রী বাড়ল। রাস্তায় বেসরকারী বাসগুলি খুব ধীরে যায়। সরকারী বাস দ্রুত কিন্তু কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। মানুষ সরকারী বাসে ভরসা করলেও ব্যর্থ দুর্বল প্রশাসন সমস্যা লাঘব করতে পারে না।

অথচ মোট যাত্রী সংখ্যা অপরিবর্তিত, এবং বেসরকারী বাসগুলো বেশী লাভের প্রত্যাশায় ধীরে চালিয়ে বেশী যাত্রী খোঁজে। সুনির্দিষ্ট সময় অন্তর সরকারী বাস চালালে মানুষের ভরসা বাড়বে এবং ধীর গতির বেসরকারী বাসও প্রতিযোগিতায় আসবে। বাংলা সরকার, বেসরকারী বাস মালিকদের থেকে ঘুষ খেয়ে সেই কাজটা করবে না। ফলে Will Rogers Phenomenon অনুযায়ী যাত্রী সুরাহা অধরাই রয়ে যাবে। সামান্য Stage Migration করলে বহু মানুষকে উন্নততর পরিষেবা দেওয়া যায়, মূর্খরা তা জানে না।

০৫৯-Information Bias

পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত মানচিত্র আয়তনে হবে পৃথিবীর সমান। প্রতি গাছ, পাথর, জলরেখার ইতিবৃত্ত স্পষ্ট চাক্ষুষ থাকবে। কিন্তু মানচিত্র হিসাবে কাজের হবে না। সব জ্ঞান সর্বদা কাজের হয় না, তাকে বলে Information Bias। মুম্বাইতে মাঝারি মানের একটা হোটেল বুক করবেন? ইন্টারনেটে সার্চ করলে যে তালিকা আসবে, সেখানে সর্বাধিক লাভদায়ক হোটেল দস্তাবেজ থেকে খুঁজতে সারা দিন লাগবে। সেই সময়ে আপনি তারচেয়ে বেশী আয় করতে পারতেন। Information Bias মানুষকে বিভ্রান্তও করে।

আবিষ্কার ও জ্ঞানার্জনের সবচেয়ে বড় বাধা অজ্ঞতা নয়, নিজের জ্ঞানের বেলুন সম্পর্কে দৃষ্টিহীনতা। বস্তির কলতলায় কোন্দল জীবন যুদ্ধের। মধ্যবিত্ত অন্দরমহলে নিভৃত দুপুরে পানের আসরে আলোচনা অনেক সময় Information Bias। চ্যাটার্জী বাড়ির সেজ বৌ গাড়ি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেন চুল বাঁধে, সে রস অবান্তর। সব তথ্য সাধারণ জ্ঞান বা সচেতনতা নয়। তথ্য সর্বদা নিম্নচাপের বর্ষণের মত পড়ছে। তাতে জল জমলে জীবন পথে হাঁটতে বিস্তর বাধা। আবার জল জীবণ। এটাই Information Bias।

ইদানিং দূর্নীতি আর চুরি Information Bias সৃষ্টি করেছে। জনগনের মধ্যে Decision Fatigue এনে দিচ্ছে। তৃণমূলের কোন মন্ত্রী, নেতা, সভাপতি থেকে পঞ্চায়েত প্রধান কোন দূর্নীতি যুক্ত এত তথ্যের Information Biasএ বিপর্যস্ত মানুষ শেষ অবধি বলছে, সব চোর তৃণমূল না হতে পারে কিন্তু সব তৃণমূল চোর। আর তৃণমূল বলছে, সব তৃণমূল চোর নয়, আরো Information আছে। তখন মুখ্যমন্ত্রী জেলা-উৎসবে কিম্ভূত সব তথ্যের ডালি উজার করছেন কিংবা ভুয়ো নিয়োগপত্র বিলির Information।

মানুষের কাছে গিয়ে বিনয় মিশ্র, মেনকা গম্ভীর থেকে সায়গল হোসেন কিংবা কল্যাণময়ের গল্প বলতে থাকলে রাত কাবার হয়ে যাবে, কিন্তু এত তথ্য ধারণের মত মানুষের মস্তিষ্কে ফুরসৎ নেই, কারণ তাকে জীবনযুদ্ধে বাঁচতে হয়। সেটা মানুষের দোষ নয়। Information Biasএর সমস্যাকে মাথায় রেখে চেনা নামে কিছু বাছাই দূর্নীতিতে থাকতে হবে। পাঠ্য পুস্তকের চেয়ে গল্পের বই পড়তে ভাল লাগার কারণ Information Biasকে এড়িয়ে চলা। তথ্যকে বাছাই করা কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানীর পক্ষেই সম্ভব।

০৬০-Effort Justification

আর পাঁচজনের মত, আমার সামান্য চিরাচরিত ডিগ্রী আছে আলমারিতে। ওসব আর কাজে লাগবে না, কারণ আমি চাকুরিপ্রার্থী নই। কিন্তু Oracle Universityর সার্টিফিকেটগুলো দেওয়ালে টাঙানো। ওটাও কোন সুরাহা দেবে না। কেন? বাকি ডিগ্রীগুলো ছাত্রাবস্হার। তখন লেখাপড়াটাই মুখ্য ছিল। কিন্তু OCP করার সময়ে কঠিন চাকরি করতাম। বিপুল পরিশ্রম ছিল আজও মনে পড়ে। সাফল্য দুরন্ত আবেগময় ছিল, তাই দেওয়ালে। জানলাম, এটা Effort Justification। মনস্তত্ব জানার আগেই ঘটনার গুরুত্ব ছিল।

একটি ছেলে সাবালক হবার পর বাবা বললেন, এবার বাড়িতে খেতে রোজ ১টাকা দিতে হবে। ছেলেটি মায়ের কাছ থেকে ১টাকা চেয়ে বাবাকে দিত এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করত। বাবা টাকাটা আগুনে ফেলে দিতেন। কোন এক দিন মায়ের টাকা শেষ হয়ে যেতে বাবা ছেলেটির খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। দিন কয়েক অনাহারে থেকে সে স্টেশনে মুটের কাজ করে ১০টাকা রোজগার করে বাবাকে মাত্র ১টাকা দিল। বাবা আগুনে ছুঁড়ে ফেলতেই ছেলেটি ঝাঁপিয়ে টাকাটা উদ্ধার করল। এটাই Effort Justification।

চিটফান্ডের টাকা, মিডিয়া আর সুশীল নামক গর্দভদের মিশ্রণে তৃণমূল দলটা ক্ষমতায় এসেছে। যদি সংগ্রামের মাধ্যমে আসত তাহলে Effort Justification থাকত এবং ক্ষমতায় আসার পরের দিন থেকে দূর্নীতি শুরু করত না। এই দলে কেউ নেতৃত্বের দাবীদার নেই, কারণ ওরা কোন এক নেতার শুকতলা চেটে দলের বিভিন্ন স্তরে এসেছে। তৃণমূল পারিবারিক দল, এবং সেখানে পরিবার ভিন্ন সবাই ক্রীতদাস। Effort Justification থাকলে ক্রীতদাসত্ব ছেড়ে দলের সামনে প্রকৃত আয়না তুলে ধরবার সাহস পেত।

বিজেপি রাষ্ট্রীয় সম্পদ অনায়াসে বিক্রী করতে পারে, কারণ সম্পদ সৃষ্টিতে বা স্বাধীনতা আন্দোলনে ওদের যোগদান ছিল না। ফলে দেশের সম্পদের প্রতি নাড়ির টান তৈরী হয়নি। কিন্তু দেখবেন, রাম-মন্দিরের ক্ষেত্রে Effort Justification আছে। অনেকেই বনেদী বাড়ি অকাতরে প্রমোটারের হাতে তুলে দেয়, কারণ পিতৃপুরুষের অর্জিত ধন ছিল, অথচ নিজের টু-পাইসে ফাদার মাদার। কেবল কষ্টার্জিত ধনেই Effort Justification থাকে। তৃণমূল তাই বাংলার কয়লা, গরু, বালি সব পাচার করতে পারে।