০৬৭-Introspection Illusion

ঈশ্বর আপনাকে বিরল আশীর্বাদ দিয়েছেন, আপনি কখনও ভুল করেন না। এই বিশ্বাসে আপনি সফল। যারা সমালোচনা করে, (ক) তাদের তথ্য, জ্ঞান, আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে অজ্ঞতা (রাজনীতিবিদরা বলে থাকেন), (খ) তাদের শিক্ষায় খামতি (প্রশাসনিক কর্তাদের ধারণা) এবং (গ) আপনার বিশ্বাসকে অপদস্হ করার প্রয়াস (ধর্মীয় নেতাদের বুলি শুনুন)। ফলতঃ পুনর্বিবেচনায় আপনার সিদ্ধান্তের বিশ্বাস ধ্রুব বলেই পরিগণতি হয়, একে বলে Introspection Illusion। ভ্রান্তি হলে তা ঈশ্বরের চরম ব্যর্থতা।

মমতার ধারণা আদবানী যখন খারাপ ছিলেন বাজপেয়ী ভালো। আদবানী ভালো হয়ে গেলেন খারাপ মোদীকে পেয়ে। এবার অমিত শাহ দুষ্ট ব্যক্তি হলেন ভালো মোদীর পাশে। তৃণমূলের চোর ভাবনায় ভুল দেখতে পাচ্ছে না। যদি ভুল মনে হয়, তাহলে আপনি সবটা জানেন না, মমতার গেমপ্ল্যান বোঝেন না। নয়ত রাজনীতিটাই আপনার বিষয় নয়, অথবা মমতাকে অপদস্হ করতে চান। কিংবা মনে করুন, মোদীর নোটবন্দীর খেলায় দেশের সব কালো টাকা সাদা করা। Introspection Illusionএ লাভ নেই।

আমরা সাধারণতঃ Heuristic (আবেগ তাড়িত) সিদ্ধান্তকে সময়ের সাথে স্বঘোষিত যুক্তি ও বিশ্বাসের আবরণে সুরক্ষিত করার চেষ্টা করি। Introspection Illusion ছাড়া তা সম্ভব নয়। তারপরেও যদি ভুল প্রমাণিত হয়, তাহলেও ঈশ্বর আছেন। ভাগ্যের বিড়ম্বনা আছে। বাবা রামদেব বহু আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রী করেন কিন্তু অসুস্হ হলে হাসপাতালে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খান। Introspection Illusionএ সংশোধনের উপায় যত কম হবে, তত আপনি সিদ্ধান্তে অনড় হবেন। মমতা-মোদী ভুলের নিগড়ে বদ্ধ।

চা-চপ শিল্পে যদি উন্নয়ন হত, তাহলে মাননীয়ার পরিবারকে সম্পত্তি বৃদ্ধিতে ত্যাগ সর্বস্ব সমাজসেবার প্রয়োজন হল কেন? ধর্মীয় মন্ত্রে লক্ষ্মণের শক্তিশেল থাকলে প্রতিরক্ষা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয়ের দরকার কী? মোদীর বিলাসবহুল বিমান হত। Introspection Illusionএ মোদী-মমতা কথা ফেরৎ নেবেন না, কারণ ভুলের উপর ভুল সাজিয়েই ইমারত। নিচ থেকে ভুল সরালে হুড়মুড় করে প্রাসাদ খসে পড়বে। বামপন্হীরা ভুল স্বীকার করে, এটা তৃণপন্হী বা ধর্মপন্হীদের অবাক করে। ওরা ঈশ্বরের আশীর্বাদে পুষ্ট।   

০৬৮-Inability to Close Doors

এক মা গর্বের সাথে বললেন, আমার মেয়ে তিনজনের সাথে রিলেশনশিপে আছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সিএ। আগামী মাঘে একজনকে ভালবেসে বিয়ে করবে, তাই আমাদের সম্বন্ধ দেখার ঝঞ্ঝাট নেই। যিনি শুনলেন তিনি বললেন না, ঝঞ্ঝাটের শুরু ভালবাসার ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন কফিন মুক্ত হলে। তিনজনের সাথে রিলেশনশিপে থাকা অসম্ভব। মনস্তত্বের ভাষায় Inability to Close Doors। বিছানার পাশে দু ডজন বই জমিয়েছেন? ২৩টা বই সরিয়ে না ফেললে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বইটা মন দিয়ে পড়তে পারবেন না।

অনেক সময়ে আপনার শরীর ফুঁড়ে গুটি বসন্তের মত প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে। কখনও ১২০টা বই লিখে ফেলছেন, কখনও ১কোটি ৮৪লাখের ছবি এঁকে ফেলছেন, কাঁসর বাজাচ্ছেন দীপক রাগে, আপনার সুরে গান গাইবার জন্য মন্ত্রী পুষছেন, মার্কো পোলোর মত বিশ্ববঙ্গ দর্শনে হেলিকপ্টার চড়ছেন, আচার্য জগদম্বা পিসির মত কাশফুলের বালিশ আবিষ্কার করে ফেলছেন, কখনও সময় পেলে নবান্নের চোদ্দ তলায় বসে মুখ্যমন্ত্রীত্ব করছেন। Inability to Close Doors ভবিষ্যতের কৌতূকাভিনেতা বানিয়ে দিল।

দ্রোণাচার্য ছাত্রদের অগ্রগতি পরীক্ষা করার জন্য গাছের ডালে কাঠের পাখি বসিয়ে চোখে তির মারতে বললেন। যুধিষ্ঠিররা বললেন, তাঁরা পাখি সহ চরাটর দেখতে পাচ্ছেন। দ্রোণ শরক্ষেপনে বিরত করলেন। অর্জুন বললেন, তিনি কেবল পাখির চোখ দেখতে পাচ্ছেন। Inability to Close Doors ব্যর্থতার প্রধাণ কারণ। আত্মবিশ্বাসহীনতা বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শীতার নিজ বিজ্ঞাপনে ভূষিত করেন। কারণ তিনি বিধান রায়ের মত ডাক্তার নন, সিদ্ধার্থ-জ্যোতিবসুর মত ব্যারিষ্টার নন, বুদ্ধদেবের মত প্রেসিডেন্সির ছাত্র নন।

মোদী যেমন শৈশবে চা বিক্রী করতেন, তেমন যৌবনে পুকুরে কুমীর পুষতেন, বার্ধক্যে ময়ূরকে দানা খাওয়ান, চিতার ছবি তোলেন। Inability to Close Doors বুঝতে দিচ্ছে না, দেশ চালাতে প্রকৃত জ্ঞান লাগে। আপনার এক খন্ড জমিতে স্বর্ণরেণু চাষ করতে পারবেন, কিন্তু দিগন্ত বিস্তৃত জমি দিলে আগাছা ভরে যাবে এমনকি সেই এক খন্ড জমি অনাবাদী পড়ে থাকবে। আপনি আজ চালাকি করে ক্রীতদাস পুষে আপনার কাঁসর পেটাতে বাধ্য করছেন। আগামীকাল ইতিহাসের এক্স-রের সামনে কঙ্কাল আপনি।

০৬৯-Neomania

ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিভিন্ন লোকের ভাবনা বিভিন্ন। কেউ বিগত ইতিহাস থেকে উন্নয়নের ধারা ও গতির নিরিখে ভাবে, কেউ স্বপ্নের হালুয়ায় দেদার ঘি ঢালে। ঘি ঢালার সংবিধান স্বীকৃত কোন সীমারেখা নেই। একে বলে Neomania। মোদী বলে দেন, বছরে ২ কোটি চাকরি, মাথা পিছু ১৫ লাখ বিদেশে গচ্ছিত টাকার খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন হবে কিংবা মমতা বলেছিলেন ক্ষমতায় আসার ৬ মাসের মধ্যে শিল্পায়ন বা ক্ষমতায় এসে ২০০ দিনে হুঙ্কার, ১০০% কাজ করে দিয়েছেন। মানুষের Neomania নিয়ে খেলা।

আমরা ভাবতে ভালবাসি ভবিষ্যৎ বিলকুল বদলে যাবে। বদলাচ্ছে, কিন্তু কতটা? আশাতীত কী? ১৯৯৫ সালে জ্যোতি বসু প্রথম মোবাইলে কথা বলেছেন। স্মার্ট ফোন এসেছে, ফেসবুক, অ্যাপ, হোয়াট্সঅ্যাপ ইত্যাদি। ২০৫০এ কী হবে? নিশ্চই প্রযুক্তি উন্নততর হবে, কিন্তু মঙ্গল গ্রহের সাথে কথা বলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। আপনি মধ্যযুগ পরিহার করেননি। যে চেয়ারে বসে আছেন, ৫০০০ বছর আগের। তুষার যুগে চামড়ার জুতো ছিল, পোষাকের ব্যবহার ছিল নব্যআদি যুগে। Neomaniaর সময়ে একটু ভাবুন।

এই তথ্যকে বিকৃত করে কেউ নয়া ইতিহাস বানায়। গণেশের মাথার প্লাস্টিক সার্জারি, রাবণের নিজস্ব জেট বিমান, সেলুলার জেলে বুলবুল পাখির পিঠে সাভারকরের ভারত ভ্রমণ ইত্যাদি। নিয়োগ দূর্নীতি ফাঁসের পর মমতার আবিষ্কার বাম আমলে চিরকুটে চাকরি। পাঠ্য পুস্তকে বিপ্লবী পার্থ চ্যাটার্জীর ত্যাগ। ইতিহাসের শ্রাদ্ধ যারা করতে পারে, তারাই ভবিষ্যতের স্বপ্নে ঘি খাওয়ায়। আজ থেকে ৫০বছর পরে প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হবে, মানুষ Neomaniaয় ভুগলেও সর্বহারা মানুষের সুরাহা তেমন হবে না।

Neomania মানে ভবিষ্যৎ রাঙতায় মুড়ে চকচকে দেখানো। মমতা রাজ্যকে দেউলিয়া করে দিয়েছেন। ৫লক্ষ কোটির উপরে ঋণ। বাংলার সম্পদ দেদার পাচার হয়ে গেছে। মোদীও দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্হা বিক্রী করছেন। এই ক্ষত নিরাময় করতে বহু বছর সময় লাগবে। চোর-ডাকাতরা যতই স্বপ্ন দেখাক সে ফাঁদে পা দেবেন না। কেবল উৎসব আর দূর্নীতি করে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে না। রাজ্যটা ইতিমধ্যে বৃদ্ধাবাস হয়ে গেছে। আর দেরী করলে রাজ্যবাসীকে চাকা আর আগুনের যুগে ফিরতে হবে।