০৭০-Sleeper Effect

কাশবনের ভিতর অপু আর দুর্গা দৌড়াচ্ছে রেল দেখতে। চলচ্চিত্রের এই অংশটি আর পাঁচটা সিনের মতই দেখেছিলেন, কিন্তু কালপ্রবাহে সামনে পেছনে এনেক কিছু মলিন হয়ে গেলেও সেই দৃশ্য আজও মনে পড়ে। এটা Sleeper Effect। মমতা বহু আন্দোলনের অগ্নিকন্যা। এটা মিথ বা Sleeper Effect। রাজনীতিতে আসার তিন দশক তিনি কিছু করতে পারেননি। মিথ বা Sleeper Effect ধারণার উৎসকে ভুলিয়ে দিয়ে ধারণা সামনে তুলে ধরে। পোষ্টমর্টেমে দেখবেন পট্যাটো চিপসের প্যাকেটের মত হাওয়া।

২০০৪এ লোকসভায় তৃণমূল ১ হয়ে গিয়েছিল। নির্ঘাৎ পতনে খাদের ধারে দাঁড়িয়ে বাম বিরোধী জোট মরিয়া প্রয়াসে সাফল্য পায়। সিঙ্গুর আন্দোলনের শুরু ছিল SUCIর হাতে, জঙ্গলমহলে মাও। নন্দীগ্রামে অধিকারীদের ষড়যন্ত্র। এমনকি ১৯৯৩সালে যুব-কংগ্রেসের রাইটার্স আক্রমণে মনীষ গুপ্তের সহায়তা। অগুন্তি আন্দোলনের ছেঁড়া পাতা জড়ো করে মমতা শরীর ওম করেছেন। চিটফান্ডের টাকায় মিডিয়ার সহায়তায় খেতাব নিয়েছেন, অগ্নিকন্যা, সততার প্রতীক। সেই Sleeper Effect এখন চপের ঠোঙা।

Sleeper Effect ধীরে ধীরে মানুষের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। টেলিভিসানের তর্কে বিভিন্ন তথ্যের উৎস ভুলে গিয়ে তথ্যগুলোকে ধ্রুব মনে করেন। তারজন্য দেখবেন, সরকারী দল মূল প্রশ্ন এড়িয়ে ভুল তথ্যের বর্ষণ ঘটায়। ওরা বলে না, ২১শে জুলাইয়ের নায়ক আজ সেই দলে। নন্দীগ্রামে গুলিচালনার অগ্রদূত সেই দলে। জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনায় তৎকালীন শাসকদের ভূমিকা ছিল না। অসত্য তথ্য দিয়ে Sleeper Effect সৃষ্টি করে। এখন Sleeper Effectএ অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিশারী দেখাবার প্রচেষ্টা।

Sleeper Effect এমন ভাবে কাজ করে যে নিয়োগ দূর্নীতিতে শেষ পর্যন্ত পার্থ-বাহিনীকে দাগিয়ে দিয়ে দলনেত্রী পরিত্রাণ পাবার চেষ্টা করবেন। কিন্তু তথ্য বলছে তৃণমূলে একটি পোষ্ট আর সব ল্যাম্পপোষ্ট। তাহলে একা পার্থ কেন? এই ভাবে গরু-কয়লা-বালি-কাঠ-মাটি পাচার থেকে মমতা পরিত্রাণের পথ খুঁজবেন। Sleeper Effectএ মানুষ কেবল অনুব্রতদের চুরি মনে রাখবে। যাদবপুর লোকসভা হোক বা নন্দীগ্রাম বিধানসভায় মমতা নির্বাচনে হেরেছেন। Sleeper Effectএর মিথ ভেঙে আয়নাটা দেখান।

০৭১-Alternative Blindness

অনিকেতবাবু রবিবারের বিজ্ঞাপন দেখে প্রান্তিক কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট বুক করতে ছুটলেন। প্রমোটার ছবিতে সবুজ মাঠ, নিম গাছের ছায়া, পাখির কূজন, সুইমিং পুল, জিম, স্পা, কমিউনিটি হল দেখালেন। দাম বাজেটের প্রায় দেড় গুণ। তবু সুবিধা অনেক। ঋণের বোঝা চাপল। অফিস থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে। সকাল সাতটায় রওনা দেন, রাত দশটায় ফেরেন। সুইমিং পুল, জিম, স্পা কমপ্লেক্সে কোথায় বলতে পারবেন না। ওভারটাইম ছাড়া ঋণের কিস্তি মেটাবেন কী করে? অনিকেতবাবু কি ঠিক করলেন?

অফিসের ধারে কাছে ফ্ল্যাট কিনলে এক কিলোমিটারের মধ্যে সুইমিং পুল, জিম, স্পা পেতে পারতেন। ঋণের বাড়তি বোঝা চাপত না। তিনি প্রান্তিকে এত বিভোর ছিলেন যে Alternative Blindness তাঁকে বিকল্প প্রকল্প দেখতে দেয়নি। অনেক সময়ে বিভিন্ন বন্ডের এজেন্ট বোঝায় অমূক বন্ডে বিনিয়োগ করলে সেভিংস ব্যাঙ্কের চেয়ে ১%বেশী পাবেন। Alternative Blindnessএ তখন অনিকেতবাবুরা দেখেন না, কোন বন্ডে আরো বেশী সুদ পাওয়া যেতে পারে। সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জলদি আবেগ যুক্তিকে খাটো করে।

ট্যাক্সি ড্রাইভার বাড়তি ভাড়া চেয়ে দাবী যুক্তিসঙ্গত করতে করতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদীকে গালাগালি দিলেন। তার উপর মমতার পুলিশের উপদ্রব। আপনি প্রশ্ন করলেন, মোদী-মমতাকে ভোট দিচ্ছেন কেন? ড্রাইভারের সাফাই, আর আছে কে? বুঝবেন, Alternative Blindnessএ ভুগছে। বুঝিয়ে বলুন, সেদিন ধর্মতলায় দূর্নীতির বিরুদ্ধে বাম ছাত্র-যুবদের জমায়েত দেখেননি? দেখেছেন কিন্তু মিডিয়া Alternative Blindnessএর চৌহদ্দির বাইরে যেতে দিচ্ছে না। নোভোট্টুর লিবেড়ালদেরও সেই চালাকি।

যদি মোদী-মমতার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকে, তাহলে বিরুদ্ধে ভোট দিন। সবাই ভোট দিলে দেখতে পাবেন, কে আছে। কলুর বলদের মত ভালো মোদী, খারাপ পিসি, খারাপ মোদী, ভালো পিসি করতে থাকলে আমাদের কাছে বাড়তি ভাড়ার ভিক্ষা করতে হবে। Alternative Blindness বিকল্প পথ দেখতে দেয় না। সর্বদা দ্বিতীয় সুবিধার সাথে প্রথম সুবিধার তুল্যমূল্য বিচার করতে হয়। নয়ত অনিকেতবাবুর মত সবুজ মাঠ, নিমগাছের ছায়া, পাখির কূজন স্বপ্নের কুয়োয় ডুবে যাবে। আবেগ নয়, যুক্তিতে আসুন।

০৭২-Social Comparison Bias

Social Comparison Bias আকছার দেখা যায়। কোন ব্যক্তি তারচেয়ে যোগ্যতর অধঃস্তন ব্যক্তিকে কখনও জায়গা বা সুযোগ ছেড়ে দেবে না। এই রোগের প্রকোপ শৈশব থেকে বার্ধক্যের অন্তিম শয্যা পর্যন্ত বিস্তৃত। সমাজের নিম্নতম স্তর থেকে মিনার নিবাসী ধনকুবের, মূর্খ থেকে সুশীল, ব্যতিক্রম নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুঝতে পারলে Social Comparison Bias ১০০% বোঝা যাবে। ভলগা থেকে গঙ্গায় রাহুল সংকৃত্যায়ন বলছেন, মা তাঁর কন্যাকে হত্যা করছেন, ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যাবে বলে।

বহু প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, রাজনৈতিক আদর্শ ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে Social Comparison Biasএর কুফলে। চেয়ারের চারপাশে কালো ভ্রমর ঘোরে, ভ্রমরের হুলেই চেয়ার-নিবাসী বৃদ্ধ যৌবনকে প্রতারিত করেন। ভ্রমরদের ভীতি থাকে যোগ্যতর ব্যক্তি যদি চেয়ারে আসীন হয়, তাহলে আযোগ্য ভ্রমরের মৌরসিপাট্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্যার আইজাক নিউটনের শিক্ষক ছিলেন আইজাক ব্যারো। তিনি নিউটনের প্রতিভা দেখে চাকরি ছেড়ে নিউটনের সহায়ক হয়েছেন। জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রীত্ব ত্যাগের মত বিরল ঘটনা।

তৃণমূল দলে মমতা ও ভাইপো ছাড়া আর সবাই স্বীকৃত ক্রীতদাস। মালকিনকে ইবাদত করাটাই দস্তুর। Social Comparison Biasএর ফলে মমতাও জানেন পায়ের জুতোকে মাথায় তুলতে দিতে নেই। দীর্ঘ দিন হীনমন্যতায় ভুগে ক্রীতদাসরাও নীতিহীন চোর জোচ্চরে পরিণত হয়। তারাও পর্যায়ক্রমে Social Comparison Biasএ ভুগে কোন যোগ্য ব্যক্তিকে দলে স্হান দেয় না, পাছে মমতার কাছে সেই ব্যক্তির নম্বর বেড়ে যায়। ফলতঃ পচন খুব দ্রুত ও অবশ্যম্ভাবী। সুগত বসু আরাবুলকে তাজা নেতা মেনে নেন।

তৃণমূল দল মধ্যযুগীয় ভাবনায় মালকিনকে ঈশ্বর বানিয়ে পূজো করে। দক্ষিণপন্হী পারিবারিক দলগুলো প্রায় একই পথের পথিক। অন্যান্য দলেও কম বেশী Social Comparison Biasএর প্রভাব আছে। তিনি নেতা যিনি কেবল নেতৃত্ব দেন না, নেতা তিনি যিনি ভবিষ্যতের নেতা তৈরী করেন। পাড়ার ক্লাব থেকে মন্ত্রীসভা পর্যন্ত Social Comparison Biasএর মাশুল দিতে হয়। কোন দিল্লীর বাদশাহ ভালো হয়ে যান, অন্য কাউকে খারাপ করে আখের গোছাতে। মমতা Social Comparison Biasএর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।