০৭৬-Domain Dependence

দুই ধরণের বিশ্লেষণ পাচ্ছি। মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ খুব ভাল, কিন্তু রাজনীতির কী প্রয়োজন ছিল? দুই, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ছাড়া মনস্তাত্বিক বিষয়গুলো পরিষ্কার হত না। কারো কাছে মনস্তাত্বিক আলোচনা প্রধাণ, কেউ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিস্তারে আগ্রহী। নির্ভর করে ব্যক্তির Domain Dependenceএর উপর। যেখানে যে সাবলীল, বাইরে পা ফেলতে গররাজী। Simple Logic বোঝাতে গিয়ে যে প্রশ্নগুলোর লজিক অংশটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তবু অনেকেই বলেছেন, অঙ্ক বুঝি না, তাই চেষ্টাই করেই দেখেননি।

নরেন্দ্র মোদী যখন বললেন, এ প্লাস বি হোলেস্কোয়ার ইকোয়াল্টু এ স্কোয়ার প্লাস বি স্কোয়ার প্লাস টু এ বি। টু এ বি কা মুনাফা কাঁহাসে আয়া? ক্লাস সেভেনে যে অঙ্ক করেছে, সে জানে এখানে কোন বানিয়ার মুনাফা নেই মূর্খতা প্রকট হয়েছে। দেশটার নাম ভারতবর্ষ। সেখানে জনতা Domain Dependenceএর শিকার। ওই এলাকাটা তার আয়ত্বের বাইরে বলে লোকটা কত মূর্খ ধারণাটাই করতে পারল না। তাই বৈদিক যুগের রূপকথার গল্প বলে ভোট পাচ্ছেন। কঠিন মাটির মানুষরা রূপকথার পেলবতা জানে না।

মমতা দেখবেন, বিভিন্ন শ্লোক বা মন্ত্র মুখস্ত বলে কেরামতি দেখাবার চেষ্টা করেন। এখন বৃদ্ধা হয়েছেন, স্মৃতি দুর্বল, জিভ জড়িয়ে যায়। শ্রীকুমারদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে আর কত দিন? আপনার অঢেল সময় থাকলে আর আনন্দ স্ফূর্তির বিস্তর রসদ থাকলে সাত দিনে আপনিও মুখস্ত করতে পারবেন। যেহেতু Domain Dependenceএর ফলে আপনি সে অজানা এলাকায় পরিব্রাজক হতে চাননি, তাই নেত্রীকে সর্বজ্ঞ বলে মনে হয়। সক্রেতিস-প্লেটো থেকে মার্ক্সবাদ পৃথিবীর সব শাস্ত্রই আপনার জন্য লেখা হয়েছে।

Harry Markowitz বিনিয়োগের অর্থনীতির উপর নোবেল পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজের বিনিয়োগে তিনি ৫০% ব্যাঙ্ক বা বন্ডের নিশ্চয়তায় থেকেছেন। কোটি কোটি বিজ্ঞানের ছাত্র ডারউইনকে ভুলে ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন। অনেক মার্ক্সবাদী যাপনেও খুব ভোগবাদী আত্মসর্বস্ব। Domain Dependence সবাইকে কম বেশী গ্রাস করে। আমি রাগপ্রধাণ গান শুনতে রাত জাগব না, কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলে অসুবিধা নেই। Domain Dependence থাকলে কোন রচনা সমস্ত পাঠককে খুশী ও সুখী করবে না।

০৭৭-False-Consesnus Effect

আমার মনে হয় আপনারা সবাই এই বিষয়ে একমত হবেন। কোন বিষয়ে? যেটা আমি বিশ্বাস করি এবং বলে থাকি। দুই আর দুইয়ে যদি চার বিশ্বাস করেন, তাহলে আমাকে বিশ্বাস করবেন না কেন? এমা করছেন না! এটাকে বলে False-Consensus Effect। স্বর্ণযুগ, জীবনমুখী, বাদাম-বাদাম গানের কোনটা পছন্দ? সত্তরের কাছাকাছিদের বিশ্বাস সবাই স্বর্ণযুগের খনি সন্ধানী, পঞ্চাশের কাঁচা পাকা দাড়ি চুলকে প্রৌঢ় বলবেন, গানে জীবনের কথা আর তিরিশের তলায় কোমর দুলিয়ে আমার কাছে নেইকো-

বটকৃষ্ণের তিন ছেলে বেকার। বামপন্হীরা পথে মাইক ফুঁকে কর্মসংস্হানের সাংবিধানিক অধিকারের কথা বলছে। বটকৃষ্ণ বউকে বলল, তেনোমোলের আপিস থেকে লক্ষ্মীছাড়ার পাঁচশ লিয়ে আয়। ফেরার পথে বিস্সোবোঙ্গের কাউন্টার থেকে দুটো দিশী পাউচ আনিস। গলাটা রুখা সুখা করচে। আপনি ভাবছেন বটকেষ্টরা কেষ্ট মন্ডলের দূর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট দেবে? এটা False-Consensus Effect। বিশ্ব জাহান্নামে গেলেও বটকৃষ্ণ পাউচের বাইরে থাকতে পারবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ভাল বোঝেন।

বিজেপি দেখেছে ব্রাক্ষ্মণ্যবাদ যদি অকাতরে দলিত হত্যা করে তাহলেও দলিত ভোট কমে না। আপনি ভাবছেন, যে ধর্মে দলিতদের অধিকার নেই, সেই ধর্মের জন্য ওরা কেন ঝাঁপাবে? False-Consensus Effect। ফলতঃ দলিত হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠনের সাথে চলছে রাম মন্দির নির্মাণের কাজ। মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষের মস্তিষ্ক ব্যোমকেশ বক্সির সত্যানুসন্ধানী নয়, ওরা জন্ম-জন্মান্তরের জিনগত বৈশিষ্টে প্রাত্যহিক বেঁচে থাকায় বিশ্বাসী। মতের অমিল মানে কিন্তু বোকা নয়। মিল খোঁজাটা বোকামির লক্ষ্মণ।

এমনকি দুজন মানুষ দুজনকে ভালবাসে সেটাও False-Consensus Effect। যেমন ছাত্রদের মূল লক্ষ্য লেখাপড়া ভাবাটা False-Consensus Effect। রাজনৈতিক দলগুলি সবচেয়ে বেশী False-Consensus Effectএ ভোগে। আগলে বার দোশো পাড়। মুম্বাই থেকে জাত গোখরো এনে নিজের ছোবলে নিজেই কুপোকাৎ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবছেন ভিক্ষান্নে চিরকাল অকাতরে ভোট কিনবেন সেটাও ভবিষ্যতে False-Consensus Effectএ পরিগণিত হবে। ইতিহাস ঠিক সময়ে চাকা ঘুরিয়ে নেয় সর্বসম্মত ভাবে।

০৭৮-Falsification of History

মস্তিষ্ক ন্যায় নীতি যুক্তি দ্বারা নির্ধারণের জন্য নয়, বেঁচে থাকার উপায় বাতলাবার জন্য। এই কথাটা জানলে বাঁচা সহজ হবে। ১৯৭৩সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Gregory Markus ৩০০০ জনের উপর পরীক্ষা করেছিলেন। তৎকালীন এক রাজনৈতিক ঘটনার প্রভাব ভবিষ্যতে শুভ হবে না অশুভ? ১০বছর পর শুভাশুভ যখন স্পষ্ট তখনও যারা ভুল বলেছিল, একই রায় দিয়েছে অন্য যুক্তিতে। এই প্রবণতাকে বলা হয় Falsification of History। আমি ভুল বলেছি, ক্ষমা চাইছি, এটা বিরল। মমতা কখনও ক্ষমা চান?

২০১১, ২০১৬ বা ২০২১এ পার্থ চ্যাটার্জীর হয়ে ভোটভিক্ষা করেছেন, এমন কোন ব্যক্তি কি প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন? Falsification of Historyর প্রভাব এতটাই যে কোন মানুষ তা প্রত্যাশাও করে না। কুকুর কামড়ালে মানুষ কুকুরকে কামড়ায় না। ওরা বলছে, এখনও দোষী সাব্যস্ত হয়নি, অর্থাৎ ভুলের যুক্তি প্রস্তুত করল। এমনকি কোন সুশীল কি নতমস্তকে ভুল স্বীকার করেছেন? তাহলে Gregory Markusএর পরীক্ষা অভ্রান্ত। এমনকি মমতা মন্ত্র ভুলে গেলে সেটাও শ্রীকুমারদার ঘাড়ে দিয়ে দেন।

ফলে সারাক্ষণ এত অন্যায়ের বোঝা মস্তিষ্ক নেয় কী করে? না, নেয় না। মস্তিষ্ক সব ভুলে যায়। গতবছর এই দিনে আপনি কী করেছিলেন, মনে আছে? কিছু ঘটনা বা ঘটনা সমূহের সমষ্টি থাকে, যে ঘটনার প্রেক্ষিতে বাকি ঘটনাবলীর পুনর্নির্মাণ করে। তাকে বলে flash bulb memories। যারা দাবী করে তারা সর্বদা সত্য, স্পষ্ট ও যুক্তিনিষ্ঠ কথা বলে তারা বেশী Falsification of Historyএর শিকার। রামায়ণের গল্প ঠাকুমার সাথে flash bulb memories হয়ে আছে বলে মোদী গণেশের প্লাস্টিক সার্জারি বলেন।

Falsification of Historyর জন্য চিটফান্ড, নারদের পরেও তৃণমূল ভোট পেয়েছে কারণ অপরাধীরা অপরাধ স্বীকার করতে ভয় পায়। এমনকি নিয়োগ দূর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীর অনেকে তৃণমূলকে ভোট দেবে। ওরা যদি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারত, তাহলে দশ বছর অপেক্ষা করতে হত না। ওদের একাংশ যেমন মমতা বন্দনা করে, সুযোগে প্রশাসনের কাছে বিক্রী হয়, ওরা পার্থর চেয়ে কম অপরাধী নয়। যুক্তি মেনে নিন, লড়াই ও ভিক্ষা যুগপৎ হয় না। কিন্তু মস্তিষ্ক যুক্তির নয়, বাঁচার সহজ ধান্দাবাজী।