০৭৯-In-Group Out-Group Bias

আদিমেতিহাস থেকে মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ জীব। গোষ্ঠী থেকে বিতারণ মানে মৃত্যু। মস্তিষ্কের বিবর্তনে তার প্রতিবিম্ব, এমনকি জিনে। In-Group Out-Group Bias মানুষের থাকবেই। সম্প্রীতি ও বিশ্বভাতৃত্ববোধ একটি গুণ যা অর্জন করতে হয়। আপনার দেশ, রাজ্য, ভাষা, ধর্ম এসব অস্বীকার করতে পারবেন না, ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় একটা বৃত্তে চলে এলেন আপনি। বাঙাল না ঘটি? বামপন্হী না দক্ষিণপন্হী? মদ খান? নাচতে পারেন না গাইতে? হুল্লোড়ে না সিরিয়াস? বড়লোক না গরীব? সেটের ভিতর সাবসেটে ভাঙছে।

আপনার গোষ্ঠীর প্রতি সহানুভুতি In-Group Bias। তখন আপনি অনেক নেতিবাচক দিককে আড়াল করেন। বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর খুঁত খুঁজে পাওয়া বা বিরোধিতা Out-Group Bias। আপনার গোষ্ঠীর না হলে ইতিবাচক গুণেও ঈর্ষাকাতর। অনেক সময় বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামে অপরিচিত ব্যক্তিদের নিয়ে Group বানালেও, নিজেদের ভিতর ঐক্য গড়ে ওঠে, বিরুদ্ধ Groupএর সদস্যদের শত্রু মনে হয়, অথচ সবাই অপরিচিত। রাজনীতিতে যে গোষ্ঠীগুলো বৃহৎ, তাদের ধরবার জন্য ধামা বাগিয়ে জাল পাতে গোষ্ঠমামা।

মমতা যেদিন প্রশ্ন করেছিলেন, অমূকে চোর, তমূকে চোর, আমি চোর? In-Group Out-Group Bias ভাবনা কাজ করেছিল। দাগিয়ে দেওয়া মানুষদের সঙ্ঘবদ্ধ করে বুকে প্ল্যাকার্ড- “আমরা সবাই চোর।” এখানে “চোর” শব্দটা সুশীল সহ সমগ্র গোষ্ঠীকে স্বার্থে একত্রিত করেছিল সহানুভুতির জন্য। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পঞ্চাশ কোটি বেরিয়ে আসার পর In-Group সহানুভুতির বেলুন ফেটে যেতেই হাত ধোয়া। অর্থাৎ পার্থকে আর গোষ্ঠী স্বীকার করছে না। Out-Groupকে মোকাবিলার জন্য ৯৯% ‘না চোরে’র গল্প।

ধর্মীয় আবেগে বিজেপির তুরূপের তাস যখন In-Group Bias, স্বাভাবিক ভাবে তৃণমূল Out-Group Biasএর ফায়দা তুলছে। খেটে খাওয়া বামপন্হীরা In-Group Out-Group Biasএ মোদী-দিদির খেলায় দিশাহারা। বামপন্হী নেতৃত্ব মেহনতী গোষ্ঠীর থেকে পোষাক, আচরণ, যাপনে দূরে সরে যাচ্ছিল। আজ মীনাক্ষী, প্রতিকুর, সৃজন, দীপ্সিতারা পথ দেখাচ্ছে। In-Group Out-Group Bias যখন মানুষের মধ্যে কাজ করে তখন বামপন্হীদেরও মেহনতী ও মেধাবী গোষ্ঠীর একাত্মতার উষ্ণতায় উপস্হিত হতে হবে।

০৮০-Ambiguity Aversion

গোয়ায় তৃণমূল ৪৮কোটি খরচ করে শূন্য, বিজেপি ১৮কোটিতে সরকার গড়ল। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তথ্যের অনেক বেশী খরচ হয়। ঠিক যে কারণে বহু কোটি খরচ করে বাংলায় বিজেপি সরকার গড়তে পারেনি। একজন মহিলার যে পুরুষের সাথে সম্পর্ক আছে, তার ৫০% ভাল গুণ, ৫০% ব্যর্থতা আছে। আরেকজন অপরিচিত ব্যক্তি তাঁকে প্রস্তাব দিল। মহিলা কী করবেন? একে বলে Ambiguity Aversion। ৫০% ভাল গুণে মহিলা ঝুঁকি নেবেন, অনিশ্চয়তায় নয়। গোয়ায় তৃণমূল অনিশ্চিত দল।

ঠিক সেই কারণে বাংলায় বিজেপি অনিশ্চিত। তৃণমূলের দূর্নীতির পাহাড় ঢেকে মমতা কল্পতরু হয়ে অনুদানের রাজনৈতিক চাল চাললেন, অর্থাৎ মানুষকে ঝুঁকি নিতে বাধ্য করলেন। বামপন্হী ও কংগ্রেস তো অনিশ্চিত ছিল না। ২০২১এ মিডিয়া বাইনারি বা দ্বিদলীয় রাজনীতির সাপলুডোর ছক ফেঁদে বসল। SUCI, PDS সহ লিবেড়ালরা নো-ভোট্টু বিজেপি করে ভোটারদের ঠেলে দিল তৃণমূলের দিকে, কারণ ওই দলগুলো বাংলায় অনিশ্চিত। Probability এবং Uncertaintyর খেলাই Ambiguity Aversion।

মনে করুন, আপনাকে দুটো বাক্স দেওয়া হল, একটিতে ৫০টি লাল ও ৫০টি কালো বল আছে। দ্বিতীয় বাক্সে লাল কালো মিশিয়ে ১০০টা বল আছে। আপনি লাল বল তুললে ১লাখ পুরষ্কার পাবেন। আপনি কোন বাক্সটা বেছে নেবেন? অবশ্যই প্রথমটি, কারণ সেখানে সম্ভাবনা বা probability ৫০%, কিন্তু দ্বিতীয় বাক্সে আদৌ লাল বল কটা আছে জানেন না আবার বেশীও থাকতে পারে। Uncertainty আপনি এড়িয়ে যাবেন। আমরা সাধারণতঃ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার ফারাক করতে পারিনা, কিন্তু অবশ্যই আছে।

রাজ্য প্রশাসন পরিচালনায় ৩৪বছরের বাম শাসন তৃণমূলের দূর্নীতির চেয়ে অনেক গ্রহণযোগ্য। মিডিয়া সেই ঝুঁকিটাকে আড়াল করে বিজেপির অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, অথচ বিজেপির দূর্নীতি সর্বত্র তৃণমূলের মতই মাত্রাছাড়া এবং বিজেপিকে নির্বাচন যুক্তিহীন। Ambiguity Aversionকে মাথায় রেখে বামপন্হীদের শ্লোগান ছিল ফিরতে হাল ফিরুক লাল। সেটাই যথার্থ ও ভবিষ্যতের দিশারী হবে, কেবল দূর্নীতির বিরুদ্ধে পথে থেকে মানুষের ঝুঁকির পরিমাণ কমাতে হবে, সাহস দিতে হবে, লড়াই চলবে।

০৮১-Default Effect

স্মার্ট ফোনে কত বিচিত্র পরিষেবা আছে, আপনি জানেন? কিংবা অন-লাইন ব্যাঙ্কিং? সদা পরিবর্তনশীল দুয়ারে ব্যাঙ্কে অভ্যস্ত? নিদেন পক্ষে রিমোটে সব সুইচগুলির কাজ? দুর্ভাগ্যবশতঃ কর্মহীন না হলে জানা সম্ভব নয়, কারণ প্রয়োজন বা ফুরসৎ হয় না। Default Effect এ অভ্যস্ত। কাৎলার কানকো দেখে মাছ চেনা বহু দিনের অভ্যাস। বার্গারের সাথে মধ্যবয়সে পরিচয় পরে বলে Default Effect তেমনটা নেই, অন-লাইন ডেলিভারি চলবে। এমনকি পারষ্পরিক সম্পর্কেও আমরা Default Effect এ খুব বিশ্বাসী।

২০১১ অবধি বাঙালী জানত ট্রাফিক পুলিশ আর কর্পোরেশনের কেরাণী ঘুষ খায়। ইতিহাসে পড়েছে মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। ১৯৯৩তে মনীষ গুপ্তর মত ষড়যন্ত্রকারী দেখেও চেনেনি। মুখোশ খুলে রাজনীতিতে না আসলে অজানা থাকত। জঙ্গলমহলে কিষেনজী, নন্দীগ্রামে অধিকারীরা, সিঙ্গুরে SUCIর সেটিং চমকে দিয়েছে। চিটফান্ড, নারদ থেকে টেটে নরেন মোদীর সাথে সেটিং বুঝতে বাঙালীর ধাঁধা লেগেছে। হঠাৎ কোটির বিস্ফোরণে চোররা বাঙালীর Default Settingটা বদলে দিয়েছে।

স্বাধীনোত্তর দ্বিধাভক্ত বাংলার উদ্বাস্তুদের সমস্যা ছিল সন্তানকে আগলে বেঁচে থাকা। লাল নিশানটাকে আঁকড়ে ধরেছিল। ভূমি-সংস্কার থেকে গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষির বৈপ্লবিক সাফল্যের পরেও হনুমান ধরে আজ বাঁচতে চাইছে বাঙালী। যুবকের মেরুদন্ডের Default Setting ভাঙ্গতে পূজোয় চুল্লুভাতায় তোষণ। একবার চুল্লু পেটে পড়লে আনেক বাঙালী বলছে, বামে ভাল ছিলাম। কেবল রাম ডাকাতদের মারতে পারবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রদূত বাংলার অসীম সাহসের Default Setting চুরমার করেছে মোদীরা।

যখন বেশী অ্যাপ ঘাঁটাঘাঁটি করে সেটিং বিগড়ে যায়, আমরা Default Settingএ ফিরি। এক লিবেড়াল যুবক গর্ব করে বলল, প্রেমিকা কোন বয়ফ্রেন্ডের সাথে সিমলা বেড়াতে গেলে, মেনে নেব। সবাই বুঝল লিবেড়ালের Default Setting ভাইরাস আক্রান্ত। দিনের শেষে আমরা বাঙালী, ভাদু শেখ বা অনুব্রত মন্ডল নই। পার্থ-মদনের মত শোভনে বদহজম হয়। মমতা Default Setting গরমিল করে দিলে ঝিঙ্কু মামনি দেখলে ভোটটা আঙুল গড়িয়ে পড়ে যায়। Default Effectএ ফিরুন। আবার সাজিয়ে নেব সব।