০৮২-Fear of Regret

রামের কাছে A কোম্পানির শেয়ার ছিল। রাম শুনেছিল B কোম্পানির শেয়ার কিনলে লাভ হবে। কিন্তু রাম A কোম্পানির শেয়ার বিক্রী করে B কেনেনি। শ্যামের কাছে B কোম্পানির শেয়ার ছিল। শ্যাম B কোম্পানির শেয়ার বিক্রী করে A কোম্পানির শেয়ার কিনল। দুজনের ১লাখ টাকা করে লোকসান হল। পরীক্ষায় দেখা গেছে শ্যামের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনক বলেছে ৯২% মানুষ। কারণ রাম inactive ছিল, কিন্তু শ্যামের Activity পতনের কারণ। সমস্যাগুলো যুক্তিপূর্ণ সমাধান না করে কর্মের ফল Fear of Regret।

তৃণমূল শিক্ষায় নিয়োগে বিপুল টাকার দূর্নীতি করেছে। ধরা পড়েছে। এবার প্রতারিত অসাধু প্রার্থীরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে, তা ভেবে নেত্রীর Fear of Regret কাজ করছে। শিক্ষামন্ত্রী আদালতকে অনুরোধ করবেন, অযোগ্যদের বরখাস্ত না করতে। নেত্রীর এই আবেদনটাই দল বা সরকারকে দূর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত প্রমাণ করছে। কিংবা গরু পাচারের মামলায় তৃণমূলের মালকিন অনুব্রতকে বহিষ্কার করা নিয়ে Fear of Regret দেখাচ্ছেন। দ্রুত অমূলক অবৈধ সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক ভুলের নিদর্শন হয়ে যাবে।

চিটফান্ড বা নারদের মত শিক্ষায় নিয়োগে দূর্নীতিতে নরেন মোদী সেটিং করে নিতে পারতেন। কিন্তু যে ভাবে বঙ্গ-বিজেপি পূর্বের সেটিংকে নির্বাচনে ভরাডুবির কার‍ণ হিসাবে সতর্ক করেছে, মোদীর Fear of Regret কাটমানি ভুলে তদন্তে বাধ্য করেছে। Fear of Regret শেষ সুযোগ হারাবার ভীতি দেখায়। বহু বিজ্ঞাপনে Fear of Regretকে ব্যবহার করে। গঙ্গার দিকে মুখ করে আর মাত্র দুটি ফ্ল্যাট আছে। অমূক দিনের মধ্য এত টাকার কেনাকাটায় আকর্ষণীয় পুরষ্কার। সম্পর্কের টানাপোড়েনেও Fear of Regret।

একটি বহুল প্রচলিত মিডিয়ার আলোচনা, কীভাবে মেকআপ করলে আপনি পূজোয় বন্ধুমহলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। সর্বাধিক মানুষ সেই প্রতিবেদনে উৎসাহী। Fear of Regret বয়স, অর্থ নির্বিশেষে সবাইকে বন্ধুমহলে রূপে তাক লাগিয়ে দিতে ইঁদুর দৌড়ে। অমূক অনুষ্ঠানে না গেলে তমূক সেলেবের সাথে সেলফি অধরা থেকে যাবে। মানুষ যত দ্রুত ভাববে, যত ভোগবাদী হয়ে উঠবে ততই Fear of Regret গ্রাস করবে। শরতের নীলাকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ জীবন থেকে হারিয়ে যাবেই।

০৮৩-Salience Effect

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তিনজনকে ঘাতকরা কাছ থেকে গুলি করে, কুপিয়ে তারপর বোম মেরে হত্যা করেছে। সাংবাদিক আনন্দ হাজরা সম্ভাব্য আততায়ীর ছবি সহ হৃদয় বিদারক ঘটনার বিস্তৃত রিপোর্ট করল। খবরটা পরদিন ৫ম পাতার ৮ম কলমে। প্রথম পাতায় নামী কোম্পানীর নবনিযুক্ত মহিলা CEOর উথ্থান কাহিনী। ভদ্রমহিলা নারী বলে নন, যোগ্যতা প্রমাণ করেই কিন্তু এই পদে গেছেন। পুরুষ প্রধান সমাজে এটা Salience Effect। তুলনায় বখরা নিয়ে তৃণমূলী খুন প্রাত্যহিক “খেলা হবের” নিদর্শন।

কোন এক দলের মালিক মমতা বন্দ্যোপধ্যায় মহিলা, ঘটনাটাকে তৃণমূল Salience Effect করে ফায়দা তুলতে চেয়েছে। যদিও ইন্দিরা গান্ধী সহ বহু সফল মহিলা রাজনীতিবিদ ছিলেন বা আছেন। Salience Effect জোরদার করতে তাঁকে দিয়ে ছবি আঁকানো, কবিতা লেখানো, সুর দেওয়া, মন্ত্র পড়া, বল খেলা থেকে ঢাক-কাঁসর বাজিয়েও বাজার গরম না হলে ডান্ডি নৃত্যে কাঠিবাজী করতেও কসুর করছে না। কারণ পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতি ফাঁসও বঙ্গ-জীবনে Salience Effect ফেলেছে। একটা ঢাকতে আরেকটা।

বরঞ্চ আপনি যদি বলেন, তৃণমূলের অমূক ব্যক্তি সৎ, সেটার Salience Effect হবে। পূজোয় ক্লাবের চুল্লুভাতার চুল্লু খেয়ে যদি কেউ ড্রেনে গড়াগড়ি দেয় জনতা পাশ কাটিয়ে চলে যাবে, কারণ চুল্লুভাতা দেওয়াই হয় মদ খেতে। বর্তমানে মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দৃঢ়চেতা মনোভাব Salience Effect ফেলেছে জনমানসে, তার প্রভাব অচিরেই সমস্ত বিচার ব্যবস্হার উপর পড়তে বাধ্য। আমির খান নামক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কোটি কোটি নোট উদ্ধারের পর প্রশ্ন পেছনে তৃণমূল নেতা কে?

চুরির পেছনের তৃণমূল নেতার খোঁজটাও Salience Effect। মানুষ ধরে নিয়েছে তৃণমূল মাতব্বর না থাকলে মহা-জালিয়াতি অসম্ভব। অর্থাৎ Salience Effect মানুষের ভাবনা, বিচার ও ধ্যানধারনার উপর প্রভাব বিস্তার ও ভাবনার পরিবর্তন করে। সব চোর তৃণমূল না হতে পারে, কিন্তু যেহেতু সব তৃণমূল চোর, তাই চুরি, দূর্নীতিতে প্রথমেই শাসক দলের দিকে আঙুল ওঠে। মমতাকে কেউ সিরিয়াসলি নেয় না, সেই Salience Effectএ। Salience Effect যত বাড়ছে তত কাঠি হাতে নৃত্যে মরিয়া নাচছেন।

০৮৪-House-Money Effect

টাকার রঙ কী? যে উপায়ে উপার্জিত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে। বছরের শেষে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ২লাখ জমালেন। কী করবেন? (ক) ব্যাঙ্কে থাকবে। (খ) বিনিয়োগ করবেন। (গ) কিচেন ক্যাবিনেট বানাবেন এবং (ঘ) পাঁচতারা রেস্তোরাঁয় কয়েক দিনের বিনোদন। বেশীর ভাগ উত্তর হবে (ক) বা (খ)। এবার মনে করুন, টাকাটা লটারিতে পেয়েছেন। তখন সিংহভাগ জবাব হবে (গ) বা (ঘ)। এটা বাস্তব, বহু দরিদ্র লটারি প্রাপক পুনরায় দারিদ্রে ফিরেছে। এই অনুপার্জিত সম্পদ হল House-Money Effect।

ব্যবসায় House-Money Effect ব্যবহৃত হয়। যেমন ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক থেকে মোবাইলে ফ্রি ডেটা বা ফুড চেনের ফ্রি কুপন। House-Money Effect আপনার খরচের বহর বাড়ায় এবং অজান্তেই টাকার রঙ বদলে দেয়। বদলে যাওয়া টাকার রঙ মেজাজ, জীবনশৈলী বদলে দেয়। নিয়োগ দূর্নীতি শুধু তদন্তে মানুষ দেখেনি, নটবরদের মুখের ভাষা, আচরণ, বৈভবে প্রকট হয়েছে আগেই। পাড়ার ফুটো মস্তান, একটা থাপ্পর মারার পর দ্বিতীয় থাপ্পর মারার যায়গা পাবেন না, সেও সিক্স প্যাক হয়ে গেছে।

টাকার রঙ কী? পার্থ অনুব্রতদের জিজ্ঞাসা করুন। যে সম্পদ ধরা পড়েছে, তা সাদা কাগজ হয়ে গেছে। যা কেবল তাঁদের মস্তিষ্কে আছে, তা স্বর্ণবর্ণ, এখনও তদন্তকারীরা হদিশ পায়নি। ব্রাত্যজন বলে যারা ব্যতিক্রমী চাকরি পেল, তাদের সম্পদের রঙ ছিল সবুজ মাঠ, মায়ের গয়না, আজ ঘুষের আলকাতরা। আলকাতরার আতঙ্ক ঢাকতে ঢাকীর ঢাকে কাঠি, ডান্ডির কাঠি ডাইনে বামে পেছনে। হাতে উদ্বোধনের কাঁচি, মনে ভিতর কেমন করে বাঁচি! House-Money Effect কালী-দুয়ারে শ্রীলঙ্কার ঝড় এনে দেবে।

খরচের ধরণ বলে দেয় টাকার উৎস। এক সুন্দরী যুবতী শিল্পপতিকে বলেছিলেন, আপনি মাসে ১০০ কোটি উপার্জন করেন। আমি সুন্দরী, যুবতী। আপনাকে বিয়ে করতে চাই। শিল্পপতি উত্তরে বলেন, আপনার রূপ যৌবন সময়ের সাথে depreciate করবে। কিন্তু আমার বিনিয়োগ, উদ্যোগ ও পরিশ্রম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। যার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত পতনমুখী তেমন share শিল্পপতিরা ধরে রাখে না। কিন্তু আপনার House-Money Effect আপনাকে ফিরতে দেবে না। আপনি বরঞ্চ দ্রুত শিল্পপতি হয়ে যান।