০৮৫-Procrastination

মুখাগ্নি করে বাইরে বেঞ্চে এসে বসল মৈত্রেয়ী। প্রায় প্রতিদিন মা ফোন করত, একটা সারা দিন আমার সাথে গল্প করবি? বেড়াতে যাব। সারা হপ্তা অফিস করে শনি-রবির ছুটিতে মৈত্রেয়ী সব ম্যানেজ করতে পারত না। সহকর্মীর বিবাহ-বার্ষিকী, বন্ধুদের হঠাৎ পিকনিক, আত্মীয়দের বিয়ে, মিমির স্কুলের ফাংশান, আজকাল দু একটা গানের ফাংশান জুটছিল। মা ছিল বৃদ্ধাশ্রমে। আশ্রমের মাসিক টাকাটা ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-এ পাঠাতে ভুলত না। সেই দিনটার জন্য মা অপেক্ষা করল না। Procrastination – গড়িমসি।

সাময়িক দুঃখবোধ ব্যস্ত জীবনে বিভিন্ন যুক্তির পলি দিয়ে ঢেকে দেবে মৈত্রেয়ী। মানুষের ব্যর্থতার বিপুল অংশ Procrastinationএর ফলে। আসলে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে উপযুক্ত গুরুত্ব দিতে জানা সাফল্যের চাবিকাঠি। পরীক্ষার পড়া, জীবন বীমার কিস্তি, আয়কর রিটার্ন থেকে দারোয়ানের বখশিস- এসব ভাল লাগার বিষয় নয়, তবু প্রয়োজনীয়। সেখানে Procrastinationর প্রভাব বেশী। মায়ের আব্দার মৈত্রেয়ীর গোপন ক্ষত, কেউ জানবে না। মৈত্রেয়ী নিজে বুঝবে যেদিন মিমি উপযুক্ত ব্যবহার ফিরিয়ে দেবে ওকে।

বামফ্রন্ট পতনের একটা বড় কারণ Procrastination। যেখানে বিচার ব্যবস্হা শ্লথ সেখানে দূর্নীতিও প্রবল হয়। এক বিচারপতির দ্রুত সিদ্ধান্তে হঠাৎ ছবিটা বিলকুল বদলে গেল। যেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অ্যান্ড কোম্পানির ভাবনার ত্রিসীমানায় ছিল না। ব্যতিক্রমী উপায়ে পাওয়া ব্রাত্য প্রার্থীদের পাশে আছে সেটা জানাতেও মুখ্যমন্ত্রী Procrastinationর আশ্রয় নেননি। যেমন ভাবে সামনে আসবে মোকাবিলা করবেন। বন্দুকের গুলি থেকে ঢাকের কাঠি, কোন অস্ত্রই অরুচি নেই। সেটাই তাঁর উথ্থানের বনিয়াদ।

Procrastination এবং গুরুত্ব আরোপ করতে জানার উপর Brian Tracyর Eat that Frog পড়তে পারেন। মৈত্রেয়ীকে কেউ বোঝাতে পারবে না মা Procrastination আশা করেননি। আনন্দ লহরীতে উদ্বেল বন্ধুসমাজ ওকে আজ সেই কথা বলবে না। বামফ্রন্ট পতনের মত প্রতিক্ষণে গোপনে কর্কট রোগাক্রান্ত হবে সমাজ। কারণ মৈত্রেয়ীও কারো বন্ধু, সে তাঁর বন্ধুকে বলে না, গড়িমসির জন্য কোন প্রয়োজনীয় কাজ ফেলে আনন্দে আসিস নি তো! Procrastination চিরকাল মানুষের বড় শত্রু।

০৮৬-Envy

ভদ্রলোক রেগে বললেন, বন্ধুদের কাজ ত্রুটি খোঁজা নয়। ওরা সবসময়ে আমাকে সমর্থন করে। বৃদ্ধ শান্ত করেন, যদি কোথাও আপনার অসাফল্য থাকে তা শত্রুদের দোষ। আপনার শত্রুর প্রয়োজন ছিল, বন্ধুর নয়। Envy বা শত্রুতার বৈশিষ্ট প্রায় সবক্ষেত্রে প্রায় সমবয়সে ও সমগোত্রীয়র সাথে হয়। হিংসা বা jealousy কিন্তু Envy নয়। Envy বৈষয়িক (অর্থ, সম্পদ, পদ, স্বাস্হ্য) আর jealousy ব্যবহারিক (রূপ, গুণ, বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণী শক্তি)। Envy দ্বিপাক্ষিক, jealousyতে অন্ততঃ তৃতীয় পক্ষের দরকার।

Envy নিকৃষ্টতম বোকামি, কারণ এই রিপু কোন লাভ দেয় না। অনাবশ্যক সময়ের অপচয়। Envyর প্রকৃষ্টতম উদাহরণ মহাভারতে- শকুনি। দুর্যোধনের সব জয়ের নেপথ্যে এবং পরিশেষে মৃত্যু। শিক্ষামন্ত্রী অভিযুক্ত হতে ফিরহাদ হাকিম ক্যাবিনেটের যৌথ দায়িত্বের কথা বললেন, কিন্তু অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে আলিবাবার সম্পদ আবিষ্কার হতেই Envy প্রকট হল। আদর্শগত বন্ধন না থাকলে সব ডাকাতই সব ডাকাতের Envy। দিলীপ ঘোষকে পদচ্যুত করে সুকান্ত মজুমদারের মসনদে বসা Envyর জন্ম দিল।

একটি টেলিভিসান সেটের বিজ্ঞাপন ছিল- Neighbour’s envy, owner’s pride। অর্থাৎ আপনার Envy শত্রুকে আনন্দ দিতে পারে, আর যুৎসই Envy তো শত্রুর সাফল্যের সোপান। নীতিহীন দলে একে অপরের শত্রু, Envy একটি গুরুত্বপূর্ণ অবিচ্ছেদ্য অংশ, প্রেরণার সূতিকাগৃহ। এক পঞ্চায়েত প্রধানের সাতমহলা বাড়ি দলের ভিতর অনেক Envy সৃষ্টি করে। তদন্তকারী সংস্হাগুলোর গুপ্তধন উদ্ধারের পেছনেও দলগত Envy। খেয়াল রাখবেন, Envy কিন্তু বৈষয়িক। এটা jealousy নয় কখনও।

মনস্তাত্বিকরা পরীক্ষা করে বলেছেন, কারো প্রতি বিদ্বেষ, শত্রুতা আপনার মননশীলতায় আঘাত দেয়। দুঃখ নয় কিন্তু কারণ দুঃখ সৃষ্টির উৎস হতে পারে। jealousy আত্মপ্রচারে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ক্ষতি করে। মমতার ব্যক্তি নির্ভর দলে মমতার কোন Envy বা প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সেটা তাঁর বাড়তি সুবিধা। সেক্ষেত্রে এঁরা মধ্যযুগীয় ভয়ঙ্করতম হন। ভাল বন্ধুর চেয়ে খারাপ শত্রু খুঁজুন, যে আপনাকে অনুপ্রেণিত করতে পারবেন। খোশামুদীর চেয়ে সমালোচক শ্রেয় বুদ্ধিমান হলে। অজাতশত্রু হবেন না, শত্রুও হবেন না।

০৮৭-Personification

হাত জোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া কুতুবুদ্দিন আনসারিকে মনে পড়ে? ছবিটা দেখলেই গুজরাত দাঙ্গার কথা মনে পড়ে। উপছানো ট্রেনের ছাতে অসহায় মানুষের সীমান্ত পারের সাদা কালো ছবিতে আমার পূর্বপুরুষের মর্মভেদী হাহাকার। ঠোঁট কামড়ে ধরি। তেরঙ্গা আমার প্রসাধন হয় না। Personification মানে কোন ব্যক্তি বা ছবি যা বৃহত্তর পটভূমিকে চোখের সামনে মেলে ধরে। হাওয়াই চটি দেখলে কী মনে হয়? চোর, ডাকাত, মাসোহারার সুশীল কিংবা ঘুষখোর প্রশাসনিক নেড়ি কুত্তাদের চাটার লালসা।

আমূল বাটারের কার্টুন বাচ্চা মেয়েটিও কিন্তু Personification। ক্যাডবেরির কিট্টু গিদওয়ানি। বিজ্ঞাপনে Personification দীর্ঘকালীন পরিকল্পিত সাফল্য। ব্যক্তিতান্ত্রিক দলে Personification ক্রীতদাসদের মানতেই হয়। ক্রীতদাস শিক্ষিত হোক বা মূর্খ, প্রবীণ বা নবীন, চোর কিংবা ডাকাত, ছবি ছাপতে হলে মালকিন ও পারিবারিক প্রভূদের পায়ের নিচে। Personification এতই কড়া যে গণেশ স্তবের মত, কোন বাক্যের শুরুতে দলের মালিক ও পরিবারের স্তুতিবাক্য শেষ করে মূল মিথ্যার বেসাতিতে যাবে।

Personification একেক দেশে একেক রকম। ২০০৯ সাল অবধি মার্কিণ দেশে মৃত সৈনিকদের ছবি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যদিও দেশের সবাই যুদ্ধের সব পরিসংখ্যান জানে, তবু ছবি Personification সৃষ্টি করবে। কারণ সে দেশের মানুষ যুদ্ধ চায় না। আর ভারতে পুলওয়ামার যুদ্ধের পর নরেন্দ্র মোদী ঢাক বাজিয়ে সারা দেশে সৈনিকের মৃতদেহ পাঠিয়ে দেশপ্রেমের ফেনা তুলে নির্বাচনী বৈতরণী পার হন। শক্তিশালী দেশের মানুষ যুদ্ধ বিরোধী আর দুর্ভিক্ষের দেশের মানুষ Personificationও যুদ্ধে উত্তেজিত।

১লক্ষ বছর পূর্বে মানুষ উপলব্ধি করতে শেখে কোন বিষয়ে অপর মানুষ কীভাবে ভাবে, অনুভব করে। একে বলা হয়, Theory of Mind; সেই ভাবনার বিবর্তনে সাদা শাড়ি, হাওয়াই, হেলিকপ্টার, অ্যাপলে ফেসিয়ালের মুন্সিয়ানায় পিসি বাঙলার মেয়ের ভূমিকায়। বাংলা মানেই দূর্নীতির Personification। ওই ছবিটা দেখলেই মনে হবে দূর্নীতির জিরো টলারেন্স, যিনি ১০বছর ক্রমাগত বারো আনা ভাগ আঁচলে বাঁধলেও বাংলার মানুষ টলারেট করেছে। Personification মমতার নয়, বোকা বাঙালীর আসল ছবি।