০৮৮-Illusion of Attention

মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানো আর মদ্যপ অবস্হায় গাড়ি চালানো এক। মনে হয় রাস্তায় আপনার মনঃসংযোগ অটুট আছে, কিন্তু তা হতে পারে না। মস্তিষ্ক এক মুহূর্তে একাধিক কাজ করতে পারে না। তখন Illusion of Attention হয়। Ability to Close Doors নিশ্চই মনে আছে। ফুডকোর্টে প্রেমিক মশাই গুরুত্বপূর্ণ কোন পরিকল্পনা বলছে। প্রেমিকা শুনছে এবং চোখ ঘুরছে হেঁটে যাওয়া অপর মহিলার শাড়ির আঁচলে কিংবা কানের লতির ঝুমকোলতায়। মহিলা সব কথা অবশ্যই কিছু শুনছে না।

একটি পরীক্ষার নাম The Monkey Business Illusion। এক দল খেলোয়াড়ের সাদা শার্ট, অপর দল কালো। পরীক্ষর্থীদের গুণতে দেওয়া হল, সাদা দলের খেলোয়াড়রা কতবার নিজেদের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন ভাবে পাস খেলছে। মাঠে কালো গরিলার পোষাক পরা এক ব্যক্তি হেঁটে গেল। যারা মনযোগ দিয়ে সাদা দলের পাস গুণছিল তাদের বেশীর ভাগ কালো গরিলাকে দেখতে পায়নি। এটা Illusion of Attention। কোন পরীক্ষার সামনে বা প্রোজেক্ট রূপায়ণের সময় দেশ-বিদেশের বিস্তারিত খবর রাখতে পারি না।

আপনি তৃণমূলের চোর গুণছেন। আজ পার্থ, কাল অনুব্রত, পরশু কল্যাণময় থেকে সেহেগাল হোসেন। আপনি খেয়াল রাখছেন না, ডলারের তুলনায় টাকার দাম ৮২টাকা হয়ে গেছে, পেট্রল ১০৬টাকা। রান্না ঘরের জ্বালানী ১১০০টাকা। আরো তিনটে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক বিক্রীর সওদা চলছে গুজরাতি গদিতে। আপনি লক্ষ্মী-ভান্ডারের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আর সেই সময়ে মাল নদীর বালি সাফ হয়ে যাচ্ছে। নিরঞ্জনের সময়ে হড়পা বানে ৮জন মরছে। সরকারী অনুদান ২লাখ দেখছেন, কোটি টাকার বালি পাচার নয়।

পকেটমার থেকে দেশের প্রশাসকরা Illusion of Attention খুব ব্যবহার করে। আপনার নজর ঘুরিয়ে দেয়, তারপর হাতসাফাই। মমতা হোক বা নরেন মোদী হাতসাফাইটা করতে পারবেন বলেই বানিয়ারা তাঁদের সিংহাসনে বসিয়েছে। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে আন্দোলন রত যোগ্য প্রার্থীদের থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর ঢাকের বাদ্যি থেকে ডান্ডি নাচ। সোশ্যাল মিডিয়ায় হাস্যকর মিম বানাচ্ছেন যখন, তখন মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চিন্ত হচ্ছেন Illusion of Attentionএর ওষুধ কার্যকারী হচ্ছে। আসল বিষয় দেখুন।

০৮৯-Strategic Misrepresentation

রাজনীতিবিদদের সমাজসেবী হতে হয় কেন? রাজনীতি প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলের তরবারি। তরবারির খাপ সোনা-রূপোর কারুকার্যময় করে কী লাভ? যিনি দিন বদলের কথা বলেন, সে সমাজসেবী। আবার দূর্নীতিতে ব্যতিক্রমী উপায়ে চাকরি পাওয়ার পক্ষের শেয়ালকে সমাজসেবীর মুখোশ পরতে হয়। জনতা কার কথা শুনবে? শেয়ালের। শেয়ালের কাছে পাপের টাকার ভান্ডার মজুত আছে। দরিদ্র জনগন তার দারিদ্রের কথা শুনবে না, তাৎকাল হাতগরম ফায়দা না থাকলে। তাই Strategic Misrepresentation।

তিনশ বছর পর মমতার মন্দির (সুমন) বা মমতা সর্বাধিক বামপন্হী (সুবোধ) অথবা মমতাই আগমী প্রধানমন্ত্রী- এসব Strategic Misrepresentation। নরেন মোদী যেমন বলেছেন, প্রত্যেক ভারতবাসীর অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ কিংবা বছরে ২ কোটি চাকরির জুমলা আসলে Strategic Misrepresentation। আপনি খেয়েছেন, এবার নোটবন্দী, জ্বালানীর দাম থেকে সরকারী সম্পদ গুজরাতিদের কাছে অকাতরে বিক্রীর বাঁশ নিন। ৫০০টাকার লক্ষ্মী-ভান্ডার গিলেছেন, এবার বালি, কয়লা, গরুর পাচারও মেনে নিন।

Strategic Misrepresentationএর প্রয়োজন হয় কেন? আমাদের জন্য। (ক) সরকারী প্রকল্পে ঠিকাদার জানে সরকার পরিবর্তনশীল, (খ) অভিযুক্ত করার অন্য মুরগী আছে এবং (গ) প্রকল্পের শেষ হবে বহু বছর বাদে। সেই আমরাই ডাক্তার বা বিনিয়োগে Strategic Misrepresentationএর ফাঁদে কম পড়ি। নারী পুরুষ সম্পর্কে Strategic Misrepresentation খুব প্রচলিত কারণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মোহ বিভ্রান্তি করে। তৃতীয় কোন ব্যক্তির হস্তক্ষেপ নাপসন্দ। আপনাকে চাহিদা অনুযায়ী মিথ্যা জোকার সাজতে হয়।

সমাজ চায় Strategic Misrepresentation। আপনি যদি নিজেকে মেলে ধরেন, তবে লাইনের পেছনে। কেউ Strategic Misrepresentation করে আপনার প্রাপ্য ছিনিয়ে নেবে। বন্ধু খাদ্যরসিক হলে আপনি খাদ্যরসিক, ভ্রমণ পিপাসু হলে আপনি মার্কো-পোলো হয়ে যান, নইলে আপনার কথা শোনার সময় নেই। তাই আমরা রাজনীতিবিদদের সমাজসেবী হতে বাধ্য করি। জনগনের জন্য ওইটুকু না করতে পারলে আমরাই বা কেন তাকে দূর্নীতির সুযোগ দেব? ব্রাত্যরা ভোট পেলে জনগন ব্রাত্য হয়ে যায়।

০৯০-Overthinking

Oracle Databaseএর System Global Area (SGA) সম্পর্কে ধারণা থাকলে মস্তিষ্কের গঠন বুঝতে সুবিধা হবে। আপনি যে কাজ আগে করেছেন বা বহুবার করেছেন, তার জন্য মাথা ঘামাতে হয় না। সেই তথ্য মস্তিষ্কের তথ্য-ভান্ডার থেকে সহজেই তুলে এনে সমাধা করে। যেমন গাড়ি চালানো, গ্যাস জ্বালানো থেকে রান্না, যাতায়াত ইত্যাদি। অজ্ঞাত সমস্যায় যুক্তির প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় বিরল। যে কাজ heuristic প্রক্রিয়ায় হয়, সেখানে Brain storming আসলে Overthinking।

এত দূর্নীতি করে শাসক দলের নেতারা রাতে ঘুমোয় কী করে? আসলে আপনি দূর্নীতিকে অন্য চোখে দেখেন, ওরা অধিকার হিসাবে দেখে। এলাকায় কেউ বাড়ি বানালে কাউন্সিলার ডাঃ স্কোয়ার-ফুট সেন প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় পৌঁছে যান। যে গরু পাচার করে, সে নিচুপট্টিতে হিস্যা পৌঁছে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোয়। আবার নিচুপট্টির মন্ডলবাবু উঁচুপট্টির শান্তিনিকেতনে বারো-আনা সেলামী দিয়ে নিশ্চিন্তে পুলিশের মাথায় বোম মারতে বলে। উঁচুপট্টি দিল্লীর মসনদে পেটি পৌঁছে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন সাধারণ প্রক্রিয়ায়।

এই সব কাজের জন্য Overthinkingএর প্রয়োজন নেই। আরো বেশী অর্থের প্রয়োজন হলে জমিদার খাজনা বৃদ্ধি করতেন। এখন আরো বেশী বালি, কয়লা, গরু পাচার করলে সমস্যা মিটে যাবে। চাকরি আরো দুর্মূল্য হবে। বাজারে পটল-মূলোর দাম বাড়লে মধ্যবিত্ত Overthinkingএর কবলে পড়ে যায়। প্রতিবাদ করলে পুলিশ এসে হাজতে ভরে দেবে, তারপর চোদ্দ বছর আদালতে চক্কর। Overthinking আপনাকে কিছু করতে দেবে না। পার্থ, অনুব্রতকে দেখুন, জেলে সরু চালের ভাত, মাটন খাচ্ছেন।

আসলে heuristic ভাবনা আর Brain storming কোনটা কার্যকরী এই যুগপৎ সিদ্ধান্তহীনতা থেকে Overthinkingএর প্রশ্রয়। লক্ষ্মী-ভান্ডারের লাইনে নিয়োগ দূর্নীতি নিয়ে ভাষণ দেবার মত জগাখিচুরি। অনেকের mood খুব swing করে, ফলে heuristic ভাবনার তারতম্য হয়। সেখানেই মুশকিল। নইলে heuristic ভাবনা সর্বদা ভুল নয়। বেশী heuristic ভাবনা Brain storming বন্ধ করে দেয়। Simple Logicএ আলোচিত হয়েছে। সমাধানের যোগ্য পথ ভাবুন, Overthinking এড়িয়ে যুক্তি দিয়ে ভাবুন।