০৯৪-Illusion of Skill

মাননীয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বহু চর্চিত কেন? অন্যান্য বিচারপতিদের চেয়ে কি আইন বেশী বোঝেন? অরুনাভ ঘোষের ধারণা তিনি আইন জানেন না। উত্তরটা সেখানেই আছে, ব্যতিক্রমী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি খুব শিক্ষিত? শিক্ষিত মানুষের প্রথম পরিচয় তিনি আত্মপ্রচারক নন। তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী। সুতরাং সর্বোচ্চ Skill যে সাফল্যের একমাত্র চাবিকাঠি তা নয়, আবার অনেকের Skill প্রশ্নাতীত হয়েও পাদপ্রদীপের আলোয় আসেননি। Skill সংক্রান্ত এই ধারণাই Illusion of Skill।

জ্ঞানের নিরিখে যদি Skill বিচার করেন, তাহলে নরেন মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রাহুল গান্ধীরা ভারতের মত দেশেও নিতান্ত মধ্য মেধার। আপনার হাতে বৈঠা আছে কিনা বা কতটা সাবলীল, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন নৌকাটা আপনার জুটেছে কিনা। বলতে পারেন, সেই নৌকা দখল নিতে তাঁরা Skill প্রদর্শন করেছেন, যে Skill প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অচল। ফলে দেশ তথা রাজ্য অসহায়ের মত যখন ডুবছে স্তাবকরা বেদম ঢাক পেটাচ্ছে। বেহালা বাদক নিরো যতটা সম্রাট ছিলেন, ততটা শাসক ছিলেন না।

কিছু পেশা আছে যেখানে পেশাগত Skill অপরিহার্য, যেমন পাইলট, ডাক্তার ইত্যাদি। যে রাজ্যে বিনা Skillএ শিক্ষক নিয়োগ হয় সেখানে Illusion of Skill থাকা উচিৎ নয়। পেশাদাররা ঊনিশবিশ ফারাকে কেউ পসার জমান কেউ তেমনটা নন। বিভিন্ন নামী কোম্পানির CEOদের স্টার্টআপ কোম্পানি বিপুল ব্যবসা করে বিনিয়োগের পথ খুলে দিয়েছে। সেখানে ভাগ্য ও পরিস্হিতির সহায়তাও ছিল। তাঁদের কেউ সফল কোম্পানির শেয়ার বিক্রী করে দিয়ে দশ বছর বাদে নতুন সেই মাপের সাফল্য দেখাননি।

ফলতঃ অমূক নেতা দিন বদল করে দেবেন, তেমন Illusion of Skill না রাখাই ভাল। নরেন মোদী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পালে হাওয়া না পেলে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারতেন না। জনগনের সামগ্রিক প্রতিবাদে সেই ঝড় ওঠে, যে ঝড়ে সিংহাসনের রঙ বদলে যায়। আপনার যন্ত্রের বাক্সে সব হাতিয়ার না থাকলে কেবল Illusion of Skill দিয়ে বাজিমাৎ করা যাবে না। বামপন্হীরা যেহেতু নেতা কেন্দ্রীক নয়, নীতি কেন্দ্রীক তাই বামপন্হায় Illusion of Skillএর সম্ভাবনা কম। বাকিরা Illusion of Skillএ ভুল করে।

০৯৫-Feature Positive Effect

১১০, ২৩৯, ৩৫৮, ৪৭৭, ৫৯৫- সংখ্যাগুলির সাযুজ্য কোথায়? বলা মুশকিল। কোথাও ৬ নেই। যা নেই তা দেখা মুশকিল। যা আছে মানুষ তাই দেখে, একে বলে Feature Positive Effect। ধূমপান ক্যান্সারের কারণ- বিজ্ঞাপনে লেখা হয়, কিন্তু ধূমপান না করলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম বলা হয় না। Why does something and not nothing exists? আমরা বলি, মুখ্যমন্ত্রী ঢাক, কাঁসর, ধামসা, মাদল বাজান। বলি না, আফ্রিকার দরবুকা বাজান না। মানে দরবুকা বাজাতে দেখিনি, দরবুকা চিনি না।

সততা বলে কোন শব্দ যদি তৃণমূলের থাকে তাহলে তা পুরানো বিজ্ঞাপনে। তৃণমূলের সততা শব্দটার উৎপত্তি ৩৪বছরের শাসন। পার্থ দে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, জীর্ণ গৃহে থাকেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন, জেলে থাকেন। যা নেই, তবু জনমানসে প্রভাব আছে তা তুলে ধরতে Feature Positive Effect ব্যবহার। আপনার যে গুণগুলি নেই তা প্রেমিকা বলে কী করে? Feature Positive Effectএ সে এই গুণগুলো বিভিন্ন আলাদা ব্যক্তির মধ্যে দেখেছে। যখন প্রেম করে তার কাছে গুণের প্যাকেজ প্রত্যাশিত।

বাঙালীর রবীন্দ্রনাথ না থাকলে কী হত? বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অভিমত দেবেন। যিনি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সবচেয়ে কম জানেন, তিনি সঠিক উত্তর দিলেন, পঁচিশে বৈশাখ হত না। আমাদের ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত থাকত। হয়ত বাংলা ভাষার স্বাদ গন্ধ বদলে যেত। নোবেল পুরষ্কার বলে কিছু না থাকলে কি অ্যানি আর্নাক্স সাহিত্য রচনা করতেন না? আসলে যা আছে তা নিয়ে Feature Positive Effectএ ভুগি। তৃণমূলের দূর্নীতি আছে বলেই বাম আমলের তুলনামূলক স্বচ্ছতার কথা হয়।

অনেক কোম্পানির খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান প্রচুর থাকে। তখন বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেলের তালিকা বড় করে দিয়ে ক্ষতিকর উপাদান উহ্য রাখে। যা নেই সবার নজর এড়িয়ে যায়। মোদী কখনও বলেন না, ক্ষুধা তালিকায় আমরা বিশ্বে নিকৃষ্টতম। খাদ্য নেই। তিনি বলেন বিকাশ হচ্ছে। নাবালিকার বিবাহে ঝাড়খন্ডের পরে বাংলা। মমতা কন্যাশ্রীতে নিজের ছবি লাগান। আমরা ছবি দেখি, অসহায় নাবালিকার কান্না দেখতে পাই না। Feature Positive Effect মাথায় রেখে বামপন্হীরা পথে থাকুন। জয় আসবেই।

০৯৬-Cherry Picking

তিরের চারপাশে Bull’s eye এঁকে দিলেন। সবাই জানল আপনি লক্ষ্যভেদ করেছেন। দূর্নীতির জয়ঢাক যত বাড়ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢাক, করতাল, কাঁসর, ধামসা, মাদল ততই বাড়ছে। কার্নিভালের পর বিজয়া উৎসবের আয়োজন। থামা যাবে না, তাহলেই পার্থ-মাণিক-ব্রাত্যদের দিকে জনগনের চোখ পড়ে যাবে। সাফল্যের মিথ্যা খতিয়ান তুলে আঁধার ঢাকতে হবে। জনগনের মনস্তত্ব বুঝেই মুখ্যমন্ত্রী এই কাজ করছেন, এর নাম Cherry Picking। মোদী-মমতা নয়, সর্বত্র Cherry Pickingএ শিকার আমরা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দলের কর্মচারীদের বলেন, জনগনকে সাফল্যের রামধনু দেখাতে। কন্যাশ্রী থেকে লক্ষ্মী ভান্ডার। বলেন না, কেন বাবার একটা সাইকেল কিনে দেবার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে না, বা স্ত্রীকে কেউ মাসিক ৫০০টাকা হাত খরচ কেন স্বামী দিতে পারবেন না? হোটেলের বিজ্ঞাপনে সব চেয়ে আকর্ষণীয় অংশের সাজিয়ে গুছিয়ে ছবি দেয়। Cherry Pickingএ আকৃষ্ট হয়ে রিসেপশনে গিয়ে আপনি বুঝবেন, আর পাঁচটা হোটেলের মত থোড়-বড়ি-খাড়া। বাড়ি-গাড়ি বিক্রীতেও Cherry Picking।

চাঁদের আলোর দিকটাই আমরা জানি। অমাবস্যায় বলি না, চাঁদের আঁধার দিকটা দেখা যাচ্ছে। Cherry Pickingএর ক্ষেত্র এই দুর্বলতাতেই বিস্তৃত হয়। কোম্পানিগুলি তাদের সাফল্য, গুণমানের দিকটা বড় করে দেখায়। ব্যর্থতা, ত্রুটি আড়াল করে প্রতারিত করে। ব্যক্তিগত সম্পর্কে Cherry Picking গুরুত্বপূর্ণ প্রতারণায় সহায়ক। বহু প্রেম ঘটিত বিবাহ Cherry Pickingএর ফলে ব্যর্থ হয়। কার্পেটের নিচে লুকানো ধূলো সমেত সামগ্রিক চিত্র। তৃণমূলী মন্ত্রী বলেছিল, চাকরি পেতে হলে তৃণমূলের ক্রীতদাস হতে হবে।

কেবল তৃণমূল হলে চাকরি হবে, সেটা Cherry Picking তো বটেই সাথে অসাংবিধানিক। যখন প্রকাশ্য হল, তখন মুখ্যমন্ত্রী কার্নিভালের নামে ঢাক পেটাতে শুরু করলেন। আগে বছরে কয়েকটা দিন উৎসব হত, এখন উৎসবের মাঝে ফাঁকফোকরে কাজ হয়। টাকার দাম হুহু করে কমলেই মোদী উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরে মিডিয়া নিয়ে গিয়ে হত্যা দেন। Cherry Picking না বুঝলে আমরা প্রতিদিন এই শাসকদের ব্যর্থতা আড়ালের ঢাক শুনব। ঢাকের শব্দ ছাপিয়ে চিৎকার করুন- চোর ধরো, জেল ভরো।