০১৯- Regression to Mean

জীবনের ওঠাপড়া যেন গায়ে না লাগে। এক বিষাদগ্রস্ত প্রেমিকা তার বান্ধবীর কাছে প্রেমিকের সম্পর্কে অনেক নালিশ করল। বান্ধবী গম্ভীর হয়ে উপদেশ দিল, ওকে একদম পাত্তা দিস না। প্রয়োজনে অন্য সম্পর্কের কথাও ভাবতে পারিস। প্রেমিক উপদেশের কথা জানে না। দীর্ঘ কর্ম ব্যস্ততা সরিয়ে একদিন প্রেমিকাকে নিয়ে বেড়াতে যাবার জন্য রাজী করাল। সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক। সব কিছু স্হিতাবস্হায় ফিরতে চায়, Regression to Mean। বান্ধবী পেশী ফুলিয়ে বলে, আমার প্রেসক্রিপশন ১০০% ধন্বন্তরী।

পেশীর ব্যথায় ফিজিওথেরাপিস্টের ভূমিকার চেয়ে বেশী Regression to Mean। বানভাসি বর্ষণের পর যেমন রোদ উঠবে। খরার পরেও বৃষ্টি থাকে। শেয়ার বাজারের ওঠা পড়া স্বাভাবিক। আপনার সাফল্য ব্যর্থতার মধ্যেও Regression to Mean থাকে। অলিম্পিকে মেডেল পেয়ে যাবেন না, আবার সহজ অঙ্কে আজিগুবি উত্তরও দেবেন না। কর্পোরেট হাউস কর্মীর মোটিভেশনে খরচ করে, সুফল ৩%র বেশী নয়। তৃণমূলের মুখ বদল করে স্হায়ী সুরাহা অসম্ভব। Regression to Meanএ স্হিতাবস্হায় ফিরবে।

অমূক তমূককে দল, সরকার থেকে বহিষ্কার করা হল। কিন্তু সিস্টেম পরিবর্তন হল না। সারদার সময়ে মিস্টার দু-নম্বরী সরে যেতে শিক্ষায় নিয়োগে অন্য দু-নম্বরীর আগমন। এবার সেই দু-নম্বরীকে সরিয়ে যুবরাজকে দু-নম্বরী বানালে কয়লা-গরু-বালি পাচারের গল্প। যে দলীয় চরিত্রের স্বাভাবিক প্রবণতা চুরি করা তাকে যত প্রশ্রয় দেবেন, তত তার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। সরকার সরিয়ে জীবাণুমুক্ত না করতে পারলে আবার সরকার Regression to Meanএ চুরিতে ফিরবে। জীবাণুরাই পরের সরকারে যাবে।

ব্যাপারটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মত। ওষুধ খেলে সাত দিন, নয়ত এক সপ্তাহ। মাঝখানে ডাক্তারের রুজি, ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রী। তবু মানুষ দিশাহারা হয়ে যায়, সেখানেই ফায়দা তোলে ব্যারিষ্টার, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকরা। চোরকে সমবেত ভাবে চোর বলার ইচ্ছা মানুষের চিরকালের, ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছিল। Regression to Meanএ অবদমিত ইচ্ছা স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরছে। তারজন্য ইতিহাসে কোন স্বৈরাচারী দীর্ঘস্হায়ী হয়নি। রাতের শেষে ভোর।

০২০-Outcome Bias

কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করলে লাভ হবে? মিলিয়ান ডলার প্রশ্ন। ৫১২টি বাঁদরকে কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে দিলেন। অর্ধেক লাভ করল, অর্ধেক পারল না। যারা পারল না তাদের বাদ দিয়ে দিলেন। এবার ২৫৬টি বাঁদরকে বসালেন। শেষ অবধি ১টি বাঁদর ১০বার লাগাতার লাভ করবে। এটা সম্ভাবনার খেলা। তাহলে ধরতে হবে বাকি ৫১১টি বাঁদরের মধ্যে ওই বাঁদরটি সবচেয়ে বুদ্ধিমান? এবার মিডিয়ার কভার শুরু হবে, যেহেতু বাঁদরটি খাঁচার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে বসে বসে, তাই দখিনা বাতাসে জীবের বুদ্ধি খোলে।

একে বলে Outcome Bias। ফলাফল দিয়ে সর্বদা গুণমান বিচার করা উচিৎ নয়। অমূকে ১২০টি বই লিখে ফেলেছেন। বাংলায় আর কোন লেখক এত লিখতে পারেননি। তাই তাঁকে নিরলস সাহিত্য সেবার জন্য অ্যাকাডেমী পুরষ্কারে ভূষিত করা হল। সূর্য যে পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে তা প্রমাণ করতে K C Pal জীবন কাটিয়ে দিলেন। তাহলে Outcome Bias অনুযায়ী তাঁকে বিজ্ঞানের পুরষ্কার দেওয়া উচিৎ। প্রকৃত পক্ষে নিরলস প্রয়াসটা কখনও সাহিত্যের গুণমান নির্ধারণ করে না। নিরলস প্রয়াস তো থাকতেই হয়।

প্রতিটি সাফল্য বা ব্যর্থতার একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থাকে। পঃ বঃ সরকারের সিলেবাস কমিটির মত নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আলো ফেলতে গেলে নাক কাটা যায়। সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের পেছেন যেমন চিটফান্ডের বদান্যতা, মিডিয়ার সহায়তা ছিল, তেমনই অতিবাম, SUCI সহ সব দক্ষিণ পন্হী দলের অবদান অনস্বীকার্য। আপনি বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথা বললেন। বর্তমানে দূর্নীতির দায়ে তিনি জেলবন্দী। Outcome Bias বলছে দূর্নীতিগ্রস্তদের আন্দোলনের ইতিহাস ছিল ওটা।

নির্বাচনের ফল দেখে শাসক দলের বিপুল জনসমর্থনকে ব্যাখ্যা করাটাও Outcome Biasএর উদাহরণ। কিংবা মনে করুন অনুব্রত মন্ডলদের হুঙ্কার। পুলিশ কাঁপছে দেখে বিরাট বীর আখ্যা দিলে, উডবার্নে পালাবার ব্যাখ্যাটাও দিতে হবে। পেছনে পুলিশ প্রশাসন মোতায়েন থাকলে আপনিও কেউকেটা হয়ে যাবেন, তবে স্বনিয়ন্ত্রণ আপনার ক্ষমতায়। সীমা লঙ্ঘন করলে অনুব্রত হয়ে যেতে হয়। Outcome Bias গুনাগুণ নিরূপনে ভুল করতে পারে। সাফল্য ও ব্যর্থতার পেছনে সব উপাদান খুঁটিয়ে বিচার কার উচিৎ।

০২১-Paradox of Choice

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- আতি বড় ঘরণী না পায় ঘর, অতি বড় সুন্দরী না পায় বর। এই প্রবাদের পেছনে যে Paradox of Choice আছে, বুঝিনি। প্রশ্ন পত্রে উত্তরের option যত বেশী হবে, সাধারণ ছাত্রদের ভুলের সম্ভাবনা তত বেশী। বেছে নেবার সুযোগ যত বেশী, তত ভুল ও আফশোসে পরিণতি। একে বলে paralysis of decision; ছোটবেলায় যাকে যে পেশায় দেখতাম, সেই পেশাতেই থাকতেন। এখন অমূক কোম্পানি থেকে তমূক কোম্পানি করেও সুরাহা হচ্ছে না। জনগন বেশী পরিবর্তনশীল।

বিংশ শতাব্দীতে রাজনীতির দুটো ধারা ছিল। হয় দক্ষিণপন্হী কংগ্রেস নয়ত বামপন্হী সিপিএম। বাম রাজনীতিতে ভাঙনের ফায়দা তুলেছে তৎকালীন কংগ্রেস। দক্ষিণপন্হীদের মধ্যে এল তৃণমূল, বিজেপি। মাও, SUCI, PDS কংগ্রেস, তৃণমূলের সাথে একাকার হয়ে Paradox of Choice সৃষ্টি করল। মমতা ক্ষমতায় এলেন, কিন্তু বাকিরা ক্ষমতার বৃত্তে পা রাখতে পারল না। দক্ষিণপন্হী তৃণমূলের প্রকৃত বিরোধী হওয়া উচিৎ বামপন্হীদের। কিন্তু বিজেপিকে শিখন্ডী দাঁড় করিয়ে মিডিয়া Paradox of Choice আনল।

ছোটবেলায় বড়রা প্রশ্ন করতেন, বড় হয়ে কী হতে চাও? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল ছিল সাধারণ উত্তর। এখন পেশার রকম সকম যত বেড়েছে, বেকার সংখ্যাও তত বাড়ছে। আপনি কোন খবরে মনোনিবেশ করবেন, সেখানেও বাহান্ন পদ। চিটফান্ড, নারদ, কয়লা-বালি-গরু পাচার থেকে শিক্ষায় নিয়োগে দূর্নীতি, অপার সম্পদ, জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি, জিএসটি, সিএএ, রামমন্দির, বিধায়ক বিক্রীর হাটের চক্করে আপনার কিছুই জানা হয় না। Paradox of Choice মূল্যহীন টিভি সিরিয়ালে নিয়ে যায়।

আপনার হাতে বেছে নেবার অনেক সম্ভাবনা আছে মানেই কিন্তু আপনার ক্ষমতা বৃদ্ধি নয়। কোন মোবাইলটা কিনলে আপনার উপযোগী হবে, সেটা বোঝার জন্যও বিশেষজ্ঞ হতে হবে। ফলে যা চকচক করে সেটাই সুন্দর। বড় হয়ে কী হতে চাও? ডেলিভারি বয়, নাকি বেকার, নাকি ক্লাবে বসে চুল্লুভাতার প্রাপক? Paradox of Choiceএ সব আছে, কিন্তু সম্ভাব্য সম্ভাবনাকে লুকিয়ে গতানুগতিক উত্তর। আপনার যা উপযোগী, সেটাই আপনার পৃথিবী। বৃত্তটা সম্পর্কে জানুন, তাহলেই শান্তি পেতে পারেন।