০২২-Liking Bias

সেল্সম্যানকে পছন্দ করলে বিক্রী বাড়ে। এই Liking Biasএর জন্য বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়ে (ক) আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, (খ) উপভোক্তার স্বগোত্রীয় মনে হওয়া এবং (গ) উপভোক্তার পছন্দ হওয়াকে মাথায় রাখে। অনেক সময়ে আকর্ষণীয় মডেলকে সাধারণ গৃহবধূর রূপে পরিবেশন করে যদি ক্রেতারা মহিলা হন। তাহলে স্বগোত্রীয় মনে হতে সুবিধা হয়। দুজন ব্যক্তি বিপরীত ধর্মী কথা বললেও যাঁকে স্বগোত্রীয় ও আকর্ষণীয় মনে হয়, তাঁর কথা ভুল হলেও প্রাধাণ্য পায়। একে বলা হয় Liking Bias।

রাজনীতিতে Liking Bias অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। খেয়াল করবেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের যে অংশে যান, সেখানকার পোষাক পরেন, টেলিপ্রম্পটার দেখে সেখানকার বুলি আওড়াবার চেষ্টা করেন। মমতা আদিবাসী মহিলাদের সাথে নাচতে শুরু করেন। Liking Bias সর্বদা সঠিক নির্ণায়ক হয় না। বুদ্ধদেবের মার্কেজ শোনার চেয়ে অশিক্ষিত জনতা মমতার কোমর দুলিয়ে ‘খেলা হবে’ শুনতে বেশী আগ্রহী। সবচেয়ে মুশকিলের বিষয় দক্ষিণপন্হীদের নীতিহীন গিরগিটি স্টাইল বামপন্হার নীতিতে গ্রহণীয় নয়।

সারা দিনের জীবন যন্ত্রণার শেষে মানুষ তাঁর দুঃখের ইতিকথাও শুনতে আগ্রহী নয়। তখন টেলিভিসানে বুদ্ধিজীবীদের ক্যাক্যাছিঃছিঃর সাথে নেত্য চটুল রসাত্মক হয়। কিংবা মনে করুন, বামপন্হী তরুণ নেতা অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে ভাল লাগবে না। বরঞ্চ তৃণমূলের যুবনেতা হুইস্কির বোতল গলায় ঢেলে- মানিকে মাগে হিথের সাথে ত্রিভঙ্গ নৃত্য পাড়ার যুববৃন্দকে Liking Biasএর ফলে আকর্ষণ করবে অনেক বেশী। ক্রমশঃ এই সংস্কৃতি সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে কলুষতায় আবিষ্ট করে দেশ।

বুদ্ধদেববাবুর রবীন্দ্রনাথ সাধনার। আম-বাঙালীর দূর থেকে প্রণামের বিষয় ছিল। মমতা গীতাঞ্জলির মাথায় কথাঞ্জলি বসিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ঘাড় ধরে পথে নামিয়েছেন, অন্ততঃ ট্রাফিক সিগনালে। ফলে যারা রবীন্দ্রনাথকে ছুঁতে পারত না, তারা রবীন্দ্রনাথের ঘাড়ে চেপে বসেছে। Liking Biasটা মমতার দিকে হেলে গেল। পরিত্রাণের একমাত্র উপায়, আপনার সংস্কৃতি, সাধনায় অবিচল থেকে বারবার উপভোক্তার দুয়ারে যাওয়া। বারবার আঘাত করলে কিন্তু সফল হওয়া যায়, হাল ছেড়ো না বন্ধু।

০২৩-Endowment Effect

প্রতিটি মানুষ তার অধিকৃত এলাকায় স্বাচ্ছন্দ্য। বাড়ির উঠোনের গাছে পেয়ারা সুস্বাদু বা আমাদের লালু কামড়ায় না। ৭৫বছর পরেও বুঝি দেশভাগ কি হিরোসিমা-নাগাসাকির চেয়ে কম যন্ত্রণাদায়ক ছিল? প্রতিটি জিনিসের সাথে একটা মানসিক সম্পর্ক স্হাপিত হয় বলেই প্রায় প্রতি বাড়িতে জঞ্জালও বাড়ে। কারণ মালিকের কাছে সেই জঞ্জালের ইতিহাসের মূল্য আছে। তাই Endowment Effect প্রকৃত মূল্য নির্ধারণের বাধক। গাড়ি বিক্রী করার সময়ে যে দাম চাই, কেনার সময়ে কম। ওটা অধিকারের মূল্য।

অনেকেই বলেন, আমার বাবা এই পার্টিটা করেছেন, কিংবা আমাদের জমিদারী থেকে যা আয় হত তা দিয়ে কলকাতার অর্ধেক কিনে ফেলা যেত। “আমার”- এই বোধটা value add করে। অনেকেই মনে করেন, যে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা পরিবর্তন চাইয়ের হোর্ডিং-এ কাটা মুন্ডু ঝুলিয়েছিলেন, আজ পার্থ-কেষ্টার কীর্তির পর চুপ করে আছেন কেন? ভেবে দেখুন, Endowment Effect। ধারণা বাম-বিরোধী আন্দোলন তাঁদের আন্দোলন ছিল। তাঁদের অনেকে যে ব্যবহৃত হয়েছিলেন, এখনও ভাবতে নারাজ।

আপনি যদি নিরপেক্ষ হন, তাহলে শিক্ষায় নিয়োগে দূর্নীতিকারী পার্থ ঘৃণ্য অপরাধী, কিংবা গরু-পাচারে কেষ্ট মন্ডল একজন মাফিয়া ডন। কিন্তু তথাকথিত সুশীলদের চোখে বাম-বিরোধী মমতার শাসনের সার্থকতার পিলার পার্থ-কেষ্ট। পার্থ-কেষ্টর পতনে তাঁরা দেশের ভালর কথা ভাবেন না, ভাবেন তাঁদের অতীত পথে নামার কথা। Endowment Effect তাই প্রকৃত মূল্য নির্ণয়ের চুড়ান্ত বাধক। এঁরা জানেন, ইতিহাস কষ্টি-পাথরে বিচারের সময়ে ওঁদের কেষ্ট-পার্থর পাল্লায় ফেলে রসাতলে নিক্ষেপ করবেই।

সুশীলরা যতটা Endowment Effectএ ভোগে, রাজনীতিবিদরা ততটা নয়। কারণ তাঁরা লাভ-ক্ষতির হিসাবে জীবনটা দেখেন। জয়প্রকাশ তৃণমূলের লাথি খেয়ে তৃণমূলে গেছেন, আবার বিজেপির লাথি খেয়ে বিজেপিতে গেলে অবাক হবেন না। তাঁর চলনের জন্য পা নয়, মন নয়, প্রয়োজন লাথি। সুশীলরা লাথির বৃত্তের বাইরে দূরত্বে থাকেন বলে তাঁদের চলনে Endowment Effectএর মনন কাজ করে। তবে যে কোন বস্তু, ঘটনা, ভূত, ভবিষ্যতের যুক্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য Endowment Effect মুক্ত হওয়া ভাল।

০২৪-Coincidence

যেদিন আপনার তাড়া থাকে, সেদিন বাস দেরী করে আসে। একটু খতিয়ে দেখবেন, পরিবহন ব্যবস্হা নিত্য দিনের মত ভোগায়। আপনার তাড়া থাকলে উদ্বেগ বিচলিত করে বেশী বলে একে Coincidence মনে হয়। আপনার প্রাক্তনকে মনে পড়ছে, আর ঠিক তখন সে ফোন করল। কি Coincidence! আদপে আপনি বহু বার তাঁর কথা ভেবেছেন। বরঞ্চ ভাবনার মাঝে ফুরসৎ ছিল না। বারবার ফোন আসেনি। যেবার এল আপনার Coincidenceএর কথা মনে এল। কদাপি আকাশেও সব গ্রহ সরল রেখায় আসে।

আষাঢ়ের প্রথম দিন, রথের দিন বৃষ্টি হওয়াটা আমরা Coincidenceএর প্রবাদ করে ফেলেছি। উপোষ করলে সেদিন বেশী খিদে পাওয়া। অথচ এমন অনেক Coincidence আছে যা ইতিহাস বদলে ফেলতে পারে। বীরভূমের বালি, কয়লা, পাথর পাচারের লেনদেনের চৌরাস্তা ছিল সায়গল হোসেন। গত ২৮শে এপ্রিল অনুদেহরক্ষী সায়গলের কনভয় ডাম্পার পিষে দিল। সায়গল একটু আগে গাড়ি বদল করেছেন। এটাকে Coincidence বলতে পারেন, কিন্তু এমন হয়। ৫ বছরের কন্যা, বন্ধু মাধব কৈবর্তের মৃত্যু হল।

সায়গলকে সরিয়ে দিতে পারলে পাচারের মামলা স্পষ্ট হত না। কিন্তু তৃণমূলের অভিজ্ঞ খুনীরা খুন করতে ব্যর্থ হল। অনেক সময়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের হাতে অপারেশন খারাপ হয়ে যায়। Probability factor কাজ করে। তৃণমূলের দেশপ্রেমিকদের জন্য এই Coincidence দুর্ভাগ্যের হলেও জনগনের ক্ষেত্রে শুভ। কিংবা যতটুকু তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে, তাকেও Coincidence বলতে পারেন। নরেন মোদীর বারবার প্রতারণায় বিক্ষুব্ধ বঙ্গবিজেপির প্রতিবাদ। প্রত্যেক ভুল Probability Factorএ ব্যাখ্যা হয় না।

সুতরাং Coincidence, Probability Factorএর একটা আশাতীত অংশ। যেমন তৃণমূল খুন করতে ভুলচুক করে ফেলবে, বা নরেন মোদী দূর্নীতির তদন্ত করবেন, অথবা অর্পিতার ফ্ল্যাটের হালহকিকৎ দলের কেউ ফাঁস করে দেবে কিংবা আদালত পাঁচ বছরের আয় বৃদ্ধিতে EDকে যুক্ত করবে এসব মানুষ আশা করে না। অথচ দক্ষিণপন্হী রাজনীতিতে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এমনটাই তো হওয়া উচিৎ অথচ আমরা ভাবছি Coincidence। Statisticsএর কষ্টি পাথরে বিচার করলে কোনটাই Coincidence নয়।