০২৫-Groupthink

Groupthink একটি প্রায় ইউটোপিয়া। হঠাৎ এক বেয়াদপ বন্ধুর মাথায় এল, স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমায় যাবে। কালীপটকার চেনে আগুন লাগার মত সবাই ফেটে উঠল। ধরা পড়তেই মুখ কাঁচুমাচু, অমূকে উস্কেছিল, তাই। এটা Groupthink? বাচ্চাদের কথা বাদ দিন। ধেড়েদের কথা বলুন। ব্রাত্য পার্থর দিকে আঙুল তুলতে ববি হাকিম বললেন, ক্যাবিনেটের যৌথ দায়িত্ব থাকে। অর্থাৎ সব সিদ্ধান্ত Groupthinkর ফসল। পার্থ বামাল ধরা পড়তে সেই হেকিম চোখ উল্টে বলে দিলেন, আমরা পার্থর ব্যাপারে লজ্জিত।

সংগঠনে একজন সম্পাদক থাকেন। যাঁর দায়িত্ব Groupthinkর সিদ্ধান্তকে কার্যকারী করা। সিদ্বান্তকে প্রভাবিত করা নয়। জ্যোতি বসু Groupthinkকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্বের মসনদ ত্যাগ করেছেন। এরকম উদাহরণ বিরল। যদি Groupthinkর অবসর থাকে, সেই দলে কোন প্রাইভেট মাতব্বর বুদ্ধি বিক্রী করতে হয় না। বিভিন্ন দক্ষিণপন্হী দল বেসরকারী কোম্পানি নিয়োগ করে, তাদের হয়ে ভেবে দিতে। কারণ দলে ভাবনার পরিসর বা অভ্যাস নেই। মূলতঃ কর্মীরা দলে কর্মচারী বা ক্রীতদাস স্বরূপ।

এরা সহজে বলতে পারে, সব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সুপ্রিমো। কারণ বাকি ক্রীতদাসের কোন বাজার মূল্য নেই। ইলামবাজারের গরুর হাটে যেমন গরু বিক্রী হয়, ভোটের পূর্বে তেমন বিক্রী হতে দেখেছেন। ওরা বলে, দলের সুপ্রীমোর অনুপ্রেরণায় সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সেনাপতিত্বে- ইত্যাদি। আসলে Groupthinkর অভাবে দল গরুদের ভাবনার কোন গুরুত্ব দেয় না, কিংবা দল জানে না এই ধান্দাবাজরা নিজস্ব ধান্দাবাজী ছাড়া আদৌ কিছু ভাবতে পারে। এরা শুনে আসে, তারপর আওড়ায়।

বিজেপিতে হিন্দুত্বের চেয়ে বেশী কদর মোদীত্বে। যে দলে সমর্থকদের ভাবনা শক্তি যত কম, তত ছবির প্রয়োজন বেশী। সেই ছবির নিচে কখনও লিখে দেয় বিনাশ-পুরুষ বা অসততার প্রতীক। Groupthink সামগ্রিক ভাল-মন্দের সম্পূর্ণ রূপরেখা সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সদস্যদের সামনে তুলে ধরে। Groupthink সর্বদাই সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলেও তা গণতান্ত্রিক। আলোচনায় যদি বক্তা একজন ও শ্রোতা সবাই হয়, তাহলে তা কখনও Groupthink নয়, বা গণতান্ত্রিকও নয়। পারিবারিক দলগুলো তাই গণতান্ত্রিক নয়।  

০২৬-Neglect of Probability

সাপ্তাহিক লটারীর বিজ্ঞাপনে পুরষ্কারের মূল্য এক কোটি টাকা শুনে আপনার জিভে জল। দশ হাজারী বা দশ লাখী পুরষ্কারের টিকিটের দিকে ফিরেও তাকালেন না। এক কোটি টাকা! আপনার চোখের তারা জ্বলছে। ভেবে দেখলেন না, ওই টিকিট কত ক্রেতার মধ্যে এক জন পাবে। মানুষের এই তাৎক্ষণিক সিদ্বান্তকে বলে Neglect of Probability। অথচ দুর্ঘটনা হতে পারে বলে কখনও বিমানযাত্রা বাতিল করেছেন? Probabilityর হিসাবে তা নগন্য। বাড়তি কিছু পেতে Neglect of Probabilityর প্রয়োজন।

এক কোটি টাকার পুরষ্কার কে পায়? তাদের আপনি চেনেন না, কিন্তু ছবি দেখেছেন খবরের কাগজে। ওদের আগোছালো কাঁচাপাকা দাড়ি, বিড়ি টানা বসে যাওয়া চোয়াল আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে। তাহলে আর দেরী কেন? পকেট থেকে একশ টাকা সুরুৎ করে বেরিয়ে গেল। রাম্মা হো হো হো- যখন কাগজে এক কোটি টাকার বিজয়ীর ছবি প্রকাশিত হল, তখন যেন চেনা চেনা লাগছে। আরে, এই লোকটাই তো বীরভূমের বেতাজ বাদশাহ অনুব্রত মন্ডল। আগের সপ্তাহে কৈবর্তের ছবি ছিল বটেক।

Neglect of Probabilityর ফলে আপনি অনেক কিছু দেখতে পাননি। খবরে শুনবেন, শেল-কোম্পানির ডিরেক্টার আসলে অমূক জালিয়াতের গাড়ির ড্রাইভার। থাকে বস্তীর এক কামরার ঘরে। বউ পাঁচ বাড়ির বাসন মাজে। তারা জানতেও পারে না, তাদের নাম ভাঙিয়ে জালিয়াত-চক্র কী করছে। আপনি কৈবর্ত পুরষ্কার পেয়েছে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, সেই কৈবর্তের পেট্রল পাম্প আছে, কিন্তু টাকার উৎস নাই। জালিয়াতের টাকা খাটছে। কালো টাকা সাদা করার জন্য একটা পুরষ্কারের দরকার।

Neglect of Probability খুব সাধারণ ব্যাধি। পার্থর বাড়িতে টাকার স্তূপ দেখা গেছে, তাই জনগনের মনে হচ্ছে পার্থ-অর্পিতা জুটি গরু-মাফিয়া কেষ্টর চেয়ে বড়, কারণ টাকার ছবিটা মানুষ চোখে দেখেনি। নরেন মোদীর ভাঙা বাংলায় বিরক্ত বাঙালী হুইলে চেয়ারে পা ভাঙা নাটকে মশগুল হয়ে Neglect of Probabilityর বিপদগুলো দেখেনি। মানুষ চোখের সামনে যা দেখে তার উপর বিচার করে বসে। মিডিয়া তাই আপনাকে কেবল ফুল দেখায়, যাতে ভুল করেন। দূর্নীতির ফুল উপরে দেবার কাস্তে দেখায় না।

০২৭-Scarcity Error

এক বৃদ্ধা বাজারে পোলট্রির ডিম বিক্রী করেন। পাশে রাখা আধ ডজন লাল কুসুমের দেশী ডিম। ক্রেতা সবার আগে ওই দিকে তাকায়, দাম শুনে আঁতকে ওঠে। বৃদ্ধা সহজ ভাবে বলেন, দিশীর দাম বেশী, সব বিক্রী হয়ে গেছে, এই কটাই বেঁচেছে। দ্রুত বিক্রী হয়ে যায়। আবার বৃদ্ধা ৬টি দেশী ডিম বার করে রাখেন। অনেক বেশী মূল্যে ক্রেতা কিনছে কেন? উত্তর, Scarcity Error। যা কম, তার দাম বেশী। সেখানে গুণমানের চেয়ে Scarcity (দুষ্প্রাপ্যতা) গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র তিন দিনের জন্য এই অফার চলছে।

চৈত্র সেলে কম দামে জিনিস পাওয়া যায়, কারণ দোকানদার অবিক্রীত মাল খালাস করতে চায়। এটা ধারণা। আসলে মানুষের Scarcity Error মাথায় রেখে সেলের জন্য ওই মানের পসরাই তৈরী হয়। এই ভুল মানুষ এত করে যে শপিং মলগুলো এটাকে একটা চিরস্হায়ী বিক্রী বাড়ানোর পন্হা ঠাহর করেছে। কোন সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্হিতি যদি সঙ্কটজনক হয়, তাহলে Scarcity Errorএ সুবিধাভোগী শ্রেণী টিঁকিয়ে রাখার উদ্যোগী হয়। যে কারণে দূর্নীতি চোখে দেখেও দুর্নীতিগ্রস্ত বেশী ভোট পেয়ে যায়।

এত দূর্নীতি প্রকাশ্যে আসার পরেও শাসক দলের প্রবক্তারা বুক ফুলিয়ে বলে, মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। কথাটা সত্যি। সেখানে বুঝতে হবে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাওয়া মানুষেরা সমবেত ভাবে দূর্নীতির পেছনে দাঁড়িয়েছে। Scarcity Errorএর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, সুযোগ হারালে আর পাওয়া যাবে না। ফলে যে দূর্নীতিগ্রস্ত সরকার সুযোগ দিতে পারে, যার ভোটকেন্দ্রে যাবার অনীহা থাকে, দূর্নীতিকে মদত দিতে সেও দৌড়ায়। তারজন্য শাসক দল ঠিক ভোটে যুৎসই শ্লোগান হাজির করে।

রাষ্ট্রীয় স্তরে অনেকে মনে করে, মোদী না থাকলে হিন্দু রাষ্ট্রের সম্ভাবনা থাকবে না। Scarcity Errorএ বাংলার মানুষ বাংলার মেয়েকে খোঁজে। প্রোমোটার বলে, আর মাত্র একটা ফ্ল্যাট বাকি আছে, কিংবা মেয়ের বাবা বলে, এই তো বিলেত থেকে পাত্রের মা যোগাযোগ করছেন, কিন্তু মেয়েকে অত দূরে পাঠাতে মন চাইছে না। মানুষ সব সময়ে ভাবে, এই সুযোগ হাতছাড়া হলেই সর্বশান্ত। তখন লাখ টাকা নিয়ে ছেলের চাকরির জন্য রাতের অন্ধকারে নেতার দুয়ারে কড়া নাড়ে। নেতার দুয়ারে দূর্নীতি পৌঁছায়।