০১০-Contrast Effect

ফেসবুকে নতুন এক ব্যক্তির সাথে পরিচয় হয়েছে। আপনি সম্পর্ক গড়তে আগ্রহী কিন্তু যাচাই করে নিতে চান। ভদ্রলোক এক রোস্তোরাঁয় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একা এগিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। ঠিক করলেন, সাথে এক বান্ধবীকে নিয়ে যাবেন। কে? আপনি এমন এক বান্ধবীকে নির্বাচন করবেন, যিনি গুণমানে আপনার চেয়ে খাটো। এটাই স্বাভাবিক। একে বলে Contrast Effect। আসলে ভাল-মন্দ, ছোট-বড় বলে কিছু হয়না, সবটাই আপেক্ষিক। আজ খুব গরম, ৩৮ডিগ্রী। কাল ছিল ৩৪ডিগ্রী, তাই।

মানুষ যদি দেখে, তারচেয়ে ক্ষমতাশালী বা শক্তিধর কেউ তার বৃত্তে অনুপ্রবেশ করেছে, হয় সে গুটিয়ে যায়, নয়ত আক্রমণাত্মক হয়। জীব জগতেও তা সত্যি। মানিয়ে নেওয়াটা একটা গুণ কিন্তু Contrast Effect একদম নেই বলা যাবে না। আগেকার দিনে রাজা-বাদশাহ সিংহাসনে বসেই সম্ভাব্য বংশজ প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিকেশ করে দিত। সিংহও পুরুষ শাবকদের হয় হত্যা করে নয়ত যূথ থেকে তাড়িয়ে দেয়। Contrast Effect নারীদের চেয়ে পুরুষদের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে বেশী, তবে ব্যতিক্রম ভয়ানক।

নরেন্দ্র মোদী ২০১৪সালে ক্ষমতায় আসবেন বুঝে লালকৃষ্ণ আদবানী থেকে মূরলী মনোহর যোশীদের মাঠের বাইরে রাখেন। এমনকি যশোবন্ত সিনহারাও যাযাবর জীবন কাটিয়ে বর্তমানে তৃণমূলে। নরেন্দ্র মোদীর চেয়ে বড় ইনিংস আছে এমন কাউকে তিনি রাখবেন না। মমতা তৃণমূল গঠন করার পর তাঁর মূল শত্রু ছিলেন সৌমেন, সুব্রত, প্রিয়, গণি থেকে প্রণব। এঁরাই ছিলেন বাম-বিরোধিতার প্রধান মুখ। নিজের জমি গড়ে তুলবার জন্য সৌমেন, সুব্রতকে বন্দী করেন, বাকিরা কালের নিয়মে হারিয়ে যান।

Contrast Effect বুঝলে মমতার আচরণের অনেক ব্যাখ্যা পাবেন। তৃণমূল সুপ্রিমোর ভারতে মূল শত্রু কংগ্রেস ও সনিয়া গান্ধী। কারণ তৃণমূলের চেয়ে কংগ্রেসের ইতিহাস ও ভারতে ব্যাপ্তি বেশী। ফলতঃ মূল চালিকা শক্তি মমতা পাবেন না। তাই তিনি বারবার কংগ্রেসকে হেনস্হা করতে ছাড়েন না। কিন্তু রাজনীতিতে অনভিজ্ঞা সনিয়া আজও মনস্তত্ব বুঝতে পারেননি। বাকি সব তৃণমূলের মত আঞ্চলিক দল। অর্থাৎ ক্ষেত্র বিশেষে Contrast Effect নারীদের পুরুষদের চেয়েও অনেক বেশী আক্রমণাত্মক হয়।

০১১-Availablity Bias

কেউ যদি বিষপান করে, প্রথম কাজ কী হওয়া উচিৎ? পাকস্হলী থেকে বিষ সাকশন বা বমি করিয়ে বার করা। এর জন্য আপনার তীব্র মেধাবী হবার প্রয়োজন নেই। তারপর রোগীকে ওষুধ ও সুষম খাদ্য দিয়ে সুস্হ করে তুলতে হবে। শিক্ষায় অযোগ্য ব্যক্তি যদি ঘুষ দিয়ে চাকরি পায়, তাহলে প্রথম কাজ কী হওয়া উচিৎ? এখানে এসে মানুষ দিশাহারা হয়ে শাস্তি চাই- শাস্তি চাই করে মরছে। প্রথম অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিদের বহিষ্কার, দ্বিতীয়তঃ প্রতারণা চক্রকে সমূলে বিনাশ এবং তৃতীয়তঃ যোগ্যদের চাকরি দেওয়া।

অথচ মিডিয়া ও সরকারী রাজনৈতিক দল, জনৈকা অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে কত টাকা উদ্ধার হল, সেই গল্পে মশগুল। একে বলে Availability Bias, কারণ মিডিয়ার হাতে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া দুর্বৃত্তদের তালিকা নেই, CBI বা ED দ্রুত এই ঘোটালা চক্রের প্রতি ধাপের দালালদের ধরতে পারছে না। ফলতঃ সরকার ও সরকারী দল এক বৃদ্ধ মন্ত্রীর মুখে সার্চলাইট ফেলে অন্ধকারে গা ঢাকা দেবার চেষ্টা করছে। Availability Biasএর জন্য মানুষ অবাঞ্ছিত তথ্যে সরকারী হায়নাদের ছলনায় পা দিচ্ছে।

জনৈকা অর্পিতা মুখোপাধ্যায় সহ কত জন বান্ধবী ছিলেন? অর্পিতা দেবী ববি নামক অন্য পূজা-বিলাসী মন্ত্রীর কাছেও যেতেন কিনা, কিংবা তাঁর ফ্ল্যাট থেকে সেক্সটয় পাওয়া গেল কেন? আন্ডারওয়ার্ল্ডে এসব খুব সাধারণ ব্যাপার। রূপালী পর্দা থেকে নায়ক নায়িকাদের সটান রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেয় এরা। তাহলে Availability Biasএর তাড়নায় আপনারা তাঁদের যৌন-জীবনে মত্ত থাকবেন, কিন্তু প্রাত্যহিক বঞ্চনা ভুলে যাবেন। সরকার ও মিডিয়া সমস্যার শিকড়ে না গিয়ে আপনাকে ভুলিয়ে রাখবে।

অমূকে ধূমপান করেও একশ বছর বেঁচেছিলেন বা তমূকে বাড়িতে তালা না দিয়ে দার্জিলিং ঘুরে এসেও দেখেন চুরি হয়নি। এসব কাকতালীয় ঘটনা। এসব ঘটনাকে Availability Bias দিয়ে যুক্তিপূর্ণ করতে যাবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে সরকারী দল জনতার মনস্ত্বত্ত্ব ঘেঁটে তাকে ঘুলিয়ে দেবার সর্বদা প্রয়াস চালাবে। ওরা আন্ডারওয়ার্ল্ডের লোক, ওদের জীবন-চর্চা আপনার অজানা। আপনার যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু খবর দেখুন। চোরের জীবনশৈলী লোকের প্রয়োজন নেই, স্রেফ চোর ধরো, জেল ভরো।

০১২- It’ll Get Worse Before It Will Gets Better Fallacy

৮ নভেঃ, ২০১৬, নোটবন্দী হল। ওই দিনটার কথা স্মরণ করুন। নরেন্দ্র মোদী বললেন, পঞ্চাশ দিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক না হলে চৌমাথায় যেন ওঁকে পোড়ানো হয়। ভারতবাসী গুজরাতি বানিয়ার মত নৃশংস নয়। দেশে কালাধন উদ্ধার হবে, সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হবে, ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া হবে। এসব জুমলা কেবল গরীবরা বিশ্বাস করেছেন তা নয়, তথাকথিত শিক্ষিতরাও খেয়েছিলেন। আজকের কষ্ট বাড়লে আগামীকাল লাঘব বলে। It’ll Get Worse Before It Will Gets Better Fallacyর উদাহরণ।

আসলে শৈশব থেকে গরীব-গুর্বো-দলিতদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, এ জীবনে কষ্ট বিগত জীবনের পাপের ফল। কষ্ট করলে পরবর্তী জীবন সুখকর হবে। আর নরেন্দ্র মোদীরা কখনও বিদেশ থেকে কালাধন এনে আপনাকে পনের লাখ দেবেন, কখনও দেশের সম্পদ বিক্রী করে অর্থনীতি চাঙ্গা করবেন। আসলে যত সম্পদ বিক্রী হচ্ছে ততই ডলারের তুলনায় টাকার দাম কমছে। It’ll Get Worse Before It Will Gets Better Fallacyতে মানুষ এখনও ভাবছে হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে আম্বানি-আদানির শোষণ একটু সহ্য করি।

এখন হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে এমন ধারণা আছে বা জ্যোতিষীরা যখন নীলা দেয় এমন কথা বলেন। আপনি বাড়ি করছেন, কাউন্সিলার ডাঃ স্কোয়ার-ফিট সেন এসে জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। আপনি ভাবলেন আজ দিলে কাল ভালো থাকব। It’ll Get Worse Before It Will Gets Better Fallacy কখনও ডাঃ স্কোয়ার-ফিট সেনদের থেকে আপনাকে মুক্তি দেবে না। যারা ভেবেছিল ঘুষ দিয়ে শিক্ষকতার চাকরি করে নাকে তেল দিয়ে বাকি জীবন ঘুমাবো, তাদের কী হাল হল দেখে বুঝে নিন।

It’ll Get Worse Before It Will Gets Better Fallacy এমন একটা ধারণা, মানুষ যখন বিশ্বাস করে, আজ খারাপ হচ্ছে কাল ভাল হবে বলে। আদপেই নয়। তালি-থালি বাজিয়ে বা দিয়া জ্বেলে কি করোনা বিদায় হয়েছে? আসলে মূর্খ শাসক তাৎক্ষণিক একটা উপায় বাতলায়। নোটবন্দীতে কোন কালাধন উদ্ধার বা সন্ত্রাসবাদ বিদায় হয়নি। কেবল বানিয়ারা কালো টাকা সফেদ করে নিয়েছে আপনার মূর্খতার মূলধনে। নরেন্দ্র মোদী বা মমতা পূঁজির দালাল। মস্তিষ্কের ধর্ম, অনুভূতিকে ওরা যথেচ্ছ ব্যবহার করেন।