আর.এস.এসের নিজস্ব প্রকাশনা থেকে এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠার যে বিবরণ পাওয়া যায় সেটি হলো , “দেশে একটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছিল। ১৯২১-র আন্দোলন ডক্টর হেডগেওয়ারের কাছে আঘাতের মতোই এসেছিল।ভারতের মুসলমানরা প্রমাণ করেছেন যে,তারা প্রথমে এবং পরে ভারতীয়।কারন তুরস্কের খিলাফতের দাবী ত্যাগ করবার সঙ্গে সঙ্গে তারাও সহযোগি ভারতীয় জাতীয়  আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।মুসলমানদের অন্ধ গোঁড়ামি গোটা দেশের পরিবেশকে ভারী করে দিয়েছিল। ‘ভারত মাতা কী জয় নয় আল্লাহ হো আকবর ‘ধ্বনিই চতুর্দিকে শোনা যাচ্ছিল। শীঘ্রই বান্নু,কোহাট,মুলতান,নাগপুর অন্যত্র মুসলমান দাঙ্গা শুরু হয়।এগুলি হিন্দু মুসলমান দাঙ্গা নয় তিনি বলতেন, ‘এগুলি মুসলমানদের দাঙ্গা কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারাই দাঙ্গা শুরু করে এবং আক্রমণ  করে’।এই দাঙ্গার পরিনিতি মোপলাদের নৃশংস অত্যাচার, অগ্নিসংযোগ, লুঠ,হত্যা,ধর্ষণ এবং জোর করে ধর্মান্তরিত করা।গোটা জাতি হতবাক হয়ে পড়েছিল এবং ডক্টরজির মনে প্রশ্ন জেগেছিল এটা কী খিলাফৎ(খলিফার পুর্নবাসন)না অখিলাফৎ(সকলের জন্য বিপর্যয়)?এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে ভারতে হিন্দুরাই জাতি এবং হিন্দুত্বই রাষ্ট্রয়ীত্ব।বহু অলীক চিন্তাশীল মানুষ জাতির রাজনৈতিক আকাশে লেখাটি পড়তে চাইলেন না।কিন্ত বাস্তববাদী ডক্টর হেডগেওয়ার অলীক স্বপ্ন দেখতে চাননি,সত্য প্রকাশিত হয়েছিল। একমাত্র হিন্দুরাই হিন্দুস্থানকে মুক্ত করতে পারবে।তারাই পারবে হিন্দু সংস্কৃতির রক্ষা করতে ।ব্যক্তিগত চরিত্র ও মাতৃভূমির প্রতি গভীর আবেগের ভিত্তিতে হিন্দু যুবকদের সংগঠিত করতে হবে।এছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের স্থাপনের মধ্যেই এই মহাত্মা মানুষটির যন্ত্রনা ভাষা খুঁজে পায়।পাঁচজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আর এস এসের দৈনিক কাজকর্ম শুরু করেন। ”          (সূত্র:সি,পি ভিশিকর কেশব সংঘ নির্মাতা পৃষ্ঠা-২৫)    দেখা যাচ্ছে এই সংগঠনটি তৈরি ই হয়েছিল চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের উপর নির্ভর করে।খিলাফত আন্দোলন এবং তার সঙ্গে গান্ধীজীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলন সম্মিলিত ভাবে ভারতবর্ষের ইতিহাসে হিন্দু-মুসলমান মিলিত রাজনৈতিক আন্দোলনের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন স্থাপন করেছিল। লক্ষনীয় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে হিন্দু মুসলিম উভয়ের ঐক্যর ভিত্তিতে পরিচালিত এই আন্দোলনকেই  আক্রমণ করেছে সংঘের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার।চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকেই এ কাজ করেছেন তিনি।শুধু তাই নয় প্রথমে জমিদারদের মধ্যযুগীয় শোষনের বিরুদ্ধে এবং  পরবর্তী সময় জমিদারদের পক্ষ নিয়ে মালাবারের কৃষক সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণকারী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম করা মোপলা দের বিদ্রোহ কে হেডগেওয়ার চিহ্নিত করেছে  হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হিসেবে।মোপলা বিদ্রোহ  সম্পর্কে বিশিষ্ট অধ্যাপক কে .কে. পানিক্করের মন্তব্য এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রনিধাধান যোগ্য ।তিনি বলেছেন (মোপলা বা মালাবার বিদ্রোহ সম্পর্কে বলেছেন)”এটা মূলত একটা কৃষক বিদ্রোহ, যেটাকে ধর্মীয় রঙ দেওয়া হচ্ছে”।  তাহলে দেখা যাচ্ছে যে চূড়ান্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পথ ধরে ভারতবর্ষের বিভেদের মধ্যে ঐক্যর সুপ্রাচীন ঐতিহ্যর বিরুদ্ধাচারন করেই গড়ে  উঠেছিল আর.এস.এস।১৯২৫-র বিজয়া দশমীর দিন যে বিষ বৃক্ষের জন্ম হয়েছিল নাগপুরে আজ তা  পল্লবীত হয়ে মহীরুহতেপরিনত হয়েছে।                       (ক্রমশ:)