সন্দেশখালির শেখ শাজাহানকে তাহ’লে আশ্রয়দাত্রী ধরিয়ে দিতে বাধ্য হলেন। ঐ যে বলে না – জনতার মার দুনিয়ার বার।

তৃণমূলী নেতা শাহজাহান শেখ, উত্তম সর্দার ও শিবু হাজরা-মূল এই জহ্লাদগুলোর নেতৃত্বে আর ঐ দলের লম্পট অন্যান্য শাকরেদদের সহযোগে বিগত কয়েক বছরে যে লুণ্ঠন, দখলদারি, অনাচার, নারীর সম্ভ্রমহানী ও নানাবিধ অসভ্যতা হয়েছে, তার বিবরণ শুনে সারা বাংলা শুধু নয়, সারা দেশ ও বিদেশেরও অনেক জায়গার মানুষ শিহরিত হচ্ছেন। মানুষ লড়াইয়ে নেমে বিপুল আলোড়নও সৃষ্টি করছেন।

যবনিকা পতনের আগে আরও অনেক ঘটনা জানা যাবে। যেমন, আজই জানা গেলো উত্তম সর্দার বনগাঁর এক খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।

এসবের মাথা যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীসভা তা আজ জলের মতো পরিস্কার। এসবের নন্দি-ভৃঙ্গি যে রাজ্যের পুলিশ আর সাধারণ প্রশাসনের বিরাট অংশটি, তাও পরিস্কার। ‘বিরাট অংশ’ বলা হলো এজন্য যে,  কয়েক বছর আগের সন্দেশখালির বিডিও কোশিক ভট্টাচার্যের কথা ভুলি কি ভাবে! যাঁকে লুটপাটের বিরোধিতা করে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রত্যক্ষ মদতে মেরে আধমরা করে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল ঐ বাহিনী। তারপর তো এখানে তিষ্টোতেই দিল না তাঁকে। ভালো দু’চার জন অফিসার যাঁরা এখনো আছেন, এই পাপ-রাজত্ব ঝেঁটিয়ে বিদেয় করায় তাঁদেরও প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেবার আবেদন এই অবসরে করে রাখলাম। 

এখানে শুধু আরেকটা কথা বলবো – এই বিকারগুলি শুধু সন্দেশখালিতে নয়, রাজ্যের অনেক জায়গায় বিদ্যমান। এবং সেসবের বিরুদ্ধে লড়াইও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বীরভূমের নানুরের গ্রামে, চারধারে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা বেড়ার মধ্যে অন্যায়ভাবে ঢুকিয়ে নেওয়া গরিবের জমি উদ্ধারের লড়াই শুরু হয়েছে। ঐ রকম লড়াইয়ের খবর এসেছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের সুজালি নামে গ্রাম থেকেও।  

আজকের সন্দেশখালি তার আশেপাশের এলাকা নিয়ে মরণপন লড়াইয়ে নেমেছে। তাদের এই লড়াকু সাহস ও মেজাজের সংক্রমণ নানুর – সুজালির মতো সারা বাংলায় হতে থাকবে দ্রুত। 

সন্দেখালির মানুষ তার লুট হওয়া জমি ফেরত নিচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি ফেরত নিচ্ছে, তাদের খেলার মাঠ ফেরত নিচ্ছে। এখানেও এই ফেরত নেবার লড়াই আরও তীব্র হবে –তা বলা বাহুল্য মাত্র।

আমরা সন্দেশখালির বেড় মজুরের তেভাগা লড়াইয়ের কথা জানি।তিনজন হয়েছিলেন শহীদ। তাঁদের উজ্জল স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল তেভাগা স্মারক বেদী। তার পাশের জায়গা দখল করে ঐ ব্যাভিচারীরা তৃণমূল পার্টি অফিস তৈরি করেছে। শহীদ বেদীটাকে নিস্প্রভ করে দিয়েছে। আমরা নিশ্চিত, ঐ বেদীকে পূর্বাবস্থায় এনে, চোর ডাকাতদের ঐ অফিসটিকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে, সেখানকার যোদ্ধারা তেভাগার অম্লান স্মৃতির মনহনীয়তা ও মর্যাদাকে ফিরিয়ে আনবেন।

দুই 

তেভাগার মতো লড়াই যেমন জাত ধর্ম নির্বিশেষে ছিল সমস্ত বঞ্চিত মানুষের, এখনকার এই লড়াইও তেমনই।

 ১৯৪৬-’৪৭-এ প্রথম যখন  তেভাগার  লড়াই শুরু হলো, তখন তার ছিলো দু’টো বৈশিষ্ট্য।  ১৯৩৭ থেকে নানা লড়াইয়ের মধ্যবর্তিতায় চাষিবাসী মানুষ যেখানে আগে থেকেই সংগঠিত ছিল, সেখানে সাম্প্রদায়িকতার কালো বিষ  ঢুকতেই পারে নি। আবার তেভাগা লড়াই-ই অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িকতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিয়েছে। 

সন্দেশখালির এই লড়াইয়ের মধ্যে আর এস এস বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার পাপ ঢোকানোর অপপ্রয়াস পাচ্ছে। 

আলোচ্য সময়ের লম্পট লুচ্চাগুলোর কোষ্ঠি দেখলেই বোঝা যায় তারা সম্প্রদায় নির্বিশেষে একাকার। শাহজা্নের সঙ্গেই তো ছিলো উত্তম আর শিবু হাজরা। আর তাদের মাথায় ছিলো বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এখন ওদেরই মূরুব্বি হয়েছে অভিষেক ব্যানার্জী। নিরাপদ সর্দার যখন বিধানসভায় সন্দেশখালির যন্ত্রণা তুলে ধরতেন, তখন তার ভাষণ চলা কালীন মাইকের সংযোগ বিচ্ছিন করতেন আজকে বিজেপির নেত্রী সোনালী গুহ । 

তেমনই যাঁরা লড়াই করছেন, তারাও আছেন ময়দানে জাত ধর্ম নির্বিশেষেই। প্রসঙ্গত একটা তথ্য জানাই, বিশেষ করে ঐ অঞ্চলের তেভাগার নেতা কমরেড হেমন্ত ঘোষালকে, তখন লড়াই চালানোর সুবিধার্থে কখনও রহমতুল্লাহ আবার কখনও ঠাকুর কর্তা নাম ধরতে হতো। একই অঙ্গে হিন্দু ও মুসলামানের নাম।  

তারই পরম্পরায় যেন এখনকার লড়াইগুলি সংঘটিত হচ্ছে। নিরাপদ সর্দারকে যেমন বিনা কারণে পুলিশ হাজত ও জেল হাজতে রেখেছিলো, কোর্টের ভৎর্সনার পরে মুক্তি পেয়েছেন যিনি, তাঁর সঙ্গে আরেকটি নাম আসে, তা হলো, আয়েসা বিবি। আয়েসা বিবির নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মিছিলও তো হয়েছে। লড়াই যতই তীব্র হবে, যতই সর্বব্যাপক হবে, ততই এই ঐক্যবদ্ধতার বন্ধন দৃঢ় হবে। তখন ঐ ভেদবাদীরা ও সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা লেজ গুটিয়ে পালানোর পথ পাবে না।

 তিন

আমার ‘ধর্ম’ তোমার ধর্মের থেকে বড়, আমারটা তোমাকে জবরদস্তি মানতে হবেই। না হলে তোমার বিপদ ঘটবে, এসব বলা ও সেই মতো কাজ করার মানে হলো সাম্প্রদায়িকতা। তার জন্য আর এস এস বিজেপি মুসলামান হত্যা, দলিত হত্যা, নারীকে ধর্ষণ করে হত্যার মতো দুষ্কাণ্ড করে থাকে। মন্দির বানানোর জিগির, যুদ্ধ উন্মাদনা এসব ওদের এজেণ্ডা। সেই মতো ওরা কাজ করে। বাঁচার দাবিতে, রুটি-রুজির ইস্যুতে লড়াই না করে, মানুষ যাতে কুৎসিত ধর্মাশ্রিত অপরাজনীতিতে  বুঁদ হয়ে থাকে, তার জন্য এসব করে তারা। তাতে পুঁজিপতিদের সুবিধা। পুঁজিপতি বড়লোকদের সুবিধা বিজেপি দেখে, আর বিজেপির পচা রাজনীতি যাতে মাটি পায়, তা দেখে ঐ পুঁজিপতি বড়লোকরা। 

আসলে গরিব –বড়লোকের বিভেদ ভুলিয়ে দেবার জন্য এই কাণ্ড-কারখানা ওরা চালায়।

পুরোনো দিনে দেখেছি, এমনিতে হিন্দু বড়লোকদের খুব জাঁক। ওপাড়ার অমুক মুসলমান, তাকে বা তাদের নিয়ে  তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বার্তা। কিন্তু যখন জমি দখলের লড়াই শুরু হলো বা ক্ষেত মজুরদের মজুরি বাড়ানোর লড়াই- তখন কী মিলটাই না দেখলাম আমরা! হিন্দু –মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের বড়লোকরা একসঙ্গে জোট বেঁধে, চলে গেল কলকাতায় হাইকোর্টে – জমির উপর ইনিজাংশন আনতে। গড়ে তুলল রায়ত এসোসিয়েশন। মজুরি বাড়ানোর লড়াইয়ের সময়, তাকে ধ্বংস করার জন্য কী ষড়যন্ত্র! ভোটও দিতো ওরা একই পার্টি –কংগ্রেসকে। এরকমই মিলেমিশে ষড়যন্ত্র করতে হিন্দু-মুসলমান ব্যবসায়ীদের দেখেছি। এখন সময় পাল্টেছে। আগের মতো সামাজিক সেই বিন্যাস নেই। কিন্তু বড়লোকদের মধ্যে তলে তলে এই মিতালি আমরা সব সময়েই দেখতে পাই।

গ্রামে আমরা আগে দেখেছি,  বড় লোকদের একরকম ব্যাপার আর গরিব মানুষের আরেক রকম। বড়লোকের বাড়িতে দুর্গাপূজা। সেখানে পূজোপাট। গরিব  রাজবংশী–ক্ষত্রিয়–ভুঁইমালি-তুরী-সাঁওতাল-ওঁরাও-মালো-মাহালি ইত্যাদি অংশের মানুষের প্রবেশ নিষেধ।

গরিবদের ধর্মস্থান মনসা বিষহরি  – চণ্ডির থান –বূড়ি কালীমাতা- চড়কের পূজা, গাজন ইত্যাদি। কিছুটা ফিকে হলেও সেই পরম্পরা  এখনও চলছে।

আর হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কত মিল!  ওদের নামে মিল, ওদের মধ্যে ধর্মদায় দিয়ে পরস্পর কত আত্মীয়তা! গরিব ভুঁইমালি পাড়ার জুলু ভুঁইমালির ধর্মবেটি মালেকা, আবার হামিদুলের ধর্ম জামাই নগেন – এরকম সম্পর্ক তো হরহামেশা চলে আসছে। এরকম ধর্ম মা, কাকা, মামা, পিসি, মাসি, সোংড়া-সুংড়ি, বন্ধু–বন্ধাইনের মধুর কত সম্পর্ক হিন্দু –মুসলমানের মধ্যে।

আবার নিজেরাই কতগুলো সহজ সাধন-পদ্ধতি আবিস্কার করে নিয়েছে। সমন্বয়ী সাধন পদ্ধতি। মুশকিল আসানের থানে মানত করা, সত্য পীরের পূজা, ফকির সাহেবের মাজারে বা  বুড়া পীরের মাজারে সিন্নি দেওয়া, মানত করা- এসব হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ করে থাকেন।

কোনটা ভালো? হিন্দু হিন্দু মুসলমান মুসলমান এইটা, না সবাই মিলে মহা মিলে বেঁচে থাকাটা। মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করলেই দেখতে পাবো- সবাই মিলে একসঙ্গে থাকাটা।

আমরা তো একসঙ্গেই আছি গরিব মানুষ। খাটি – খাই। আবার মেহনতের দাম দিতে যারা ঠাকায়, তারা হিন্দুও হতে পারে, মুসলমানও হতে পারে। একটা উদাহরণ দি। যে বিরলা সাহেব মন্দির তৈরি করেছেন, তিনি যখন পাট কলের মালিক হিসাবে পাট কেনেন, তখন কী হাটে বাজারে মোকানে হিন্দু চাষীদের জন্য আলাদাভাবে বেশি দাম দেন বা যখন বস্তা বিক্রি করেন, তখন কী হিন্দু খরিদ্দারের জন্য কম দাম নেন। পুঁজিপতিরা অন্যান্য ফসলের ব্যাপারে একই কাণ্ড করে।  আমার বেচার বাজারে, কেনার বাজারে যাদের কাছে ঠকি, তাদেরই পাতা ফাঁদে কেন আমরা পা দেবো?  সরলসিদ্ধান্ত – না দিতে পারি না তা। সব সময় মনে রাখবো – তেলে জলে মেলে না। 

তা হলে সাধারণ মানুষ কী করবো? নিজের নিজের ধর্ম ষোল আনার জায়গায় আঠারো আনা মানবো। কিন্তু অন্য ধর্মকে অপমান করবো না। থাকবো আমরা একসঙ্গে আর যারা ঠাকাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়বোও একসঙ্গে।

সেটা করতে গেলে নিজেদের বিভক্ত না করে একজোট হয়ে থাকতে হবে। সেই কথাটাই বলি আমরা বামপন্থীরা। ধর্ম যার যার–দেশটা সবার। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারা অপবিত্র–নাপাক। কোন ধর্মেই তার সায় নেই। সব ধর্মের ঘোষণা করা বাণী – শান্তির বাণী। যেমন হিন্দু ধর্মে বলেছে – যত্র জীব –তত্র শিব, বলেছে জীবে দয়া করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর, বলেছে – শোনরে মানুষ ভাই, সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই ।

আর ইসলাম কথাটার মানেই তো শান্তি।

বিশেষ করে বাংলার আচরিত জীবন প্রবাহ এরকমই। কাজ কর্ম হাঁটা চলা লড়াই সংগ্রাম সবেতেই মহা মিলন। 

বিজেপি আর তৃণমূল মানুষের ঐক্য ও লড়াইকে তছনছ করে দেবার জন্য, এই সাম্প্রাদয়িকতার ও ভেদবাদীতার শয়তানি কয়েক বছর ধরে নাগাড়ে করছে জন্য, কিছু বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে।

কিন্তু সে বিভ্রান্তি দ্রুত কাটতে শুরু করেছে। যারা লুটপাটের বিরুদ্ধে, যারা সাম্প্রদায়িকতা-ভেদবাদীতার বিরুদ্ধে তারাও দ্রুত সংগঠিত হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সংখ্যাধিক্য তারাই। সংগ্রামী বাংলা প্রগতির বাংলা আবার ঘন কুয়াসা ভেদ করে ফুটে উঠছে।  মরণ পাগল যুব শক্তি আমাদের সর্বোত্তম সঙ্গী।      

চার–

কয়েক দিন আগে ৭ই ফাল্গুন, ২০শে ফেব্রুয়ারি, সেই লড়াইয়ে নিহত বাইশ জন শহীদকে স্মরণ করে ‘খাঁপুর তেভাগা শহীদ দিবস’ পালিত হলো।

তারই সূত্রে কয়েকটি কথা বলি। 

খাঁপুরের ২২জন শহীদকে বালুরঘাট হাসপাতালে পোস্টমর্টেম করে আত্রেয়ী নদীর খাড়ির ধারে গর্ত করে একসঙ্গে গণকবর দিয়েছিল তখনকার জহ্লাদ সরকার। কমরেড আবদুল্লাহ রসুল কী বেদনায়,  কিন্তু কীস্পষ্ট ভাবে বলেছেন-  “তবে সরকারের এই কাজ যতই বেদনাদায়ক হ’ক, এই অন্ত্যেষ্টির ভিতর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে খাঁপুরের শোষিত নির্যাতিত খেতমজুর ও কৃষক শহীদদের শ্রেণীগত ঐক্যের এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রতীক।”(কৃষক সভার ইতিহাস)

তেভাগা আন্দোলন পর্বে কমরেড মনসুর হাবিবুল্লাহ ছিলেন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্পাদক। তিনি খাঁপুরে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের এক জনসভায় বলেছিলেন – “খাঁপুরে হিন্দু–মুসলমান, আদিবাসী, রাজবংশী, ক্ষত্রিয় সবার মিলিত রক্ত প্রবাহের মধ্য দিয়ে তেভাগার মহান সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল”। 

এর থেকে আমরা যে শিক্ষা নিতে পারি তা হলো – শ্রেণীর দাবি, গরিবের দাবি, জনমানুষের দাবি নিয়ে লড়লে যে শক্তি অর্জিত হয়, সে শক্তিব্যূহকে ভেদ করা প্রতিক্রিয়াশীলদের সাধ্য নয়।

 কৃষক তথা কমিউনিস্ট নেতা কমরেড কালী সরকার, যিনি পতিরাম কেন্দ্রে থেকে খাঁপুরের কৃষক সভার নিত্যদিনের কর্মকাণ্ড ও সংগ্রামগুলির অন্যতম পরিচালক হিসাবে দেখাশুনা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করতেন, তাঁকে লড়াইয়ের সূত্রে রাজশাহী জেলে বন্দি করে রাখা হয়।  

১৯৫৯ কি ১৯৫০ সালে কমিউনিস্ট কারাবন্দিরা ঠিক করেন, জেলখানাতেই একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যে যা পারবেন, তিনি সেই সাংস্কৃতিক উপাচারই নিবেদন করবেন। কালী সরকার  মহরমের সময় যে জংগ গান গাওয়া হয়, তার সুরে ৯০ লাইনের ‘তেভাগার  জংগ’ রচনা করে পরিবেশন করে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

তার প্রথম দু’লাইন এরকম –

‘রণে সাজিল রে

রণে যায় রণডঙ্কা বাজিল রে’।

রণে সাজছে যুবরা। রণে সাজছেন শ্রমিক,  রণে সাজছেন খেতের মজুর ও কৃষক, নারী ও গণতান্ত্রিক মানুষ। বিরাট লড়াই হবে। বিপুল বিস্তৃত অপ্রতিরোধ্য বিরাট লড়াই। যে সাথিরা এখনও এখনও রণে নামেন নি, তাঁদের কাছে আহ্বান –  জোট বাঁধো আর  তৈরি হও, রণে ঝাঁপিয়ে পড়ো । দ্রুত।