আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা
স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়
আয়রে পাগল আবল তাবোল
মত্ত মাদল বাজিয়ে আয় ”

রায়বংশর এক রায়বাবুর কলম থেকে শৈশবের বহুজনপাঠ্য লেখাটি আজ একশ বছরে পা দিল। শৈশবের কবি,ছন্দের কবি, কবিতার মাধ্যমে চেতনার মান বাড়ানোর প্রক্রিয়া সুকুমার রায় না থাকলে কতটা তা সহজে হত বলা কঠিন। আজকের উত্তর সত্য যুগের হাওয়া শৈশবকে আধুনিক করলেও তার সারল্য বিনষ্ট হচ্ছে জ্ঞাতে অজ্ঞাতে। শৈশবকে কত তাড়াতাড়ি বড় করে দেওয়া যাবে সবদিকেই তার প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগীতার মধ্যেই রাজনীতির প্রশিক্ষণ ও চলে অজান্তে অজ্ঞাতে। সিলেবাস ঠিক করে দেয় ছাত্রের জীবনদর্শন কোন পথে বয়ে যাবে। অথচ কত সহজবোধ্য কথা শৈশবেই শেখা হয়ে গেছিল কেউ মনে রাখিনি,দুর্ভাগ্য!!!

“গংগারামকে পাত্র পেলে?, জানতে চাও সে কেমন ছেলে??”

বিয়ের বাজারে এরকম কত শত গংগারাম ঘুরে বেড়ায় চারিদিকে, উনিশ না হোক এক দু বার ফেল করেও স্বপ্ন দেখে তার বিয়ে হবে, গংগারামের ভাইদের মত চোর, জালিয়াত, যাত্রা অভিনেতা সব মিলিয়ে মিশিয়ে একান্নবর্তী পরিবারের সম্বল বংশপরিচয়, এই বংশ পরিচয়ের পুঁজি যেন মধ্যবিত্ত বাঙালির একান্ত নিজের। একান্নবর্তী পরিবার আজকের দিনে গল্প কথা হলেও বংশ পরিচয়ের সুচতুর রাজনীতি আজও অমলিন অম্লান হয়ে বেশ ভালোভাবেই তা বজায় আছে।অবশ্য আজকের সময়ে সুকুমার রায় কবিতা লিখলে চোর জালিয়াত নিয়ে ওরকম ক্রিটিক না করে অন্য কিছু লিখতেন অবশ্যই… হয়ত বলতেন “চোর জালিয়াত দেশটা চালায় দেশের পায়ে গড় করে/ বাবুরা সব থাকেন সুখে আমজনতা রোজ মরে”

বড়বাবুদের খেয়াল খুশি সাধারণ এর সাথে মেলে না, আর অফিসের বড়বাবু খুশি না হলে উন্নতি হয় না, তার পাগলামিগুলোকেও হজম করতে হয় বেশ দায়িত্বের সাথেই। তবে গোঁফ চুরি গেছে কিনা,তা নিয়ে আজকের কোনো বড়বাবু/বড়বিবি পাগলামি না করলেও, তাদের পাগলামিতে ভোগে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ এ ভোগান্তির শেষ কোথায়??? সরকারি, বেসরকারি কর্মচারীরা হয়ত দিনের শেষে সত্যিই বলে ওঠেন—” তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জানত!!

” আয় তোর মুন্ডুটা দেখি,আয় দেখি ফুটোস্কোপ দিয়ে
দেখি কত ভেজালের মেকি আছে তোর মগজের ঘিয়ে”

বিজ্ঞান শিক্ষা কবিতা লাইনগুলো আজ বড় বেশী প্রাসংগিক হয়ে ওঠে যখন দেখি অনেক ভ্রান্ত দর্শন সৃষ্টিতে সরকার বাহাদুর বেশ বড় রকমের ভূমিকা পালন করেন। পিথাগোরাস এর উপপাদ্য, প্রিয়োডিক টেবিল না পড়িয়ে পড়ানো হয় জ্যোতিষচর্চা তখন মনে হয় এ লাইনগুলো ঠিক কতটা প্রাসংগিক আজও। আবার যখন দেখি সমাজে আজও ডাইনি অপবাদে কোনো মেয়েকে পাড়া ঘোরান হয় তখন সত্যিই মনে হয় ভেজালের ভাগ টা কত একবার দেখা যেতে পারে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যর ভাবনাকে যারা মেনে নেন না বা নিতে পারেন না, তাদের জন্য এই লাইন দুটোর শ্লেষাঘাত বড় যথোপযুক্ত বলে মনে হয়।

আজকের সময়ে বেঁচে থাকুক শৈশব, বেঁচে থাকুক স্বাধীন মতপ্রকাশ এর মত বিষয়গুলো। স্বাধীন মত প্রকাশ আর ভাবনার অধিকার কেড়ে নিলে কবিতা হবে না। মানুষ পরিণত হবে মানুষের মত দেখতে জন্তুতে,আর শিল্প সেখানে মোসাহেব ছাড়া কিছুই হবে না।