“এক শতাংশের ক্ষোভ অভিমান নিয়েই আপনারা  থাকুন, ঐ জন‍্যই আপনাদের এমন অবস্থা! কত শতাংশ রাজ‍্য  মানুষ খুশি সেটা হিসাব করেছেন?” টেলিভিশন চ‍্যানেলে বিতর্কে যোগ দেওয়া  তৃণমূল কংগ্রেসের এক মুখপাত্রের কথায় চমকে উঠেছিলাম। দক্ষিণপন্থী রাজনীতি দুর্নীতিকে এখন খোলাখুলি প্রশ্রয় দেবে আর্থসামাজিক বাস্তবতা তাই বলে। কিন্তু এমন নির্লজ্জভাবে? ডি এ না পাওয়া রাজ‍্য সরকারি কর্মচারী, পরীক্ষা দিয়েও  সরকারি চাকরি না পাওয়া তরুণ তরুণী এবং শিক্ষকতার চাকরি অযোগ্য লোকের কাছে মোটা টাকায় সরকারি মন্ত্রী আমলারা বিক্রি করে দেওয়ায় বঞ্চিত শিক্ষক পদের জন‍্য প্রকৃত  যোগ‍্য প্রার্থীরা কার্যত একইভাবে এখন সরকার ও শাসক‍দল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে উপেক্ষিত। কারণ তাঁরা ভোটব‍্যাঙ্ক নন। 


 বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষকের পদে যোগ‍্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষায়  উত্তীর্ণরা ২০১৪ সাল থেকেই ন‍্যায‍্য নিয়োগপত্র না পেয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছেন তাঁদের প্রাপ‍্য পদে টাকার বিনিময়ে বসে পড়েছেন যোগ‍্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষায়  শাদা খাতা জমা দেওয়া বা সব প্রশ্নের উত্তর না লেখা একদল অযোগ্য প্রার্থী। আদালতে তাঁরা মামলা করার পর দুটি তথ‍্য সামনে এল। প্রথমত, যোগ‍্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ  প্রার্থীদের কোন পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে। দ্বিতীয়ত নিজেদের ব‍্যক্তিগত ও রাজনৈতিক যোগাযোগে  টাকার বিনিময়ে চাকরি পরিচিত লোকজনের কাছে বিক্রি করেছেন শিক্ষা মন্ত্রী ও পর্ষদ সভাপতি । একই ঘটনা ঘটেছে উচ্চপ্রাথমিক ও মাধ‍্যমিক স্তরের বিদ‍্যালয়ের শিক্ষক পদের জন‍্য নিয়োগের  পরীক্ষা দেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে। নিয়োগ দুর্নীতিতে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণসহ অভিযোগের তদন্তে আদালতের নির্দেশে সিবিআই ও এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টোরেটের তদন্তে বিস্মিত করে গত ২৩শে জুলাই  প্রথমে  প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন। একে একে মধ‍্যশিক্ষাপর্ষদের  উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, কল‍্যাণময় গাঙ্গুলি, সুবীর সাহা ও এস এস সির প্রাক্তন  চেয়ারম্যান  সুবীরেশ ভট্টাচার্য গ্রেফতার হয়েছেন। ইডি গ্রেফতার করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান গৌতম পাল বলেছেন আগে যাই ঘটে থাকুক তিনি আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দিতে পারবেন না। অর্থাৎ মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় নিজে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও এই বঞ্চিত ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই ডুবে থাকবে। প্রতিশ্রুতি অবশ‍্য মুখ‍্যমন্ত্রী একা দেননি তাঁর ভাইপো তথা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও দিয়েছিলেন।  ২০১৪ সালের  টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নিয়োগ প্রার্থীরা যাঁরা ন‍্যায‍্য চাকরি পাননি নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা ২০২২ এর টেট পরীক্ষায় না বসার সিদ্ধান্ত থেকে তাঁদের এখনকার আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত আসলে এই বঞ্চিত যুবক যুবতীর সীমাহীন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা জানতে পারেন নি, যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর এবং চাকরি না পাওয়া তাঁদের প্রাপ্ত নম্বরের তফাৎ কত? বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা বিস্মিত হয়েছেন জেনে যে,তাঁদের পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের  ও এম আর শিট পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যা পরীক্ষার পরবর্তী  কুড়ি বছর ধরে সংরক্ষণ করার নিয়ম। অতি সংক্ষিপ্ত নিয়মরক্ষার ইন্টারভিউতে তাঁদের তিনটি প্রশ্ন করা হয়েছিল,প্রাথীর নাম,পশ্চিমবঙ্গের মুখ‍্যমন্ত্রীর নাম এবং যে কোন একটি কবিতার প্রথম দুই লাইন মুখস্থ বলা। সবাইকে নামমাত্র নম্বর দেওয়া হলেও নেতা মন্ত্রীদের  টাকা দেওয়া প্রার্থীদের দশে দশ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। 


সল্টলেকে আচার্যভবন ও বিদ‍্যাসাগর ভবনের সামনে যখন তাঁর সন্তানতুল‍্য চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগপত্রের দাবিতে  আমরণ অনশন করছেন তখন  মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় উত্তরবঙ্গে বিজয়া সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে। বিপুল অর্থব‍্যয়ে উৎসব।  মালবাজারে বিসর্জনের সময় হড়পা বানে নিহত ব‍্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের ক্ষতিপূরণ চাকরির দেদার প্রতিশ্রুতি দিয়ে,উদ্ধারকারীদের চাকরি ও পুরস্কারের ব‍্যবস্থা করে  মুখ‍্যমন্ত্রী উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন মাল নদীতে নিজের ব‍্যবসার জন‍্য বালি পাথর দিয়ে বাঁধ বানায় ঠিকাদার দারা সিংয়ের। পরিবেশবিদরা অভিযোগ করেছেন, কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করার ফলেই আচমকা মাল নদীর মত পাহাড়ি নদীর গতিপথ পাল্টে গিয়ে হড়পা বানের সম্ভাবনা তৈরি হয় ; সেই “কৃতিত্বে”র জন‍্যই দারা সিংয়ের প্রশংসা করলেন কিনা স্পষ্ট না হলেও দারা সিংয়ের হাতে দুঘটনা কবলিত ব‍্যক্তিদের উদ্ধারের পুরস্কার স্বরূপ একলক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়ায় অনেকের মুখেই বিস্ময় স্পষ্ট হয়েছে। 
তবে বিস্ময়ে পশ্চিমবঙ্গবাসীর চোখ কপালে উঠেছে বিজয়া সম্মেলনে মুখ‍্যমন্ত্রীর বক্তব্যে । তিনি দাবি করেছেন, সিঙ্গুর থেকে টাটাগোষ্ঠীকে নাকি তিনি তাড়ান নি,তাড়িয়েছে সিপিআইএম।পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই বিবৃতি কি মমতা ব‍্যানার্জীর পায়ের প্লাস্টারের মত একটা নতুন  চাল?