গত ২৭৷০৭৷২২তাংএ সন্ধ্যা থেকে অর্পিতা মুখার্জি -র বেলঘরিয়া ফ্ল্যাটে টাকার পাহাড়ে বসে ই ডি -র অফিসাররা চারটি অত্যাধুনিক মেশিন নিয়ে দ্বিতীয়বার উদ্ধার হওয়া টাকা গোনা শুরু করেছে ।প্রথমবার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে পাওয়া গেছে প্রায় ২২ কোটি টাকা ও কিছু বোর্ডের ছাপ মারা খাম এবং বিপুল অলংকার ।গভীর রাত পর্যন্ত কাউন্টিং শেষে আজ ২৮৷০৭৷২২তাংএ সকল সাতটা নাগাদ জানলাম, উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা, ৬ কেজি সোনার বাট,ও গহনা, প্রচুর রূপোর কয়েন, প্রচুর সম্পত্তির নথি ও দলিল ।চারটি অত্যাধুনিক কাউন্টিং মেশিনের সাহায্যে রাতভর গণনা করা হয় ।অন্যান্য ফ্ল্যাটে আরও কত আছে কে জানে! আসল ভান্ডার কালীঘাটে কত বেরুবে ??গতকাল ২৭৷০৭৷২২তাংএ হিন্দমোটরে প্রশাসনিক সভায় মমতা ব্যানার্জি আবার হুঙ্কার ছেড়েছেন, “আয় না আমার বাড়ি ।”ঠিক একই ভাবে ক’দিন আগে আরেকটা প্রশাসনিক সভায় উনি বলেছেন, “আমি যদি রাজনীতি না করতাম ,তাহলে যারা আমার গায়ে কালি ছেটাচ্ছে তাদের জিভ ছিঁড়ে নিতাম ।”আবার এও বলেছেন, “আমার গায়ে কালি  ছেটালে আমার হাতেও আলকাতরা আছে ।” আসলে উনি ভয় পেয়েছেন ।ভয় পেলেই মানুষ সাধারণত দিকভ্রান্ত হয়ে যান ।ওনারও তাই অবস্থা ।উনি যে ভাষায় গলাবাজি করছেন  (শারীরিক  ভাষা body language ) সাধারণত এই ধরনের ভাষা মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে কোনো সুস্থ রুচিসম্মন্ন মানুষের তা শোভা পায় না ।পার্থ ও তার প্রেমিকার ফ্ল্যাট থেকে পর পর যা বের হচ্ছে, তাতেই উনি দিশেহারা ।

কারন উনি মনে মনে জানতেন, যা কিছু হয়েছে এবং এখন হচ্ছে তা সবই ওনার অনুপ্রেরণায ।এখন চাপা দেবেন কি করে? এটা তো একদিনে হয়নি ।উনি আর ওনার ভাইপো অভিষেক এইসব জানতেন না? ?এসব কথা ওনার তল্পিবাহক ও তাঁবেদার কিছু মানুষ বিশ্বাস করলেও ৫০০ দিন ধরে রোদে জলে শীতে পুলিশের লাঠি, লাথি খেয়ে ধর্মতলার রাস্তায় বসে থাকা বেকার শিক্ষিত টেট পাশ করা বেকার যুবক যুবতীরা বিশ্বাস করবেন? ?সারা পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ, যাঁরা তাঁদের কারও সন্তানের, স্বামী বা স্ত্রীর একটু সুদিনের আশায় চাতক পাখির মত দীর্ঘদিন ধরে দিন গুনছেন, তাঁরা বিশ্বাস করবেন? ?আসলে ২০০৬ সালের পর থেকে চরম দক্ষিণপন্থী , ও সাম্রাজ্যবাদি শক্তির মিলিত প্রচেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করার জন্য নীল নকশা করা হয়েছিল ।সেই নকশাতেই ঐ মহিলাকে বেছে নেওয়া হয।কারন সেই সময়ে বামফ্রন্ট সরকার, “কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত “—এই কর্মসূচি প্রয়োগের দিকে যাচ্ছিল ।তখন ওরা বুঝেছিল বামফ্রন্ট সরকারের এই কর্মসূচি যদি সফল হয়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামফ্রন্টকে আর হটানো যাবে না ।সারা দেশেই এই বার্তা ছড়িয়ে পড়বে ।তাহলে সমূহ বিপদ ।তার জন্যই একচেটিয়া পুঁজিপতি, সাম্রাজ্যবাদি শক্তি ,অতি বিপ্লবী থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তির মিলিত জোট মমতা ব্যানার্জিকে নেত্রী বানালো।তার সঙ্গে যুক্ত হল কর্পোরেট পরিচালিত মিডিয়া ।মিথ্যাচার, গোযেবলসীয় কায়দায় অপপ্রচার অপপ্রচার করে মানুষের কান ও মনকে বিষাক্ত করে দেওয়া হল ।সেই সময়েই সিঙ্গুরের কারখানার প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হওয়ার পথে ।নানান প্রতিশ্রুতি ও মিথ্যাচার দিয়ে সিঙ্গুরের কারখানাকে ধ্বংস করে দেওয়া হল।শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা ঐ মিথ্যা অপপ্রচারের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত করে তুললেন ।

এখন তাঁরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছেন, ঐদিন বামফ্রন্ট সরকারের শিল্প স্থাপনের রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিরোধিতা করে কি চরম সর্বনাশ করে ফেলেছেন ।২০১১ সালে ক্ষমতায়  আসার পরেই কিছুদিনের মধ্যেই উনি মেকিয়াভেলির কূটনীতি প্রয়োগ করলেন ।অর্থাৎ রাজনীতিতে প্রতারণা, হিংসা ও শঠতার আশ্রয় নেওয়া এবং অসাধুপন্থায় পারদর্শী হয়ে উঠলেন।সেই সময় থেকেই এই দলটার চারপাশে লুম্পেন,দুর্নীতিবাজ ,সমাজবিরোধী ও উচ্ছিষ্টভোগীদের রমরমা শুরু হল।সব জেনেও মুখ্যমন্ত্রী না জানার ভান করেন এবং কখনও সরাসরি অবার কখনও প্রচ্ছন্নভাবে তাতে মদত দেন ।যার ফলস্বরূপ বিষবৃক্ষ বাড়তে বাড়তে আজকের এই পার্থ ,অর্পিতাদের বাড়বাড়ন্ত, সেই বিষবৃক্ষের শিকড় থেকে ডগার পাতা পর্যন্ত আজ কলুষিত, দূষিত এবং সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছেছে ।সব থেকে বড়ো  কথা আকণ্ঠ  দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, কলুষিত চরিত্রের মানুষ পার্থ চট্ট্যোপাধ্যায এখনো বহাল তবিয়তে “মা -মাটি -মানুষের ‘র সরকারের শিল্প ও পরিষদীয় মন্ত্রীসভায আছেন ।কোন এক অজানা কারণে  (ভয়ে? )তাঁকে আজও মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করা হল না ।যেটা সঙ্গে সঙ্গে করার কথা ।যিনি নিয়ম নীতি মানেন না তাঁকেই আবার নীতিনির্ধারক কমিটির পদাধিকার করে রেখেছেন ।দলটারই তো কোন নীতিমালা নেই ।এই সুযোগে ও সময়কে মানুষ যদি কাজে লাগিয়ে বামপন্থীদের পাশে থাকে  ।ইতিমধ্যে বামপন্থীরা রাস্তায় লড়াই এ আছে ।নেতা মন্ত্রীদের পরিবারের কুকুর -বেড়াল বাদে সকলের ও দেহরক্ষীর আত্মীয়দের চাকরি হবে আর শিক্ষিত বেকার ছেলে -মেয়েরা সেই সব দেখবে, আর তোমার জ্ঞান -বাণী, কবিতা শুনবে আর পুলিশের লাঠি খাবে ।

ই -ডি-র দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করে বলতে হয় উদ্ধার হওয়া প্রায় ৫২ কোটি টাকা ও বিপুল পরিমাণ  সোনার গহনা এবং অসংখ্য বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ,জায়গা, জমি নাকি হিমশৈলের চূড়ামাত্র ।যা কিনা  কয়েকশো কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে ।এখন যদি আমরা সাধারন খেটে খাওয়া আমজনতা প্রশ্ন করি ,দিদিমনি,এত টাকা কোথা থেকে এল ?এই বিশাল সম্পত্তির উৎসস্থল কোথায় এবং যা এখনও উদ্ধার হয়নি সেই অলিখিত পর্বতপ্রমান সম্পদ যাচ্ছেই বা কোথায়? এর উত্তর তো রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান  হিসেবে আপনারই দেওয়ার কথা ।জনগনের রক্তের বিনিময়ে উপার্জিত টাকার এই অপব্যবহার দেখে আপনার ন্যূনতম কর্তব্য কি,তাও জনগণ জানতে চাইছে ।আর যাঁরা ই ডি,সি বি আই -এর মতো তদন্তকারীদের ভয়ে রংবদল করে পাশে কাটিয়ে চলে যাচ্ছে ,যে সমস্ত আমলাদের কাছে খামে করে নিয়মিত মোটা টাকা ভেট গেছে বা যাচ্ছে ,তাঁরা সেগুলিকে তাঁদের হক বলে ধরে নিয়েছিলেন তাঁদের নিয়েই বা কি চিন্তা ভাবনা আপনার? এসবের উত্তর একদিন আপনাকে দিতেই হবে ।আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বহুদিন আগেই বলেছেন -“ছাত্রছাত্রী গণকে দেশের বর্তমান অবস্থায় আর শুধু বিদ্যাভ্যাসেই রত থাকিলে চলিবে না ।

বিদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও বিশেষ করিয়া  অর্থনৈতিক দিকটা ভাবিয়া দেখা প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে ।”যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।আমাদের রাজ্যে বর্তমানের ঘটনাপ্রবাহ  সকলেরই গভীরভাবে অনুভব করা উচিত ।স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, “যতক্ষণ বেঁচে রয়েছ শিখতে থাকো ,কারণ অনুভব জীবনের সবথেকে বড়ো শিক্ষক “।সঠিক সময় ও সুযোগ এসেছে ছাত্র, যুব ও  সকল বামপন্থীসহ গণতানত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের কাছে ।এই সময় ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়াজ তুলতে হবে ।** সমস্ত সরকারি দপ্তরে যত শূন্য পদ আছে, সেগুলিতে অবিলম্বে মেধাভিত্তিক নিয়োগ করতে হবে ।

দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা মন্ত্রী ও আমলাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে ও যথাযথ শাস্তি দিতে হবে ।পঞ্চায়েতগুলিতে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে এবং আদায়যোগ্য দাবীর ভিত্তিতে বামপন্থীরা তাদের সাংগঠনিক শক্তি নিয়েই ঘেরাও, অবস্থান, বিক্ষোভ এবং নাছোড়বান্দা আন্দোলন যদি সংগঠিত করতে পারে, তাহলে মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করতে পারবে ।ধাক্কা মারতে মারতে দুর্নীতিবাজ নেতা ও তার চ্যালা -চামুণ্ডাদের মাঠের পর মাঠ ছোটাতে হবে ।তখন ওরা বুঝবে  ,”কত ধানে কত চাল “।[তথ্য সংগৃহীত ]তাং –২৮৷০৭৷২২