অবশেষে উনি এলেন এবং গেলেন। চারিদিকে যা খোঁজাখুঁজি হচ্ছিল, নিখোঁজ ডাইরী হচ্ছিল, এসব দেখে লজ্জার মাথা খেয়ে তারপর গেলেন। আসলে পরেশ বাবুর পটি পেয়েছিল। তার জন্যই মাঝ রাস্তায় নেমে ঐ সব কাজকম্মো সেরে তারপর গতকাল কোর্টের গুঁতো খেয়ে সিবিআই প্যালেসে এলেন। একদিন ধরে রাজ্যে কী কান্ডটাই না ঘটছে। এত হৈচৈ করার কী আছে? যত্তসব! আরে এরা ওইসব করার জন্যই তো রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। আগে নিজেরা পেট ভরে খাবে, তারপর ছিটেফোঁটা যদি কিছু থাকে সেটাই জনগণ পাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। মন্ত্রী হয়ে তার বেকার মেয়েটাকে যদি একটা চাকরী দিতে না পারে, তাহলে সে কীসের মন্ত্রী? ২০১১ এর আগে থেকে এরকম কত ঢপ দিতে ক্ষমতায় আসার জন্য, তা ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখাযাবে। আর বামফ্রন্ট সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কীভাবে বিষ ঢুকিয়ে দিয়ে, আরো পাবার আশা আকাঙ্খা জাগিয়ে বামফ্রন্টের ভীতকে কীভাবে দুর্বল করতে হয়, তারজন্য চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়ে দিতে হয়, তাও আমরা দেখেছি। সুতরাং পরেশ অধিকারীর মেয়ে চাকরী পেয়েছে, এটা নতুনও কিছু নয়, আর অস্বাভাবিকও কিছু নয়। জনগণ ঠকে শোখে। এখনও পুরোপুরি শিখতে অনেক বাকী আছে। এইতো সবে খেলা গুরু হয়েছে।


এই খেলাকে বেকার ছাত্র-যুবরা দৈনন্দিন অনুশীলনসহ রক্ষণভাগ (Defence), আক্রমণাত্মক ভাগ (Offence) রাইট ও লেফট আউট এবং মাঝের লিঙ্কম্যান যদি ঠিক ঠিক সাজাতে পারে, তখন খেলা জমে উঠবে।মাঠ কানায় কানায় ভর্তি। দীর্ঘদিন ধরে অনুশীলন করতে করতে গোল অনিবার্য। তখন দর্শক মাঠে নেমে পড়বে। হোরো পার্টি সুযোগ বুঝে কেটে পড়বে। তারপর শ্রীলঙ্কাতে যা হচ্ছে, অবশ্যম্ভাবী সেই পরিণতি। মানুষ কিন্তু সব দেখছেন ও বুঝছেন। অতীতের কয়েকটি বিষয় পাঠকদের চিন্তার জন্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। রাজ্যের সর্বময় কর্ত্রীর কী প্রতিশ্রুতি ছিল দেখা যাক,- ” প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজে- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, গ্রন্থাগারিক এবং শিক্ষাকর্মী সহ এক লাখ নিয়োগ অবিলম্বে করা হবে।

গত ১৬-০৩-২০১৪ তারিখের গণশক্তির পাতায় দেখাযাচ্ছে, ” আড়াই বছরের হিসাব বলছে মাত্র ৩৯ (উনচল্লিশ) হাজার শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। এই নিয়োগেও প্রাথমিক “টেট” -এর দুর্নীতি আমাপা। আট বছর পর কী দেখছে মানুষ ? এর মধ্যে অনেক কান্ড হয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীরাও হাল ছাড়েনি। আন্দোলন সংগ্রাম যেমন চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি হাইকোর্টের ধাক্কায় সরকারের কাপড়, প্যান্ট খুলে যাবার অবস্থা। তবুও ওদের লজ্জা নেই। একেবারে বেহায়া সরকার। গ্রামে যারা মামলা লড়ে, হেরে গেলে ঘরে এসে তাঁর বউকে মারে। সরকারের কর্ণধারের অবস্থাও হয়েছে তাই। কোন কিছুতে না পেরে হঠাৎ একটা মিটিংয়ে দর্প করে বলছেন, “সিপিএম তো চিরকূটে চাকরী দিয়েছে।” আচ্ছা, সিপিএম যদি চিরকূটে চাকরী দেয়, তাহলে তুমি কোন “চিরকূট” না রেখে চাকরী দেবে? সিপিএম করেছে বলে তোমাকেও করতে হবে? সিপিএম যদি করে থাকে, তা্র জন্য তোমার কাছে যদি প্রমাণ থাকে তবে তুমি তাদের বিরুদ্ধে এই এগারো বছরে একটাও প্রমাণ করতে পারোনি কেন? কেন তাদের আজ একজনকেও কোনো শাস্তি দিতে পারোনি? শুধু ফাঁকা আওয়াজে কি চিঁড়ে ভেজে দিদিমণি? নাকি সত্যকে ধামাচাপা দেওয়া যায়? শুধু শুধু গৃহস্থের মধ্যেকার ঝগডুটে দুই জা-এর ঝগড়া-কোন্দল এর মতো নীচুস্তরের গালমন্দ করে কী হবে? তাঁর চেয়ে বরং সত্যকে সামনে আনুন আর দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে আপনার তথাকথিত “সততা”র মর্যাদা রক্ষা করুন।


নেতা-মন্ত্রীদের পরিবারের কুকুর-বেড়াল বাদে সকলের চাকরী হবে আর শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েরা সেই সব দেখবে, তোমার জ্ঞান-বাণী, কবিতা শুনবে আর আঙুল চুষবে। বাহ! কী মজা, তাই না দিদিমণি? এখন দেখাযাক, ৮ বছর আগে ২০১৪ সালে কাদের চাকরী হয়েছিল। দেখলেই চোখ কপালে উঠবে। ওদের ন্যুনতম লজ্জা-শরম নেই। প্রাথমিক নিয়োগের পরীক্ষায় ব্যাপক দুর্নীতি। মেধা দেখে নয়, তালিকা তৈরী তৃণমূল ভবনে। তৃণমূল নেতাদের আত্মীয়দের নিয়োগ-এর কয়েকটি উদাহরণঃ-

তৃণমূল ভবন থেকে নিয়োগের জন্য মেরিট লিস্টে যাদের নাম আছে-

*কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডর স্ত্রী, মামা, বৌদি, শ্যালিকা, পিসতুতো ভাই সহ মোট পাঁচ জন।

* দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার কুলপির তৃণমূল বিধায়ক ঘোড়ারঞ্জন হালদারের ছেলে, ভাইঝি, জামাই, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন। *বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অণুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সহ পরিবারের তিনজন ।


* হলদিয়ার তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী , ভাগ্না, ভাগ্নি চাকরী পেয়েছেন।


** লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বনবিহারী রায়ের ভাইপো, শালার ছেলে।


* উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থেকে নির্বাচিত পরিষদীয় সচিব অমল আচার্ষের মেয়ে, ভাইপো,আপ্ত সহায়কের বোন – এঁরা সকলেই চাকরী পেয়েছেন।

নতুন কাক “গু” খেতে শিখলে মুখময় হয়ে যায়। এদেরও হয়েছে সেই অবস্থা। এরপর স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিন, ওদের নেতাদের কতজন ছেলে-মেয়ে, আত্মীয় স্বজন কেউ নবান্নে, কেউ দমকলে, পঞ্চায়েত- ব্লকে বা প্রাইমারী স্কুলে কিংবা হাইস্কুলে চাকরী করছেন। কী করে হল? ওদের জীবনযাত্রা (Lifestyle), বাড়ি, গাড়ি, আসবাবপত্র বিত্ত-বৈভব কত কী হয়েছে। কী করে এসব হয়? যারা দৈনিক সকাল থেকে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে তারাও আজ দিশেহারা। কারণ, রাজা-রাণীর রাজত্বে বেকারত্ব তীব্র, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিপত্রের দাম আজ অগ্নিমূল্য সংসার চালোনোই দায়। আপনি-আমি পারিনা, কিন্তু ওরা পারে সুখ-বিলাসের আতিশয্যে ভেসে যেতে। সুতরাং প্রশ্ন করুন, কোথা থেকে এসব হচ্ছে? দুচারটে চুক্তিভিত্তিক চাকরী, কিংবা প্রাইমারী বা অন্যান্য হাতে গোণা কয়েকটি চাকরীতে কত টাকারা বিনিময়ে নিয়োগ হচ্ছে, তার খোঁজ নিন। আর সেগুলি নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গুন। ওদের মুখোষ খুলে দিন। জবাব চান ঐ সব চুনো-পুঁটি থেকে বড় রাঘব বোয়াল নেতা-ছাতাদের কাছে। জিজ্ঞাসা করুন কত টাকার বিনিময়ে “উৎসশ্রী” পোর্টালের মাধ্যমে স্কুল ফাঁকা করে বদলীর বন্দোবস্ত হচ্ছে। এলাকায় এলাকায় গুঞ্জন হোক, হোক কলরব। তার থেকেই মানুষকে নিয়েই গড়ে উঠুক প্রতিবাদ, প্রতিরোধ। একটু একটু করে নয়, সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে ওদের এই অন্যায় অবৈধ চক্র চূর্ণ – বিচূর্ণ হোক। আর দড়ি ধরে টান মারলে রাজা খান খান হবেই। তাই সবাই জোট বাঁধুন আর তীব্র কন্ঠে বলুন “আমরা করব জয় নিশ্চয়ই…”