বাগুইআটির অতনু-অভিষেকের নির্মম পরিণতি কোথাও যেন ফিরিয়ে আনছে স্বপ্না ঝা’র পুড়ে যাওয়া লাশের ছবিটা! ফিরিয়ে আনছে হাঁসখালির ধর্ষিতা মেয়েটির মায়ের যন্ত্রণায় বোবা হয়ে যাওয়া নিস্তব্ধতা। প্রতিটা নিস্তব্ধতায় আওয়াজ যেন একটাই- “পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো, তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো”! জনতার ট্যাক্সের টাকায় উর্দি গায়ে ক্ষমতার স্তম্ভ হয়ে দাপিয়ে বেড়ানো পুলিশের স্যান্ডো গেঞ্জির ওপর কি তাহলে ফুলছাপ থাকে? তাহলে কি পুলিশ মানেই গণতন্ত্রের প্রহরীরূপে দলতন্ত্রের নগ্ন অভিব্যক্তি? এসবের পরেও কি আর এরাজ্যের ভবিষ্যত প্রজন্ম আর স্কুলে নিজের অ্যাম্বিশন জানতে চাওয়ার উত্তরে বলবে ” আমি পুলিশ হতে চাই”? 


ঠিক যেমন রাজ্যজুড়ে একের পর এক ধর্ষণ, খুনের ঘটনায় প্রশাসন ঠিক নির্বাক ছবির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, ঠিক তেমনই অপহৃত হওয়ার পর প্রায় চোদ্দ দিন খুন হয়ে যাওয়া দু’টি ছাত্রের লাশ যখন মর্গে পুলিশ তখন ব্যস্ত পরিবার পরিজনকে তৃণমূলী ধমক চমকে ব্যস্ত রাখতে। এফআইআর? ঐ খাতাটি আজকাল থানায় কম, থাকে তৃণমূলের নেতাদের ড্রয়ারেই বেশী! তাই ভবানী ভবন থেকে স্বঘোষিত “মানবিক মূখ্যমন্ত্রীর” দুয়ারে ঘুরেও চালু হয়না পুলিশি তদন্ত। অথচ বামপন্থীদের চাপে পড়ে মূখ্যমন্ত্রী নাক গলাতেই পুলিশ চটপট কাজে নেমে ধরে ফেলে খুনীকে! এমনিই চুরি, খুন, রাহাজানি, প্রতারণা, ধর্ষণ এসব খানিক না করলে তৃণমূলে আজকাল চান্স পাওয়া কঠিন! তবে কি এই খুনীও সেই “খেলা হবে”র খেলোয়াড়? তবে কি এই জন্যই পরিবার পরিজনদের বাড়ি ঘিরে তাদের লাগাতার হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা স্থানীয় তৃণমূলের? খটকা লাগছে নাহ্!


তাহলে কি দিন পনেরো এরাজ্যের পুলিশ ব্যস্ত ছিলো আগামী চোরদের ফ্ল্যাট থেকে নোটের বান্ডিল নিরাপদ আশ্রয়ে সরাতে। যে রাজ্যের গোটা সরকারটাই চোরের ভূমিকায় অবতীর্ণ, যে কোনো ডাকসাইটে ডাকাত বা ঠগী দলকে যারা রীতিমতো কম্পিটিশন দিতে পারে, সেই রাজ্যের পুলিশের আর কীই বা করার থাকে! তাই সরকারকে চোর বললে এরা অতি সক্রিয় হয়ে বামপন্থীদের জেলে ভরতে উদ্যত থাকে। গণতন্ত্রের কথা বললে লাশ হতে হয় সুদীপ্ত গুপ্ত’কে, চাকরির দাবি জানাতে গিয়ে খুন হতে হয় মইদুল মিদ্দ্যা’কে, মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে নিজের বাড়িতেই খুন হয়ে যায় তরতাজা আনিস। হ্যাঁ, খুনীর শরীরে উর্দি, ভেতরে স্যান্ডো জোড়াফুল ছাপের! 


সেই পুলিশ, সাথে সরকার, সরকারি দল, তাদের দরকারি গুন্ডা প্রমাণ, সাক্ষ্য লোপাট করতে হামলা হেনেছে আনিসের দাদা সলমনের ওপর। মাটি কাঁমড়ে পড়ে থাকা লড়াই। সমস্ত হামলা, হুমকি, প্রলোভনকে তুড়ি মেরে ভাইয়ের ইনসাফের জন্য লড়াই। হ্যাঁ, সলমনের ভাই, তোমার আমার সবার ভাই। ঘটনার মূল সাক্ষী সলমনকে তাই সরিয়ে দেওয়ার ছক। কে বানালো ছক? পুলিশ নাকি পুলিশমন্ত্রী? প্রশাসন নাকি তৃণমূল? জবাব চাইতে আগুন জ্বলেছে গোটা রাজ্যে। আগুন জ্বালিয়েছে এ রাজ্যের ছাত্র-যুব’রা, যারা ২০তারিখ মিশবে ধর্মতলার ইনসাফ সভায়। রক্তে ভেজা এই মাটিতেই অধিকারের রক্তগোলাপ ফোটাতে।
২০ তারিখ ধর্মতলায়, ঠিক যেখানে মইদুল মিদ্দ্যা চিৎকার করেছিলো “আমি আর বাঁচবুনি” তার অনতিদূরেই বাঁচার অধিকারের লড়াইয়ের এক নয়া অধ্যায় লেখা হবে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে হিমঘর থেকে বের করে পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের নয়া অধ্যায়। আনিসের পরিবার, আনিসের সহযোদ্ধা, আনিসের ভাইয়েরা, বোনেরা হাতে হাত রেখে শপথ নেবে — আঁধার থেকে আলোর মিছিল লাখো কোটি অগন্য,নতুন একটা বাংলা গড়বো আনিস খানের জন্য।