ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেঃ

এলআইসি’র আইপিও প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার যেরকম মনোভাব নিয়ে চলছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। প্রায় ২৯ কোটি পলিসিহোল্ডারদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে অমুল্য আর্থিক সংস্থা এলআইসি’র রাষ্ট্রায়ত্ত চরিত্র ধ্বংস করাই এহেন পদক্ষেপের ফলাফল।

সারা বিশ্বে বিমার জগতে এলআইসির জায়গা অনন্য। দেশ গঠনে অবদানের কারনে বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলির জাতীয়করণের মাধ্যমে এই সংস্থাটির নির্মাণ করা হয়েছিল। এই সংস্থা একইসাথে সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষরুপে দক্ষ এবং সাধারণ মানুষের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জনেও ইতিমধ্যে প্রমাণিত। এলআইসি’র দ্রুত সম্প্রসারণও ঘটে সেই কারনেই। ভারত সরকারের থেকে মাত্র ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ গ্রহন করে এলআইসি নিজেদের কাজ শুরু করেছিল,এখন তারাই ৩৪ লক্ষ কোটি টাকার সম্পত্তি নির্মাণ করেছে।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চরিত্র পাল্টাতে পলিসিহোল্ডারদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সংস্থাটিকে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানাধীন মুনাফা বর্ধক কোম্পানি হিসাবে কার্যকরী করতে চায়। এলআইসি’র শেয়ার বিক্রির অর্থ পলিসি হোল্ডারদের জন্য ভবিষ্যতের আয়ের নিশ্চয়তাকেই বিক্রি করে দেওয়া। আইপিওর প্রভাব সম্পর্কে শেয়ারহোল্ডারদের সাথে কোনরকম পরামর্শ করা হয়নি বা এহেন পদক্ষেপের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি।

এলআইসি’র বিক্রি সংক্রান্ত জঘন্য প্রক্রিয়াটির প্রকৃত বিবরণ এখন ক্রমশ উন্মোচিত হচ্ছে। এলআইসি-এর এমবেডেড ভ্যালু (ইভি) এর সর্বশেষ অনুমান ৫.৪০ লক্ষ কোটি টাকা। প্রায় দুমাস আগে, প্রত্যাশিত ছিল যে প্রতিটি এলআইসি শেয়ারের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণে ২.৫-৩ এর মধ্যে যেকোন একটি গুণিতককে ফ্যাক্টর হিসাবে প্রয়োগ করে লক্ষ্যে পৌঁছানো হবে৷ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সরকার এখন অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে এলআইসি’র শেয়ারের মূল্য হ্রাস করার চেষ্টা করছে৷ এলআইসি’র আনুমানিক এমবেডেড ভ্যালু (ইভি)-র মাত্র ১.১০ গুনককেই নির্ধারক ফ্যাক্টর হিসাবে ব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় সরকার।

বীমাক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে ২৫ বছরেরও বেশি সময় চেস্টা হচ্ছে, তা সত্ত্বেও এখনও দেশে মোট পলিসির ৭৩ শতাংশ এবং প্রথম বারের জন্য জমা হওয়া প্রিমিয়ামের ৬১ শতাংশই এলআইসি’র৷ এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী বীমা সংস্থা হল এলআইসি। এর মোট সম্পদ ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা এবং এক লক্ষেরও বেশি কর্মচারীবৃন্দ সহ ১৪ লক্ষ এজেন্ট সারা দেশে কর্মরত। এ হল এমন একটি সংস্থা যারা ভারতে জীবন বীমার পথপ্রদর্শক, বাজারে মোট শেয়ারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই এদের শেয়ার। ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের কর্তব্যে কোনোরকম দাগ না লাগিয়েই এলআইসি কাজ করে চলেছে। পলিসিহোল্ডারদের সুরক্ষার বিনিময়ে এমন একটি সংস্থার মূল্যনির্ধারণের কাজ দেওয়া হয়েছে এমনসব আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির হাতে, দ্রুত মুনাফা লুটে নেওয়া ভিন্ন যাদের অন্য কোন পরিচিতি নেই। এহেন সিদ্ধান্ত আসলে চরম অনৈতিকতা এবং অর্থনৈতিক দিশাহীনতার নিদর্শন।

দেশের এবং জনগণের সম্পদ প্রসঙ্গে নীতিগত অবস্থানের কারনেই এমন একটি প্রতিষ্ঠানের আইপিও-র বিরোধিতা জানাচ্ছে সিপিআই(এম)-র পলিট ব্যুরো। এই সম্পদ কোটি কোটি পলিসি হোল্ডারদের মালিকানাধীন, নির্বিচারে যেভাবে এলআইসির অবমূল্যায়ন চলছে এবং পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে তা জনমানসে ক্ষোভের উদ্রেক করতে বাধ্য। কেন্দ্রীয় সরকার বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যে আক্রমণাত্মক পন্থা অনুসরণ করছে। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে এলআইসি বিক্রির প্রক্রিয়া বাতিল করতে দাবী জানানো হচ্ছে এবং আইপিও-র সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সংস্থার কর্মচারী সহ পলিসিহোল্ডারদের লাগাতার সংগ্রামের সাথে সংহতি জানাচ্ছে সিপিআই(এম)।